সকল সৃষ্টি প্রাণবন্ত হলো


সকল সৃষ্টি প্রাণবন্ত হলো  


এরপর মালায়ে আলায় তাঁকে প্রকাশ করা হলো। সেখানে তিনি দীর্ঘ দৃষ্টি দিলেন, ফলে সকল সৃষ্টি প্রানবন্ত হলো। ঐ সময়ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সকল জাতির সর্বোচ্ছে ওকে শ্রেষ্ট জাতি হিসেবে নির্বাচন করা হলো। এমনকি প্রকৃত পক্ষে তাঁকে ঐ সময়ই সমগ্র মানব দানব ও সৃষ্টি কুলের আবুল আকবার বা সুবৃহৎ পিতা হিসেবে নির্বাচন করা হলো।



যখন হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর বাতেনী নাম আকৃতির মেয়াদ অর্থাৎ: মিছালী ছুরতে থেকে জিসমানী ছুরতে প্রকাশের সময় ঘনিয়ে আসলো মহান আল্লাহ পাক তাঁকে যাহেরী ছুরতে এনে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম নাম ধারন করে রূহ ও দেহের সংমিশ্রনে জমিনে প্রেরন করলেন। মোট কথা হলো, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর গঠন ও কাঠামো যদিও বিলম্বে প্রকাশ করা হয়েছিল তবুও তাঁর সার্বিক মুল্যায়ন যুগে যুগে পরিচিত হয়ে আসছিল। তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। যেহেতু তিনি হচ্ছেন সমগ্র বিষয়ের গুপ্ত ভান্ডার, সকল বিষয় বাস্তবায়নের আধার। তাঁর ইশারা ব্যতীত কোন কাজ বাস্তবায়িত হতোনা, যুগে যুগে সকল কল্যান ও মঙ্গল তাঁর থেকেই বন্টিত হতো।



একথার সমর্থনে জনৈক কবি কতইনা উত্তম কথা বলেছেন:



الا يابى من كان ملكا وسيدا * وادم بين الماء ولطين واقف


فذاك الرسرل الابطحى محمد* له فى العلا محد تليد وطارف-


 اتى لزمان السعد فى امر المدى * وكان له فى كل عصر مواقف


 اذا رام امرا لايكون خلافه * وليس لذالك الامر فى الكون صارف-



অর্থাৎ: ইমাম মুল্লা আলী ক্বারী (رضي الله عنه ) বলেন:


আবী সাহল কাত্তান (رضي الله عنه ) প্রণীত আমালী গ্রন্থে আছে তিনি হযরত সাহল ইবনে সালেহ আল হামদানী (رضي الله عنه ) হতে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: আমি হযরত আবু জাফর মুহাম্মদ বিন আলীকে নিবেদন করি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী হিসেবে প্রেরীত হওয়া সত্বে ও কিভাবে তিনি সকল নবীর অগ্রে স্থান পেলেন? তিনি বলেন: আল্লাহ পাক যখন আদম (عليه السلام ) সহ সমগ্র বনী আদমের রুহকে একত্রিত করে তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি গ্রহণ করত: বললেন الست بربكم অর্থাৎ: আমি কি তোমাদের রব নই? তখন সর্বাগ্রে রূহে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন بلى হ্যা! আপনি আমাদের রব। এ জন্য তিনি সর্বাগ্রে স্থান দখণ করেন।



হযরত ইবনে সাদ ইমাম শা.বী (رضي الله عنه ) বর্ণনা করেন। তিনি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিবেদন করেন হে আল্লাহর রাসূল! কবে থেকে আপনি নবী ছিলেন? জবাবে তিনি বললেন: وادم بين الروح و الجسد অর্থাৎ আদম (عليه السلام ) রূহ ও দেহাবয়বের মধ্যখানে থাকাবস্থায় আমি নবী ছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন হুযূরে পাকের বাণী : حين اخذ منى الميثاق বাক্য দ্বারা হুযূর একথাই বুঝিয়েছেন যে, হযরত আদম (عليه السلام ) এর গঠন ও অবকাঠামো গঠনের পর তাঁর ভেতর থেকে আমার নূরে মুহাম্মাদীকে বের করে এনে সর্বপ্রথম আমার থেকে আল্লাহ পাক তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি গ্রহন করেন। এরপর পুন:রায় নূরে মুহাম্মদীকে তাঁর পৃষ্টদেশে ফিরিয়ে নেন, যাতে করে আদম (عليه السلام ) এর ধীরতা ও শান্ত ভাব জন্মে।



এতএব, হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সৃষ্টি কুলের প্রথম সৃষ্টি যে সময় আদম (عليه السلام ) এর সৃষ্টি মৃত প্রায় ছিল, যখন তাঁর রূহে পাকের কোন অস্তিত্বই ছিলনা তখন ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম জীবিত ও প্রানবন্ত ছিলেন এবং প্রথম তাঁর থেকে অঙ্গীকার গ্রহন করা হয়েছিল বিধায় সৃষ্টিগত ধারাবাহিকতায় তিনি ছিলেন প্রথম নবী এবং প্রেরীত হওয়ার ধারাবাহিকতায় তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী।


 


তাফসীরে ইবনে কাছীরে বর্ণিত ইমাম ইবনে কাছীর দিমাশকী (رضي الله عنه ) হযরত আলী ও ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) দ্বয়ের বর্ণিত হাদীস উল্ল্যেখ করত: বলেন তাঁরা বলেন: আয়াতে বর্ণিত وَإِذْ أَخَذَ اللّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّيْنَ দ্বারা উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ পাক ততক্ষন পর্যন্ত কোন নবীকে নবুওয়তী দান করেননি অতক্ষন পর্যন্ত না তাঁরা হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়তী স্বীকার করত: যদি তিনি তাদেঁর মধ্যে আসেন অথবা জীবিত থাকেন এবং তাঁরা তাঁকে সাহায্য করবে এবং ঈমান আনয়ন করবে এ অঙ্গিকার দিবে।



অর্থাৎ: হুযূরে পাকের প্রতি তাঁদের ঈমান আনয়ন করত: সাহায্য করার অঙ্গীকারের শর্তে তাঁদেরকে নবুওয়তী প্রদান করা হয়েছে।


এবং এ শর্তেও নবুওয়তী প্রদান করা হয়েছে যে, তাঁরা যাবত স্বীয় সমপ্রদায়ের কাছে তাঁর নবুওয়তীর স্বীকৃত্তি ও ঈমান গ্রহণ করে।



ইমাম ছুবকী (رضي الله عنه ) বর্ণিত আয়াত وَإِذْ أَخَذَ اللّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّيْنَ দ্বারা একথা বুঝিয়েছেন যে, আয়াতে যখন সমস্ত নবীদের থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনয়ন ও তাঁকে সাহায্য করার স্বীকৃতি নে য়া হয়েছে সেহেতু তাঁরা সকলেই তাঁর উম্মতভূক্ত হয়ে গেলেন বিধায় যুগে যুগে নবী হিসেবে তাঁর মিছালী অস্থিত্ব বিরাজমান ছিল। আর একারনেই তাঁর নবুওয়ত রেসালত আদম (عليه السلام ) থেকে নিয়ে ক্বেয়ামত অবধি তথা সমগ্র সৃষ্টি কুলের জন্য ব্যাপকতায় পরিনত হয়ে গেল। তিনি যে সমগ্র নবীগণ ও তাদেঁর সমপ্রদায়ের নবী ছিলেন তার বাস্তবতা পাওয়া যায় স্বীয় বাণী হতে: তিনি বলেন: وبعثت الى الناس كافة অর্থাৎ: সমগ্র মানব জাতির হেদায়েতে আমার প্রেরিত হওয়াই যতেষ্ট। এর আরও সমর্থন মিলে তাঁর অমীয় বাণী : كُنْتُ نَبِيًّا وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالْجَسَدِ বাক্য দ্বারা।



এখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে, কেয়ামতের ভয়াল মাঠে সমগ্র নবীগণ (عليه السلام ) তাঁর লেওয়ায়ে হামদের পতাকাতলে অবস্থান করবেন অথবা মেরাজ রজনীতে সকলের জন্য তিনি কর্তৃক সালাত পাঠ করার হেকমত কি? গ্রন্থকার (رضي الله عنه ) এর প্রতিউত্তরে বলেন: এ বিষয়ে ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী (رضي الله عنه ) এর বক্তব্যই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন: মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণী-



تَبَارَكَ الَّذِي نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلَى عَبْدِهِ لِيَكُونَ لِلْعَالَمِينَ نَذِيراً



অর্থাৎ: বরকতপূর্ণ সে মহান খোদা পাক, যিনি ফুরক্বান তথা পবিত্র কুরানে পাকে তাঁর স্বীয় বান্দাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম র প্রতি এজন্য অবতীর্ণ করেছেন, যাতে করে তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য ভীতি প্রদর্শণকারী হন। বর্ণিত আয়াতে পাকে সমগ্র বিশ্ববাসী বলতে ফেরেস্তাকুল সহ ৮০ হাজার আলমের ৫০ বা ১৮ হাজার জীবকে অন্তভূর্ক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ: তিনি এ সবেরও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে আগমন করেছেন, কেবল মানব জাতীর জন্য সীমাবদ্ধ নয়।

_______________

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন