কবরের উপর ইমারত তৈরী ‘সুন্নাতে সাহাবা’

 

কবরের উপর ইমারত তৈরী ‘সুন্নাতে সাহাবা’


এসব বিশ্লেষণ এজন্য করা হয়েছে যে, অনেক সাহাবায়ে কিরাম বিশেষ বিশেষ কবরের উপর ইমারত তৈরী করেছেন। এটাকে ‘সুন্নাতে সাহাবা’ বলা যায়। যেমন- হযরত ফারুক আ‘যম (رضي الله عنه) হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র কবরের চার পাশে ইমারত তৈরী করিয়েছেন। সায়্যিদুনা হযরত ইবনু যুবায়র (رضي الله عنه) একে আরও সুন্দর করেছেন। হযরত ইমাম যায়নুল আবেদিন (رضي الله عنه)-এর স্ত্রী তার স্বামীর কবরের উপর তাঁবু স্থাপন করেছিলেন। হযরত যায়নুল আবেদিনের স্ত্রীর এ কার্যের প্রেক্ষাপটে মুল্লা আলি কারি (رحمة الله)' তাঁর রচিত মিরকাত শরহে মিশকাতে উল্লেখ করেছেন-

الظاهر أنه لاجتماع الأحباب للذكر والقراءة وحضور الأصحاب للدعاء بالمغفرة والرحمة وأما حمل فعلها على العبث المكروه كما فعله ابن حجر فغير لائق بصنيع أهل البيت

-“এটা সুস্পস্ট যে, বন্ধুবান্ধব ও সাহাবা কিরামকে জমায়েত করার অভিপ্রায়ে এ ঘরটা তৈরী করা হয়েছিল, যাতে যিকর-আযকার, কুরআন তিলাওয়াত ও মাগফিরাতের জন্য প্রার্থনা করা যায়। কিন্তু উক্ত বিবি সাহেবানির এ কাজকে অনর্থক অর্থাৎ মাকরূহ সাব্যস্ত করা আহলে বাইতের শানের পরিপন্থী।” ৪৩


৪৩ - মুল্লা আলি ক্বারি, মিরক্বাতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাসাবীহ, কিতাবুল জানায়িয, ৬/১২, শামেলা



পরিষ্কার বোঝা গেল, অনর্থক ইমারত তৈরী করা নিষেধ, কিন্তু যিয়ারতকারীদের আরামের জন্য জায়িয। অধিকন্তু হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ (رضي الله عنه)-এর কবরের উপর গম্বুজবিশিষ্ট ঘর তৈরী করিয়েছিলেন। হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) নিজের ভাই হযরত আব্দুর রহমান ও হযরত মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়া হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه)-এর কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করেছিলেন।



মুনতাকা শারহুল মুয়াত্তা লিল-ইমাম মালিক গ্রন্থে হযরত আবু আবদে সুলায়মান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন-



وَقَدْ ضَرَبَهُ عُمَرُ عَلَى قَبْرِ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ وَكَرِهَ ضَرْبَهُ عَلَى قَبْرِ الرَّجُلِ ابْنُ عُمَرَ وَأَبُو هُرَيْرَةَ وَأَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ وَابْنُ الْمُسَيِّبِ وَضَرَبَتْهُ عَائِشَةُ عَلَى قَبْرِ أَخِيهَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ وَضَرَبَهُ مُحَمَّدُ بْنُ الْحَنَفِيَّةِ عَلَى قَبْرِ ابْنِ عَبَّاسٍ .. مَنْ كَرِهَهُ لِمَنْ ضَرَبَهُ عَلَى وَجْهِ السُّمْعَةِ وَالْمُبَاهَاةِ



-“হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত যয়নব বিনতে জাহাশের কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করেন। ইবনু উমর, আবু হুরায়রা, আবু সাঈদ খুদরি ও ইবনুল মুসায়্যিব গম্বুজ তৈরী করা অপছন্দ করেন। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) স্বীয় ভাই হযরত আবদুর রহমানের কবরের উপর এবং মুহাম্মদ ইবনু হানাফিয়া (ইবনু হযরত আলি) ইবনু আব্বাসের কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করেছিলেন। যিনি গম্বুজ তৈরী করাকে অপছন্দ করেছেন (যেমন- ইবনু উমর, আবু হুরায়রা, আবু সাঈদ খুদরি ও ইবনুল মুসায়্যিব অপছন্দ করার কথা বর্ণিত হয়েছে), তিনি এ জন্য যে, যদি গর্ববোধ ও ভন্ডামী করার অভিপ্রায়ে এটা তৈরী করা হয়।”৪৪


৪৪ - আল-মুনতাক্বা শারহুল মুয়াত্তা, কিতাবুল জানায়িয, বাবু মা জা-আ ফী দাফনিল্ মায়্যিত, ২/৪৫



প্রসিদ্ধ আল-বাদায়ি‘উস্ সানায়ি‘ গ্রন্থে বর্ণিত আছে-



روي ان ابن عباس لما مات بالطائف صلى عليه محمد ابن حنفية وجعل قبره مسنما وضرب عليه فسطاطا



-“যখন তায়িফে হযরত ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) ইনতিকাল ফরমান, তখন হযরত মুহাম্মদ ইবনু হানাফিয়া তার জানাযার নামায পড়েছেন, কবর প্রস্তুত করেছেন এবং কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করিয়েছিলেন।” ৪৫


৪৫ - আল-বাদায়ি‘উস্ সানায়ি‘, ১/৩২০



বুখারি শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারী-তে রয়েছে- ضربه محمد ابن الحنفية علي قبر ابن عباس -হযরত মুহাম্মদ ইবনু হানাফিয়া হযরত ইবনু আব্বাসের কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করিয়েছিলেন। সাহাবায়ে কিরাম এ কাজটি (অর্থাৎ গম্বুজ তৈরী) করলেন এবং সমস্ত উম্মত রাসুলে খোদার রওযা মুবারকে যাচ্ছেন। কোন মুহাদ্দিস, কোন ফকিহ কোন আলিম এ রওযা পাক নিয়ে কোন আপত্তি উত্থাপন করেন নি। তাই উপরোক্ত হাদিছের সেই বিশ্লেষণই করতে হবে, যা আমরা করেছি। আর কবরের উপর বসার অর্থ হচ্ছে- স্বয়ং কবরের উপর চড়ে বসা, যা নিষেধ। কিন্তু খাদিম হওয়া নিষেধ নয়। খাদিম হচ্ছে, যিনি কবরের রক্ষণাবেক্ষণ করেন, মাযারের দরজার চাবি নিজের কাছে রাখেন ইত্যাদি। এ কাজটা সাহাবায়ে কিরাম থেকে প্রমাণিত আছে। মুসলমানদের মাতা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (رضي الله عنه) হুযুর আলাইহিস সালামের রওযা পাকের পরিচর্যাকারিনী ও চাবি রক্ষয়িত্রী ছিলেন। যখন সাহাবায়ে কিরাম যিয়ারত করার ইচ্ছা পােষণ করতেন, তখন তাঁর দ্বারা তালা খুলে যিয়ারত করতেন। (মিশকাত শরিফের ‘আদ-দাফন’ অধ্যায়ে দেখুন) এখনও হুযুর (ﷺ)-এর রওযা পাকের খাদিম নিয়োজিত আছেন এবং কেউ ওটাকে নাজায়িয বলেন নি।



উপরে নবী-ওলিগণের মাযার ও গম্বুজ নির্মাণের ব্যাপারে ৬টি হাদিসের পর্যারোচনা করা হয়েছে, যেগুলোর উপর ভিত্তি করে বিরোদ্ধবাদীরা মাযার ও গম্বুজ নির্মাণে আপত্তি করে থাকে। এখন আরো একটি হাদিস উপস্থাপন করছি, যে হাদিসের আশ্রয় নিয়ে নজদি-ওয়াহহাবিরা সাহাবায়ে কিরাম ও আহলে বাইতের মাযারসমূহ ভেঙ্গে ধুলিস্যাৎ করে দেয়। আশা রাখি, এরচেয়ে বেশি হাদিস তারা আর উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে না।

________________

কিতাবঃ মাযারে ইমারত ও গম্বুজ নির্মাণের ফায়সালা

গ্রন্থনা ও সংকলন: মুফতি মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন আন-নাজিরী

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন