মাযারে গম্বুজ নির্মাণ কি বিদ“আত?

 

মাযারে গম্বুজ নির্মাণ কি বিদ“আত?


বিদ“আতের পরিচয়

এরপর প্রশ্নে ৩নং ও ৪নং হাদিসে বিদ‘আত সম্পর্কিত দু’টি হাদিস উল্লেখ পূর্বক হয়তো বুঝাতে চেয়েছে যে, মাযার ও গম্বুজ নির্মাণ করা মন্দ বিদ‘আত। উল্লেখিত হাদিস দু’টি হলো-


 ৩নং হাদিস:

হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস‘উদ (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) বলেন, আমি হাউযে কাউছারে তোমাদের অগ্রগামী প্রতিনিধি হব। তোমাদের কিছু লোককে আমার নিকট উপস্থাপন করা হবে। আমি যখন তাদেরকে পানি পান করাতে উদ্যত হব, তখন তাদেরকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়া হবে। তখন আমি বলব, হে পরওয়ারদেগার, এরা তো আমার উম্মত। তিনি বলবেন, আপনি জানেন না, তারা আপনার পরে নতুন কি করেছে (বিদ‘আত)। (বুখারি- ৬৫৭৩)

 

৪নং হাদিস:

হযরত আসিম থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবী করিম (ﷺ) কি মদিনাকে হারাম (সংরক্ষিত এলাকা) হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। উত্তরে তিনি বললেন: হ্যাঁ, অমুক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত। এ এলাকার কোন গাছ কাটা যাবে না, আর যে ব্যক্তি এখানে বিদ‘আত সৃষ্টি করবে, (কিংবা বিদ‘আত সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দেয়) তার উপর আল্লাহ্, ফেরেশতা ও সকল মানব স¤প্রদায়ের লা‘নত। ৫৪


৫৪ - বুখারি- ৬৮০৮



আলোচ্য হাদিস দু’টোতে বিদ‘আতের মন্দ পরিণতির কথা উল্লেখ হয়েছে যে, বিদ‘আতিরা হাউযে কাউছারের পানি হতে বঞ্চিত হবে এবং এদের উপর আল্লাহ্, ফেরেশতা ও সকল মানব স¤প্রদায়ের অভিশাপ। রাসুল পাকের পবিত্র বাণী সন্দেহাতীত। কিন্তু প্রশ্ন হলো- যারা বুযর্গগণের মাযারের ইমারত বা গম্বুজ তৈরীকে বিদ‘আত বলতে চায়, তারা কি বিদ‘আত সম্পর্কে প্রকৃতই জানে, না-কি হুজুগে শুধু বিদ‘আত-বিদ‘আত জপ করাটাই নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করে নিয়েছে?



জেনে রাখা উচিত যে, সকল বিদ‘আতই মন্দ বা নাজায়িয-হারাম নয়। ইমাম শাফেয়ি বলেন-



البدعة بدعتان بدعة محمودة وبدعة مذمومة. فما وافق السنة فهو محمود وما خالف السنة فهو مذموم واحتج بقول عمر بن الخطاب في قيام رمضان: نعمت البدعة هي



-“বিদ‘আত দু’ প্রকার: একটি হলো- উত্তম বা ভাল বিদ‘আত, অপরটি হলো- মন্দ বিদ‘আত। যা সুন্নাহ্’র অনুযায়ী তা ভাল; আর যা সুন্নাহ্’র খিলাফ তা মন্দ। এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ি রমাদ্বান মাসে তারাভিহ্’র নামাযের ব্যাপারে হযরত উমর (رضي الله عنه)র বক্তব্য نعمت البدعة هي (এটা কতইনা উত্তম বিদ‘আত) দ্বারা দলিল পেশ করেছেন।” ৫৫


৫৫ - হিলয়াতুল আওলিয়া, আবু নু‘আইম আসবাহানী, ৯/৭৬



ইমাম শাফেয়ি (رحمة الله)' বিদ‘আতে দ্বলালাহ্ বা মন্দ বিদ‘আত-এর সংজ্ঞায় আরো বলেন:



ما أحدث يخالف كتابا أو سنة أو أثرا أو إجماعا فهذه البدعة الضلالة



-“বিদ‘আতে দ্বলালাহ্ বা মন্দ বিদ‘আত হলো- যা কুরআন, সুন্নাহ্, আছার ও ইজমায়ে উম্মাতের বিপরীত।” ৫৬


৫৬ - হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী, ফাতহুল বারী, ১৩/২৬৭



বুঝা গেল প্রত্যেক বিদ‘আতই হারাম নয়। বরং হুযুর পাক (ﷺ) নিজেই ফরমান-



من سن في الإسلام سنة حسنة فله أجرها وأجر من عمل بها



-“যে ইসলামে উত্তম কিছু প্রবর্তন করল, তাঁর প্রতিদান (ছাওয়াব) রয়েছে এবং তার এ প্রবর্তনের উপর যারা আমল করল তাঁদের থেকেও ছাওয়াব পাবে।” ৫৭


৫৭ - সহীহ মুসলিম; মিশকাত, পৃ: ৩৩; মিরকাত, ১ম খন্ড, পৃ: ৩৩৭



সুতরাং রাসূল পাকের এ বাণী- كل بدعة ضلالة (সকল বিদ‘আতই দ্বলালাহ বা ভ্রষ্টতা)-এর অর্থ হবে: كل بدعة سيئة ضلالة (সমস্ত মন্দ বিদ‘আতই গোমরাহি)। ৫৮


৫৮ - মুল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ১ম খন্ড, পৃ: ৩৩৭



বিদ‘আতের সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও হুকুম আলোচনার পর বিরোদ্ধবাদীদের প্রতি জিজ্ঞাসা যে-



✦        স্বয়ং কুরআন দ্বারা যেখানে বুযর্গগণের স্মৃতিচিহ্ন বা মাযার নির্মাণ করা জায়িয প্রমাণিত হলো, সেখানে তা বিদ‘আত হয় কী করে? না-কি কুরআনই আমাদের বিদ‘আত করতে উৎসাহ দেয়? (আসতাগফিরুল্লাহ ছুম্মা না‘উযুবিল্লাহ!)



✦        হাদিস শরিফ দ্বারা যে বিষয়টি প্রমাণিত (পূর্বে হাদিস শরিফ থেকে দলিল পেশ করা হয়েছে), তা কীভাবে বিদ‘আত হয়? যে রাসুল পাক বিদ‘আত থেকে উম্মতকে সতর্ক করেছেন, সেই পুত-পবিত্র রাসুল পাকই কি আবার মন্দ বিদ‘আতের পক্ষে দলিল রেখে গিয়েছেন? (আসতাগফিরুল্লাহ ছুম্মা না‘উযুবিল্লাহ!)



✦        অসংখ্য সাহাবা, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়ি, ফকিহ, মাযহাবের ইমাম, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, মুজতাহিদ, উলামা ও ওলিগণ থেকে যা প্রমাণিত, তা বিদ‘আত বলার দ্বারা এ সকল পূণ্যাত্মাগণকে কি বিদ‘আতি বলে আখ্যা দেয়া হচ্ছে না? এর ফলে কি ঈমানের ছিটে ফুটাও বাকি থাকার কথা? (আসতাগফিরুল্লাহ ছুম্মা না‘উযুবিল্লাহ!)



আল-হামদু লিল্লাহ্ ছুম্মা আল-হামদু লিল্লাহ! পবিত্র কুরআন, হাদিস, সাহাবাগণের আমল, পূর্ব ও পরবর্তী ইমামগণের বক্তব্য ও আমল দ্বারা আমরা প্রমাণ করেছি যে, নবী, ওলি ও বুযর্গগণের মাযারে ইমারত ও গম্বুজ নির্মাণ করা বৈধ। কাজেই এগুলোকে বিদ‘আত বলাটা চরম মূর্খতা ও ধর্মহীনতার পরিচায়ক। আল্লাহরই পানাহ্।



মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ, তাঁর হাবিবের সদকায় আমাদেরকে যেন তাঁর প্রিয়ভাজন হিসেবে গ্রহণ করে নেন। আমিন।



آمين بجاه طٰهٰ ويٰسٓ



وصلي اللّٰه تعالٰي علٰي خير خلقه محمد واٰله وصحبه اجمعين



برحمتك يا ارحم الراحمين

________________

কিতাবঃ মাযারে ইমারত ও গম্বুজ নির্মাণের ফায়সালা

গ্রন্থনা ও সংকলন: মুফতি মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন আন-নাজিরী

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন