আহলে হাদিস ও ইবনে তাইমিয়ার আক্বীদা

 

আহলে হাদিস ও ইবনে তাইমিয়ার আক্বীদা



হিজরী সপ্তম শতকের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (পুরা নাম-তকিউদ্দিন আহমদ ইবনে হালিম তাইমিয়া-৬৬১ হিঃ-৭২৮ হিঃ) জ্ঞানের ভারে বিভ্রান্ত হয়ে আক্বীদাগত বিষয়ে বেশ কিছু নতুন ও ভ্রান্ত ধ্যান-ধারনার জন্ম দেয় যা কালক্রমে মারাত্বক কিছু ফেৎনার সূচনা করে। ইবনে তাইমিয়াই হলো সৌদীআরবসহ তামাম বিশ্বের নব্য ফেৎনা-ওহাবী আক্বীদার একজন শীর্ষ স্থানীয় গুরু এবং সালাফী ও আহলে হাদিস বা লা-মাযহাবী আক্বিদার প্রতিষ্ঠাতা। ভ্রান্ত আক্বীদা প্রচারের জন্য তৎকালীন খলিফা তাকে দূর্গে রাখেন এবং ঐখানেই তার মৃত্যু হয়। “সালাফ আস্ সালেহীনের” সাথে ইবনে তাইমিয়া যেসব বিষয়ে মতভেদ সৃষ্টি করেছিল, সেগুলো আল্লামা তাজউদ্দীন সুবকী (رحمة الله) তালিকাভুক্ত করেছেন। তালিকা নিম্নরূপঃ-



১।        সে বলেছে, তালাক (ইসলামী পন্থায়) প্রকৃত হয় না, (যদি কোনোক্রমে হয়ে যায়) শপথের জন্যে কাফ্ফারা দেয়া অবশ্য কর্তব্য। ইবনে তাইমিয়ার পূর্বে আগত কোন ইসলামি আলেমই বলেননি যে, কাফ্ফারা দিতে হবে।



২।        সে বলেছে, হায়েজ (ঋতুস্রাব) সম্পন্ন নারীকে প্রদত্ত তালাক প্রকৃত হয় না, তার পবিত্রতার সময় প্রদত্ত তালাকও প্রকৃত হয় না।



৩।        সে আরো বলেছে, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে তরককৃত নামাযের কাজা (পূরণ) পড়া অপরিহার্য নয়।’



৪।        তার মন্তব্য, ‘হায়েয সম্পন্ন নারীর জন্যে কাবা শরীফের তাওয়াফ করা মোবাহ (অনুমতিপ্রাপ্ত)। সে যদি তা করে, তবে তাকে কাফ্ফারা দিতে হবে না।’



৫।        ইবনে তাইমিয়া বলেছে, ‘তিন তালাকের নামে প্রদত্ত এক তালাক এক তালাকই থাকবে। অথচ এ কথা বলার আগে সে বহুবার বলেছে যে এজমা আল মুসলিমিন এ রকম নয়।’



৬।        ইবনে তাইমিয়ার অভিমত হলো, ‘যখন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায় করা হয়, তখন তা যাকাত হয়ে যায়, যদিও তা যাকাতের নিয়্যতে দেয়া না হয়’।



৭।        সে বলেছে, ‘একটি ইঁদুুর’ কিংবা একটি বিড়াল যদি (হাউজের) পানিতে মরে পড়ে থাকে তাতেও পানি নাজস্ বা অপবিত্র হবে না’।



৮।        সে আরো বলেছে, ‘জুনুব বা স্ত্রী সহবাসের পর নাপাক ব্যক্তি রাতের গোসল ছাড়াই নফল নামায পড়তে পারবে। এটা অনুমতিপ্রাপ্ত।’



৯।        সে বলেছে, ‘যে ব্যক্তি এজমা আল উম্মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করে, সে অবিশ্বাসী (কাফের) কিংবা পাপী (ফাসিক) হয় না’।



১০।        ইবনে তাইমিয়া মত প্রকাশ করেছে, ‘আল্লাহ্ তা’লা হলেন মহল্ল-ই-হাওয়াদিস (সৃষ্টির উৎপত্তিস্থল) এবং তিনি সমাবিষ্ট অণুর দ্বারা তৈরি’।



১১।        সে আরো বলেছে, ‘কুরআনুল করীম আল্লাহ্ পাকের যাত বা সত্তার মধ্যে সৃষ্ট হয়েছে’।



১২।        সে আরো বলেছে, ‘আলম তথা সৃষ্টি জগত তার প্রজাতি নিয়ে চিরন্তন থাকবে’।



১৩।        ইবনে তাইমিয়ার ধারনা হলো, ‘আল্লাহ্ তা’লাকে ভাল জিনিস সৃষ্টি করতে হয়’।



১৪।        সে বলেছে, ‘আল্লাহ্ পাকের দেহ ও দিক আছে; তিনি তাঁর স্থান পরিবর্তন করেন এবং তিনি আরশের মতই বড়’।



১৫।        সে বলেছে, ‘জাহান্নাম চিরস্থায়ী নয়। এটাও বিলীন হয়ে যাবে’।



১৬।        ইবনে তাইমিয়া নবী (আলাইহিমুস সালাম)-গণের ত্রুটি বিচ্যুতিহীনতার প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়েছে।



১৭।        সে বলেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) অন্যান্য সাধারণ মানুষ হতে ভিন্ন কিছু নন। তাঁর মধ্যস্থতায় দোয়া করা অনুমতিপ্রাপ্ত নয়’।



১৮।        ইবনে তাইমিয়া মত প্রকাশ করেছে, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর রওজা মোবারক যেয়ারত করার নিয়্যতে মদীনা শরীফ যাওয়া পাপ’।



১৯।        সে বলেছে, ‘মহানবীর (ﷺ) রওযায়ে আক্দসে শাফায়াত প্রার্থনা করতে যাওয়া হারাম’।



২০।        সে আরো বলেছে, ‘তওরাত ও ইনজিল শব্দসম্ভারে পরিবর্তিত হয়নি, বরং অর্থে পরিবর্তিত হয়েছে’। (তথ্য সূত্র: আল্লামা যিয়াউল্লাহ্ কাদেরী, ওহাবী মাযহাবের হাকীকত)



কিছু আলেমের মতে উপরোক্ত মন্তব্য/আক্বীদার সবগুলো ইবনে তাইমিয়ার ছিল না। তবে ‘খোদা তা’লার দিক আছে এবং আল্লাহ্ সমাবিষ্ট অনুর দ্বারা তৈরী ’ মর্মে ইবনে তাইমিয়ার মন্তব্যকে কেউই অস্বীকার করেননি।



বর্তমান যুগের সালাফীরা হলো ইবনে তাইমিয়ার অনুসারী। তারা “ আহলে হাদীস” বা “লা-মাযহাবী” নামেও পরিচিত। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে সালাফী পতাকা বহনকারী ছিল কুখ্যাত নাসির উদ্দিন আলবানী নামে এক ঘড়ির মেকানিক যার মৃত্যু ১৯৯৯ খৃ। এই আলবানী তাহকিক (নিরিক্ষা) করার নামে আরবী ভাষার অসংখ্য হাদীস ও অন্যান্য ইসলামী মূল্যবান গ্রন্থের উপর নির্মম এক পরিবর্তন/পরিবর্ধন যজ্ঞ পরিচালনা করে। তার অপকর্মের দরূন ইসলামের এমন ক্ষতি হয়েছে যা বোধ হয় কোনদিন আর শোধরানো যাবে না। উদাহরন স্বরুপ- ইমাম বোখারী (র:) এর “আল-আদাবুল মুফরাদ” নামক হাদীস গ্রন্থখানা এই নাসির উদ্দিন আলবানীর সম্পাদনায় “সহিহ আল-আদাবুল মুফরাদ” নামে পরিবর্তন ও সংক্ষিপ্ত করন করে প্রকাশ করা হয়। এই গ্রন্থে বোখারী (র:) এর ৬৪৫টি বাব (অধ্যায়/চ্যাপ্টার) হতে ৮৩টি বাদ দিয়ে শুধু ৫৬২টি বাব প্রকাশ করা হয়। ইহার ফলে মূল গ্রন্থের ১৩৩৯ খানা হাদীসের মধ্যে আলবানী কর্তৃক ৩২৯ খানা হাদীস বাদ দিয়ে ১০১৩ খানা হাদীস প্রকাশ করা হয়। তাহকিককৃত এবং বাদ দেওয়া হাদীস সমূহ হলো আদব, মহাব্বত, তাজিম ইত্যাদি সংক্রান্ত।

_________________

কিতাব : হক্ব-বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা

গ্রন্থনা ও সংকলনে:

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন