প্রথম সৃষ্টি নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

 

প্রথম সৃষ্টি নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 



ইমাম মুল্লা আলী কারী رضي الله عنه  বলেন:-

হযরত আব্দুর রাজ্জাক (رضي الله عنه ) স্বীয় গ্রন্থে হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) হতে বিশুদ্ধ সনদে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনছারী (রা.) বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে নিবেদন করলাম হে আল্লাহর হাবীব! আমার মাতা-পিতা আপনার প্রতি কুরবান হোন। আপনি আমাকে এ সংবাদ দান করুন যে, মহান আল্লাহ পাক সকল কিছুর পূর্বে কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন? জাবাবে হুযূরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:



أخرج عبد الرَّزَّاق بِسَنَدِهِ عَن جَابر بن عبد الله الْأنْصَارِيّ رَضِي الله عَنْهُمَا قَال قلت: يَا رَسُول اللهِ بِأبي أَنْت وَأمي أَخْبرنِي عَن أوّل شَيْء خلقه الله قبل الْأَشْيَاء؟ قَالَ: يَا جَابر إِن الله خلق قبل الْأَشْيَاء نور نبيك مُحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من نوره فَجعل ذَلِك النُّور يَدُور بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ الله، وَلم يكن فِي ذَلِك الْوَقْت لوح وَلَا قلم وَلَا جنَّة وَلَا نَار وَلَا ملك وَلَا سَمَاء وَلَا أَرض وَلَا شمس وَلَا قمر وَلَا إنس وَلَا جن، فَلَمَّا أَرَادَ الله تَعَالَى أَن يخلق الْخلق قسم ذَلِك النُّور أَرْبَعَة أَجزَاء: فخلق من الْجُزْء الأوّل الْقَلَم، وَمن الثَّانِي اللَّوْح، وَمن الثَّالِث الْعَرْش، ثمَّ قسم الْجُزْء الرَّابِع أَرْبَعَة أَجزَاء: فخلق من الأول حَملَة الْعَرْش، وَمن الثَّانِي الْكُرْسِيّ، وَمن الثَّالِث بَاقِي الْمَلَائِكَة ثمَّ قسم الرَّابِع أَرْبَعَة أَجزَاء: فخلق من الأول نور أبصار الْمُؤمنِينَ، وَمن الثَّانِي نور قُلُوبهم وَهِي الْمعرفَة بِاللَّه وَمن الثَّالِث نور أنسهم وَهُوَ التَّوْحِيد لَا إِلَه إِلَّا الله مُحَمَّد رَسُول اللهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم) - الحديث- هكذا فى المواهب اللدنية كان مرويا-



অর্থাৎ: তিনি বলেন হে জাবের (رضي الله عنه)  নিশ্চয় আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে তোমার নবীর ‘নূর’ মোবারক সৃষ্টি করেন।



(অথার্ৎ আল্লাহ পাক এর প্রথম সৃষ্টি হচ্ছে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।) অত:পর সে ‘নূর’ মোবারক আল্লাহ পাক এর ইচ্ছা অনুযায়ী কুদরতিভাবে ঘুরছিল। আর সে সময় লৌহ, কলম, বেহেশত দোযখ, ফেরেস্তা, আসমান, জমীন, চন্দ্র, সুর্য, মানুষ ও জ্বীন কিছুই ছিলনা।



 অত:পর মহান আল্লাহ পাক মাখলুকাত সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। তখন সে ‘নূর’ মোবারক থেকে একটা অংশ নিয়ে চারভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ক্বলম, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা লওহে মাহফুজ, তৃতীয় ভাগ দ্বারা আরশ বহনকারী ফেরেস্তা, সৃষ্টি করেন। অত:পর চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগে বিভক্ত করেন। প্রথম ভাগ দ্বারা আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা যমীন, আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা বেহেস্ত ও দোযখ সৃষ্টি করেন। নূরের অবশিষ্ট এ চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন। প্রথম ভাগ দ্বারা মুমিন বান্দাদের চোখের জ্যোতি, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা তাদের ক্বলবের জ্যোতি, আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা মুমিনের উনসের ‘নূর।’



টিকা (শুরু):______________________




 


হযরত জাবের (রা.) কর্তৃক নূরে মুহাম্মাদী সংক্রান্ত হাদীস বিশুদ্ধ তাতে বিভ্রুান্ত হবার কিছু নেই। তবে হাদীসের মতনের ব্যাপারে কিছু মতানৈক্য থাকলেও ইমাম তিরমীযী (رضي الله عنه ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের ব্যাপারে কোন দ্বন্দ্ব নেই। হাদীসটি হচ্ছে اول ما خلق الله القلم (সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক কলমকে সৃষ্টি করেছেন।) দুই হাদীসের মধ্যে একত্রিকরন এ ভাবে সম্ভব হয়েছে যে, নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর সৃষ্টির পরবর্তী সৃষ্টি হচ্ছে কলম। আর সৃষ্টির ধারাবাহিকতা হিসাবে বলা হয়েছে যে, সর্ব প্রথম নূরে মুহাম্মাদীকে সৃষ্টি করা হয়েছে।



যেমন: বর্ণিত আছে اول ما خلق الله من الانوار نورى (মহান আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম সকল নুরের সর্বাগ্রে আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন।) অতএব, উক্ত নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম প্রমাণিত হয়েছে আলী বিন হুসাইন কর্তৃক বর্ণিত হাদীস দ্বারা। আর তা হচ্ছে যে,



وفى احكام ابن القطان مما ذكره ابن مرزوق عن على بن الحسين عن أبيه عن جده ان النبي صلى الله عليه وسلم قال كنت نورا بين يدي ربي قبل خلق ادم باربعة عشر الف عام وفى الخبر لما خلق الله ادم جعل ذلك النور في ظهره فكان يلمع فى جبينه فيغلب على سائر نوره ثم رفعه على سرير مملكته وحمله على أكناف ملائكته وأمر هم فطافوا به في السموات ليرى عجائب ملوكوته قال جعفر بن محمد مكثب الروح فى رأس ادم مائة عام ثم علمه الله تعالى أسماء جميع المخلوقات ثم أمر الملائكة بالسجود لادم سجود تعظيم وتحية لا سجود عبادة الخ.............



অর্থাৎ - ইবনুল ক্বাত্তানের আহকাম এ বর্ণিত, যা ইবনে মারযুক্ব হযরত আলী ইবনে হোসাইন হতে, তিনি তাঁর পিতা হতে, তিনি তাঁর দাদা হতে, (অর্থাৎ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে) বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান, হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টি করার ১৪ হাজার বছর পূর্বে আমি আমার রবের নিকট ‘নূর’ হিসেবে ছিলাম। হাদীস শরীফে আছে যে, আল্লাহ যখন হযরত আদম (عليه السلام ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন এ ‘নূর’কে তাঁর পৃষ্ঠদেশে রাখলেন। তা তাঁর কপাল মুবারকে চমকাতো। তা তাঁর সকল নূরের মধ্যে বেশী দেখা যেতো। অত:পর সেটাকে তাঁর রাজ্যের সিংহাসনে সমুন্নত করেন এবং তা ফিরিশতাদের কাধের উপর বহন করিয়ে তাদেরকে তওয়াফের নির্দেশ দিলেন। অত:পর তাঁরা সেটা নিয়ে আসমানসমূহে তওয়াফ করেন- সেটাকে ফিরিশতা জগতের আশ্চর্য বিষয়াদি দেখানোর জন্য। হযরত জাফর ইবনে মুহাম্মদ (رضي الله عنه) বলেন, রূহ আদম (عليه السلام ) এর শীর মুবারকে একশ বছর স্থির ছিলো। তাঁর বুক মুবারকে একশ বছর, তাঁর বরকতময় গোছাযুগল ও বরকতময় পদযুগলে একশ বছর ছিলো। অত:পর আল্লাহ তাকে সমস্ত সৃষ্টির নাম শিক্ষা দিলেন। তাঁরপর ফিরিশতাদেরকে আদম (عليه السلام ) কে সিজদা করার আদেশ দেন, যা ছিলো সম্মানসূচক ও অভিবাদন জ্ঞাপক সিজদা, ইবাদতের সিজদা নয়।  



উক্ত হাদীসটি ইমাম হাফিজ আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মাদ ইবনে ক্বাত্তান স্বীয় আহকামে ইবনে ক্বাত্তান স্বীয় নুক্বাদুর হাদীস আল মারুক্বীন গ্রন্থে আলোচনা করেন।



নিন্মোক্ত আয়াতে পাক দ্বারাও নূরে মুহাম্মাদী প্রমাণিত।



মহান আল্লাহর বাণী -



قَدْ جَاءكُم مِّنَ اللّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ.



অর্থাৎ: তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে অবশ্যই একজন এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে। বহু সংখ্যাক উলামা মুহাদ্দেসীনগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, আয়াতে বর্ণিত নূর দ্বারা নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এই উদ্দেশ্য। অনূরূপ বর্ণনা পাওয়া যায়, তাফসীরে তাবার্বী, ইবনে আবী হাতীম ও তাফসীরে কুরতুবীতে।



হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه ) ফরমান:



আয়াতে বর্ণিত নূর সন্দেহাতীত ভাবে নূরে মুহাম্মাদীকে বুঝানো হয়েছে।  



 তাছাড়া অন্যান্য হাদীসসমুহ দ্বারা বিশুদ্ধ পন্থায় নূরে মুহাম্মাদী এ ভাবে সাব্যস্ত হয়েছে যে, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেন: لماولد رأت امه نورا وخرج منه نور اضاءت له قصور الشام অর্থাৎ: তিনি যখন জন্ম লাভ করেন, তখন তাঁর মা জননী একটি নূর দেখতে পান এবং উক্ত নূর পাক থেকে একটি নূর বের হওয়া মাত্রই সমস্ত শাম প্রদেশ পর্যন্ত আলোকিত করে ফেলে। ইমাম ইবনে হাজার (رضي الله عنه ) বলেন: এ হাদীসকে বিশুদ্ধ বলেছেন ইবনে হাব্বান ও হাকীম নিশাপুরী (رضي الله عنه ) দ্বয়।  



নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম প্রমাণিত হওয়ার জন্য ইমাম তাবারানী (رضي الله عنه ) কর্তৃক বর্ণিত একখানা হাদীস রয়েছে। আর তা হচ্ছে এই, ورأيت كأن النور يخرج من فيه অর্থাৎ: আমরা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম মুখ মোবারক হতে নূর বের হতে দেখেছি।



হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: اذا تكلم رئى كالنور يخرج من بين ثناياه অর্থাৎ: হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যখন কথা বলতেন, তখন তাঁর ছানায়া নামক দাঁতের ফাক হতে নূর বের হতো। ইমাম যুরক্বানী (رضي الله عنه ) ইমাম মুসলিম ও দারেমী দ্বয়ের(رضي الله عنه ) বর্ণিত হাদীসকে সমর্থন করেন।



ইমাম তিরমীযী (رضي الله عنه ) স্বীয় শামায়েলে হযরত ইবনে আবী হালাহ কর্তৃক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর ছিফত বর্ণনা প্রসঙ্গে একখানা হাদীস উল্লেখ করে বলেন له نور يعلوه অর্থাৎ: তাঁর নূর সকল নুরের উর্ধ্বে। সাইয়্যিদিনা হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: একদা আমি ঘরে বসা ছিলাম এমন সময় হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে স্বীয় জুতো মোবারক খুলতেছিলেন, তখন তাঁর পেশানী মোবারক হতে অবিরত ঘাম নির্গত হলো এবং একেকটি ঘামে একেকটি নূর বিচ্ছুরীত হচ্ছিল। তা দেখে আমি বললাম আমি বুঝতে পারছি। হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন তুমি বুঝেছো? আমি বললাম হে রাসুল আপনার ললাট হতে অবিরত ঘাম পড়ছে এবং একেকটি ঘামে এককটি নূর তৈরী হচ্ছে। আমার মনে হয় এই মুহুর্তে যদি আবু কবীর হুযালী আপনার এ অবস্থা দর্শন করতো, তবে অবশ্যই যে আপনাকে শ্রেষ্ট বলে জানতো।



 যেমন: সে কবিতা আবৃত্তি করেছিল আপনার শানে এ ভাবে:



ومبرأ من كل غبر حيضة   —  وفساد مرضعة وداء مغيل


وإذا نظرت إلى أسره وجهه —  برقت بروق العارض المتهلل




অর্থাৎ:-সর্ব প্রথম নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর সৃষ্টি বিষয়ক দলীল পাওয়া যায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস রা.এর হাদীস থেকে। তিনি বলেন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান:



ان الله عزوجل كتب مقادير الخلق قبل ان يخلق السموات والارض بخمسين الف سنة وكان عرشه على الماء ومن جملة ما كتب فى الذكر وهو ام الكتاب ان محمدا خاتم النبيين-



অর্থাৎ: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সাত আসমান ও সাত জমীন সৃজনের প্রায় ৫০ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি জীবের তাকদীর লিপিবদ্ধ করেন। এ সময় তাঁর আরশ ছিল পানির উপর স্থীরকৃত কিতাবে বর্ণিত ছিল (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সর্বশেষ নবী।) ইমাম মুসলিম (رضي الله عنه ) এ হাদীস বর্ণনা করেন।



অন্য বর্ণনা এ ভাবে এসেছে: انى عبد الله خاتم النبيين وان ادم لمنبحدل فى طينته অর্থাৎ: আমি অবশ্যই তখন হতে আল্লাহর বান্দাহ, সর্বশেষ নবী, যখন আদম (عليه السلام ) কাঁদা মাটির সংমিশ্রনে ছিলেন।



হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: كنت نبيا ولا ادم ولاماء ولاطين (আমি তখন ও নবী ছিলাম, যখন আদম (عليه السلام ) সহ মাটি ও পানির কোন অস্তিত্ব ছিলনা। ইবনে হাজার (رضي الله عنه ) এই বর্ণনাকে জঈফ বলেছেন তিনি পুর্বোক্ত হাদীসকে শক্তিশালী সনদ বলে মত দিয়েছেন।



ইমাম ইবনে সুদ্দী (رضي الله عنه ) বহু সনদ সহকারে বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ পাক পানি সৃষ্টির পূর্বে কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। অতএব, প্রতীয়মান হলো যে, সাধারন ভাবে সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ পাক নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেন, তারপর পানি, তারপর সুবিশাল আরশে আযীম এবং সর্ব শেষ ক্বলম সৃষ্টি করেন। সুতরাং নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ছাড়াও সর্ব প্রথম পানি, তারপর আরশ, তারপর ক্বলমের আলোচনা মুলত: আনুষঙ্গিক কথা মাত্র।



যেমন: হাদীসে এসেছে اول ما خلق الله للعرش সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক আরশকে সৃষ্টি করেছেন একথা যেমন সত্য তেমনি সর্বপ্রথম পানি সৃষ্টি করেছেন একথাও মিথ্যা নয়। তবে তাহলে উভয়ের মধ্যকার সমাধান হবে এ ভাবে, মহান আল্লাহ পাক আরশকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন ঠিকই কিন্তু আরশকে পানির উপরে স্থীর রেখেছেন একথা ও ধু্রব সত্য । তাই আরশকে সেথায় স্থাপন করার প্রয়োজন যে স্থান পূর্বে সৃষ্টি করার অতি প্রয়োজন বিধায় আরশের পূর্বে পানিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ জন্য পানি সৃষ্টি হচ্ছে আরশ সৃষ্টি সবব বা মুল কারন এবং আরশ হচ্ছে মুছাব্বাব বা যাকে কেন্দ্র করা হয়েছে। তাই বলে একথা বলা যাবেনা যে, আরশের চেয়ে পানি অতি দামী।



যাই হোক মহান আল্লাহ পাক নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করে সেই নূরে পাককে হযরত আদম (عليه السلام ) এর পিষ্ট মোবারকে স্থাপন করে রাখেন, ফলে তাঁর ললাট মোবারক ঐ নূরে আলোকে চকচক করতে থাকে। অত:পর উক্ত নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে মহান আল্লাহ পাক তাঁর সুবিশাল সাম্রাজ্যের বিশাল সিংহাসনে উঠিয়ে ফেরেস্তাকুলের স্কন্ধে বহন করত: সমগ্র পৃথিবীতে তাঁকে নিয়ে প্রদক্ষিণ করানোর জন্য ফেরেস্তাকুলকে নির্দেশ প্রদান করেন ফলে তাঁরা তাঁকে নিয়ে ৮০ হাজার জগত প্রদক্ষিণ করেন আল্লাহ পাকের সুবিশাল সাম্রাজের অদ্ভুদ বিষয় অবলোকন করার জন্যে।



ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ (رضي الله عنه ) বলেন: আল্লাহ পাক হযরত আদম (عليه السلام ) এর রূহ মোবারক সৃষ্টি করার পর উক্ত রূহে পাক তাঁর মাথা মোবারকে একশত বছর অবস্থান করে, তারপর স্বীয় বক্ষে একশত বছর, স্বীয় পাদুকাদ্বয়ের নলায় একশত বছর, তার পর স্বীয় পাদুকাদ্বয়ে আরও একশত বছর অবস্থান করে।



এরপর মহান আল্লাহ পাক তাঁকে সমগ্র সৃষ্টি জীবের নাম সমূহ শিক্ষা দেন। এর পর তিনি হযরত আদম (عليه السلام ) কে তাযীমী ও অভিবাদানের সেজদাহ করার জন্য সকল ফেরেস্তাগণকে আদেশ দেন। উল্লেখ্য যে, সকল ফেরেস্তাগন কর্তৃক আদম (عليه السلام ) কে সেজদাহ করা মুলত: ইবাদতের মানসে করা হয়নি, যে ভাবে হযরত ইউসুফ (عليه السلام ) এর ভ্রাতাগণ কর্তৃক তাঁকে সেজদাহ করেছিল বরং এ সেজদাহ ছিল তা,যীমী সেজদাহ। বাস্তবে সেজদাহ করা হয়েছেল মহান আল্লাহ পাককে : যেহেতু তিনি হচ্ছেন মাসজুদ বা সেজদা পাওয়ার অধিকারী আর আদম (عليه السلام ) ছিলেন আল্লাহকে সেজদাহ করার ক্বিবলাহ মাত্র।



সাইয়্যিদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: ফেরেস্তা কর্তৃক হযরত আদম (عليه السلام ) কে সেজদাহ করনের সময় ছিল সুর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সময় হতে আছর পর্যন্ত।



এরপর মহান আল্লাহ পাক হযরত আদম (عليه السلام ) কে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর জীবন সঙ্গীনী হিসেবে হযরত হাওয়া (عليه السلام ) কে তাঁর বাম পাজরের হাড্ডি থেকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁর নাম করন করেন হাওয়া (عليه السلام )। হাওয়া হিসেবে নাম করনের কারন যেহেতু তাঁকে প্রাণ শক্তি দিয়ে একেবারে বিনম্র ও লজ্জাশীলা করে সৃষ্টি করা হয়েছে।



হযরত আদম (عليه السلام ) ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বিবি হাওয়াকে দেখা মাত্রই তাঁর পাশের্ব যেয়ে অবস্থান করেন এবং অবশেষে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা মাত্রই ফেরেস্তারা তাঁকে সম্বোধন করে বললেন: ও হে আদম থাম! তিনি বললেন: কেন? ওকে তো আমারই জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাঁরা বললেন! ওর মহরানা আদায় না করা পর্যন্ত ওকে স্পর্শ করতে পারবে না। এবার তিনি বললেন: তাহলে বলুনতো ওর মহরানা হিসেবে কি দিতে পারি? ফেরেস্তারা বললেন: ওহে আদম (عليه السلام ) আপনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তিন বার দুরুদ পাঠ করুন, তবেই তাঁর মহরানা আদায় হয়ে যাবে।



ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম জাওযী (رضي الله عنه ) এর মতে হযরত আদম (আ.) মা হাওয়া (عليه السلام ) এর নিকটবর্তী হতে চাইলে মা হাওয়া বললেন: আপনি মহর আদায় করুন। একথা শ্রবনে তিনি ফরিয়াদ করেন ওহে মাওলা! আমি হাওয়ার মহর হিসেবে কি দিতে পারি?



মহান আল্লাহ পাক বললেন: ওহে আদম! তুমি আমার প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি বিশ বার দরুদ পাঠ কর, তবেই তাঁর মহর আদায় হয়ে যাবে। আল্লাহ পাকের নিদের্শ মোতাবেক তিনি বিশ মরতবা দরুদ শরীফ পাঠ করেন।


আমি (মুল্লা আলী ক্বারী) বলবো আদম (عليه السلام ) কর্তৃক হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি তিন বার দরু শরীফ পাঠ করা ছিল মহরে মুরাজ্জাল বা তাৎক্ষনিক মহর এবং বিশ বার পাঠ করা ছিল মহরে মুহাজ্জাল বা বিলম্ব মহর।



সাইয়্যিদিনা হযরত ওমর ফারুক (رضي الله عنه ) বলেন: হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান: হযরত আদম (عليه السلام ) কর্তৃক একটি ক্রটি প্রকাশ পাওয়ায় তিনি সুদীর্ঘ তিন শত বছর ক্রন্দন করে একদা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর উসিলা নিয়ে এই বলে প্রার্থনা জানালেন:



عبد الرحمن بن زيد بن أسلم عن أبيه عن جده عن عمر بن الخطاب قال قال رسول الله لما اقترف آدم الخطيئة قال يا رب اسألك بحق محمد لما غفرت لي فقال الله عز وجل يا آدم وكيف عرفت محمداً ولم أخلقه ? قال لأنك يارب لما خلقتني بيدك ونفخت في من روحك رفعت رأسي فرأيت على قوائم العرش مكتوباً لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنك لم تضف إلى إسمك إلا أحب الخلق إليك فقال الله عز وجل صدقت يا آدم إنه لأحب الخلق إليّ وإذ سألتني يحقه فقد غفرت لك ولولا محمد ما خلقتك تفرد به عبد الرحمن بن زيد بن أسلم من هذا الوجه عنه وهو ضعيف والله أعلم.



অর্থাৎ: হে রব! আমি আপনার দরগাহে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করছি অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন আল্লাহ পাক বললেন: ওহে আদম! কিভাবে তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে পরিচয় করলে অথচ আমি তো তাঁকে এখন ও সৃষ্টি করিনি। তিনি বললেন: হে রব! যেহেতু আপনি আমাকে স্বীয় কুদরতী হাতে সৃষ্টি করে আমার ভেতরে রূহ প্রবেশ করানোর পর আমি আমার মাথা মোবারক আকাশের দিকে উত্তলন করে দেখি আরশের প্রতিটি পায়াতে লিখিত রয়েচে لا له الا الله محمد رسول الله এই পবিত্র কালেমাটুকু।



তা দর্শনে আমি জানতে পরি যে, আপনি স্বীয় নামের সঙ্গে যে নাম মোবারক সংযুক্ত করে রেখেছেন তিনি হচ্ছেন আপনার নিকট সৃষ্টির শ্রেষ্ট ও প্রিয় মানব। এবার মহান আল্লাহ পাক তাঁকে বললেন: ওহে আদম! তুমি যা বললে সব কিছুই সত্য। কেননা বাস্তবিকই তিনি আমার নিকট সর্বশ্রেষ্ট ও মহাপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাই তুমি যখন আমার দরবারে তাঁর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করেছ, তখন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। জেনে রাখ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম যদি না হতেন, তবে আমি তোমাকেও সৃষ্টি করতামনা।



ইমাম বায়হাক্বী (رضي الله عنه ) উক্ত হাদীসটি স্বীয় দালায়েলুন নুবুওয়তে হযরত আব্দুর রহমান বিন যায়েদ বিন আসলাম (رضي الله عنه ) এর হাদীস হতে বর্ণনা করেন। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ হাকীম নিশাপুরী রা.উক্ত হাদীসকে বর্ণনা করত: তাকে সহীহ বলে অভিমত পেশ করেছেন। ইমাম তাবারানী (رضي الله عنه ) ও এ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি হাদীসে وهو اخر الانبياء من ذريتك (তিনি আপনার বংশধরদের মধ্যকার সর্বশেষ নবী) কথাটি বর্ধিত করেন।



ইবনে আসাকীরের মতে সালমান ফারসী রা.এর হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন: হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام ) হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে নিবেদন করেন হে আল্লাহর রাসুল! আপনার প্রতিপালক বলেছেন-



ان كنت اتخذت ابراهيم خليلا فقد اتخذتك حبيبا



অর্থাৎ: যদিও আমি ইব্রাহীমকে খলীল হিসেবে গ্রহন করেছি, তবুও আপনাকে হাবীব হিসেবে গ্রহন করেছি। আর আমি আপনার চেয়ে অত্যাধিক সম্মানীত ওশ্রেষ্ট জীব আর কাউকেও সৃষ্টি করিনি। আমি এই ভূমন্ডল ও নব মন্ডল সৃষ্টি করেছি এই উদ্দেশ্যে যে, যাতে করে তারা চিন্তে ও বুঝাতে পারে যে, আমার নিকট আপনার সম্মান ও মর্যাদা কতটুকু! আর যদি আপনি এ ধরাধামে না আসতেন তবে এই বিশ্বভ্রুান্ডের কিছুই সৃষ্টি করা হতোনা।



যেমন: এ প্রসঙ্গে আমার সাইয়্যিদ আলী আল ওয়াফেদী চমৎকার একটি কবিতাবৃত্তি করেছেন।



سكى وافؤاد فمش هنيئا ياحبسد        هذا النعيم هو النعيم الى الأبد


روح الوجود خيال من هو واحد - لولاه ماتم الوجود لمن وجد


عيسى وادم والصدور جميعهم - هم أعين هو نورها لما ورد-



১। অর্থাৎ : যদি ইবলিশ শয়তান আদমের চেহারায় তাঁর নুরের আভা উদিত দেখতে পেতো, তবে সে হতো প্রথম সেজদাহকারীর অন্তর্ভুক্ত ।


২। অথবা যদি পাষান্ড নমরুদ তাঁর সৌন্দর্যের নূর দেখতে পেতো, তবে খলীলের সঙ্গে জলীলের উপাসনা করতো, না হতো অবাধ্য।


৩। কিন্তু আল্লাহর সৌন্দর্য উম্মোচিত, তা দেখা যায় না। কেবল মাত্র তাঁর বিশেষ ব্যক্তিবর্গ ব্যতিত।



উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক বিবি হাওয়াকে (عليه السلام ) সৃষ্টি করেছেন কেবল আদম (عليه السلام ) এর সঙ্গে বসবাসের জন্য এবং আদম বিবি হাওয়ার নিকট গমনাগমনের জন্য। সুতরাং তিনি যখন হাওয়া (عليه السلام ) এর সাথে মিশ্রিত হলেন ক্রমান্বয়ে তাঁর সমস্ত ফয়েজ ও বরকত বিবি হাওয়ার ভেতরে এসে উদগিত হলো। ফলে গর্বে বিশ জোড়ায় মোট চল্লিশ জন নারী পুরুষ জন্ম লাভ করে।



তন্মধ্যে তাঁর সন্তানদের মধ্যকার হযরত শীষ (عليه السلام ) কে নবুওয়াতী আলো দিয়ে সম্মানীত করেন। আদম (عليه السلام ) এর সন্তানদের মধ্যকার শীষ (عليه السلام ) থেকে প্রথম নবুওয়তের সূর্য উদিত হয় এবং নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্রমান্বয়ে আগমন শুরু হয়। সুতরাং হযরত আদম (عليه السلام ) এর ইন্তেকাল মুহুর্ত স্বীয় সন্তান হযরত শীষকে (عليه السلام ) নূরে মুহাম্মাদী সংরক্ষণের অসীয়ত প্রদান করেন এবং শীষ (عليه السلام ) ও স্বীয় পিতার অসীয়ত পুরন করেন। তাঁর তীরোধানের পূর্ব মুহুর্তে তিনি ও পিতার মতো পরবর্তী বংশধরকে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হেফাজত করত: উক্ত নূর মোবারককে পবিত্রা রমনীদের গর্বে ধারনের অসীয়ত করে যান।


এভাবে ধারাবাহিক ও বিরতীহীন ভাবে উক্ত অসয়ীত মোবারক প্রবাহমান হয়ে এক যুগ হতে আরেক যুগ পর্যন্ত আসতে আসতে এক পর্যায়ে মহান আল্লাহ পাক উক্ত নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর দাদা খাজা আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) হয়ে পিতা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) এর ঔরসে স্থানান্তরিত করেন আনেন।



আর মহান আল্লাহ পাক নবী বংশকে যুগে যুগে জাহিলিয়্যাতের নির্বোদ্ধিতা হতে পবিত্র রাখেন। যেমন : এ প্রসঙ্গে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরমান:



 هذا النسبالشريف من سفح والجاهلية شى مولدنى الانكا الاسلام



অর্থাৎ: জাহিলিয়্যাতের নির্বুদ্ধিতায় আমার জন্ম হয়নি বরং যুগে যুগে ইসলামী ধারার বিবাহ প্রথার মাধ্যমেই আমার আগমন ঘটেছে।



ইমাম ক্বাস্তালানী (رضي الله عنه ) বলেন: আরবী ভাষায় سفح শব্দটি সীনের নীচে যের যুগে অর্থ হবে যিনা বা ব্যভিচার। আর আক্ত আলোচনায় সিফাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, কোন কোন মহিলা পুরুষের সাথে অবৈধ যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হয় দীর্ঘ সময় এর পর চিহিৃত হওয়ার পর সে ঐ মহিলাকে বিয়ে করে।



ঐতিহাসিক ইবেন সা’দ - ইবনে আসাকীয় হিসাম বিন মুহাম্মদ বিন সায়েব আল কালবী হতে তিনি স্বীয় দাদা হতে বর্ণনা করেন, তাঁর দাদা বলেন: আমি একেক করে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ববর্তী (মা আমেনা (رضي الله عنه) সহ প্রায় একশ জন মায়ের কথা লিপিবদ্ধ করেছি কিন্তু তাঁদের কারও মধ্যে পবিত্রতা ছাড়া জাহিলিয়্যাতের অবৈধ ও নিবুর্দ্ধিতার চিহৃ দেখতে পাইনি এমনকি জাহিলিয়্যাতের কোন নিকৃষ্ট কর্মকান্ড ও দেখতে পাইনি।



সাইয়্যিদিনা হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান: আমি যুগে যুগে যাদের গর্বে স্থানান্তরীত হয়ে এসেছি, তাঁদের সবাই ছিলেন বিবাহিতা। এমনকি আমি বাবা আদম (عليه السلام ) থেকে নিয়ে আমার পবিত্রা পিতা ও পবিত্রা মাতা পর্যন্ত জাহিলিয়্যাতের অবৈধ পন্থায় বের হয়ে আসিনি এবং জাহিলিয়্যাতের কোন নিবুর্দ্ধিতা ও আমাকে স্পর্শ করেনি। এ হাদীসটি ইমাম তাবারানী স্বীয় আওসাত গ্রন্থে এবং আবু নাঈম ও ইবনে আসাকীর স্বীয় গ্রন্থদ্বয়ে বর্ণনা করেন।



হযরত আবু নাঈম رضي الله عنه  ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে একখানা হাদীস বর্ণনা করেন, হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:  لم يلتق ابواى قط على سفحঅর্থাৎ : আমার মাতা-পিতাকে কখনও জাহিলিয়্যাতের নির্বুদ্ধিতা ও অভৈধতায় লিপ্ত হননি বরং ধারাবাহিকভাবে তিনি আমাকে পুত: পবিত্র পুরুষদের মেরুদন্ড হতে পুত: পবিত্রা রমনীদের রেহেম শরীফে স্থানান্তরীত করে স্বচ্ছ ধারায় আনেন ।


এর সমর্থনে পবিত্র কুরআনে পাকে আছে : وتقلبك فى الساجدين.যুগে যুগে আমি আপনাকে সেজদা দানকারীর মধ্যে স্থানান্তরীত করে এনেছি।



ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন : আয়াতের যথার্থ হচ্ছে : এক নবী হতে অন্য নবী পর্যন্ত আমাকে স্থানান্তরীত করা হয়েছে এমনকি হে রাসুল! আমি আপনাকে শেষ নবী হিসেবে বের করে এনেছি।



ইমাম বাযযার ও আবু নাঈম অনূরূপ বর্ণনা করেছেন। এ ব্যাপারে জাতির সতর্কতার উদ্দেশ্যে বলা যায় যে, হুযুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত জাতীগণের মেরুদন্ড হতে স্থানান্তরীত হয়ে আসেন। তবে একথা বুঝানো হয়নি যে, তাঁর পূর্বপুরুষ সকলই নবী ছিলেন। কেননা এ কথা ইজমায়ে উম্মতের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। আর একথাও বলা যায় না যে, তাঁর পূর্ব পুরুষ সকলই মুসলমান ছিলেন বরং অধিকাংশরাই হানিফ তথা আহলে ফিৎরাতের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তন্মধ্যে খাজা আব্দুল মোত্তালেব (رضي الله عنه) হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) এবং তাঁর মাতা পিতা প্রমুখরা।



তাদের বিধানে সম্পর্কে আমি মুল্লা আলী (رضي الله عنه) স্বতন্ত্র একটি রেসালাত পণয়ন করেছি এবং হুযূরে পাকের মাতা-পিতা সহ সকল আহলে ফিৎরাতের আলোচনা সম্বলিত ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী (رضي الله عنه ) কর্তৃক প্রণীত “রেসালায়ে ছালাছা” গ্রন্থের আলোকে বিস্তারিত দলীল সমূহ দ্বারা উপস্থাপন করছি।



টিকা (শেষ):_________০_____________







তৃতীয় ভাগ দ্বারা মুমিনের উনসের ‘নূর- لا اله الا الله محمدرسول الله এর নূর আমি (মুল্লা আলী কারী) বলবো উপরোক্ত নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর নূরের প্রমাণ মিলে নিন্মোক্ত বাণীতে মহান আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান:



 اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ فِيهَا مِصْبَاحٌ



অর্থাৎ: আল্লাহ পাকই হচ্ছেন আসমান ও জমীনের নূর। আর তাঁর নূরের দৃষ্টান্ত হচ্ছে كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ যেমন : একটি বাতী যেথায় আছে প্রদীপ। বর্ণিত আয়াতে مثل نوره দ্বারা নূরে মুহাম্মাদীকে বুঝানো হয়েছে। নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এর পর সর্ব প্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করা হয়েছে? এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামগণের মধ্যে কিছু মতানৈক্য আছে। কেহ কেহ বলেন: সর্বপ্রথম আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে। যার বিশুদ্ধ কথা হুযূরে পাকের নিন্মোক্ত বাণী দ্বারা প্রতীয়মান হয়।



রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ ফরমান:



قدراللَّهُ مَقَادِيرَ الْخَلائِقِ كُلِّهَا قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ-، وكان عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ



অর্থাৎ: মহান আল্লাহ পাক আসমান-জমীন সৃষ্টির প্রায় ৫০ হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি জীবের তাক্বদীর নির্ধারণ করেন এবং ঐ সময় তাঁর আরশ ছিল পানির উপর বিদ্যমান। বর্ণিত বাণী হতে প্রতীয়মান হলো যে, আরশ সৃষ্টির পরবর্তীকালে তাকদীর সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তাকদীর সৃষ্টি হয় ক্বলম সৃজনের পর। যেহেতু মহান আল্লাহ পাক ক্বলম সৃজনের পর আদেশ দিলেন, হে ক্বলম! তুমি লিখ।


আমি কি লিখবো? আল্লাহ পাক বললেন: اكتب مقادير كل شى (সকল বস্তর তাক্বদীর লিপিবদ্ধ কর) হাদীসটি হযরত উবাদা ইবনে সামিত (رضي الله عنه ) মারফ সুত্রে বর্ণনা করেন। হাদীসটি হচ্ছে أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ (সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক ক্বলম সৃজন করেন)। এ হাদীসটি ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رضي الله عنه ) ইমাম মুসলিম (رضي الله عنه ) বর্ণনা করেন। উভয়ে হাদীসটি বিশুদ্ধ বলে মত পোষন করেন। তবে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ও মুসলিম (رضي الله عنه ) দ্বয় কর্তৃক ইবনে রাযীন উকাইলী হতে মারফু সুত্রে একখানা হাদীস বর্ণিত আছে ان الماء خلق قبل العرش অর্থাৎ: আরশ সৃষ্টির পূর্বে অবশ্যই পানি সৃষ্টি করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহর বাণী : وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ আয়াত দ্বারা ও এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।



ইমাম ইবনে সুদ্দী (رضي الله عنه ) বহু সনদ সহকারে বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ পাক পানি সৃষ্টির পূর্বে কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। অতএব, প্রতীয়মান হলো যে, সাধারনভাবে সর্ব প্রথম মহান আল্লাহ পাক নূরে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করেন, তারপর পানি, তারপর সুবিশাল আরশে আযীম এবং সর্ব শেষ ক্বলম সৃষ্টি করেন। সুতরাং নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম ছাড়াও সর্ব প্রথম পানি, তারপর আরশ, তারপর ক্বলমের আলোচনা মূলত: আনুষাঙ্গিক কথা মাত্র।



যেমন: হাদীসে এসেছে اول ما خلق الله للعرش


সর্ব প্রথম আল্লাহ পাক আরশকে সৃষ্টি করেছেন একথা যেমন সত্য তেমনি সর্বপ্রথম পানি সৃষ্টি করেছেন একথাও মিথ্যা নয়। তাহলে উভয়ের মধ্যকার সমাধান হবে এ ভাবে, মহান আল্লাহ পাক আরশকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন ঠিকই কিন্তু আরশকে পানির উপরে স্থীর রেখেছেন একথাও ধু্রব সত্য। তাই আরশকে সেথায় স্থাপন করার প্রয়োজন যে স্থান পূর্বে সৃষ্টি করার অতি প্রয়োজন বিধায় আরশের পূর্বে পানিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ জন্য পানি সৃষ্টি হচ্ছে আরশ সৃষ্টির সবব বা মূল কারন এবং আরশ হচ্ছে মুছাব্বাব বা যাকে কেন্দ্র করা হয়েছে। তাই বলে একথা বলা যাবেনা যে, আরশের চেয়ে পানি অতি দামী।



যা হোক মহান আল্লাহ পাক নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টি করে সে নূরে পাককে হযরত আদম (عليه السلام ) এর পৃষ্ট মোবারকে স্থাপন করে রাখেন, ফলে তাঁর ললাট মোবারক ঐ নূরের আলোকে চকমক করতে থাকে। অত:পর উক্ত নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লামকে মহান আল্লাহ পাক তাঁর সুবিশাল সাম্রাজ্যের বিশাল সিংহাসনে উঠিয়ে ফেরেস্তাকুলের স্কন্ধে বহন করত: সমগ্র পৃথিবীতে তাঁকে নিয়ে প্রদক্ষিণ করানোর জন্য ফেরেস্তাকুলকে নির্দেশ প্রদান করেন ফলে তাঁরা তাঁকে নিয়ে ৮০ হাজার জগত প্রদক্ষিণ করেন আল্লাহ পাকের সুবিশাল সাম্রাজের অদ্ভুদ বিষয় অবলোকন করার জন্যে।



ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মদ (رضي الله عنه ) বলেন: আল্লাহ পাক হযরত আদম (عليه السلام ) এর রূহ মোবারক সৃষ্টি করার পর উক্ত রূহে পাক তাঁর মাথা মোবারকে একশত বছর অবস্থান করে, তারপর স্বীয় বক্ষে একশত বছর, স্বীয় পাদুকাদ্বয়ের নলায় একশত বছর, তার পর স্বীয় পাদুকাদ্বয়ে আরও একশত বছর অবস্থান করে।



এরপর মহান আল্লাহ পাক তাঁকে সমগ্র সৃষ্টি জীবের নাম সমূহ শিক্ষা দেন। এর পর তিনি হযরত আদম (عليه السلام ) কে তাযীমী ও অভিবাদনের সেজদাহ করার জন্য সকল ফেরেস্তাগণকে আদেশ দেন। উল্লেখ্য যে, সকল ফেরেস্তাগন কর্তৃক আদম (عليه السلام ) কে সেজদাহ করা মূলত: ইবাদতের মানসে করা হয়নি, যেভাবে হযরত ইউসুফ (عليه السلام ) এর ভ্রাতাগণ কর্তৃক তাঁকে সেজদাহ করেছিল বরং এ সেজদাহ ছিল তা’যীমী সেজদাহ। বাস্তবে সেজদাহ করা হয়েছিল মহান আল্লাহ পাককে : যেহেতু তিনি হচ্ছেন মাসজুদ বা সেজদা পাওয়ার অধিকারী আর আদম (عليه السلام ) ছিলেন আল্লাহকে সেজদাহ করার ক্বিবলাহ মাত্র।


সাইয়্যিাদিনা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন: ফেরেস্তা কর্তৃক হযরত আদম (عليه السلام ) কে সেজদাহ করনের সময় ছিল সুর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার সময় হতে আছর পর্যন্ত।

_______________

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন