আল্লাহ্ তরীকতপন্থীদের অনেক ভালোবাসেন
১. হাদীস শরীফ- একদা এক ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে এক বন্ধুর সাথে সাক্ষাতের জন্য রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে আল্লাহ এক ফেরেস্তা পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করেন:-
প্রশ্ন : কোথায় যাচ্ছ?
উত্তর : বন্ধুর কাছে।
প্রশ্ন : কোন প্রয়োজন আছে কী?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কোন আত্মীয়তা আছে কী?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : তোমার কোন উপকার করেছে কী?
উত্তর : না।
প্রশ্ন : কোন কারণে তার কাছে যাচ্ছ এবং কেনইবা তার সাথে সাক্ষাৎ করবে?
উত্তর : আল্লাহর উদ্দেশ্যে তার সাথে আমি ভালোবাসা স্থাপন করেছি। তখন ফেরেস্তা নিজ পরিচয় দিয়ে বলল- আল্লাহ্ আমাকে তোমার নিকট এই সংবাদ দিতে পাঠিয়েছেন যে, “আল্লাহ্ তোমাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন।”
২. বর্ণিত আছে,
أَنَّ اللهَ تَعَليَ قَالَ لِمُوْسَي عَلَيْهِ السَّلَامُ: يَا مُوْسَي! هَلْ عَمِلْتَ لِيْ عَمْلًا قَطُّ؟ قَالَ: إِلَهِيْ صَلَّيْتُ لَكَ، وَصُمْتُ لَكَ، وَتَصَدَّقْتُ لَكَ، وَذَكَرْتُكَ.
قَالَ اللهُ: أَمَّا الصَّلَاةُ فَلَكَ بُرْهَانٌ، يَعْنِيْ حُجَّةٌ لَّكَ، وَالصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَالصَّدْقَةُ وَالذِّكْرُ نُوْرٌ، فَأَيُّ عَمَلٍ لِيْ؟ قَالَ مُوْسَي عَلَيْهِ السَّلَامُ: إِلَهِيْ دُلَّنِيْ عَلَي الْعَمَلِ الَّذِيْ هُوَ لَكَ.
قَالَ: يَا مُوْسَي هَلْ وَالَّيْتَ لِيْ وَلِيًا أَوْ عَادَيْتَ لِيْ عَدُوًّا؟ فَعُلِمَ مُوْسَي أَنَّ أَفْضَلَ الْأَعْمَالِ اَلحُبُّ فِيْ اللهِ تَعَالَي وَالْبُغْضُ فِيْ اللهِ تَعَاليَ.
অর্থ : আল্লাহ্ অহীর মাধ্যমে মূসা আলাইহিস্ সালামকে জিজ্ঞেসা করেন, “হে মুসা! তুমি আমার সন্তুষ্টির জন্য কি কাজ করেছ? উত্তরে মূসা আলাইহিস্ সালাম বলেন- আমি নামাজ, রোজা, যাকাত, দান-খয়রাত ইত্যাদি নিষ্ঠার সাথে করে থাকি। তখন আল্লাহ্ ফরমান- নামাজ তোমার প্রকাশ্য প্রমাণ, রোজা তোমার ঢাল, যাকাত হলো নূর, দান-খয়রাত হলো ছায়া। কিন্তু আমার জন্য কি করেছ? মূসা আলাইহিস্ সালাম হয়রান ও পেরেশান হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ্ কোন কাজটা করলে তা তোমার হবে?
উত্তর: আমার জন্য কি কোন বন্ধু গ্রহণ করেছ? আমার জন্য কি কাউকে শত্রু গণ্য করেছ?৭৮
➥৭৮. আবু লাইস সমরকন্দী : তানবিহুল গাফিলীন ফি আহাদিসি সায়্যিদিল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, পৃ. ৪৮২, হাদিস নং : ৭৫২।
নোট : এটা দ্বারা বুঝা গেল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করা হলো আল্লাহর সর্বোত্তম পছন্দনীয় আমল- যা তরীকত পন্থীরাই করে থাকে।
৩. হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,
إِنَّ الَّذِينَ يَتَحَابُّونَ فِي اللَّهِ فِي ظِلِّ عَرْشِ اللَّهِ يَوْمَ لا ظِلَّ إِلا ظِلُّهُ.
অর্থ : যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবাসে তারা হাশরের মাঠে আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। ৭৯
➥৭৯. তাবরানী : মু‘জামুল কবীর, ১৪:৪৮৬, হাদিস নং : ১৬৫৭৬।
৪. হাদীস শরীফ- যারা আল্লাহ্ উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবাসে, একত্রে মজলিস করে, পরস্পরে সাক্ষাৎ করে, তারা হাশরের মাঠে নূরের মিম্বারের উপর উপবিষ্ট থাকবে এবং তাদের হবে নূরের চেহারা ও নূরের পোষাক, যা দেখে সবাই ইর্ষা করবে।
উপসংহার
আমার বিশ্বাস উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে তরিকা গ্রহণের বিষয়টি অপরিহার্য প্রমাণিত হয়েছে। একজন কামেল পীরের নিকট তরীকা গ্রহণকেই বায়আত বলা হয়। এই বায়আতকে কেউ বলে সুন্নাত, কেউ ওয়াজিব, কেউ ফরজ, আবার কেউ অস্বীকারও করে। যারা হুযুর (ﷺ) এর নিকট বায়আত গ্রহণ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের সম্পর্কে বলেন,
يَدُ اللهِ فَوْقَ أَيْدِيْهِمْ-
অর্থ : আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর। ৮০
➥৮০. আল কুরআন : সূরা আল-ফাতাহ, ৪৮:১০।
সাহাবায়ে কেরামগণ হুযুর (ﷺ) এর নিকট বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে বায়আত গ্রহণ করেছেন। যেমন-
(১) ইসলাম গ্রহণকালীন বায়আত;
(২) পরহেযগারীর রশিকে দৃঢ়তার সাথে ধারণের বায়আত;
(৩) জিহাদে অটুট থাকার বায়আত ইত্যাদি। বায়আতে রিদওয়ান তো সুপ্রসিদ্ধ। ৮১
➥৮১. আল কুরআন : সূরা আল-ফাতাহ, ৪৮:১০।
কাজেই বায়আত যে অন্তত সুন্নাত এটা অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই। কামেল পীরের মাধ্যমে সিরাজুম্মুনীরার নূরের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে রাসূল প্রেম ও আল্লাহর পরিচয় লাভের উদ্দেশ্যে বায়আত গ্রহণ ওয়াজিব বা ফরজ বলে অনেক বুজুর্গের অভিমত।
খোদায়ী বিধানে জ্ঞান অর্জন ফরজ হওয়ার কারণে বাতেনী বা আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বায়আত হওয়াও তো ফরজ হয়ে যায়। আর বাতেনী জ্ঞান অর্জন মুরশিদ ছাড়া কখনোই সম্ভব না। তাছাড়া আমাদের পূর্ব পুরুষগণ তো এই তরিকাপন্থী অলীদের মাধ্যমেই ইসলামে দীক্ষিত হন। কাজেই তরিকা বা বায়আত গ্রহণকে অস্বীকার করা অজ্ঞতা ও বদ নসীবিই বটে। তরিকা/ বায়আত অস্বীকারকারীদের সূরা বাকারার ৮৫নং আয়াত স্মরণ করা উচিত। এতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
أَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُوْنَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْىٌ فِىْ الْحَيْوَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ إِلىَ أَشَدِّ الْعَذَابِ-
অর্থ : তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা ও কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। ৮২
➥৮২. আল কুরআন : সূরা আল-বাকারা, ২:৮৫।
তরীকা ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনটা হয়ত পরহেযগার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বলা যাবে না। তবে এটা নিশ্চিত বলা যায় যে, শরীয়ত পরিপূর্ণভাবে পালন করে তরীকতের পথ এখতিয়ার করলে, তালেবে মওলার জন্য চলার পথ মসৃণ ও সুগম হবে এবং সহজে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। তাই তো দেখি সকল অলীগণই তরীকতের সোনালী পথের পথিক ও বিচরণকারী এবং কিয়ামত পর্যন্ত এমনটাই হবে। আর যারা ফাসিক বা পাপাচারে লিপ্ত তারা যদি কামেল মুরশিদের নিকট বায়‘আত না হয়, তাহলে অবশ্যই তারা শয়তানের প্ররোচনার কারণে জাহান্নামের পথে এগুবে। এ ক্ষেত্রে ফাসেক/ পাপাচারীদের জন্য বায়‘আত হওয়া জরুরী। যেমন- আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,
وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُرْشِدًا
“এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার কোন পথপ্রদর্শনকারী মুরশিদ (অভিভাবক) পাবে না। ৮৩
➥৮৩. আল কুরআন : সূরা আল-কাহাফ, ১৮:১৭।
৫. হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়ে যে,
وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ فِي عُنُقِهِ بَيْعَةٌ مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً.
অর্থ : যে ব্যক্তি মারা গেল, অথচ তার গলায় বায়আতের বন্ধন রইল না, সে অজ্ঞতার (জাহেলী যুগের মত) মৃত্যুবরণ করলো। ৮৪
➥৮৪.
ক) মুসলিম : আস্ সহীহ, বাবু ওজুবি মুলাজামাতি জামা‘আতিল মুসলিমীন, ৯:৩৯৩, হাদিস নং : ৩৪৪১।
খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইমারাতি ওয়াল ক্বদ্বাআ, ১ম পরিচ্ছেদ পৃ. ৩৩৬, হাদিস নং : ৩৬৭৪।
গ) বায়হাকী : সুনানুল কুবরা, ৮:১৫৬।
ঘ) ইবনে বাত্তা : আল ইবানাতুল কুবরা, বাবু মান খলায়া ইয়াদাহু মিন তা’আতি, ১:১৪৯, হাদিস নং : ১৪৪।
ঙ) হাকেম : মুসতাদ্রাক আলাস্ সহীহাইন, বাবু ওয়া আম্মা হাদিসী আশ‘আস ইবনে জাবের, ১:২৫০, হাদিস নং : ২৩৯।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন এবং সঠিক পথে চলার তৌফিক দিন। আমিন
সমাপ্ত
_________________
কুরআন-হাদীসের আলোকে তরীকার প্রয়োজনীয়তা
গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন