মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মোজেজা

 

মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মোজেজা



ইমাম যুহরী (رضي الله عنه ) বলেন, পরবর্তীতে হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) এর সাথে খাজা আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه ) এর প্রনয় হলে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটে এবং রাসূলে করীম (ﷺ)কে তিনি গর্ভে ধারন করতে লাগলেন। ঐতিহাসিক ইবনে আব্দুল বার বলেন: খাজা আব্দুল্লাহ কর্তৃক আমেনা (رضي الله عنه ) কে বিবাহ কালীন সময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ত্রিশ বছর। কেউ কেউ বলেন, ২৫ বছর আবার কেউ কেউ বলেন ১৮ বছর। ইমাম ছাখাবী (رضي الله عنه ) এর মতে শেষোক্ত অভিমতটি গ্রহনযোগ্য। ইমাম সাহল বিন আব্দুল্লাহ তাসতারী (رضي الله عنه ) (যিনি তৎকালীন যুগের আইম্মায়ে কিবার গনের বড় ইমাম ছিলেন। তাঁর থেকে অগনীত হাদীস বর্ণিত আছে।) বলেন: ইমাম খতীব বাগদাদী (رضي الله عنه ) এর মতে মহান আল্লাহ পাক নূরে মোহাম্মাদী (ﷺ)কে যখন স্বীয় মাতা আমেনার রেহেম শরীফে স্থানান্তর করানোর ইচ্ছা পোষন করেন, তখন ছিল রজব মাসের কোন এক রজনীতে। ঐ রাত্রে তিনি জান্নাতের প্রধান কর্মকর্তা রেদ্বওয়ান ফেরেস্তাকে নির্দেশ দিলেন ওহে রেদ্বওয়ান! জান্নাতুল ফেরদৌসের সকল দরজা গুলো খুলে দাও এবং আসমান ও জমীন বাসীকে জানিয়ে দাও যে, আজ রাত্রে নূরে মোহাম্মাদী (ﷺ) স্বীয় মাতার রেহেমে অবস্থান করবেন এবং সে রেহেমে তাঁর দেহায়বয়ব পরিপূর্ণতা লাভ করবে এবং সেখান থেকেই সমগ্র বিশ্ববাসীর ভীতি প্রদর্শনকারী রূপে জমীনে তাশরীফ আনবেন।


হযরত যুবাইর ইবনে বাক্কার বলেন: তিনি আইয়্যামে তাশরীকের দিনে জামরায়ে উম্মতায় শিআবে আবু তালেব নামক স্থানে ছিলেন। ঐতিহাসিক ওয়াকেদী ওয়াহাব বিন যামআর সুত্রে তিনি স্বীয় ফুফু হতে বর্ণনা করেন। তাঁর ফুফু বলেন: আমরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর মাতা আমেনা (رضي الله عنه ) এর মুখ নিসৃত বাণী শ্রবন করেছি যে, তিনি যখন স্বীয় পুত্রকে গর্ভে ধারন করেন, তখন বলেছিলেন, আমি স্বীয় সন্তানকে গর্ভে ধারন করাবস্থায় কোন কষ্ট পাইনি এমনকি দুনিয়ার সমস্ত গর্ভ ধারীনী নারীদের ন্যায় আমি কোন ভারীত্ব ও কস্ট অনুভব করিনি।



আবার কখনো কখনো একথাও বলতেন: আমি যখন পুরো পুরী ঘুমেও নয় আবার জাগ্রতও নয় এমতাবস্থায় একজন আগন্তুক এসে আমাকে এ বলে সংবাদ দেন ওহে আমেনা তুমি কি অনুভব করেছ যে, তুমি গর্ভবর্তী? আমি বললাম, না তো, আমি অনুভব করতে পারিনি। আগন্তুক বললেন, উম্মতের নবী ও সরদারকে গর্ভে ধারন করেছ। ওহে আমেনা তুমি গর্ভের সন্তানের নাম রেখে দাও মোহাম্মদ। কথিত আছে যে, এ ঘোষনা পত্রটি এসেছিল সোমবার দিনে।


ইমাম ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহ হিব্বানে সাইয়্যিদিনা আব্দুল্লাহ বিন জাফর (رضي الله عنه ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীস হতে বর্ণনা করেন: রাসূলে পাক (ﷺ) এর ধাত্রী মাতা হযরত হালিমাতুসাদিয়া (رضي الله عنه ) বলেন: হযরত আমেনা (رضي الله عنه ) আমাকে সম্বোধন করে বললেন:



ان لا بنى هذا شانا انى حملت حملا فلم احمل حملا قط كان اخف على ولا اعظم بركة منه- ثم رأيت نورا كأنه كأنه شهاب خرج منى حين وضعته اضاءت له اعناف الإبد بيصرى من ارض الشام- ثم وضعته فما وقع كما يقع للصبيان وقع واضعا با الارض رافعا رأسه الى السماء-



অর্থ: হে হালেমা! জেনে রাখ! আমার এ সন্তান বিশাল শানদার। নিশ্চয়ই আমি ইতিপূর্বে এমনই কোন সন্তান গর্ভে ধারন করিনি, যে আমার কাছে অত্যধিক হালকাদায়ক মনে হয়েছে। আবার তাঁর চেয়ে এমন বিশাল বরকতময় সন্তান ও আমি ধারন করিনি। অত:পর আমি এমনই এক তারকা বিশিষ্ট নূর দেখতে পেলাম আমার থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। সন্তান প্রসব কালে আমার দৃষ্টি শক্তি পতিত হওয়ায় শাম প্রদেশের সমস্ত উট গুলোর ঘাঁড় আলোকিত হয়ে যায়। যাই হোক আমি এমনই এক সন্তান প্রসব দান করলাম যে, কোন শিশুর বেলায় এধরনের কোন আজব ঘটনা ঘটেনি। জমীনে হস্ত ধারন অবস্থায় এবং মস্তক আকাশে উত্তলন অবস্তায় তিনি আগমন করেন।



ইবনে হিব্বান প্রণীত সহীহ গ্রন্থে, হাকীম নিশাপুরীর মুস্তাদরাকে, মুসনদে আহমদ সহ অন্যান্য নির্ভর যোগ্য গ্রন্থে সাইয়্যিদিনা হযরত ইরবাদ বিন সারিয়া সালমী (رضي الله عنه ) হতে বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায় তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় মর্যাদা বর্ণনা করত: বলেন:



إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ فِي أُمِّ الْكِتَابِ لَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ وَإِنَّ آدَمَ لَمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ وَسَأُنَبِّئُكُمْ بِتَأْوِيلِ ذَلِكَ دَعْوَةِ أَبِي إِبْرَاهِيمَ وَبِشَارَةِ عِيسَى قَوْمَهُ وَرُؤْيَا أُمِّي الَّتِي رَأَتْ أَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ لَهُ قُصُورُ الشَّامِ.



অর্থ:- আমি আল্লাহর নিকট উম্মুল কিতাব তথা কুরআন মজীদে অবশ্যই সর্বশেষ নবী হিসেবে বিবেচিত এবং হযরত আদম (عليه السلام ) তখনও মাটির মধ্যে মিশ্রিত ছিলেন। আমি শ্রীগ্রই তোমাদেরকে এ শুভ সংবাদ জানাচ্ছি যে, আমি হচ্ছি পিতা ইব্রাহীম (عليه السلام ) এর দোয়ার নির্যাশ, ভাই ইসা (عليه السلام ) কর্তৃক স্বীয় সম্প্রদায়ের কাছে শুভ সংবাদীত এবং আমার মহিয়সী মাজননীর স্বপ্ন বৃত্তান্ত, যা তিনি দেখেছেন যে, তাঁর গর্ভের সন্তান গর্ভ থেকে খালাস পাওয়ার পর তাঁর থেকে একটি নূর বেরিয়ে গেল যদ্বরুন শামের রাজ প্রসাদ গুলো আলোকিত করে ছিল। উল্লেখ্য যে, ইমাম ছাখাভী (رضي الله عنه ) বলেন আমাদের শায়খ (رضي الله عنه ) এর মতে পুবোর্ক্ত বাণী ببصرى শব্দের ب ও ص হরফদ্বয়ে যবর যোগে অর্থ দাড়ায় মা আমেনা (رضي الله عنه ) স্বচক্ষে উটগুলোর ঘাঁড় আলোকিত হওয়ার কান্ড দেখেছিলেন।



ইমাম ছাখাভী (رضي الله عنه ) বলেন, শাম দামেস্কের পূর্বে অবস্থিত একটি প্রশিদ্ধ নগরী, যা হাওরান প্রদেশের পাশা-পাশি। হাওরান হেজাজ প্রদেশের এক বিশাল জনপদ। উভয়ের মধ্যকার প্রায় দু মঞ্জিল দুরত্ব রয়েছে। উলামায়ে কেরাম গবেষকরা বলেন: শাম দেশকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দিকে খঁাছ করার কারণ হচ্ছে যেহেতু শামদেশ থেকে নবুওয়তের নূর (আলো) সমগ্র বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত হবে। কেননা শাম দেশই হবে তাঁর সাম্রাজ্যের মূল কেন্দ্র বিন্দু। যেমন : এ প্রসঙ্গে পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী গ্রন্থে এর বর্ণনা ছিল এভাবে:



محمد رسول الله- مولده بمكة ومهاجره بيثرب وملكه با الشام- فمن مكة بدأت نبوة محمد صلى الله عليه وسلم و الى الشام ينتهى



অর্থাৎ- মোহাম্মাদ (ﷺ) হচ্ছেন আল্লাহ পাকের রাসূল, জন্ম স্থান হবে পবিত্র মক্কায়, হিজরত করবেন ইয়াসরিব তথা মদীনায় এবং সিরিয়ায় তাঁর নবূওয়তী রাজত্ব কায়েম হবে।


সর্বোপরি পবিত্র মক্কা হতে মোহাম্মদ (ﷺ) এর নবুওয়তী সুচনা হয়ে সিরিয়ায় যেয়ে সমাপ্ত হবে।



আর এ যৌক্তিক কারনে হুযূরে পাক (ﷺ)কে প্রথমে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত মেরাজ রজনীত ভ্রমন করানো হয়। অথচ বায়তুল মুকাদ্দাস শাম তথা সিরিয়ার অন্তর্গত। এরস্বপক্ষে আরও প্রমাণ রয়েছে। যেমন : সাইয়্যিদিনা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام ) ও স্বদেশ ত্যাগ করে অবশেষে শাম দেশে হিজরত করেন। সলফে সালেহীনদের কোন কোন ইমামদের মতে মহান আল্লাহ পাক এমন কোন নবীও রাসূল প্রেরন করেননি যে তাঁরা কোন না কোনভাবে শামে আসেননি। এমন কি যদি কেউ তথায়, প্রেরীত নাও হন তবুও দ্বীনে এলাহীর সাথে তথায় অবশ্যই আসতে হয়েছে।



শেষ যুগে ইলম ও ঈমান কেবল শামে স্থির হবে। যেহেতু শাম ছিল কেবল সকল ইলম, আমল ও ইমামের কেন্দ্রস্থল। (কাশফুল লিয়াম ফি ফদ্বলে বিলাদিশ শাম) এবং তথায় নূরে নবুওয়তের দীপ্ত মান সুর্য উদীত হয়ে সমগ্র বিশ্বের আনাচে কানাচে আলো চড়িয়ে পড়বে।



প্রকাশ থাকে যে, হুযূরে পাক (ﷺ) এর নূর মোবারক বের হয়ে সমগ্র জগতবাসীকে আলোকিত করেছে একথা সন্দেহাতীতভাবে সত্য। তবে তাঁর নূর বের হওয়াটা মহীয়সী মাতার রেহেমে থাকাবস্থায় না প্রশব কালীন সময়ে এ বিষয়ে কিছু মতভেদ রয়েছে। তবে সর্বোপরি কথা হচ্ছে, দু”সময়ের যে কোন সময়ে প্রকাশ পাওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। তবে প্রসব কালীন সময়ে প্রকাশ পাওয়ার বর্ণনাটা অধিক গ্রহণ যোগ্য ও যুক্তি নির্ভর।



উলামায়ে কেরামগনের সর্ব সম্মতি ক্রমে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আগমন কালে যে মোবারক নূর প্রকাশ পেয়েছিল সে অবিকল নূর পরবর্তীতে স্থায়ীত্ব লাভ করে, যার দ্বরুন সমগ্র বিশ্ববাসী তাদেঁর হেদায়েতের রাস্তা পেয়েছে, স্বীয় উন্মতের সাম্রাজের সম্প্রসারণ ঘটেছে, সমগ্র বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁর হেদায়েতের নূর পৌছে এমনই ভাবে বিস্তৃতি লাভ করে যে, তাঁর আগমনে সমগ্র শিরক বেদআত ও গোমরাহীর মুলোৎপাটন ঘটে।

_______________

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন