মওলা আলী ও আমীরে মুয়াবিয়ার মধ্যে সিফফিনের যুদ্ধ নিয়ে অভিযোগ ও জবাব।

 

মওলা আলী ও আমীরে মুয়াবিয়ার মধ্যে সিফফিনের যুদ্ধ নিয়ে অভিযোগ ও জবাব

উক্ত যুদ্ধে ইরাকীদের তরফ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মওলা আলী এবং প্রতিপক্ষে শাম বাসীদের তরফ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আমীরে মুয়াবিয়া। এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শিয়া-রাফজিদের পক্ষ থেকে  আমীরে মুয়াবিয়ার উপর নানা প্রকার অভিযোগ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তার প্রতি বিদ্বেষ রেখে। শিয়াদের দাবি এটাই নাকি তার মুনাফিক হওয়ার চিহ্ন ছিলো। মওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসলাম থেকে  বেরিয়ে গেছেন নাউজুবিল্লাহ,এবং যুদ্ধ চলাকালীন হাজারো হাজারো সাহাবীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।  যাই হোক শিয়াদের বিভিন্ন অভিযোগের উত্তর দেওয়ার পুর্বে উক্ত যুদ্ধ সম্বন্ধে রসুলের কোন ভবিষ্যতবাণী ছিলো কি ছিলোনা কিংবা ছিলো তো উক্ত বিষয়ে কি ধরণের ভবিষ্যতবাণী দিয়ে গেছেন তা জেনে নেবো। আর জানবো যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ও পরিনতি হিসাবে তার ভয়াবহতা। প্রথমে উক্ত যুদ্ধ সম্বন্ধে রসুলের ভবিষ্যৎবানী কি তা দেখেনি।



❏ হাদিস ৭:



حَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ، حَدَّثَنَا الْقَاسِمُ، - وَهُوَ ابْنُ الْفَضْلِ الْحُدَّانِيُّ - حَدَّثَنَا أَبُو نَضْرَةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ تَمْرُقُ مَارِقَةٌ عِنْدَ فُرْقَةٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَقْتُلُهَا أَوْلَى الطَّائِفَتَيْنِ بِالْحَقِّ ‏"‏ ‏.‏


আবূ সাঈদ আল খুদরী (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছে যখন মুসলিমের মধ্যে (মতভেদ করে) একদল লোক বিচ্ছন্ন হয়ে ধর্মত্যাগী  হয়ে যাবে এবং এ দু' দলের মধ্যে যেটি হকের অধিকতর নিকটবর্তী হবে সেটিই ঐ সম্প্রদায়কে হত্যা করবে।



তথ্যসূত্রঃ


(১)সহি মুসলিম,বাব জিকরে খাওয়ারিজ ওয়া সিফাতুহুম,হাদীস নং-২৩২৬


(২)বুখারী শরিফ, বাব -আলামাতে নবুয়াহ,হাদীস নং-৩৪৪৫


(৩)সুনানে আবু দাউদ, বাব: কিতালুল খাওয়ারিজ,হাদীস নং-৪১১০


(৪) সুনানে নাসায়ি, হাদীস নং-২৫৬২


(৫) সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৬৮


(৬) মুয়াত্তা ইমাম মালিক,হাদীস নং-৪৬৮


(৭) সহি ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৮৬১


(৮) হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-২৬১০


(৯)মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস নং-১১২৮



উক্ত হাদীস অনুযায়ী  দুই মুসলমান দলের মতভেদের সৃষ্টি করে তৃতীয় একটি দলের উদ্ভব হবে যা মুসলমান দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধর্মত্যাগী হয়ে যাবে। যা সাধারণত খারজী দলের দিকে ইঙ্গিত করে। আমরা ইতিহাসের পাতায়  দেখতে পাই সিফফিন যুদ্ধ চলাকালীন  মওলা আলীর সহিত দ্বিমত করে  বিচ্ছিন্ন হয়ে তৃতীয় দল হিসাবে খারজি দলের উদ্ভব হয়েছিল। মওলা আলী আমীরে মু’আবিয়ার সাথে সালিশি মেনে নিলে, খারেজী গোষ্ঠী তাঁকে অমান্য করে দল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। যেমনঃ



ইবনে হাজার আস্কালানি  তার কিতাব ফাতহুল বারি শারাহুল সহি বুখারীর ৪৫৯ পৃষ্ঠায় বলেন :


 "الخوارج  الذين أنكروا على علي التحكيم، وتبرؤوا منه ومن عثمان وذريته، وقاتَلوهم


খারেজি হলো তারা যারা মওলা আলীর  সালিসি (সিফফিন যুদ্ধে আমীরে মুয়াবিয়ার সহিত) অস্বীকার করেছিলো  এবং মওলা আলী,   হজরতে উসমান ও তার আত্মীয়দের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিলো এবং তাদের সহিত যুদ্ধ করেছিলো।  



বোঝা যায় সিফফিন যুদ্ধের খারজিরা মওলা আলির সাথে দ্বিমত করে  সালিসি অস্বীকার করেছিলো এবং এবং হজরতে উসমানের আত্মীয়দের সঙ্গে, যেমন -আমীরে মুয়াবিয়ার (যিনি হজরতে উসমানের চাচাতো ভাই ছিলেন) সাথে  বিভেদ সৃষ্টির পিছনে তারা অন্যতম ভুমিকা নিয়েছিলো । যদি আরো খুলে বলি এরা সেই শিয়া বা মওলা আলীর অনুসারী যারা মওলা আলীর সঙ্গ  দিয়েছিল আমীরে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়। এরা চাইতো না মওলা আলী ও আমীরে মুয়াবিয়ার মধ্যে দন্দের সমাপ্তি ঘটুক। পরবর্তীতে তারা আলাদা হয়ে খারজি বলে পরিচিত হয়। অর্থাৎ বলা যায় খারজিদের উদ্ভব শিয়া রাফজিদের থেকেই, যারা আমীরে মুয়াবিয়াকে একেবারেই সহ্য করতে পারতো না।  সেই শিয়ারা আমীরে মুয়াবিকে আজও সহ্য করতে পারে না।  যাইহোক উক্ত হাদীস  সিফফিন যুদ্ধের দিকেই ঈঙ্গিত করে, যা যুদ্ধের পটভূমি ও ঘটনাক্রম দেখলে বোঝা যায়। তবে হাদীসে আরো একটি  উল্লেখিত বিষয় হলো, যা নিয়ে আলোচনা করা অতি প্রয়োজনীয়। তা হলো আল্লাহর রসুলের ভবিষ্যতবাণী, পরস্পর বিরোোধী দুই মুসলমান দলের মধ্যে যে বেশী হকের দিকে থাকবে সেই দল ধর্মত্যাগী  বা খারজি দলকে হত্যা করবে। বিষয়টি আলোচনার


কারণ হলো, অনেকে আছেন যারা মওলা আলীর সাথে আমীরে মুয়াবিয়ার তুলনা করে, বলে সিফফিন যুুদ্ধে  কে হক পথে ছিলো তা মাজহাবের ইমামরাও নির্ধারণ করতে পারেনি। যারা বা যে এ ধরণের মন্তব্য করেন  তাদের বা তাকে আমি বলবো মাজবাহাবের ইমামদের কথা ছেড়ে দিন। আল্লাহর রসুল নির্ধারণ করে দিয়েছেন , সিফফিন যুদ্ধে কে  হক পথে ছিলো । নিম্নে তার দলিলঃ



❏ হাদিস ৮:



حدثنا ابن أبي عدي عن سليمان عن أبي نضرة عن أبي سعيد أن النبي صلى الله عليه وسلم ذكر قوما يكونون في أمته يخرجون في فرقة من الناس سيماهم التحليق هم شر الخلق أو من شر الخلق يقتلهم أدنى الطائفتين من الحق قال فضرب النبي صلى الله عليه وسلم لهم مثلا أو قال قولا الرجل يرمي الرمية أو قال الغرض فينظر في النصل فلا يرى بصيرة وينظر في النضي فلا يرى بصيرة وينظر في الفوق فلا يرى بصيرة قال قال أبو سعيد وأنتم قتلتموهم يا أهل العراق


আবু সায়িদ খুদুরি হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল (ﷺ) ফরমান একবার একদল লোক সম্বন্ধে আলোচনা করলেন, যারা হবে আমার উম্মতের মধ্যে। মানুষের মধ্যে মত বিরোধের সময় এদের উদ্ভব হবে।তাদের মাথা থাকবে কামানো । সৃষ্টির মধ্যে তারাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট। দুই দলের মধ্যে যারা সত্যের সত্যের অধিক নিকট থাকবে তারাই তাদের হত্যা করবে। আবু সায়িদ খুদরী বলেন হে ইরাক বাসী তোমরাই তাদের হত্যা করেছো। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১০৬৩৫]



❏ হাদিস ৯:



عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدٍ حَدَّثَنَا هِشَامٌ أَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ بَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقْسِمُ جَاءَ عَبْدُ اللهِ بْنُ ذِي الْخُوَيْصِرَةِ التَّمِيمِيُّ فَقَالَ اعْدِلْ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ وَيْلَكَ وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ أَعْدِلْ قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ دَعْنِي أَضْرِبْ عُنُقَهُ قَالَ دَعْهُ فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ مَعَ صَلاَتِهِ وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِ يَمْرُقُونَ مِنْ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنْ الرَّمِيَّةِ يُنْظَرُ فِي قُذَذِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَصْلِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ فِي رِصَافِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَضِيِّهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ قَدْ سَبَقَ الْفَرْثَ وَالدَّمَ آيَتُهُمْ رَجُلٌ إِحْدَى يَدَيْهِ أَوْ قَالَ ثَدْيَيْهِ مِثْلُ ثَدْيِ الْمَرْأَةِ أَوْ قَالَ مِثْلُ الْبَضْعَةِ تَدَرْدَرُ يَخْرُجُونَ عَلَى حِينِ فُرْقَةٍ مِنْ النَّاسِ قَالَ أَبُو سَعِيدٍ أَشْهَدُ سَمِعْتُ مِنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيًّا قَتَلَهُمْ وَأَنَا مَعَهُ جِيءَ بِالرَّجُلِ عَلَى النَّعْتِ الَّذِي نَعَتَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم قَالَ فَنَزَلَتْ فِيهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ


আবূ সা‘ঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কিছু বণ্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে ‘আবদুল্লাহ্ ইব্নু যুলখুওয়ায়সিরা তামীমী এল এবং বলল, হে আল্লাহর রসূল! ইনসাফ করুন। তিনি বললেনঃ আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তা হলে আর কে ইনসাফ করবে? ‘উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) বললেন, আমাকে অনুমতি দিন, তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও। তার জন্য সাথীরা আছে। যাদের সালাতের তুলনায় তোমরা তোমাদের সালাতকে তুচ্ছ মনে করবে। যাদের সিয়ামের তুলনায় তোমরা তোমাদের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দ্বীন থেকে এমনিভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের প্রতি লক্ষ্য করলে তাতে কিছু পাওয়া যায় না। তীরের মুখের বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তীরের কাঠের অংশের দিকে দেখলেও তাতে কিছু পাওয়া যায় না। বরং তীর তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাবার সময় তাতে মল ও রক্তের দাগ পর্যন্ত লাগে না। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের একটি লোকের একটি হাত অথবা বলেছেন, একটি স্তন হবে মহিলাদের স্তনের ন্যায়। অথবা বলেছেন, অতিরিক্ত গোশতের টুকরার ন্যায়। লোকদের মধ্যে বিরোধের সময় তাদের আবির্ভাব ঘটবে। আবূ সা‘ঈদ (رضي الله عنه) বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তা নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, ‘আলী (رضي الله عنه) তাদেরকে হত্যা করেছেন। আমি তখন তাঁর সঙ্গে ছিলাম। তখন নবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেয়া বর্ণনার সংগে মিলে এমন ব্যক্তিকে আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, ওর সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছেঃ “ওদের মধ্যে এমন লোক আছে যে সদকা সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে”।


[সহি বুখারী, হাদিস নং -৬৪৬৪]



উক্ত হাদীসগুলির মাধ্যমে বোঝা যায় মওলা আলীই হক পথে ছিলেন,যা আল্লাহর রসুল ভবিষ্যতবাণীতে উল্লেখ করে গেছেন।আর এটাই আহলে সুন্নতের আকীদা মওলা আলী অধিক সত্যের পথে ছিলেন। তবে বলা যায় আমীরে মুয়াবিয়া কিছু একটা বুঝতে ভুল হচ্ছিলো। কি ভুল হচ্ছিলো তা পরে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। আগে সিফফিন যুদ্ধকে ইঙ্গিত করে আল্লাহর রসুল আরো যেসব ভবিষ্যতবাণী দিয়ে গেছেন তা আগে দেখে নেবো। নিম্নে তার সাপেক্ষে দলিল দেওয়া হলোঃ



❏ হাদিস ১০:



حَدَّثَنَا حَجَّاجٌ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ حَدَّثَنَا مَنْصُورٌ عَنْ رِبْعِيٍّ عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ نَاجِيَةَ الْكَاهِلِيِّ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ رَحَى الْإِسْلَامِ سَتَزُولُ بِخَمْسٍ وَثَلَاثِينَ أَوْ سِتٍّ وَثَلَاثِينَ أَوْ سَبْعٍ وَثَلَاثِينَ فَإِنْ يَهْلَكْ فَكَسَبِيلِ مَنْ أُهْلِكَ وَإِنْ يَقُمْ لَهُمْ دِينُهُمْ يَقُمْ لَهُمْ سَبْعِينَ عَامًا قَالَ قَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَبِمَا مَضَى أَمْ بِمَا بَقِيَ قَالَ بَلْ بِمَا بَقِيَ


হজরতে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেন ৩৫ কিংবা, ৩৬ কিংবা ৩৭ হিজরি পর্যন্ত ইসলামের চাকা ঘুরবে তারপর মুসলমান হানাহানি করলে হানাহানির পথে চলে যাবে। আর যারা বেঁচে থাকবে তাদের দ্বিন সত্তর বছর বাকি থাকবে। হজরতে উমার  জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রসুলে ইহার সম্পর্ক অতীতের সঙ্গে নাকি ভবিষ্যতের সঙ্গে? আল্লাহর রসুল উত্তর দিলেন বরং  ভবিষ্যতে যা বাকি আছে।



তথ্যসূত্রঃ


(১)সহি ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৬৬৪


(২)মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং -৩৭৫৮


(৩)হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-৪৫৪৯, ইমাম হাকিম বলেনصحيح على شرط مسلم  


(৪)মুস্কিলুল আ'সার, হাদীস নং-১৩৮৬



উক্ত হাদীস থেকে জানা যায় ৩৫ থেকে ৩৭ হিজরির মধ্যে দুই মুসলমান দল পরস্পর হানাহানিয় লিপ্ত হবে।আর আমরা সকলেই জানি সিফফিন যুদ্ধ সংঘটি হয়েছিলো ৩৭ হিজরির দিকেই অতএব উক্ত হাদীসও সিফফিন যুদ্ধের দিকেই ইঙ্গিত করে যা সাধারণত আল্লাহর রসুল ভবিষ্যতেবানীর মাধ্যমে ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন।



❏ হাদিস ১১:



রসুলের তৃতীয় ভবিষ্যতবানীঃ


حدثنا الحكم ، عن نافع ، عن صفوان بن عمرو ، عن الأشياخ أن رسول الله ، صلى الله عليه وسلم  دعي إلى جنازة رجل من الأنصار فقال وهو قاعد ينتظرها : " كيف أنتم إذا رأيتم خيلين في الإسلام ؟ " قالوا : أو يكون ذلك في أمة إلهها واحد ونبيها واحد ؟ قال : نعم  قال أبو بكر : أفأدرك ذلك يا رسول الله ؟ قال : " لا " . قال عمر : أفأدرك ذلك يا رسول الله ؟ قال : لا . قال عثمان : أفأدرك ذلك يا رسول الله ؟ قال : نعم ! بك ينشئون الحرب .


আস শাইখ হইত বর্ণিত তিনি বলেন এক জনৈক আন্সারী ব্যক্তির জানাজার জন্য আল্লাহর রসুল (ﷺ)কে ডাকা হলো।তিনি যখন সেখানে অপেক্ষা করছিলেন তখন বললেন তোমাদের কেমন অবস্থা হবে যখন ইসলামি দুই বিশাল দল সংঘাতের সম্মুখীন হবে? তখন আবু বকর সিদ্দিক জিজ্ঞাসা করলেন, যে উম্মতের মাবুদ এক, নবী এক তাদের মধ্যেও কি এমন হবে? তিনি উত্তর দিলেন হ্যাঁ। অতঃপর আবু বকর সিদ্দিক জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি সেই যুগ পাবো হে আল্লাহর রসুল ? তিনি উত্তর দিলেন, না।তখন হজরতে উমার জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি সেই যুগ পাবো হে আল্লাহর রসুল? তিনি উত্তর দিলেন, না। হজরতে উসমান জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে আমি কি সেই যুগ পাবো হে আল্লাহর রসুল? তিনি উত্তর দিলেন হ্যাঁ তোমাকে উপলক্ষ করে তারা যুদ্ধ করবে।


[আল বিদাইয়াহ ওয়ান নিহাইয়াহ, খন্ড-১০,পৃষ্ঠা-৫৫০]



উক্ত তিন হাদীস দ্বারা বোঝা যায় আল্লাহর রসুল সিফফিন যুদ্ধের সম্বন্ধে পুর্বেই জানতেন তাই আগে থেকে কিছু ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিলেন তবে ভবিষ্যতবাণীতে পরিষ্কার যে দুটো দল পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হবে উভয় দলই মুসলিম ।আর যাকে রসুল মুসলমান বলেন তার উপর ইমানের মোহর লেগে যায়। কিন্তু কিছু লোকের অস্বীকার করা অভ্যাস। আল্লাহর রসুল যাদের মুসলমান বলে দিয়ে গেছেন, তারা তাদেরকে মুনাফিক বলবে। তাদের যুক্তি এটাই তারা যেহেতু নামধারী মুসলমান তাই আল্লাহর রসুল, মুসলমান বলে উল্লেখ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তারা মুনাফিকই, নৈলে মওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করতো না। যদি এই ধরণের বক্তব্য কেও দিয়ে থাকে, তাহলে তারা জানতে অজানতে  আল্লাহর রসুলের উপর কুরানের বিরোধীতা করার তোহমত লাগালো নাউযুবিল্লাহ। কারণ কুরানে আল্লাহ বলেন,


وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ


আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ তারা মুসলমান বা ইমানদার নয়। (সুরা বাকারা, আয়াত-৮)



অর্থাৎ যারা মুনাফিক আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে বলেই দিয়েছেন, তারা  মুসলমান নয়। তাই আল্লাহর কালামের বিপক্ষে গিয়ে রসুলের পক্ষে  তাদেরকে মুসলিম বলাও অসম্ভব। এই ধরণের মন্তব্য যে বা যারা করে বা করবে তা কুরান ও হাদীস বিরোধী,তাই তা বাতিল বা প্রত্যাখ্যাত। অতএব আল্লাহর রসুল, পরস্পর বিরোধী দুই দলকে যে মুসলমান বলেছেন, তা প্রকৃত অর্থেই বলেছেন। তাই নয়, মওলা আলীও মনে করতেন তার প্রতিপক্ষ মুসলমানই ছিলো। তাঁর বিরুদ্ধে  যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার কারণে তার ইমান হারায়নি,  যা নিম্নোক্ত হাদীসটির মাধ্যমে প্রমাণ হয়।



❏ হাদিস ১২:



حَدَّثَنَا أَبُو أُسَامَةَ ، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ ، قَالَ : أَخْبَرَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُرْوَةَ ، قَالَ : أَخْبَرَنِي رَجُلٌ ، شَهِدَ صِفِّينَ قَالَ : رَأَيْتُ عَلِيًّا  خَرَجَ فِي بَعْضِ تِلْكَ اللَّيَالِي , فَنَظَرَ إِلَى أَهْلِ الشَّامِ  فَقَالَ : اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلَهُمْ ,


হাদীস বর্ণনা করেছেন আবু উসামাহ তিনি বলেন হিশাম বিন উরওয়াহ হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমাকে আব্দুল্লাহ বিন আমর বললেন আমাকে সিফফিনে উপস্থিত  হওয়া এক ব্যক্তি খবর দিয়ে বল্লো আমি আলীকে দেখলাম এক রাতে বেরিয়ে শামের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন এবং বললেন হে আল্লাহ আমার ও তাদের মাগফেরাত করে দাও।


(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং-৩৭১৯৮)



উক্ত হাদীস দ্বারা বোঝা যায় সিফফিন যুদ্ধে মওলা আলী তার প্রতিপক্ষকে অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ করেছেন, তাদেরকে মুসলমানই মনে করতেন নৈলে নিজের মাগফিরাতের দোয়া করার সাথে সাথে শামীয় অর্থাৎ তার প্রতিপক্ষের  মাগফিরাতের দোয়া করতেন না। মওলা আলীর এই দোয়া প্রমাণ করে আমীরে মুয়াবিয়া ও তার পক্ষে থাকা সকলেই মুসলিম ছিলো।শুধু তাই নয় মওলা আলী আরো বলেন তারা মুসলিম শুধু নয়,তারা জান্নাতিও যা নিম্নের হাদীস প্রমাণ করে।



❏ হাদিস ১৩:



حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ أَيُّوبَ الْمَوْصِلِيُّ ، عَنْ جَعْفَرِ بْنِ بُرْقَانَ ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ الْأَصَمِّ ، قَالَ : سَأَلَ عَلِيٌّ عَنْ قَتْلَى ، يَوْمِ صِفِّينَ , فَقَالَ : قَتْلَانَا وَقَتْلَاهُمْ فِي الْجَنَّةِ , وَيَصِيرُ الْأَمْرُ إِلَيَّ وَإِلَى مُعَاوِيَةَ


হাদীস বর্ণনা করেছেন উমার বিন আইয়ুব মাউসিলি  তিনি বলেন জাফার বিন বুরকান ইয়াজিদ বিন আসিম থেকে বর্ণনা করেন ইয়াজিদ বিন আসিম বলেন মওলা আলীকে সিফফিন যুদ্ধে নিহতদের সম্বন্ধে  জিজ্ঞাসা করা হলো।তখন তিনি উত্তর দিলেন আমার পক্ষে  এবং তাদের নিহতদের সবাই জান্নাতে। এবং বললেন বিষয়টা আমার আর মুয়াবিয়ার রয়ে গেছে।



তথ্যসূত্রঃ


(১)মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ, হাদীস নং-৩৭২১৩


(২)মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল, হাদীস নং-২০৯২


(৩)ইমাম তাবারানি, ম'জুমুল কাবীর, বাবুল - মিম, হাদীস নং -৬৮৮


(৪)মাজমাউয যাওয়ায়েদ, কিতাবুল মানাকিব, হাদীস নং-১৫৯২৭



উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণ হয় মওলা আলী সিফফিন যুদ্ধে তাঁর প্রতিপক্ষকে মুসলিম দল শুধু নয় বরং জান্নাতি দল বলে মনে করতেন। তবে এইসব প্রমাণ থাকার পরেও বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তির মাধ্যমে শিয়ারা আমীরে মুয়াবিয়াকে মুনাফিক বলে চিহ্নিত করতে চায়। তাদের যুক্তি হলো, যেহেতু মওলা আলীর প্রতি বিদ্বেষ রাখা মুনাফিক হওয়ার চিহ্নের মধ্যে একটি চিহ্ন তাই আমীরে মুয়াবিয়া তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রমাণ করেছেন তিনি মওলা আলী বিদ্বেষী ছিলেন । তাদের এই বক্তব্যের উপর আমার জবাব হলোঃ অনেক সময় বাস্তব ঘটনার মাধ্যমে প্রমাণ পাওয়া যায়, কোন বিষয়ে হঠাৎ অতিরিক্ত  ক্রোধ দুই পক্ষের মধ্যে হানাহানির সৃষ্টি হয়। শুধু বিদ্বেষের কারণে যুদ্ধ হয় এমনটা নয়। বিদ্বেষই যদি যুদ্ধের কারণ হয়ে থাকে তাহলে একি যুক্তি মওলা আলীর উপরও খাটবে। কারণ আমীরে মুয়াবিয়া, মওলা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ  করলেও মওলা আলীও আমীরের মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। ইহাই নয়, আমীরে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে, মওলা আলীর পক্ষের  কোন সাহাবী বা তাবেয়ি হত্যা হয়ে থাকলে, মওলা আলীর নেতৃত্বেও হাজার হাজার সাহাবীও তাবেয়ি হত্যা হয়েছে। যেমন বর্ণনায় আছে,




. يقال: فى مائة ألف فقتل من أهل الشام خمسة وأربعون ألفا، ومن أهل العراق خمسة وعشرون ألفا، والله أعلم


বলা হয় ১ লক্ষ সৈনের মধ্যে শামপক্ষীয় নিহত হয়েছে ৪৫ হাজার এবং ইরাক পক্ষীয় নিহত হয়েছে ২৫ হাজার, আল্লাহ উত্তম জানেন।


(আন্সাবুল আসরাফ, খন্ড-২ পৃষ্ঠা- ১৮৪)





حتى قتل من الفريقين - فيما ذكره غير واحد - سبعون ألفا ; خمسة وأربعون ألفا من أهل الشام وخمسة وعشرون ألفا من أهل العراق


একাধিক বর্ণনামতে দুই দলের নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ৭০ হাজার তার মধ্যে শাম পক্ষীয়দের ৪৫ হাজার আর ইরাকিদের পক্ষের ২৫ হাজার।


(আল বিদাইয়াহ ওয়ান নিহাইয়াহ, খন্ড-১০,পৃষ্ঠা-৫৫০)



যেমন আমীরে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে  তার দলের মাধ্যমে মওলা আলীর পক্ষের ২৫ হাজার সাহাবি ও তাবেয়ী হত্যা হয়েছিল তেমন মওলা আলীর নেতৃত্বে আমীরে মুয়াবিয়ার পক্ষের ৪৫ হাজার সাহাবী ও তাবেয়ি হত্যা হয়েছে। এক্ষেত্রে আমীরে মুয়াবিয়াকে বিদ্বেষি বললে মওলা আলীর উপর একি যুক্তি প্রয়োগ করতে হবে। আর হাদিসে আছে,



❏ হাদিস ১৪:



حديث أَبِي بَكْرَةَ عَنِ الأَحْنَفِ بْنِ قَيْسٍ، قَالَ: ذَهَبْتُ لأَنْصُرَ هذَا الرَّجُلَ، فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرَةَ، فَقَالَ: أَيْنَ تُرِيدُ قُلْتُ: أَنْصُرُ هذَا الرَّجُلَ قَالَ: ارْجِعْ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا، فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ هذَا الْقَاتِلُ فَمَا بَالُ الْمَقْتُولِ قَالَ: إِنَّهُ كَانَ حَرِيصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِهِ


আহনাফ ইবনে কায়স হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি (সিফফীনের যুদ্ধে) এ ব্যক্তিকে (আলীকে) সাহায্য করতে যাচ্ছিলাম। আবূ বাকরার (رضي الله عنه)সহিত আমার দেখা হলে তিনি বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, ‘আমি এ ব্যক্তিকে সাহায্য করতে যাচ্ছি। তিনি বললেনঃ ‘ফিরে যাও। কারণ আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)কে বলতে শুনেছি যে, দু’জন মুসলিম তাদের তরবারি নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী এবং নিহত ব্যক্তি উভয়ে জাহান্নামে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এ হত্যাকারী , কিন্তু নিহত ব্যক্তির কী অপরাধ? তিনি বললেন,সেও তার সাথীকে হত্যা করার জন্য উদগ্রীব ছিল।



তথ্যসূত্রঃ


(১)সহী বুখারী, , হাদীস নং- ২৮৮৮


(২)মুসলিম শরিফ, হাদীস নং-৫২৭২


(৩)সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৭৮০


(৪)সুনানে নাসায়ি, হাদীস নং-৪০৯৫


(৫)সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস নং-৩৯৯২


(৬)মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল,হাদীস নং-২০০৯৮


(৭)ইমাম বাইহাকি, সুনানুল কুবরা,হাদীস নং-১৫৩৮৬


(৮)সহি ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬০৮১


(৯)ইমাম আবু নুইয়েম,মারেফাতুস সাহাবা, হাদীস নং-৫৮১৭


(১০)ইমাম আবু নুইয়েম হিলিয়াতুল আউলিয়া, হাদীস নং-৮৮৩৭


(১১)শারাহ উসুলে এইতেকাদ, হাদীস নং-১৮৭২


(১২)ইমাম তাবারানি, ম'জুমুল আওসাত, হাদীস নং-৮৮১২



হাদীস অনুযায়ী দুই মুসলিম তলোয়ার নিয়ে মুখোমুখি হলে হত্যাকারী ও নিহত উভয় জাহান্নামী। সিফফিন যুদ্ধে আমীরে মুয়াবিয়া ও মওলা আলী একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন। আমীরে মুয়াবিয়া মওলা আলীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করলে, মওলা আলী আমীরে মুয়াবিয়া ও তার সাথিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন।  এই নয় যে মওলা আলীর প্রতিপক্ষ দল বেধর্মী ছিলো। বরং রসুলের বানী থেকে জানা যায় উভয় দল মুসলমান। শুধু তাই নয় মওলা আলীও স্বীকার করেছেন তার প্রতিপক্ষ দল মুসলিম বরং জান্নাতিও। তাই এখানে সুযোগ নেই প্রতিপক্ষকে কাফির বলার বা এ বলার সুযোগও নেই, মওলা আলী কাফীর বা মুনাফিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদের আকীদা হলো পরস্পর হানাহানি করার পরেও আল্লাহর দর্বারে তারা ক্ষমা প্রাপ্ত হয়েছেন যার সাপেক্ষে একটি সুন্দর হাদীস।



❏ হাদিস ১৫:



حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ ، عَنِ الْعَوَّامِ ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ ، قَالَ : رَأَى فِي الْمَنَامِ أَبُو مَيْسَرَةَ عَمْرَو بْنَ شُرَحْبِيلَ , وَكَانَ مِنْ أَفْضَلِ أَصْحَابِ عَبْدِ اللَّهِ , قَالَ : رَأَيْتُ كَأَنِّي أُدْخِلْتُ الْجَنَّةَ , فَرَأَيْتُ قِبَابًا مَضْرُوبَةً , فَقُلْتُ : لِمَنْ هَذِهِ ؟ فَقِيلَ : هَذِهِ لِذِي الْكَلَاعِ وَحَوْشَبٍ , وَكَانَا مِمَّنْ قُتِلَ مَعَ مُعَاوِيَةَ يَوْمَ صِفِّينَ , قَالَ : قُلْتُ : فَأَيْنَ عَمَّارٌ وَأَصْحَابُهُ ؟ قَالُوا : أَمَامَكَ ، قُلْتُ : وَكَيْفَ وَقَدْ قَتَلَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا ؟ قَالَ : قِيلَ : إِِنَّهُمْ لَقُوا اللَّهَ فَوَجَدُوهُ وَاسِعَ الْمَغْفِرَةِ , قَالَ : فَقُلْتُ : فَمَا فَعَلَ أَهْلُ النَّهْرِ ؟ قَالَ : فَقِيلَ : لَقُوا بَرَحًا


হজরতে আবু ওয়েল হইতে বর্ণিত তিনি বলেন তিনি আবু মাইসারাহ আমর বিন সারজিলকে স্বপ্নে দর্শন করলেন  এবং তিনি ছিলেন আব্দুল্লাহর সাথিদের মধ্যে একজন আফাজাল সাথি। তিনি বলেন আমি দেখলাম আমি যেন জান্নাতে প্রবেশ করেছি এবং সেখানে দেখলাম একটা সুন্দর গুম্বুজ নির্মিত প্রাসাদ  আছে অতপর জিজ্ঞাসা করলাম ইহা কার? আমাকে বলা হলো  ইহা আলকাই এবং হাওসাবের  জন্য যারা  সিফফিন যুদ্ধে আমীরে মুয়াবীয়ার মুয়াবীয়ার সঙ্গিদের দ্বারা   নিহত হয়েছ।  আমি জিজ্ঞাসা করলাম  আম্মার ও তার সাথিরা কোথায়? আমাকে বলা হলো তোমার সম্মুখে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম  তারা তো তাদের একে অপরকে হত্যা করেছিলো  তাহলে কিভাবে  তারা সকলে জান্নাতে? আমাকে বলা হলো যখন তারা আল্লাহর সাথে মিলিত হলেন তাকে  অসীম  মাগফিরাতকারী হিসাবে পেলেন। আমি  জিজ্ঞাসা করলাম আহলে নাহারের সাথে কি করা হয়েছে?অতঃপর আমাকে বলা হলো তারা আল্লাহর অসন্তষ্টির মধ্যে রয়েছে ।



তথ্যসূত্রঃ


(১)মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ,কিতাবুল জামাল ওয়া সিফফিন, ওয়াল খাওয়ারিজ,হাদীস নং-৩৭৮৪৪


(২)ইমাম বুখারী তারিখুল, কাবীর, খন্ড-২ হাদীস নং-২০৭৯


(৩)তাবকাতুল কুবরা, খন্ড-৫, পৃষ্ঠা-৫১৮


(৪)শারাহ সহি বুখারী ইবনে বাত্তাল, খন্ড-১০ পৃষ্ঠা-২৮


(৫)তারিখে দামিস্ক, খন্ড-১৭ পৃষ্ঠা-৩৯২


ইবনে হাজার আস্কালানি, আল ইসাবা, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৪৭৮


(৬)তাহজিবুল কামাল,খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-২০৮



উক্ত হাদীসে স্বপ্নের মাধ্যমে  হজরতে আবু ওয়েলকে আল্লাহ জানিয়ে দেন সিফফিন যুদ্ধে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হওয়া পরেও উভয়কে দলকে আল্লাহ ক্ষমা দান করে,  জান্নাত নসিব করেছেন। হয়তো কারোর আপত্তি থাকতে পারে যে এটি তো একটি স্বপ্ন। বাস্তব আর স্বপ্নের মধ্যে তফাৎ আছে তাই এই হাদীসকে দলিল হিসাবে নেওয়া ঠিক নয়। যদি এমন কেও বলে সেই ক্ষেত্রে আমার উত্তর নিম্নোক্ত হাদীসের মাধ্যমে হবে।



❏ হাদিস ১৬:



بَاب رُؤْيَا الصَّالِحِينَ


حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ إِسْحَاقَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ الرُّؤْيَا الْحَسَنَةُ مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ ‏"‏‏.‏


আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আল্লাহর রসুল (ﷺ) বলেছেনঃ নেককার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।


(বুখারী শরিফ হাদীস নং- ৬৪৯৯)



উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় ইমাম কুরতুবি বলেনঃ


وَقَالَ  الْقُرْطُبِيُّ الْمُسْلِمُ الصَّادِقُ الصَّالِحُ هُوَ الَّذِي يُنَاسِبُ حَالُهُ حَالَ الْأَنْبِيَاءِ فَأُكْرِمَ بِنَوْعٍ مِمَّا أُكْرِمَ بِهِ الْأَنْبِيَاءُ وَهُوَ الِاطِّلَاعُ عَلَى الْغَيْبِ.


ইমাম কুর্তবী বলেন নেক ও সত্যবাদী মুসলমান যখন তার হাল বা চলা ফেরাকে আম্বিয়াদের হাল বা চলা ফেরার অনুরুপ করে নেয় তখন তাকে সেই জিনিশ দ্বারা সম্মানিত করা হয় যার দ্বারা আম্বিয়াদের সম্মানিত করা হয়েছে আর তা হল গাইবের প্রতি অবগতি।


[ইবনে  হাজার আস্কালানী, ফাতহুলবারী, খন্ড-১২ পৃষ্ঠা-৩৭৯]



অর্থাৎ উক্ত হাদীসে বোঝা যায় নেককার মোমিনের ভালো  স্বপ্ন হলো নবুয়াতের ছেচল্লিসভাগের একভাগ বা নবুয়াতি ইল্মের অংশ বিশেষ অর্থাৎ যেমন নবীগন স্বপনের মাধ্যমে গাইবি ইলম অর্যন করেন বা গাইবি বিষয় জানতে পারেন, নেক মোমিনগনও ভালো স্বপ্নের মাধ্যমে অনেক সময় গাইবি বিষয়ে  অবগত হন।আমরা সকলে জানি জান্নাত জাহান্নাম দেখা এগুলি গাইবি বিষয়ে অবগত হওয়ার অন্তর্গত । উক্ত বর্ণনায়ও আল্লাহ হজরতে আবু ওয়েলকে গাইবি বিষয়ে অবগত করিয়েছেন, যাতে তিনি দেখলেন সিফফিন যুদ্ধে দুই দল একে অপরের সাথে যুদ্ধ করার পরেও তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন।আর এটাই আমাদের আকীদা তারা পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হলেও, তারা সকলে জান্নাতি।যাই হোক শিয়াদের অভিযোগ আমীরে মুয়াবিয়া মাওলা আলীর প্রতি বিদ্বেষের কারণে তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছিলেন, সেই বিষয় নিয়েই কথা বলবো। তাদের অভিযোগের উপর আমি বলবো তাদের এই ধারণা ভুল , দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার পিছনে সব সময় উভয়ের মধ্যে বিদ্বেষের কারণ নিহিত থাকে না।অনেক সময় কোন বিষয়ে অতিরিক্ত ক্রোধ তাদের মধ্যে হটকারিতা এনে দেয়, ফলস্বরুপ তারা হানাহানিতে লিপ্ত হয়। সিফফিন যুদ্ধ হওয়ার পিছনেও তেমনই একটা কারণ ছিলো যা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট দেখলেই বোঝা যায়। তার সাপেক্ষে প্রমাণ হিসাবে নিম্নে দলিল দিলামঃ



❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী বলেন,


وقد ذكر يحيى بن سليمان الجعفي أحد شيوخ البخاري في " كتاب صفين " في تأليفه بسند جيد عن أبي مسلم الخولاني أنه قال لمعاوية : أنت تنازع عليا في   أو أنت مثله ؟ قال : لا ، وإني لأعلم أنه أفضل مني وأحق بالأمر ، ولكن ألستم تعلمون أن عثمان قتل مظلوما وأنا ابن عمه ووليه أطلب بدمه ؟ فأتوا عليا فقولوا له يدفع لنا قتلة عثمان ، فأتوه فكلموه فقال : يدخل في البيعة ويحاكمهم إلي ،


ইহাইয়া বিন সুলাইমান আল জু'ফি যিনি ইমাম বুখারীর শিক্ষকের মধ্যে একজন ছিলেন, তার বই কিতাবুস সিফফিনে শক্তিশালী সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন তিনি বলেন আবু মুসলিম আল খোলানি হইতে বর্ণিত আমীরে মুয়াবীয়াকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি মওলা আলীর খিলাফতের বিরোধীতা  করেন...কিংবা আপনি কি তার সমকক্ষ? তিনি উত্তর দিলেন, না। আমি জানি তিনি আমার চেয়ে উত্তম এবং আমার চেয়ে শাসন চালনায় বেশী হকদার। কিন্তু তুমি কি জানো মাজলুম  উসমানকে হত্যা করা হয়েছে.? আমি উসমানের চাচাতো ভাই এবং তার হত্যার প্রতিশোধের দাবিদার। আর  তারা মওলা আলীর নিকট যাবেন  এবং বলবেন উসমানের হত্যাকারীকে আমাদের সঁপে  দেন।অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট গেলেন এবং তার সাথে আলোচনা করলেন এবং তিনি বললেন বাইয়াতের মধ্যে দাখিল হয়ে তাদের ব্যাপার আমার কাছে নিয়ে আস।


(ফাতহুল বারী খন্ড-১৩, কিতাবুল ফিতান, পৃষ্ঠা-৯২)





قَالَ الجُعْفِيُّ: حَدَّثَنَا يَعْلَى بنُ عُبَيْدٍ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ:جَاءَ أَبُو مُسْلِمٍ الخَوْلاَنِيُّ وَأُنَاسٌ إِلَى مُعَاوِيَةَ، وَقَالُوا: أَنْتَ تُنَازِعُ عَلِيّاً، أَمْ أَنْتَ مِثْلُهُ؟فَقَالَ: لاَ وَاللهِ، إِنِّيْ لأَعْلَمُ أَنَّهُ أَفْضَلُ مِنِّي، وَأَحَقُّ بِالأَمْرِ مِنِّي، وَلَكِنْ أَلَسْتُم تَعْلَمُوْنَ أَنَّ عُثْمَانَ قُتِلَ مَظْلُوْماً، وَأَنَا ابْنُ عَمِّهِ، وَالطَّالِبُ بِدَمِهِ، فَائْتُوْهُ، فَقُوْلُوا لَهُ، فَلْيَدْفَعْ إِلَيَّ قَتَلَةَ عُثْمَانَ، وَأُسْلِمَ لَهُ.


فَأَتَوْا عَلِيّاً، فَكَلَّمُوْهُ بذلك ، فَلَمْ يَدْفَعْهُم إِلَيْهِ


জু'ফি বলেন আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ইয়ালা বিন উবাইদ, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন তিনি আবু মুসলিম খুলানি আরো অন্যন্যরা আমীরে মুয়াবীয়ার  নিকট এলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি মওলা আলীর খিলাফতের বিরোধীতা  করেন...কিংবা আপনি কি তার সমকক্ষ? তিনি উত্তর দিলেন না। আমি জানি তিনি  আমার চেয়ে উত্তম এবং আমার চেয়ে শাসন চালনায় বেশী হকদার। কিন্তু তুমি কি জানো মাজলুম  উসমানকে হত্যা করা হয়েছে.? আমি উসমানের চাচাতো ভাই এবং তার হত্যার প্রতিশোধের দাবিদার। অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট যাবেন  এবং বলবেন উসমানের হত্যাকারীকে আমাদের সঁপে  দেন।অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট এলেন এবং তার সাথে সেই বিষয়ে আলোচনা করলেন। অতঃপর  তিনি তাদেরকে সঁপে দিতে অস্বীকার করলেন।


১.যাহাবীঃ সিয়ারু আলামিন নুবালায়ে,খন্ড-৩ পৃষ্ঠা -১৪০


২.ইবনে কাসীরঃ আল বিদায়া ওয়ান নিহাইয়াহ, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-১২৯,



❏ ইবনে কাসীর বলেন,


رجاله ثقات.


ونا إبراهيم نا يحيى قال حدثني يعلى بن عبيد الحنفي نا أبي قال جاء أبو مسلم الخولاني وأناس معه إلى معاوية فقالوا له أنت تنازع عليا أم أنت مثله فقال معاوية لا والله إني لأعلم أن عليا أفضل مني وأنه لأحق بالأمر مني ولكن ألستم تعلمون أن عثمان قتل مظلوما وأنا ابن عمه وإنما أطلب بدم عثمان فائتوه فقولوا له فليدفع إلي قتلة عثمان وأسلم له فأتوا عليا فكلموه بذلك فلم يدفعهم إليه


আমাকে খবর দিলেন ইবরাহীম, তিনি বলেন  আমাকে খবর দিলেন ইয়াহিয়া, তিনি বলেন আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ইয়ালা বিন উবাইদুল হানাফি তিনি বলেন আমাকে আমার পিতা খবর দিয়ে বলেন আবু মুসলিম খুলানি আরো অন্যন্যরা আমীরে মুয়াবীয়ার  নিকট এলেন এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি মওলা আলীর খিলাফতের বিরোধীতা  করেন...কিংবা আপনি কি তার সমকক্ষ? তিনি উত্তর দিলেন না। আমি জানি তিনি আমার চেয়ে উত্তম এবং আমার চেয়ে শাসন চালনায় বেশী হকদার। কিন্তু তুমি কি জানো মাজলুম  উসমানকে হত্যা করা হয়েছে.? আমি উসমানের চাচাতো ভাই এবং তার হত্যার প্রতিশোধের দাবিদার। অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট যাবেন  এবং বলবেন উসমানের হত্যাকারীকে আমাদের হাতে তোলে  দেন।অতঃপর তারা মওলা আলীর নিকট এলেন এবং তার সাথে সেই বিষয়ে আলোচনা করলেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে সঁপে দিতে অস্বীকার করলেন।


[তারিখে দামিস্ক খন্ড-৫৯, পৃষ্ঠা-১৩২]



উপরিউক্ত বর্ণনাগুলি দেখলে বোঝা যায়,  আমীরে মুয়াবিয়া হজরতে উসমানের হত্যার প্রতিশোধ চাইছিলেন। যেহেতু তিনি হজরতে উসমানের চাচাতো ভাই, তাই তার ক্রোধটাও স্বাভাবিক। তাই সেই সময়ের আমীর বা খালিফা হিসাবে হজরতে উসমানের হত্যাকারীদেরকে সঁপে দেওয়ার জন্য মওলা আলীকে অনুরোধ করলেন।কিন্তু মওলা আলী তাতে অসম্মতি জানান। সম্ভবত সেই কারণে তাঁর ধারণা যেগেছিলো হজরতে আলী, হজরতে উসমানের হত্যাকারীদের রক্ষা করতে চাইছেন আর সম্ভবত উক্ত কারণেই তাঁর রাগ মওলা আলীর উপর আছড়ে পড়ে। পরবর্তীতে যা বিরাট আকার নিয়ে সিফফিন নামক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের আকার নেয়। এটাই ছিলো আমীরে মুয়াবিয়ার ভুল,একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সুত্রপাতের পিছনে আমীরে মুয়াবিয়ার হটকারিতা ও ভুলবোঝাবুঝি কাজ করেছিলো। যাইহোক বলাবাহুল্য  উক্ত বর্ণনা দ্বারা একটি জিনিশ পরিস্কার বোঝা যায়,  আমীরে মুয়াবিয়া মওলা আলী বিদ্বেষী ছিলেন না।কারণ উক্ত বর্ণনায় আছে, তিনি কি মওলা আলীর খিলাফতের বিরোধীতা  করেন কিনা কিংবা নিজেকে মাওলা আলীর সমকক্ষ ভাবেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে, তার উত্তরে আমীরে মুয়াবিয়া বলেন মওলা আলী তাঁর চেয়ে উত্তম ও শাসন চালনায় অধিক যোগ্য।উক্ত উত্তর শিয়াদের অভিযোগ বাতিল করে কারণ কেও যখন কারোর প্রতি বিদ্বেষ রাখে তাকে নিজের চেয়ে উত্তম বলে স্বীকার করে না বরং তার বিদ্বেষ তাকে তা স্বীকার করতে দেয়ও না।তাই এখানেও শিয়াদের দাবী অবান্তর, আমীরে মুয়াবিয়া বিদ্বেষের কারণে যুদ্ধ করেননি বরং যুদ্ধের কারণ ছিলো হজরতে উসমানের হত্যার প্রতিষোধ নিতে তার হত্যাকারীদের শাস্তি দেওয়া।


সিফফিন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের সাপেক্ষে আরো একটি  দলিলঃ





فلما أراد علي ، رضي الله عنه ، أن يبعث إلى معاوية ، رضي الله عنه ، يدعوه إلى بيعته ، قال جرير بن عبد الله :أنا أذهب إليه يا أمير المؤمنين ، فإن بيني وبينه ودا ، فآخذ لك البيعة منه . فقال الأشتر :  لا تبعثه يا أمير المؤمنين ، فإني أخشى أن يكون هواه معه .  فقال علي : دعه  فبعثه وكتب معه كتابا إلى معاوية يعلمه باجتماع المهاجرين والأنصار على بيعته ، ويخبره بما كان في وقعة الجمل ، ويدعوه إلى الدخول فيما دخل فيه الناس . فلما انتهى إليه جرير بن عبد الله أعطاه الكتاب  وطلب معاوية عمرو بن العاص ورءوس أهل الشام فاستشارهم ، فأبوا أن يبايعوا حتى يقتل قتلة عثمان ، أو أن يسلم إليهم قتلة عثمان ، وإن لم يفعل قاتلوه ولم يبايعوه حتى يقتلهم عن آخرهم . فرجع جرير إلى علي فأخبره بما قالوا ، فقال الأشتر :


পরে মওলা আলী আমীরে মুয়াবিয়ার  প্রতি বাইয়াতের আহবান জানিয়ে  তাাঁর চিঠি লিখে পাঠাবার ইচ্ছা করলেন তখন জারির বিন আব্দুল্লাহ অনুরোধ করে বললেন হে আমীরুল মোমিনিন আমাকে তাঁর কাছে যেতে দিন।কারণ তার সাথে হার্দিক সম্পর্ক রয়েছে। অতএব আমি আপনার অনুকুলে বাইয়াত হওয়ার আশা রাখি। আশতার বললেন হে আমীরুল মোমিনিন তাকে পাঠাবেন না। আমি আশংকা করি যে সে (হজরতে জারির) তার (আমীরে মুয়াবিয়ার) পক্ষ অবলম্বন করবে। মওলা আলী বললেন তাঁকে যেতে দাও। অতঃপর মওলা চিঠি লিখে তার হাতে আমীরে মুয়াবিয়ার নিকট পাঠিয়ে দিলেন। চিঠিতে উল্লেখিত মুহাজির,আন্সার সাহাবী ও আমীরে মুয়াবিয়ার ব্যায়েতের কথা জানিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। যাতে আমীরে মুয়াবিয়া ও লোকেদের ঐক্যমত হয়ে বাইয়াত হওয়ার আহব্বান জানান।জারির ইবনে আব্দুল্লাহ আমীরে মুয়াবিয়ার নিকট পৌঁছে তাঁর হাতে চিঠিটি দিলেন। আমীরে মুয়াবিয়া, আমর ইবনে আ'স, সিরিয়ার নেতৃবৃন্দদের ডেকে এই বিষয়ে পরামর্শ চাইলেন। তখন তারা হজরতে উসমানের হত্যাকারীদের সিরিয়া কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া ব্যতীত বাইয়াত হতে অস্বীকৃতি জানালেন।নতুবা মওলা আলীর বিরুদ্ধে  যুদ্ধ করা ও উসমানের হত্যাকারীদের হত্যা করা না পর্যন্ত বাইয়াত হবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। হজরতে জারির মওলা আলীর নিকট ফিরে এসে প্রতিপক্ষের বক্তব্য জানিয়ে দিলেন। [আল বিদায়া ওয়ান নিহাইয়াহ, খন্ড-৮ পৃষ্ঠা-৫৪৪]



উক্ত বর্ণনাতেও প্রমাণ হয় সিফফিন যুদ্ধের কারণ ছিলো হজরতে উওসমানের হত্যাকে উপলক্ষ করে। তাছাড়া হজরতে আমীরে মুয়াবিয়ারও একি স্বীকারক্তি,



❏ হাদিস ১৭:



- حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، عَنْ مُوسَى بْنِ قَيْسٍ ، قَالَ : حَدَّثَنِي قَيْسُ بْنُ رُمَّانَةَ ، عَنْ أَبِي بُرْدَةَ ، قَالَ : قَالَ مُعَاوِيَةُ : مَا قَاتَلْت عَلِيًّا إلاَّ فِي أَمْرِ عُثْمَانَ


হজরতে আবু বুরদা হইতে বর্ণিত তিনি বলেন আমীরে মুয়াবিয়া বলেছেন আমি আলির সাথে যুদ্ধ করেছি কেবল ওসমানের বিষয় নিয়ে।


[মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ,খন্ড-৭ হাদীস নং-৪৪৬৪]



পুর্বে আমরা জেনেছি দুই গোষ্টি (মুসলমান)  হজরতে উসমানকে উপলক্ষ করে ৩৫ থেকে ৩৭ হিজরে মধ্যবর্তী সময়ে পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হবে। আর প্রেক্ষাপট বলে দিচ্ছে সিফফিন যুদ্ধ সম্বন্ধে আল্লাহর রসুল ভবিষ্যৎবানী দিয়ে গেছেন। এইবার বিষয় হলো দুই গোষ্টির মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিলো উভয় দলই মুসলমান ছিলো, যার সাপেক্ষে পুর্বেই প্রমাণ পেশ করেছি।কিন্তু শিয়াদের, অস্বীকার করা যেহেতু অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে তাই তারা মানতে চায় না। শিয়া-রাফজিদের দাবী মওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করার কারণে বিপক্ষ কাফির হয়ে গেছে। আর সেই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আমীরে মুয়াবিয়া তাই  তার মুসল্মান হওয়ার প্রশ্ন আসে না, ইহাই শিয়াদের বক্তব্য। তাদের দাবী বা বক্তব্যের সাপেক্ষেও দলিলও দিয়ে থাকে যা নিম্নে উল্লেখ করলাম।



❏ হাদিস ১৮:



حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ عَبْدِ الْجَبَّارِ الْبَغْدَادِيُّ حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ قَادِمٍ حَدَّثَنَا أَسْبَاطُ بْنُ نَصْرٍ الْهَمْدَانِيُّ عَنْ السُّدِّيِّ عَنْ صُبَيْحٍ مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ أَنَّ رَسُولَ  اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِعَليٍّ وَفَاطِمَةَ وَالْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ أَنَا حَرْبٌ لِمَنْ حَارَبْتُمْ وَسِلْمٌ لِمَنْ سَالَمْتُمْ


“যায়েদ বিন আরকম (رضي الله عنه) বলেছেন ‘ আল্লাহর রসুল (ﷺ) আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইনদের সমদ্ধে বলেছেন আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা এদের সাথে শান্তি স্থাপন করে, আমি তাদের সাথে যুদ্ধরত হই যারা এদের সাথে যুদ্ধ করে”।



তথ্যসূত্রঃ


(১)সুনানে তিরমিজি, বাব ফাজায়েলে ফাতেমা,হাদীস নং-৩৯৬৫


(২)সুনানে ইবনে মাজাহ, বাব ফাজায়েলে সাহাবা,হাদীস নং-১৪৫


(৩)সহি ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৭৩০৪


(৪)মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ,হাদীস নং-৩১৫৬৫



উক্ত হাদীসের ভিত্তি করে শিয়াদের বক্তব্য যেহেতু হাদীস অনুযায়ী মওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করার অর্থ হলো রসুলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া তাই যারা বা যে মওলা আলীর সাথে যুদ্ধ করে পরক্ষভাবে  রসুলের সাথেই যুদ্ধ করেছেন।  



প্রথমত, ১৬নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে যে, ইজতেহাদী ভুলের কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।


দ্বিতীয়ত, এমন হাদিসও বিদ্যমান যেখানে আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) ইমাম হাসান (রাঃ) এর সাথে শান্তি চুক্তি করেছিলেন।


তৃতীয়ত,


উক্ত হাদীসের সনদ পর্যালচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে উক্ত হাদীসের সনদ ত্রুটিপুর্ণ, যার দলিল নিম্নে দেওয়া হলোঃ



❏ হাদিস ১৯:



، حَدَّثَنَا ابن حماد، حَدَّثَنا عباس سمعت يَحْيى وأبا خيثمة يقولان : " كان صبيح ينزل الخلد وكان كذَّابًا يحدث عن عثمان بن عفان وعن عائشة وكان كذَّابًا خبيثا ، قال يَحْيى : وأعمى أَيضًا ، كان في دار الرقيقي كذاب


হাম্মাদ বর্ণনা করেন তিনি বলেন আমাকে আব্বাস বলেছেন ইয়াহিয়া ইবনে মোইন ও খুইসামাহকে বলতে শুনেছি স্বাবিহকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং হজরতে উসমান বিন আফফান ও হজরতে আয়শা সম্বন্ধে অপবাদ রটিয়ে বেড়াতো। এবং খুবাইসের সম্বন্ধেও অপবাদ দিয়ে বেড়াতো। ইয়াহিয়াহ ইবনে মোইন বলেন সে খুব স্বার্থপরও ছিলো আর স্পষ্ট (প্রকাশ্যে মিথ্যা বলতো)মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।


[মিজানুল এইতেদাল খন্ড-১পৃষ্ঠা-১৭৬]



উক্ত বর্ণনায় সুবহাই নামক রাবি কাজ্জাব এবং হজরতে উসমান ও আয়শা সম্বন্ধে অপবাদ দিতো, তাই এমন রাবির বর্ণনাকৃত হাদীস কোন মতে গ্রহনীয় নয়।


আরো একটি সনদ থেকে উক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।



❏ হাদিস ২০:



  أخبرنا أحمد بن جعفر القطيعي ، ثنا عبد الله بن أحمد بن حنبل ، حدثني أبي ، ثنا تليد بن سليمان ، ثنا أبو الجحاف ، عن أبي حازم ، عن أبي هريرة - رضي الله تعالى عنه - قال : نظر النبي - صلى الله عليه وآله وسلم - إلى علي وفاطمة والحسن والحسين فقال : " أنا حرب لمن حاربكم ، وسلم لمن سالمكم " .


“ আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন “ রাসুল (ﷺ) আলী, ফাতেমা, হাসান (আঃ) হুসাইনের দিক দৃষ্টিপাত করলেন এবং বললেন ‘আমি তাদের যাতে যুদ্ধরত থাকি যারা তোমাদের  সাথে যুদ্ধরত হয়, আর আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা তোমাদের  সাথে শান্তি স্থাপন করে”।



তথ্যসূত্রঃ


(১)মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৬৯৮


(২)ফাদাইলে সাহাবা, খন্ড ২ হাদিস নং -১৩৫০, ইমাম হাম্বাল


(৩)হাকিম আল  মুস্তাদ্রাক ‘আলা সাহিহাইন খন্ড-৩ হাদীস নং-৪৭৬৭


(৪)ইমাম তাবরানী, ম'জুমুল কাবীর হাদীস নং-২৬২১



প্রথমত, ১৬নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে যে, ইজতেহাদী ভুলের কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।


দ্বিতীয়ত, এমন হাদিসও বিদ্যমান যেখানে আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) ইমাম হাসান (রাঃ) এর সাথে শান্তি চুক্তি করেছিলেন।


তৃতীয়ত,


উক্ত হাদীসের সনদে তালিদ বিন সুলাইমান নামক রাবি বিতর্কিত, যার প্রমাণ নিম্নে দেওয়া হলো।



❏ হাদিস ২১:



حدثنا عباس بن محمد بن حاتم قال سمعت يحيى بن معين قال تليد بن سليمان كان كذابا يشتم عثمان رحمه الله حدثنا عبد الله بن محمد بن سعدويه المروزي قال حدثنا إبراهيم بن يعقوب الجوزجاني قال سمعت أحمد بن حنبل يقول حدثني تليد وهوعندي كان يكذب


বয়ান করেছেন আব্বাস বিন মুহাম্মাদ বিন হাতিম তিনি বলেন ইয়াহিয়া ইবনে মইনকে বলতে শুনেছি তালিদ বিন সুলাইমাম কাজ্জাব ছিলো, হজরতে উসমানকে গালি দিতো আল্লাহর রহম তার উপর (হজরতে উসমানের)।বয়ান করেছেন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ সাওয়ি আল মারুজি তিনি বলে আমাকে ইবরাহিম বিন ইয়াকুব জুরজানি বলেন  আহমাদ বিন হাম্বালকে বলতে শুনেছি তালিদ বিন সুলাইমান মিথ্যা রটিয়ে বেড়াতো।


(ইবনে হিব্বান, কিতাবুল মাজরুহিন,খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৪)



وهذا إسناد تالف ، تليد بن سليمان رافضي كذاب ، قال ابن معين : كذاب يشتم عثمان ،وقال أبو داود : رافضي يشتم أبا بكر وعمر.


এই সনদ ত্রুটিপুর্ণ, তালিদ বিন সুলাইমান রাফজি, কাজ্জাব ছিলো।ইমাম ইবনে মইন বলেন সে কাজ্জাব ছিলো, হজরতে উসমানকে গালি দিতো।ইমাম আবু দাউদ বলেন সে রাফজি ছিলো হজরতে আবু বকর ও উমারকে (রাদিআল্লাহু আনহুমা) গালি দিতো।


(মিজানুল এইতেদাল খন্ড-১ পৃষ্ঠা-৩৫৮)



❏ হাদিস ২২:



উপরি উক্ত হাদীসটি আরো একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করলাম


 حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ : نا مُحَمَّدُ بْنُ مَرْزُوقٍ قَالَ : حَدَّثَنِي حُسَيْنُ بْنُ الْحَسَنِ الْأَشْقَرُ ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ مُوسَى ، عَنْ أَبِي مَضَاءٍ ، وَكَانَ رَجُلَ صَدْقٍ ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ صُبَيْحٍ ، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ ، عَنْ جَدِّهِ صُبَيْحٍ  قَالَ : كُنْتُ بِبَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَجَاءَ  عَلِيٌّ وَفَاطِمَةُ وَالْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ ، فَجَلَسُوا نَاحِيَةً ، فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا ، فَقَالَ : إِنَّكُمْ عَلَى خَيْرٍ وَعَلَيْهِ كِسَاءٌ خَيْبَرِيُّ ، فَجَلَّلَهُمْ بِهِ ، وَقَالَ : أَنَا حَرْبٌ لِمَنْ حَارَبَكُمْ ، سَلْمٌ لِمَنْ سَالَمَكُمْ لَا يُرْوَى هَذَا الْحَدِيثُ عَنْ صُبَيْحٍ مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ إِلَّا بِهَذَا الْإِسْنَادِ ، تَفَرَّدَ بِهِ حُسَيْنٌ الْأَشْقَرُ وَقَدْ رَوَاهُ  السُّدِّيُّ : عَنْ صُبَيْحٍ ، عَنْ  زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ


ইবরাহীম বিন আব্দুর রাহমান বিন সুবহাই মওলা উম্মে সালমা নিজের দাদু সুবাহাই হইতে বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রসুল (ﷺ) এর দরজার পাশে ছিলাম। হজরত আলী, হজরতে ফাতিমা, ইমাম হাসান ও হুসাইন ( রাদিয়াল্লাহু আনহুম)এসে একটি কোনায়  বসে গেলেন। আল্লাহর রসুল (ﷺ) আমাদের দিকে বেরিয়ে এসে বললেন, তোমরা খায়রের উপর আছো। এবং তাদের উপর খাইবারের চাদর  ছিলো এবং তাদেরকে চাদর দ্বারা ঢেকে নিয়ে বললেন আমি তার সাথে যুদ্ধরত হই, যে তোমাদের সাথে যুদ্ধরত হয়।আর আমি তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করি যারা তোমাদের  সাথে শান্তি স্থাপন করে”।


(১)ম'জুমুল আওসাত,বাবুল আলিফ,হাদীস নং-২৯৬৪


(২)মাজমাউজ জাওয়ায়িদ, কিতাবুল মানাকিব, হাদীস নং-১৪৯৮৯



প্রথমত, ১৬নং হাদিসের ব্যাখ্যায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে যে, ইজতেহাদী ভুলের কারণে এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।


দ্বিতীয়ত, এমন হাদিসও বিদ্যমান যেখানে আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) ইমাম হাসান (রাঃ) এর সাথে শান্তি চুক্তি করেছিলেন।


তৃতীয়ত,


পুর্বেই প্রমাণ করেছি সুবাইহ মওলা একজন বিতর্কিত রাবি এছাড়া উক্ত বর্ণনায় হাসান বিন হুসাইন আল আশকার সম্বন্ধে সমালোচনা রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো


وهذا إسناد ضعيف جدا ، حُسَيْنُ بْنُ الْحَسَنِ الْأَشْقَرُ قال البخاري فيه نظر، وقال مرة عنده مناكير، وقال أبو زرعة منكر الحديث ، وقال أبو حاتم ليس بقوي،


অত্র হাদীসটি অতিমাত্রায় দুর্বল। ইমাম বুখারী বলেন হুসাইন আল আস্কার এর সম্বন্ধে সমালোচনা রয়েছে। ও  মাররাত বলেন তার নিকট সে মুনকার।আবু জারা'হ বলেন সে মুনকারুল হাদীস ছিলো।আবু হাতিম বলেন বর্নায় শক্তিশালী ছিলো না (দুর্বল ছিলো)।


[তাহিজবুত তাহজিব, খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৩১০]



وقال الأزدي : وضعيف، سمعت أبا يعلى قال: سمعت أبا معمر الهذلى يقول: الأشقر كذاب


আল আজাদি বলেন সে জইফ ছিলো, আমি আবু ইয়ালা থেকে শুনেছি তিনি বলেন আমি আবু মা'মার হাজলিকে বলতে শুনেছি, আল আসকার কাজ্জাব ছিলো।



তথ্যসূত্রঃ


(১)মুসনাদে আবু ইয়ালা, খন্ড-১২ পৃষ্ঠা-১৩০


(২)তাহজিবুল কামাল ফি আসমাউ রিজাল, খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা-২৬৯


(৩)তাহজীবুত তাহজীব খন্ড-২ পৃষ্ঠা-২৯২



উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায় , হাদীসটি বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হলেও  সমস্ত সনদে বিতর্কিত রাবিগন বিদ্যমান । প্রথম সনদে দেখা যায় সুবহাই মওলা স্পষ্ট মিথ্যাবাদী ছিলো এবং হজরতে উসমান ও আইশা সম্পর্কে অপবাদ রটিয়ে বেড়াতো। দ্বিতীয় সনদে দেখা গেলো তালিদ বিন সুলাইমান একজন রাফজি, যে হজরতে উসমান ও আবু বকর সিদ্দিককে গালি দিয়ে বেড়াতো সঙ্গে মিথ্যাবাদীও ছিলো। তৃতীয় সনদে হুসাইন আল আসকার একজন মুনকারুল হাদীস ছিলো এবং  উক্ত সনদেও সুবহাই মওলা উপস্থিত আছে । আগেই দেখেছি সে একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী। অতএব বলা যায় এইসব  মিথ্যুক বা বিতর্কিত বর্ণনাকারী বা সাক্ষীর বর্ণনা বা সাক্ষ্য গ্রহনযোগ্য নয় বরং প্রত্যাখ্যাত।  তাছাড়া সিফফিন যুদ্ধে মওলা আলী তার প্রতিপক্ষ যে শুধু মুসলমানই নয় বরং তারা জান্নাতিও বটে,  তা মওলা আলী নিজে স্বীকার করেছেন। তাই তাদের কাছে আর সুযোগ নেই আমীরে মুয়াবিয়া ও তার নেতৃত্বে সৈনদলকে কাফীর বলে। আর শিয়ারা যদি মওলা আলীকে মানার দাবিদার হয়ে থাকে, আশা করি তা  প্রমাণ করতে মওলা আলীর এই বানীও স্বীকার করে নেবে । যারা অস্বীকার করবে তারা সিফফিন যুদ্ধে আমীরে( মুয়াবিয়া সাথে দন্দ মেটাতে) সালিশি না মেনে মওলা আলীর যেসব  শিয়া বা অনুসারীরা তার দল ত্যাগ করেছিল এবং খারজি হয়ে গিয়েছিলো, তাদেরকে সেই খারজি বলে  ধরা হবে।


এখানেই শেষ নয় যেহেতু শিয়ারা আমীরে মুয়াবিয়াকে মওলা আলীর বিদ্বষী বলেই চিহ্নিত করতে চায়, কিছু বর্ণনার মাধ্যমে নিজেদের অভিযোগ  প্রমাণ করার চেষ্টা করে। তার মধ্যে নিম্নোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখযোগ্য,



❏ হাদিস ২৩:



أَخْبَرَنَا أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ بْنِ حَكِيمٍ الْأَوْدِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ صَالِحٍ، عَنْ مَيْسَرَةَ بْنِ حَبِيبٍ، عَنْ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، قَالَ: كُنْتُ مَعَ ابْنِ عَبَّاسٍ، بِعَرَفَاتٍ، فَقَالَ: «مَا لِي لَا أَسْمَعُ النَّاسَ يُلَبُّونَ؟» قُلْتُ: يَخَافُونَ مِنْ مُعَاوِيَةَ، فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ، مِنْ فُسْطَاطِهِ، فَقَالَ: «لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ فَإِنَّهُمْ قَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِيٍّ»


সাঈদ ইবন জুবায়র (رحمة الله) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন  আমি ইবন আব্বাসের (رضي الله عنه) সঙ্গে আরাফায় ছিলাম। তিনি বললেন কী হলো লোকজনের তো তালবিয়া পাঠ করতে শুনছি না? আমি বললাম মুআবিয়ার (رضي الله عنه) ভয়ে। এরপর ইবন আব্বাস (رضي الله عنه) তাঁর  হতে বের হয়ে ঘোষনা দিলেন  لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ এবং বললেন  তারা  (رضي الله عنه)সুন্নতকে আলীর প্রতি ঘৃনায়  ত্যাগ করেছে।



তথ্যসূত্রঃ


(১)সুনানে নাসায়ি,কিতাবুল মানাসিকিল হজ, হাদীস নং-৩০০৬


(২)ইমাম নাসায়ি,সুনানুস সুগরা,হাদীস নং-২৯৮৯


(৩)হাকিম আল মুস্তাদরাক, হাদীস নং-১৬৫৯


(৪)সহি ইবনে খুজাইমাহ, হাদীস নং-২৬১৭



❏ হাদিস ২৪:



 أَخْبَرَنَا أَبُو الْحَسَنِ مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ الْعَلَوِيُّ , أنبأ عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ بْنِ الشَّرْقِيِّ , ثنا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ النَّسَوِيُّ , ثنا خَالِدُ بْنُ مَخْلَدٍ , ثنا عَلِيُّ بْنُ صَالِحٍ , عَنْ مَيْسَرَةَ بْنِ حَبِيبٍ النَّهْدِيِّ , عَنِ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرِو , عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ , قَالَ: كُنَّا عِنْدَ ابْنِ عَبَّاسٍ بِعَرَفَةَ , فَقَالَ: " يَا سَعِيدُ مَا لِي لَا أَسْمَعُ النَّاسَ يُلَبُّونَ؟ " فَقُلْتُ: يَخَافُونَ مُعَاوِيَةَ فَخَرَجَ ابْنُ عَبَّاسٍ مِنْ فُسْطَاطِهِ , فَقَالَ: " لَبَّيْكَ اللهُمَّ لَبَّيْكَ وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ مُعَاوِيَةَ اللهُمَّ الْعَنْهُمْ فَقَدْ تَرَكُوا السُّنَّةَ مِنْ بُغْضِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ"


“সাইদ ইবেন যুবাইর বর্ননা করেছেন যে আরাফাতে ইবনে আব্বাসের সাথে ছিলাম, তিনি বললেন যে হে সাইদ! লোকেদের তালবিয়া পড়তে শুনছিনা যে?আমি বললাম মুয়াবিয়ার ভয়ে। (লোকরা তালবিয়া পড়ছে না), ইবনে আব্বাস তাবু থেকে বার হয়ে তিনি ঘোষনা দিলেন লাব্বাইক আল্লাহ হুম্মা লাব্বাইক এবং বললেন মুয়াবিয়ার নাকের ডগায়  হে আল্লাহ তাদের প্রতি লানত তারা সুন্নত কে আলির প্রতি বিদ্বেষের কারনে ত্যাগ করেছে।


(ইমাম বাইহাকি, সুনানুল কুবরা,হাদীস নং-৮৮৮০)



উপরিউক্ত বর্ণনা দুটি, শিয়াদের অভিযোগ সাপেক্ষে দলিলাদির মধ্যে একটি। ইহার  উপর ভিত্তি করে শিয়াদের বক্তব্য আমীরে মুয়াবিয়া, মওলা আলী বিদ্বেষী ছিলেন।



তাদের আপত্তির জবাবঃ



উপরিউক্ত দুই হাদীস দেখলে বোঝা যায় , উভয় বর্ণনায় রাবির সিলসিলা বা সনদ একিরুপ। অর্থাৎ  উক্ত বর্ণনাটি  ফারদে মুতলাক বা গরিবে মুতলাক।অথচ দুটি বর্ণনায় মতনের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা দেখা দিচ্ছে। ইমাম বাইহাকির বর্ণনায়  وَإِنْ رَغِمَ أَنْفُ مُعَاوِيَةَ اللهُمَّ الْعَنْهُمْ অর্থাৎ বললেন মুয়াবিয়ার নাকের ডগায়  হে আল্লাহ তাদের প্রতি লানত  উক্ত উদ্ধৃতাংশটি অতিরিক্ত আছে। যেখানে উভয় বর্ণনায় মুল বর্ণনাকারী হলেন সায়িদ ইবনে যুবাইর তিনি ছাড়া অন্য  কোন সাহাবী বা বর্ণনাকারী এইধরণের বর্ণনার প্রমাণ নেই । তার থেকে একমাত্র শ্রবনকারী হলেন মিনহাল বিন আমর, তার থেকে একমাত্র শ্রবণকারী হলেন মাইসারাহ বিন হাবিব তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন আলী বিন স্বলেহ তার থেকে একমাত্র শ্রোতা হলেন খালিদ বিন মুখাল্লাদ। অতএব উক্ত বর্ণনাটি খাবরে গারীবে মুতলাকা। যেখানে হাদীসের উসুল অনুযায়ী খবরে ওয়াহিদে মতনে সরাসরি সন্দেহ থাকে। যেমনঃ



 فهو كذالك فى حق السنّة الّا انّ الشبهة فى باب الخبر فى ثبوته من رسول الله صلى الله عليه وسلم واتصاله به ولهذا المعنى صار الخبر على ثلثة اقسام صحّ من رسول اللهصلى الله عليه وسلم وثبت منه بلاشبهة وهو المتواتر وقسم فيه ضرب شبهة وهو المشهور قسم فيه ا حتمال و شبهة وهو الاحاد


খবরের মধ্যে উহা নবী (ﷺ) থেকে প্রমাণিত কিনা এবং নবীর (ﷺ) পর্যন্ত বর্ণনা দ্বারা পৌছেছে কিনা তাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয়ে থাকে এ জন্য খবর তিন প্রকার


১. যা নবী করিম (ﷺ) হইতে সন্দেহাতীত ভাবে সহীহ হিসেবে প্রামাণিত হয়েছে তাহাই খবরে মুতাওয়াতির


২. যাতে একপ্রকার সন্দেহ রয়েছে তাহা হল খবরে মাশহুর


৩. যাতে সন্দেহ সংশয় উভয় রয়েছে তাকে খবরে আহাদ বলে ।


(উসুলে শাশীর ২৮৯ পৃষ্ঠা, ইসহাক হাকিম আল রুমিরর (৯৫০হিজরি) লিখিত শারহ ফিকহুল আকবারের ৮১ পৃষ্ঠায় এবং আলাউদ্দিন বুখারীর (৮৪১ হিজরি) লিখিত কাস্ফুল আসরারের-১৪ পৃষ্ঠা)



আর উক্ত বর্ণনাটি তো একেবারেই গরীব প্রকৃতির,তার মতন সন্দেহ মুক্ত হতে পারে না। তাছাড়া উক্ত সনদে একজন রাবির সম্বন্ধে অভিযোগ রয়েছে, তার দলিল নিম্নেঃ



وقال ابن أبي حاتم: أنا عبد الله بن أحمد بن حنبل فيما كتب إلي قال: سألت أبي عن خالد بن مخلد فقال: له أحاديث مناكير.


ইবনে আবি হাতিম বলেন, আমাকে আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন হাম্বাল খবর দিলেন যখন  আমার নিকট চিঠি লিখল আমি আমার পিতাকে খালিদ বিন মুখাল্লাদ সম্বন্ধে  জিজ্ঞাসা করলাম । তিনি তাকে উত্তর দিলেন সে হাদীসে মুনকার ছিলো।  


(ইবনে খালফুন, আল মুয়াল্লাম বি শাইখুল বুখারী ওয়া মুসলিম, পৃষ্ঠা-১৬৭)



وَقَالَ أَحْمَدُ بنُ حَنْبَلٍ: لَهُ أَحَادِيْثُ مَنَاكِيْرُ.


وَقَالَ مُحَمَّدُ بنُ سَعْدٍ: كَانَ مُنْكَرَ الحَدِيْثِ، مُفْرِطاً فِي التَّشَيُّعِ، وذكره ابن عدي في " كامله " فأورد له عدة أحاديث منكرة .


আহমাদ বিন হাম্বাল তার সম্পর্কে  বলেন সে হাদীসের ক্ষেত্রে মুনকার ছিলো।মুহাম্মাদ বিন সা'দ (ইবনে সা'দ) বলেন সে মুনকারুল হাদীস ছিলো এবং সে চরমপন্থি শিয়িদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ইবনে আদী তার কামিলে খালিদ বিন মুখললাদ সম্পর্কে উল্লেখ  করেছেন তার বর্ণনায়  অতিরিক্ত মুনকার হাদীস বর্তমান।


সিয়ারু আলামিন নুবালায়ি, খন্ড-১০,পৃষ্ঠা-২১৮



قال ابن سعد: كان منكر الحديث، في التشيع مفرطا،


ইবনে সা'দ বলেন সে মুনকারুল হাদিস ছিলো এবং সে চরমপন্থি শিয়াদের অন্তর্গত ছিলো।


(তাবকাত, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-৪০৬)



উপরিউক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, উক্ত হাদীসের সনদে খালিদ বিন মুখাল্লাদ নামক রাবিটি বিতর্কিত।আর তার সমর্থক বর্ণনাকারীও পাওয়া যায়নি। অতএব এমন বিতর্কিত রাবি আর তার সমর্থকহীন বর্ণনাকারী না থাকায় উক্ত বর্ণনায় কোন ভাবে আস্থা রাখা যাচ্ছে না। তাছাড়া খালিদ বিন মুখাল্লাদ একজন কট্টর শিয়া ছিলো ।তাই শিয়া হয়ে আমীরে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা বলবে এটাই স্বাভাবিক।



এখন সিফফিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমীরে মুয়াবিয়ার উপর শিয়াদের বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দেওয়া হয়েছিলো,  এই পর্বেও সেই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। এই আলোচনায় সিফফিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমীরে মুয়াবিয়ার প্রতি শিয়াদের  আরো কিছু অভিযোগ ও অপবাদের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ । আলোচ্য বিষয়ানুযায়ী,  দেখে নেওয়া যাক সিফফিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে শিয়ারা আমিরে মুয়াবিয়ার উপর আরো কি কি অভিযোগ দেয়। তার সমর্থক দলিল গুলি কি দিয়ে থাকে তাও দেখার বিষয়। তারপর আলোচনা ভিত্তিক জবাবের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে পইনশাআল্লাহ । সিফফিন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমিরে মুয়াবিয়ার উপর  শিয়াদের অন্যতম অভিযোগ,  নিম্নোক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে।



❏ হাদিস ২৫:



حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ العَزِيزِ بْنُ مُخْتَارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا خَالِدٌ الحَذَّاءُ ، عَنْ عِكْرِمَةَ ، قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ وَلِابْنِهِ عَلِيٍّ : انْطَلِقَا إِلَى  أَبِي سَعِيدٍ  فَاسْمَعَا مِنْ حَدِيثِهِ ، فَانْطَلَقْنَا فَإِذَا هُوَ فِي حَائِطٍ يُصْلِحُهُ ، فَأَخَذَ رِدَاءَهُ فَاحْتَبَى ، ثُمَّ  أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى أَتَى ذِكْرُ بِنَاءِ المَسْجِدِ ، فَقَالَ : كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً وَعَمَّارٌ لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ ، وَيَقُولُ : وَيْحَ عَمَّارٍ ، تَقْتُلُهُ الفِئَةُ البَاغِيَةُ ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ قَالَ : يَقُولُ عَمَّارٌ : أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ


ইকরিমাহ হইতে বর্ণিত, তিনি বলে ইবনে ‘আব্বাস (رضي الله عنه) আমাকে ও তাঁর ছেলে ‘আলীকে বললেন, তোমরা উভয়ই আবূ  সা‘ঈদের (رضي الله عنه) নিকট যাও এবং তাঁর হতে হাদীস শুনে আস। আমরা গেলাম। তখন তিনি এক বাগানে কাজ করছিলেন । তিনি আমাদেরকে দেখে চাদরে হাঁটু মুড়ি দিয়ে বসলেন এবং পরে হাদীস বর্ণনা শুরু করলেন। শেষ পর্যায়ে তিনি মসজিদে নববী নির্মাণ আলোচনায় আসলেন। তিনি বললেন আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর ‘আম্মার (رضي الله عنه) দু’টো দুটো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। আল্লাহর নবী (ﷺ) তা দেখে তাঁর দেহ হতে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, ‘আম্মারের জন্য আফসোস! তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে আহব্বান করবে আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে আহবান করবে । হজরতে ‘আম্মার (رضي الله عنه) বললেন, আমি ফিতনাহ হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।


➥(সহিহ বুখারী, কিতাবুস সালাত, হাদীস নং-৪৩৮)



উক্ত হাদীসে  লক্ষ করার বিষয় হলো,  হজরতে আম্মারকে হত্যা করবে  এক বিদ্রোহী দল এবং হজরতে আম্মার তাদেরকের  জান্নাতের দিকে আহব্বান করবেন আর তারা হজরতে আম্মারকে জাহান্নামের দিকে আহব্বান করবে। এই দুটো বিষয়ের উপর ভিত্ত করেই শিয়াদের লাফালাফির সূত্রপাত । বিশেষ করে হজরতে আম্মারের হত্যাকারী দলটি হবে   জাহান্নামের দিকে আহব্বানকারী দল,  উদ্ধৃতাংশটির উপর শিয়ারা  বেশী লাফালাফি করে। এবং উক্ত হাদীসের ভিত্তিতে শিয়ারা আমীরে মুয়াবিয়াকে জাহান্নামী প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকে। তাই প্রথমে দেখতে হবে হজরতে আম্মারের হত্যা কারা করেছে এবং তার ভিত্তিতে আদৌ তারা জাহান্নামি হবে কিনা তা দেখার প্রয়োজন আছে।হজরতে আম্মারের হত্যাকারী দলটি হলো আমীরে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বাধীন সৈনদল, সমর্থক দলিল হিসাবে শিয়ারা নিম্নোক্ত হাদীসটি পেশ করে থাকে।



❏ হাদিস ২৬:



حَدَّثَنَا عَبْد اللَّهِ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُو مُوسَى الْعَنَزِيُّ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي عَدِيٍّ عَنِ ابْنِ عَوْنٍ عَنْ كُلْثُومِ بْنِ جَبْرٍ قَالَ كُنَّا بِوَاسِطِ الْقَصَبِ عِنْدَ عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَامِرٍ قَالَ فَإِذَا عِنْدَهُ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ أَبُو الْغَادِيَةِ اسْتَسْقَى مَاءً فَأُتِيَ بِإِنَاءٍ مُفَضَّضٍ فَأَبَى أَنْ يَشْرَبَ وَذَكَرَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ هَذَا الْحَدِيثَ لَا تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا أَوْ ضُلَّالًا شَكَّ ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ فَإِذَا رَجُلٌ يَسُبُّ فُلَانًا فَقُلْتُ وَاللَّهِ لَئِنْ أَمْكَنَنِي اللَّهُ مِنْكَ فِي كَتِيبَةٍ فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ صِفِّينَ إِذَا أَنَا بِهِ وَعَلَيْهِ دِرْعٌ قَالَ فَفَطِنْتُ إِلَى الْفُرْجَةِ فِي جُرُبَّانِ


الدِّرْعِ فَطَعَنْتُهُ فَقَتَلْتُهُ فَإِذَا هُوَ عَمَّارُ بْنُ يَاسِرٍ قَالَ قُلْتُ وَأَيَّ يَدٍ كَفَتَاهُ يَكْرَهُ أَنْ يَشْرَبَ فِي إِنَاءٍ مُفَضَّضٍ وَقَدْ قَتَلَ عَمَّارَ بْنَ يَاسِرٍ


কুলসুম বিন জাবির (رضي الله عنه) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন একদা আব্দুল আ'লী বিন আমিরের নিকট আঁখ বাগানে  বসেছিলো। তখনই সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তি যার নাম আবু গাদিয়া ছিলো তিনি পানি চাইলেন। তখনই তার জন্য একটি চাঁদির পাত্রে করে পানি নিয়ে আসা হলো কিন্তু তিনি তা পান করতে অস্বীকার করে দিলেন। আর আল্লাহর নবী (ﷺ) এর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে একটি হাদীস বর্ণনা করে বল্লেন, আল্লাহর নবী বলেছেন আমার পরে কাফির আর গুমরাহ হয়ে যেওনা যে একেঅপরের গর্দান উড়িয়ে দাও। হঠাৎ এক ব্যক্তি আর একজনকে উল্টোপাল্টা বলতে শুরু করে দিলো। আমি বললাম যে, আল্লাহর কসম যদি আল্লাহ আমাকে লস্করের মধ্যে তোমার বিরুদ্ধে শক্তি দান করে (তাহলে হিসাব নেবো)। ঘটনাবসত সিফফিন যুদ্ধের সময় তাকে আমি সামনেই পেলাম। সে রক্ষাকবচ পরিধান করেছিলো কিন্তু আমি সেই রক্ষাকবচের খালি যায়গায় আঘাত করলাম। পরে জানা গেলো তিনি আম্মার বিন ইয়াসির ছিলেন। তখন আমি আফসোস করে বললাম এটা কোন হাত যে চাঁদির পাত্রে পানি পান করতে অস্বীকার করেছে? যদিও এই হাতই হজরতে আম্মারকে শহিদ করে দিয়েছে।


১.মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬২৫৭

২.ইমাম তাবারানি, ম'জুমুল কাবির, হাদীস নং -১৭৫৪১

৩.ইমাম আবু নুইয়েম, মারেফাতুস সাহাবা, হাদীস নং-৬৩২০

________________

আমীরে মুয়াবিয়া (রা.) সম্পর্কে  বিতর্কের সমাধান কৃতঃ আবু আইয়্যুব কাদেরী (সম্পাদিত)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন