আব্দুল ওহাব নজদীর (ওহাবী) আক্বীদা

 

আব্দুল ওহাব নজদীর (ওহাবী) আক্বীদা


ওহাবী সম্প্রদায়ের প্রবক্তা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী (সক্ষেপে শেখ নজদী) ১৭০৩ সালে আরবের নজদে তামিম গোত্রে জন্ম গ্রহন করে। তার ভাই, বাবা, চাচা, দাদা, সকলেই হক্কানী আলেম ছিলেন। কিন্তুু শেখ নজদী শৈশবকাল থেকেই নবী বিদ্বেষী এবং ভ্রান্ত আক্বিদায় বিশ্বাসী ছিল। যার কারনে তার পিতা ও ভাইয়ের সাথে তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। তার আক্বিদাকে প্রাতিষ্ঠানিকরূপ দেয়ার জন্য সে একজন শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকের প্রয়োজন অনুভব করে। এই উদ্দেশ্যে শেখ নজদী সুকৌশলে ১১৪৭ হিজরীতে (১৭৩৯ সালে) দেরঈয়ার গভর্নর মুহাম্মদ ইবনে সউদের সাথে আতœীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করে, তথায় নিজ কন্যাকে বাদশা ইবনে সউদের নিকট বিবাহ দিয়ে তাকে নিজ আক্বীদার সমর্থনে সহযোগিতামূলক চুক্তিতে আবদ্ধ করে। তা’ছাড়া বৃটিশ সরকারের অর্থে ও গোয়েন্দা বাহিনীর স্বক্রিয় সহযোগিতায় কালক্রমে তারা (ওহাব ও সৌদ পরিবার) সম্পূর্ন নজদ এবং ১৮০১ সালে পবিত্র মক্কা এবং ১৮০৩ সালে পবিত্র মদিনা দখল করে নেয়। ফলে তুর্কী শাসন বিলুপ্ত হয়। কিন্তু মিশরের শাসনকর্তা মুহাম্মদ আলী পাশা ও তুর্কী সুলতান একত্র হয়ে তাদের যৌথ বাহিনী মিশরীয় সেনাপতি স্কটিশ-টমাস কীর্থ এর নেতৃত্বে ১৮১২ সালে মদিনা, ১৮১৩ সালে মক্কা এবং ১৮১৮ সালে দেরঈয়া দখল করে নেয়। ফলে ওহাবীদের পরাজয় ঘটে এবং তাদের শক্তি প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে আসে। কিন্তুু ক্রমান্বয়ে আল-সাউদ পরিবার শক্তি সঞ্চয় করে তুর্কী বিন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে হারানো এলাকা তুর্কী অটোম্যানদের থেকে পুনরুদ্ধার করে দেরঈয়া হতে তাদের রাজধানী ২০ মাইল দূরে রিয়াদে প্রতিষ্ঠা করে। তুর্কী বিন আবদুল্লাহ্, তার ছেলে ফয়সাল ও নাতী আব্দুর রহমান ১৮২৮ সাল হতে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করে। ১৮৬৫ সালে তুর্কী অটোম্যান বাহিনী পুনরায় আরব ভূখন্ড আক্রমন করে এবং এই সংগ্রাম সাউদ পরিবারের শাসন অবসানের মাধ্যমে ১৮৯১ সালে সমাপ্ত হয় এবং সাউদী শাসক আবদুল্লাহ্ কুয়েতে আশ্রয় নেয় এবং ১৯০২ সাল পর্যন্ত তথায় অবস্থান করে। ১৯০২ সালে আব্দুর রহমানের পুত্র আবদুল আজিজ ৪০ জন অনুসারী নিয়ে রিয়াদ শহরের মূল দূর্গটি দখল করে নেয় যার ফলশ্রুতিতে এবং বৃটিশ সহায়তায় কালক্রমে সমস্ত আরব ভূখন্ড (১৯২৪ ও ১৯২৫ সালে যথাক্রমে মক্কা ও মদিনা সহকারে) সাউদ পরিবারের দখলে চলে আসে এবং ১৯৩২ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর সাউদী রাজতন্ত্র (করহম ড়ভ ঝধঁফর অৎধনরধ) প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও শেখ নজদী ৮৯ বৎসর বয়সে (১৭৯২ সালে) মৃত্যুবরন করে, কিন্তুু তার সাথে ১৭৩৯ সালে মুহাম্মদ ইবনে সাউদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক নজদীর মতবাদ (ওহাবী আক্বীদা) অদ্যাবধি সৌদী আরবে প্রচলিত আছে এবং সৌদী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই মতবাদ তামাম বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, আল্লাহর রাসুল (ﷺ)-এর ভবিষ্যৎবানীতে নজদ হইতে যেই দু’টি অভিশপ্ত শয়তানের শিং এর আবির্ভাবের কথা উল্লেখ রয়েছে, তন্মধ্যে একটি হলো মুসায়লামা কাযযাব (যাকে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর আমলে নবুয়তের দাবী করলে কতল করা হয়) এবং অপরটি হলো আব্দুল ওহাব নজদী। উল্লেখ্য, মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব নজদী ও তার জামাতা শেখ ইবনে সৌদ, উভয়ে ছিল বৃটিশদের গুপ্তচর এবং পোষা গোলাম। ইংরেজরা ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রমূলক মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ‘দাবার গুটি’ হিসাবে এদেরে সফল ভাবে কাজে লাগিয়েছে।



নজদীর মৌলিক আক্বীদা ০৪টি, যা নিম্নরূপঃ-



১।        আল্লাহ্ তা’লাকে সৃষ্টির মত মনে করা। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে আল্লাহর হাত, চেহারা ইত্যাদির শাব্দিক অর্থ গ্রহন করা।



২।        রবুবিয়াত ও উলুহিয়াতের একত্ববাদকে একইরূপ বলিয়া বিশ্বাস করা।



৩।        নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান না করা।



৪।        মুসলমানকে কাফের আখ্যায়িত করা। অর্থাৎ যারা ওহাবী আক্বীদা পোষন করবে না, তাদের প্রতি কুফরী ফতোয়া দেয়া।



তার অন্যান্য আক্বীদাসমূহ নিম্নে লিপিবদ্ধ করা হলোঃ-



১।        নবী করীম (ﷺ)-কে সম্মান না করা। ওহাবীদের অধিকাংশ ফেৎনা ও আপত্তিই হলো রাসুল (ﷺ)-এর সম্মান সংক্রান্ত অর্থাৎ হুজুর (ﷺ)-এর শান-মানকে খর্ব করার প্রচেষ্টার অন্তর্ভূক্ত। অথচ আল্লাহ্ তাঁর হাবীব (ﷺ)-কে সর্বাধিক সম্মান করার জন্য কুরআনে নির্দেশ দিয়াছেন। তাই ঈমানদারদের জন্য হুজুর (ﷺ)কে সম্মান করা ফরজ এবং জানের চাইতে বেশী ভালবাসা ঈমানের পরিচায়ক।



২।        নজদীর মতে যে ব্যক্তি নবীর (ﷺ) উসিলা গ্রহন করবে, নিশ্চয়ই সে কাফের হয়ে যাবে। অথচ কুরআন ও হাদীসে উসিলা গ্রহনের অসংখ্য দলিল ও প্রমান বিদ্যমান।



৩।        শেখ নজদী হুজুর (ﷺ)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠকে নিরুৎসাহিত করেছে। অথচ আল্লাহ্ নিজে ফেরেস্তাগনকে নিয়ে হুজুর (ﷺ)-এর উপর দরূদ পাঠান এবং মু’মিনদিগকে যথাযথভাবে দরূদ ও সালাম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তাই দরূদ পাঠ করা কখনো ফরজ, কখনো ওয়াজিব এবং কখনও মুস্তাহাব।



৪।        শেখ নজদী কুরআনের মনগড়া তাফসীর করতো। অথচ মনগড়া ও ভিত্তিহীন তাফসীর করা হারাম ও নিষিদ্ধ। ‘‘যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া তাফসীর করলো, সে তার স্থান জাহান্নামে করে নিল।”



৫।        হুজুর পুরনুর (ﷺ)-এর রওজা শরীফ ও নবী-অলীদের মাজার শরীফের যিয়ারত শিরক এবং এতদুদ্দেশ্যে সফর করা বেদআত। অথচ আহলে সুন্নাতওয়াল জামাতের মতে রওজা শরীফ যিয়ারত উত্তম ইবাদত ও সর্বোত্তম মুস্তাহাব আমল এবং আওলিয়া কেরামের মাজার যিয়ারত সুন্নত এবং সওয়াবের কাজ।



৬।        উসীলা গ্রহনের বেলায় হুজুর (ﷺ)-কে এবং অলীগনকে আহ্বান করা (যেমনঃ-ইয়া-রাসুলাল্লাহ (ﷺ), হে দয়াল পীর ইত্যাদি) র্শিক। অথচ ইহা সম্পুর্ন জায়েয এবং হুজুর (ﷺ) নিজেই এক অন্ধ সাহাবীকে এই পদ্ধতিতে আহ্বান করতে বলেছিলেন। এমনকি কবরবাসীগনকেও আমরা ‘‘ইয়া আহলাল কুবুর” বলে সালাম জানাই।



৭।        হুজুর (ﷺ) এবং অলীগনের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা (ইস্তেগাছা) ও শাফায়াত কামনা করা র্শিক। অথচ মুসিবতের সময় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাহায্য প্রার্থনা করা জায়েজ।



৮।        নবী করীম (ﷺ)-কে সে সংবাদদাতা ডাক পিয়ন বলেছে। (নাউযুবিল্লাহ)



৯।        তার মতে হোদাইবিয়ার সন্ধি মিথ্যা ও বানোয়াট।



১০।        তার মতে নবী করীম (ﷺ) ইহকালে ও পরকালে কোন উপকারে আসবেন না। (নাউযুবিল্লাহ)



১১।        তার মতে চার মাযহাবের চার ইমাম ভ্রান্ত ও মিথ্যা।



১২।        আযানে “আশহাদু আন্না মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ” উচ্চারনকারী একজনকে সে হত্যা করেছে।



১৩।        সে দরূদ, ফেকাহ, তাফসীর ও হাদীসের গ্রন্থসমূহ জ্বালিয়ে দিয়েছে।



১৪।        কাফের, মুশরিক ও মোনাফেককে খাঁটি ঈমানদার বলে আক্বীদা পোষন করত।



১৫।        ওলামায়ে আহলে সুন্নাতকে হত্যা করা জায়েজ মনে করত।



১৬।        ঈমানদার মুসলমানদের মালামাল লুন্ঠন করে যাকাতের নিয়মে ওহাবীদের মধ্যে তা বন্টন করত।



১৭।        সে লা-মাযহাবী ছিল। কিন্তুু মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য নিজকে হাম্বলী বলে দাবী করত।



১৮।        নামাযের পর দোয়া করা হারাম আক্বীদা পোষন করত।



১৯।        তার উপর বিশ্বাস স্থাপনকারীই শুধু মুসলমান আর যারা তার বিরোধীতা করে তারা কাফের ও মোনাফিক। তাই ওলামায়ে আহল সুন্নাতকে হত্যা করা জায়েয আক্বীদা পোষন করত।

_________________

কিতাব : হক্ব-বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা

গ্রন্থনা ও সংকলনে:

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন