সহস্র সহস্র শী’আহ যারা হযরত যায়দ (رحمة اللّٰه عليه)’কে পরিত্যাগ করেছিলো


সহস্র সহস্র শী’আহ যারা হযরত যায়দ (رحمة اللّٰه عليه)’কে পরিত্যাগ করেছিলো, তাদের দ্বারা হযরত জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه)’কে নিজেদের প্রকৃত ইমাম বিবেচনা করার বাস্তবতা পরিস্ফুট করে যে, তারা মোটামুটি ইসনা’ আশারী গোষ্ঠী কিংবা বর্তমানকালের ইমামী বা জা’ফরী শিয়া সম্প্রদায়ের মতোই একটি দল ছিলো। ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه)’এর এতো এতো ভক্ত-অনুসারী থাকা সত্ত্বেও কেন তাহলে তিনি উমাইয়া বা আব্বাসীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন নি? এই প্রশ্নের উত্তর একটি বর্ণনায় প্রদান করা হয়েছে, যা লিপিবদ্ধ আছে আবূ জা’ফর আল-কুলাইনী’র বিশাল ‘আল-কা’ফী’ পুস্তকে। এ বইটি শিয়াদের হাদীস সংকলনগুলোর মাঝে অদ্বিতীয় মর্যাদা ভোগ করে থাকে। বর্ণিত আছে:



সুদাইর আল-সায়রাফী বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ (মানে ইমাম জা’ফর সাদিক্ব- رحمة اللّٰه عليه)’এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বলি, “আল্লাহর কসম, আপনি অস্ত্র সংবরণ করে থাকতে পারেন না।” তিনি প্রশ্ন করেন, “কেন?” আমি উত্তর দেই, “কারণ আপনার এতো এতো সমর্থক ও সাহায্যকারী (শী’আহ)। আল্লাহর শপথ, যদি আমীরুল মো’মেনীন হযরত আলী (كرم اللّٰه وجهه) আপনার মতো এতো বিশাল সংখ্যক শী’আহ ও সমর্থক পেতেন, তাহলে তাইম (হযরত আবূ বকরের গোত্র) ও আদী (হযরত উমরের গোত্র) ও রকম পরিকল্পনা দ্বারা কখনোই তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারতেন না।” তিনি জিজ্ঞেস করেন, “আর তাদের সংখ্যা কতো হতে পারে, ওহে সুদাইর?” আমি বলি, “এক শ হাজার (মানে এক লাখ)।” তিনি প্রশ্ন করেন, “এক শ হাজার?” আমি উত্তর দেই, “জি, এবং দুই শ হাজার (মানে দু লাখ)।” তিনি আবার প্রশ্ন করেন, “দুই শ হাজার?” আমি উত্তর করি, “জি, এবং দুনিয়ার অর্ধেক।” ইমাম জা’ফর সাদিক (رحمة اللّٰه عليه) নিশ্চুপ থাকেন। এরপর তিনি বলেন, “তুমি কি আমাদের সাথে এয়ানবু বন্দরে আসবে?” আমি হ্যাঁ-সূচক জবাব দেই। তিনি একটি খচ্চর ও একটি গাধাকে জিন পরাতে আদেশ করেন। আমি দ্রুত গাধার পিঠে চড়ে বসি, কিন্তু তিনি বলেন, “সুদাইর, তুমি বরং আমাকে গাধার পিঠে চড়তে দেবে কি?” আমি বলি, “খচ্চর অনেক শোভনীয় এবং অভিজাতও।” কিন্তু তিনি বলেন, “গাধা আমার কাছে বেশি আরামদায়ক।” এরপর আমি সওয়ার থেকে নেমে যাই। তিনি তাতে চড়েন, আর আমি খচ্চরে উঠে বসলে আমরা চলা শুরু করি। নামাযের সময় আগমন করলে তিনি বলেন, “সুদাইর, নামো। চলো আমরা নামায আদায় করি।” এরপর তিনি মন্তব্য করেন, “এই মাটি শেওলা আবৃত; এখানে নামায আদায় করা জায়েয নেই।” এমতাবস্থায় আমরা সওয়ারে চড়ে এগোতে থাকি যতোক্ষণ না আমরা এমন স্থানে পৌঁছুই যেখানকার মাটি লাল। তিনি (সেখানকার) মেষচারক বালকটির দিকে তাকিয়ে বলেন, “সুদাইর, আল্লাহর কসম, এখানে যে পরিমাণ ভেড়া আছে, আমার যদি সে সংখ্যক শী’আহ থাকতো, তাহলে অস্ত্র সংবরণ করা আমার জন্যে গ্রহণযোগ্য হতো না।” অতঃপর আমরা সওয়ার থেকে নেমে নামায আদায় করি। আমাদের নামায শেষ হলে আমি মেষ গণনার উদ্দেশ্যে ফিরে তাকাই। সেখানে (মাত্র) সতেরোটি ভেড়া ছিলো। [আল-কুলাইনী, ‘আল-কা’ফী’ (উসূল), ২য় খণ্ড, ২৫০-২৫১ পৃষ্ঠা (দারুল্ আদওয়া, বৈরুত, ১৯৯২]




এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه)’কে তাঁর অনুসারী দাবিদারদের সম্পর্কে এমন কিছু শিক্ষা দিয়েছিলো, যা বর্তমানকালের শিয়া গোষ্ঠী আজো অস্বীকার করে চলেছে: আর তা হলো, রাসূলুল্লাহ (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর আহলে বায়ত তথা পরিবার-সদস্যদের কষ্টভোগ ও দুর্ভাগ্যের পেছনে শী’আহ চক্রের ভূমিকা তাঁদের বহিঃশত্রুদের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলো না, যদি বেশি না হয়ে থাকে। অতএব, এটা আশ্চর্যের কোনো বিষয় নয় যে, ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর পরে (শিয়াদের) ধারণাকৃত ইমামদের কেউই তাঁদের সময়কার শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্টা করেন নি। কারবালা তাঁদেরকে শিক্ষা দিয়েছিলো ওই সব লোকের চপলতা (গাদ্দারি) ও বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে, যারা তাঁদের শী’আহ (সাহায্যকারী) দাবি করেছিলো। তাদেরই সম্পর্কে ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “কেউই আমাদের প্রতি এতোখানি ঘৃণা পোষণ করে না, যেমনটি করে থাকে আমাদের প্রতি প্রেম-ভক্তির দাবিদার-বর্গ” [আবদুল্লাহ আল-মা’মাক্বা’নী, ‘মিক্ববা’স আল-হিদা’য়া’, ২য় খণ্ড, ৪১৪ পৃষ্ঠা (মু’আস-সাসাত আ’লে আল-বায়ত লি-ইহইয়া আত তুরা’স্, বৈরুত, ১৯৯১); ‘রিজা’ল আল-কাশশী’ হতে উদ্ধৃত]। বর্ণিত আছে যে ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه) আরো বলেন: “মোনা’ফিকূন-বর্গের প্রতি আয়াত আল্লাহতা’লা অবতীর্ণ করেন নি, শুধু শী’আহ-তন্ত্র প্রচারকবর্গ ছাড়া” (মানে তাদেরই উদ্দেশ্যে আয়াতগুলো নাযেলকৃত) [প্রাগুক্ত ২য় খণ্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা]।



ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর বড় ভাই ইমাম হাসান (رضي اللّٰه عنه)-ও ইতিপূর্বে কুফাবাসীদের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিলেন। বিখ্যাত শিয়াপন্থী লেখক আবূ মানসূর আত্ তাবারসী নিজ ‘আল-এহতেজা’জ’ পুস্তকে সাইয়্যেদুনা ইমাম হাসান (رضي اللّٰه عنه)’এর নিম্নোক্ত মন্তব্যটি সংরক্ষণ করেন: “আল্লাহর কসম, আমি মনে করি আমার শী’আহ (সাহায্যকারী) দাবিদার এসব লোক থেকে আমীরে মু’আবিয়া (رضي اللّٰه عنه) আমার জন্যে অধিকতর শ্রেয়।” [আবূ মানসূর তাবারসী, ‘আল-এহতেজা’জ’, ২য় খণ্ড, ২৯০-২৯১ পৃষ্ঠা (মু’আস-সাসাত আল-আ’লামী, বৈরুত, ১৯৮৯]।

_______________

কারবালার অন্যান্য দুর্বৃত্তদের মুখোশ উন্মোচন

মূল: মাহাজ্জা-ডট-কম

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন