অনারবে মীলাদ

 

অনারবে মীলাদ

واما دلعجم فمن حيث دخول هذا الئهد المعظم والزمان المكرم- لاهلها مجالس فخام من انواع الطعام للفقراء الكرام وللفقراء من الخاص ولعامة- وقراءة الختمات والتلاوات المتواليات والانشادات المتعاليات والبناس البرات والخيرات وانواع السرور واضاف الحبورحتى بعض العبائز من غزلهن ونسجهن يجمعن مايقمن بجمعهن الاكابر والأعيان- وبهيا فهن ما يقدرون عليه فى ذالك الزمان ومن تعظيم مشايخهم وعلمائهم هذا المولدا لمعظم والمجلس المكرم- انه لايأ باه احد فى حضوده دجاء ادراك نوده وسروره وقد وقع لشيخ مشايتنا مولنازين الدين محمود البهدا نى النقشبندى (قدس سره العلى) انه اراد سلطان الزمان وخاقان الدوران هما يون بادشاه- (تغمده الله واحسن مثوااه) ان يجتمع به ويحصل له المدر والامداد بسببه- فأباه السيغ وامتنع ايضا ان يأتيه السلطان ستغاناء بقضل الرحمن- فألح السلطان على وزيره يبرام خان- بانه لابد من تدبير للا جتماع فى الكان ولو فى قليل من الزمان- فسمع الوزيد ان الشيغ لايحصر فى دعوة من هناء وعزاء الافى مولد النبى عليه الصلاة والسلام- تعظيما لذ الك المقام فأنهى الى اللطان فأمره يتهيئة اسبابه الملو كانية من انواع الاطعمة والاسبة ومما يثم به ويتبخر فى المجلس العلمية- ونادى الاكابر والأ هالى- وحفر الشيغ مع بعض الموالى فاخذ الطلن الابريق بيد الأدب ومعاونة التوفيق- والوزير اخذ الطثت من تحت امره- رجاء لطفه ونظره وعسلا يد التسيغ المكرم وحصل لهما يبركة تواضعهما لته تعالى ولرلوله صلى الله عليه وسلم) لمقام المعظم والجاه المفخم.



অর্থাৎ- আরব ছাড়াও অনারবে মীলাদ মাহফিলের প্রচলন ছিল মহাসমারোহে যেমন: পবিত্র রবিউল আওয়াল মাসে এবং মহিমান্বিত দিনে (১২ই তারিখে) এতদঞ্চলের অধিবাসীদের মীলাদ মাহফিলের নামে জাঁকজমক পূর্ণ মাজলিসের আয়োজন হতো সে গরীব মিসকীনদের মধ্যকার বিশেষ ও সাধারনদের জন্য বহু ধরনের খাবারের বন্দোবস্ত করা হতো। তাতে ধারাবাহিক তেলাওয়াত বহু প্রকার খতম এবং উচ্ছাঙ্গ ভাষায় প্রশংসা সম্বলিত কবিতা মালা আবৃত্ব হতো। বহু বরকতময় ও কল্যাণময় আমলের সমাহার ঘটতো বৈধ পন্থায় বঙ্গ আনন্দোল্লাস প্রকাশ করা হতো বহু বিশেষক্ত মহা পন্ডিতগণ ও তাতে অংশ গ্রহণ করতেন। এমনকি কোন কোন বৃদ্ধা মহিলাগণ ও সে মাজলিসে সমবেত হয়ে রাসূলে পাকের শানে বহু প্রেমকাব্য ও ছন্দ মালা সংগ্রহ করতঃ তা মাজলিসে উপবেশন করতো। তাঁদের প্রেমকাব্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গগন ও জড়ো হতেন। তাঁদের (মহিলাদের) জন্য সাধ্যানুসারী আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকতো। তৎকালীন উলামা মাশায়েখগণের বহুবিদ সম্মানজনক কার্যাবলীর অন্যতম হচ্ছে এ মহান মীলাদ মাহফিল এবং মহিমাময় মাজলিসের প্রতি গুরুত্বারোপ ও সম্মান প্রদর্শন করা। কিন্তু তা সত্বেও উক্ত মাহফিলে সমবেত হওয়ার ব্যাপারে তাদেঁর কারও থেকে কোন ধরনের অস্বীকৃতি মুলক কঠোক্তি প্রকাশ পায়নি। যেহেতু সকলের এ উত্তম ধারনা ও আত্মবিশ্বাস ছিল যে, উক্ত মাহফিলে সমবেত হওয়া মূলতঃ আত্মতৃপ্তি, হুযূরে পাকের শুভাগমনের খুশী যাহের এবং তাঁরা এ ধরনের বহু উপমা বিদ্যমান রয়েচে। তন্মধ্যে আমাদের মহামান্য শায়েখগনের মুরববী শায়েখ মাওলানা যাইনুদ্দী্ন মাহমুদ আল-বাহদানী নকশবন্দী (رضي الله عنه) এর ঘটনা উল্লেখ যোগ্য।



একবার যুগশ্রেষ্ট প্রতিভা সমপন্ন কালজয়ী, বিপ­বী মুঘল সম্রাট বাদশা হুমায়ুন (আল্লাহ পাক তাকেঁ করুনার আচলে ডেকে রাখুন এবং সর্বোত্তম মাকাম দান করুন) তাঁর বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ মাজলিসে মহামান্য শেখ যাইনুদ্দিন মাহমুদ আল বাহদানী নকশেবন্দী (رضي الله عنه) কে সমবেত করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন কিন্তু শায়খ (رحمة الله) সহসাই তা প্রত্যাখ্যান করে বললেন, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে অমুখাপেক্ষী কোন সভা- সমাবেশে তিনি সমবেত হন না। কিন্তু সম্রাট তাঁর এ উক্তিতে পিছপা না হয়ে বরং তাঁর মন্ত্রীমহোদয় জনাব বারাম খাঁনকে দিয়ে বারং বার অনুনয় ব্যক্ত করেন যে, রাজদরবারে এ ধরনের কল্যান মুলক অনুষ্ঠানের নিতান্তই প্রয়োজন বিধায় অল্পক্ষন হলেও উপস্থিতি কামনা করি।



সম্রাটের মন্ত্রী মহোদয় বুঝতে পারলেন যে, আল্লামা মাইনুদ্দিন ছাহেব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মীলাদ মাহফিলে কেবল তাঁর সম্মানার্থে উপস্থিত হতে পারেন অন্য কোন অনুষ্ঠানে নয়। এবিষয়টি মন্ত্রী মহোদয় সম্রাট মহোদয়ের দরবারে অবহিত করেন। এ সুবাদে সম্রাট মহোদয় স্বীয় মন্ত্রী মহোদয় কে আন্তর্জাতিক মানের খাদ্য ও পান সামগী প্রস্তুত করত: মাহফিল কে অপরূপ সজ্জায় সজ্জিত এভং সুরভীতি করার জন্য আতর গোলাপ, ধুপদ্বারা সুঘ্রানীত ও সুরভীত করার নির্দেশ দেন।



অনুষ্ঠানে আকাবীর তথা বড় বড় উলামা-মাশায়েখ ও তথাকার অধিবাসীদিগকে অংশ গ্রহনের আহবান করা হয়। হাজারও মানুষের সমাগমে অনুষ্ঠানে সজ্জিত টিক এমনই মুহুর্তেই শায়খুল আল্লামা যাইনুদ্দিন (رحمة الله) কিছু সংখ্যক সহচরবৃন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তাঁর সম্মানার্থে সম্রাট মহোদয় আপ্যায়নের জন্য স্বয়ং- শেখ মহোদয়ের হস্ত ধৌত করনের জন্য শিষ্ঠাচার হস্তে পানির লোটা বহন করেন এবং স্বীয় মন্ত্রী মহোদয় (বারাম খান) নির্দেশের অধীনস্ত হয়ে নীচে চিলমুচি (চিলিমচি) বহন করেন। উভয়ের উদ্দেশ্য একটিই ছিল যে, যাতে করে তাদের প্রতি শায়খ মহোদয়ের সুদৃষ্টি পরায়ন স্নেহশীল এবং কোমলপ্রাণ হোন। তারা তাঁর হস্তমোবারকে মিষ্টি পরিবেশন করেন। এরই ফলে আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের সন্তুষ্টি কামনায় তাঁর প্রতি উভয়ের সমোচ্ছ স্থান ও গৌরভয়ম মর্যাদা অর্জিত হয়।

১৭

 ভুমিকা



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম



সমস্ত প্রশংসা জ্ঞাপন করি সে চিরস্থায়ী অনন্ত অবিনশ্বর আল্লাহ পাকের যিনি আহমদী নূরের আলো প্রস্পুটিত করেছেন যিনি মুহাম্মদী আলো উদ্তি করেছেন, যিনি তাঁকে এ অস্তিত্বজগতে মাহমুদ (সুপ্রশংসিত) বলে গুনাম্বিত করে অগনীত নেয়ামত রাজী ও বেশুমার খ্যাতিসম্পন্ন মর্যাদাসমূহ দান করে সমগ্র আরব ও আজমে তথা ৮০ হাজার আলমের ৫০ হাজার সৃষ্টি জীবের পরিপূর্ণ নিয়ামক স্বরূপ প্রেরন করেছেন। পাঠিয়েছেন সৃষ্টিকুলের হেদায়েতের চেরাগ, হাদিয়্যা, রহমত, ক্ষমাশীল হিসাবে। যেহেতু তাঁর এক পবিত্র উপাধি হচ্ছে الودود الرحيم (প্রেমময় অতিশয় দয়াদ্রশীল)। আল্লাহ পাক এ নব জাতক শিশু মুহাম্মদ (ﷺ)কে রবিউল আওয়াল মাসের এক উত্তম সময়ে পাঠিয়ে সুভাসিত ও সৌরভীত করেছেন। তিনি তাঁকে মর্যাদাশীল, সম্মানীত করেছেন, সর্বোচ্চ এহসান করেছেন, তাঁকে সবার উর্ধ্বে নির্বাচিত করেছেন। তাঁর মহিমান্বিত মর্যাদা সম্পর্কে বিচক্ষণবাদীরা কতইনা উত্তম প্রবন্ধ লিখেছেন



لهذا الشهر فى الاسلام فضل * ومنقبة تفوق على الشهور


 فمولود به واسم ومعنى- * وايات يشرن لدى الظهور


ربيع فى ربيع فى ربيع * ونور فوق نور فوق نور-



এ মাসের রয়েছে অনেক মর্যাদা ও গুরুত্ব।


সকল মাসের উপরে তার শ্রেষ্টত্ব


রবিউলে উদিত রবি যিনি


সকল নূরের উর্ধ্ব নূরী তিনি।



মহান আল্লাহ পাক তাঁর কুরআনে আযীম ও ফুরকানে হাকীমে তাঁর হাবিবে পাকের শানে এরশাদ ফরমান:



لَقَدْ جَاءكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَؤُوفٌ رَّحِيمٌ.



অর্থাৎ: তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতেই একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের বিপন্ন কালে তিনি ব্যথিত হন। তিনি তোমাদের জন্য মংগল কামী। সকল মোমিনদের প্রতি সীমাহীন দয়াদ্রশীল এবং অতিশয় দয়ালু। রাসূলে পাকের সমস্ত নূরের ফয়েজ লাভের জন্য আল্লাহ পাক এ সংবাদ গুলো প্রকাশ করিয়েছেন। বর্ণিত আয়াত দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, উম্মতের নিকট তাঁর রাসূল (ﷺ) এর আগমন মূলত: তাঁর উম্মতদের প্রতি লক্ষ্য রাখা, তাদেরকে দর্শন দিয়ে অনুগ্রহ করা এবং তাদের ব্যথিত হৃদয়ে শান্তি স্থাপন করা।



আয়াতে বর্ণিত كم শব্দদ্বারা যদিও মুমিন ও কাফেরের অন্তর্ভূক্তি বুঝায় তবুও এখানে মূলত: তিনি যে কেবল মুত্তাকিদের জন্য হেদায়েতকারী তাতে সন্দেহ নেই।। যেমন: মনে করুন নীল দরিয়ার পানি প্রেমীকদের জন্য পানি আবার গোমটা পরিহিতদের জন্য রক্ত।



আয়াতে বর্ণিত মর্মদ্বারা আরও ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, রাসূল (ﷺ) এর আগমন তোমাদের নিকট প্রতিশ্রোতিবদ্ধ তোমাদের আশা আকাংখার মূল উদ্দেশ্য। তার প্রমাণ মিলে নিন্মোক্ত আয়াতে কারীমাতে:


 


فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ . وَالَّذِينَ كَفَرواْ وَكَذَّبُواْ بِآيَاتِنَا أُولَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ.



অর্থাৎ: তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে হেদায়েতকারী আসার পর যদি কেউ সে হেদায়েতের অনুস্মরন করে, তবে তাদের জন্য কোন দু:খও ভয় থাকবেনা। অন্যদিকে যারা কুফরী করবে (সত্যকে প্রত্যাখ্যান করবে) আমাদের আয়াতসমুহকে মিথ্যায় প্রতিপন্ন করবে, কেবল তারাই হবে জাহান্নামের অধিবাসী, আর সেখানে তারা চিরস্থায়ী অবস্থান করবে।



উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত فاما يأتينكم বাক্যের فإما হরফে শর্ত এবং তার সাথে ما হরফ সংযুক্ত হয়েছে, যা দৃঢ়তা সূচক অর্থে ব্যবহৃত। ইহা দ্বারা একথা প্রতীয়মান হলো যে, তাঁর গ্রহণীয়তা বরণীয়ে মহামান্য একটি ব্যাপক নিদর্শন ও পূর্ণ ঈঙ্গিত বহন করে যে, এ নিখীল ধরনীর বুকে হুযূরে পাক (ﷺ) এর মহাগমন মূলত: আলমে আরওয়াহ জগতে সমস্থ আম্বিয়া (عليه السلام) স্থান থেকে যে নবুওয়তী স্বীকৃতি নেয়া হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন সহ বান্দাহগণের প্রতি মহান আল্লাহ পাকের সে কৃত প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়ন, অনুগ্রহ ও সম্মান দান করা।



এটা থেকে আরও প্রতীয়মান হলো যে, যদি এ ধরাধামে তাঁর মহাগমন না ঘটতো, তবে কেউই তার মর্যাদার অস্তিত্ব ফিরে পেতোনা। যেহেতু তিনি হচ্ছেন নৈকট্য লাভের দিক বিবেচনায় সমুচ্ছ, সম্মান লাভের দিক বিবেচনায় আল্লাহর নিকট প্রথম স্তরে সমাসীন। কেননা তিনি এমনই এক মর্যাদাশীল নবী ও রাসূল, যিনি সৃষ্টি কুলের প্রতি ধাবমান ও মনোযোগী হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁর মাওলায়ে কারীমের সান্নিধ্য থেকে একমুহুর্তের জন্য দুরে নন। ইহাই হচ্ছে রাসূলগনের সমুচ্ছ মর্যাদার নিদর্শন।



আর এ বিষয়টি কেবল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বেলায় কেন তাঁর উম্মতের বিশেষ ব্যক্তি বর্গের বেলায় ও তা প্রযোজ্য। যেমনঃ এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাকের বিশেষ বান্দাহ সুলতান মাহমুদ (رحمة الله) এর বিশেষ খাদেম হযরত আয়াম (رضي الله عنه) এর ঘটনা উল্লেখ যোগ্য। তিনি কখনও উচ্ছ পদের অভিলাষী ছিলেননা বরং এক্ষেত্রে সর্বদাই আল্লাহর সান্নিধ্যের পদবী প্রত্যাশা করতেন। একবার তাঁর মুনীব ও সুলতানা তাঁর সম্মোখে বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ পদ দানের অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে সাথে সাথে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এবং তাঁর মাওলায়ে কারীমের সান্নিধ্যে সর্বোচ্ছ উপস্থিতির মাক্কাম হাছিলের পথে অগ্রসর হয়ে যান। কেননা তাঁর একথা আগোচর ছিলনা যে, তাঁর নবীয়ে কারীম পাক (ﷺ) কখনো নিজের ইচ্ছা অভিপ্রায়কে মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছা অভিপ্রায়ের উর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন।



একথা শত র্স্ফুত যে, হুযূরে পাক (ﷺ) নিজের সকল ইচ্ছা অভিলাষকে আল্লাহর ইচ্ছা অভিলাষের ভেতর উৎসর্গ করে দেন। লক্ষ লক্ষ জীবন এ আক্ষেপে বিরান হয়ে গেছে। তবুও তাঁর মাশুক (আল্লাহ ও তদীয় রাসলের) এর যিয়ারত নছীব হয়নি। হঁ্যা অধিক মাত্রায় ছুন্নতের পরিপূর্ণ তাবেদারী এবং মহববতের আবেগেই উহা সম্ভব হয়ে থাকে। তবে এসব গুনে গুনান্নিত হলেই যে যিয়ারত নছীব হয়ে যাবে ইহা কোন জরুরী নয়। কারণ কারও না দেখার ভেতরেও বিশাল হেকমত থাকতে পারে। কাজেই দুঃখ করার কোন কারণ নেই। প্রকৃত প্রেমিকের আসল উদ্দেশ্য হলো মাশুকের সন্তুষ্টি, তাতে মিলন হোক বা না হোক তাতে আফছোছ করার মত কিছুই নেই।


 


যেমনঃ এ প্রসঙ্গে জনৈক কবি বলেনঃ-



اربد وصاله ويد يد هجرى * فاترك ما اريدلما يريد



অর্থাৎ- আমি মাহবুবের মিলন চাই অথচ মাহবুব চায় আমার বিচ্ছেদ। কাজেই মাহবুবের সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে আমার সকল ইচ্ছা অভিলাষ পরিত্যাগ করলাম।



ইহাই হচ্ছে আল্লাহর মারেফত তত্ত্ববীদ আহলে কামিলগনের সমুচ্ছ মর্যাদার আসন, যঁারা তাজাল্লিয়াতে জামাল ও জালালের মধ্যে মিশ্রিত হয়ে ফানা ফির রাসূল, ফানা ফিল্লাহ ও বাক্কা বিল্লাহতে আত্মা বিলীন করে দিয়েছে। .., প্রার্থীব কোন মোহ তাদেঁরকে হাতছানী দিয়ে ডাকার দুঃসাহস দেখাতে পারেনা। এমনই একজন মুখলিছ বান্দাহ শায়খ আবু ইয়াযীদ (رحمة الله) তন্মধ্যে অন্যতম।



যখন তাকেঁ বলা হলো ওহে আবু ইয়াযীদ! বলতো তুমি কি চাও? তিনি বললেনঃ-



اريد أن لااريد



অর্থাৎ- কিছু না চাওয়াই আমার ইচ্ছা অভিপ্রায়।



অতীতে বহু মারেফত তত্ত্ব অনুসন্ধানকারী সৌভাগ্যশালী ব্যক্তিবর্গগন বহু উক্তি করে গেছেন। তাছাড়া বহু নেতৃস্থানীয় উচ্ছ স্থরের সুফী সাধকগনের ইচ্ছা অভিলাষ ছিল তাই। যেহেতু কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন ইচ্ছা- অভিলাস কামনা করা তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলনা। এটাই ছিল খোদা তত্ত্বজ্ঞান গনের কেটি উচ্ছ স্তর।



যারা মাক্কামে ফানা- ও বাক্কার স্তরে উন্নীত যারা নিজ সত্ত্বাকে আল্লাহর মত্ত্বার মধ্যে একীভূত করে দিয়েছে এটা মূলতঃ তাদের নিদর্শন।



আয়াতে বর্ণিত رسول শব্দের لام (লাম) হরফে তানভীন ব্যবহৃত হয়েছে, যেন মনে হয় আয়াতের ভাবার্থ এভাবেই হয়েছে।



لقد جاءكم ايها الكرام رسول كريم من رب كريم بكتاب كريم ويه دعاء الى دوح وريحان وحينة نعيم- وزيادة بشارة الى لقاء لريم وانذار عن الحميم والجيم- كما قال عزوجل نيئى عبدى انى انا الفغود الرحيم وأن عذابى هو العذاب الأليم-



অর্থাৎ- ওহে সম্মানীত ব্যক্তিবর্গ! তোমাদের নিকট অবশ্যই রবেব কারীমের পক্ষ থেকে কিতাবে কারীম তথা সম্মানজনক গ্রন্থ আল কোরআন নিয়ে একজন রাসূলে কারীম (সম্মানজনক রাসূল ) শুভাগমন করেছেন। ইহাতে জান্নাতে নাঈম, আরাম আয়েশ ও জান্নাতী ফলফুলের সৃঘ্রানের প্রতি আহবান করা হয়েছে। এবং লিক্বায়ে কারীম বা রোজ কেয়ামতে মহান মাওলায়ে কারীমের সাথে সম্মানজনক সাক্ষাতের অতিরিক্ত শুভ সংবাদ দানের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। পাশ্বা পাশ্বি হামীম ও জাহীম তথা প্রচন্ড গরম পানি বিশেষ ও উত্তপ্ত নরক আগ্নি নামক দুটি জাহান্নামের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।



এদিকে ইঙ্গিত করেই মহান আল্লাহ পাক এরশাদ ফরমান:



نبئ عبادى افى انا الغفورا الرحيم وأن غدابى هد العذاب الأليم



অর্থ্যাৎ- আমার বান্দাহগনকে এ সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে যে, তারা অনুতপ্ত হয়ে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থী হলে তখনই আমি তার জন্য ক্ষমাশীল ও অতিদয়াশীল। অন্যতায় যারা অহংকারী, তাদের প্রতি আমার যন্ত্রনাদায়ক শাস্তির অশুভ পরিণাম রয়েছে।



রহমতে আলম রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি সকল তাযীম, তাকরীম প্রদর্শনের অন্যতম একটি হচ্ছে যে, রুহ জগতে মিছালী ছুরতে সকল নবী ও রাসূল (عليه السلام) গণ থেকে তাঁর নবুওয়ত ও রেসালাতের স্বীকৃতি এভাবে নেয়া হয়েছে যে, আযমত জালালতের সাথে নবুওয়ত ও রেসালাতের গুরুদায়িত্ব নিয়ে আসবেন তাঁরা যদি তাঁর মহাগমনের সময় দান অথবা নাই পান নির্দিধায় তাঁরা যেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি ঈমান গ্রহন করে, তাকে সাহায্য করে সবোর্পরি তাঁর সকল আযমত, কার্যালত, জামালত, জালালিয়্যাত ও বুযুর্গীর প্রশাংসা জ্ঞাপন করতে হবে এবং স্বীয় সম্প্রদায়কে এগুলোর বিস্তারীত বর্ণনা করতর এর প্রতি আস্থা বিশ্বাস ও বাস্তবায়ন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। সকল মুফাসসিরীনে কেরামগন এর স্বপক্ষে মহান আল্লাহর নিন্মোক্ত বানী দ্বারাই এর সত্যতা প্রমাণ করেন।



وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ.



অর্থাৎ- আল্লাহ পাক সমস্ত নবীগন হতে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, আপনাদেরকে কিতাব এবং হিকমাহ তথা শরীয়ত যাহাই দান করি তারপর আসবেন আপনাদের নিকট এ কজন রাসূল যিনি আপনাদের নিকটস্থ কিতাবের বাস্তবতা প্রমাণকারী হবেন, (যেহেতু তাঁর আগমনের অগ্রিম সংবাদ আপনাদের কিতাবে থাকবে, অতএব, তাঁর মহাগমন দ্বারা আপনাদের কিতাবের বাস্তবতা প্রমানিত হবে। তিনি আপনাদের বর্তমানে এসে গেলে) আপনারা তাঁর প্রতি অবশ্যই ঈমান গ্রহন করবে এবং তাঁর সাহায্য সহায়তা করবেন।



(অঙ্গীকারের এ বিষয়বস্ত উল্লেখ পূর্বক) আল্লাহ পাক নবীগণকে লক্ষ্য করে বললেন আপনারা অঙ্গীকার করলেন তো এবং উক্ত বিষয় বস্তুর উপর আমার কঠোর আদেশ গ্রহণ করলেন তো? নবীগণ সকলেই বলে উঠলেন, আমরা অঙ্গীকার করলাম। আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা (নিজেরাই নিজেদের উপর) সাক্ষী থাকুন, আমি ও আপনাদের সাথে সাক্ষীদের মধ্যে থাকলাম। (এ অঙ্গীকারে স্বীয় উম্মতগন ও শামিল হবে) এ অঙ্গীকারের পর যে ফিরে যাবে, যে পলায়নকারী হিসেবে অবশ্যই গণ্য হবে।



পূর্বোক্ত হয়েছে যে, আল্লাহ পাক নবী কারীম (ﷺ)কে ধরনীয় বুকে প্রেরনের পূর্বে আদম (عليه السلام) হতে নিয়ে সকল নবীগন হতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়ত ও রেসালাতের অঙ্গীকার এবং তাকে সাহায্য সহায়তা করার স্বীকৃতি নেয়া হয়েছিল এবং নবীগণ ও যাতে স্বীয় উম্মত হতে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়ন করত: তাকে সাহায্য সহায়তার অঙ্গীকার গ্রহন করতে পারেন সে দিকে জোর তাকিদ দেয়া হয়েছিল।



এ সমুচ্ছ মর্যদা নিয়েই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যুগে যুগে সকল নবী ও রাসূল গণের হাদী ও রাহবর হয়ে ধরাপৃষ্টে আগমন করেন। সেই হিসেবে তো নিঃসন্দেহে তিনি হযরত মুসা (عليه السلام) এরও নবী ছিলেন। এ জন্যই তো রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জোরের সাথে বলেছিলেনঃ لوكان موس حيا لماوسعه الااتباعى অর্থ:- এ যুগে মুসা নবী (عليه السلام) জীবিত থাকলে তাঁর জন্য আমার আনুগত্য অনুসরণ ছাড়া উপায় থাকতোন। (মেশকাত শরীফ) মাওয়হেবে লাদুন্নিয়া গ্রন্থে উক্ত তথ্য বর্ণনার পর উল্লেখ আছে এ তথ্যের অনিবার্য অর্থ ইহাই যে, হযরত ছাক্বীয়ে কাওসার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কেবল তাঁর উম্মতের নবী ছিলেন না বরং তিনি সমস্ত নবীগণেরও নবী ছিলেন। এরই প্রতিফলন এবং বিকাশ সাধন হবে কেয়ামতের ভয়াল দিনে হযরত আদম (عليه السلام) এবং তৎপরবর্তী সকল নবীগণও ঐ দিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পতাকাতলে সমবেত থাকবেন। নিন্মোক্ত হাদীস শরীফই তার স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছে এভাবে



آدَم وَمَنْ دُونه تَحْت لِوَائِي يَوْم الْقِيَامَة



অর্থাৎ- কিয়ামতের ভয়াল মাঠে হযরত আদম (عليه السلام) এবং তিনি ছাড়াও আরও যত নবীও রাসূলগন (عليه السلام) আছেন সকলেই আমার পতাকাতলে সমবেত হবেন।



জেনে রাখ! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বাহ্যিক ছুরত তথা ছুরতে জিসমানী হালতে ধরাপৃষ্টে মুহুরে নবুওয়ত সাধন হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে হুযূরী কলব তথা মিছালী ছুরতে পূর্বের ন্যায় আল্লাহ নিকটে অবস্থান করছেন। সে মতে তিনি আল্লাহর পাকের সমীপে সর্বদাই উপস্থিত আছেন। তাতে এক পলকও তাঁর থেকে অদৃশ্য থাকেন না। সেক্ষেত্রে তিনি হচ্ছেন দু সমুদ্রের মিলনস্থল। যেহেতু তিনি তোমাদের কাছে বিস্ময়কর ও দুবোর্ধ হলেও মহান আল্লাহর অতি সান্নিধ্যে। আমাদের কাছে বোধগম্য ও সুষ্পষ্ট হলেও আল্লাহর কাছে সত্ত্বাগত ভাবে বিদ্যমান আছেন, আমাদের সাথে সমতল বা বিছানার মত মনে হলেও তার কাছে আরশ তুল্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রত্যাবর্তন স্থল সর্বদাই মাওলায়ে কারীমের সান্নিধ্যে বিদ্যমান।

_______________

আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাবাবী (ﷺ)

মূলঃ ইমাম নূরুদ্দীন মুল্লা আলী কারী আল হারুবী (رحمة الله)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন