অলীগণকে মুহব্বতের ফায়দা

 

অলীগণকে মুহব্বতের ফায়দা


১.        পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,

فَسَوْفَ يَأْتِى اللهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّوْنَهُ-



        অর্থ : আল্লাহ্ এমন এক স¤প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালোবাসবেন এবং যারা তাঁকে ভালবাসবে। ৬৯


➥৬৯. আল কুরআন : সূরা আল-মায়িদা, ৫:৫৪।



২.        পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,



إِنَّ الَّذِيْنَ أَمَنُوْا وَعَمِلُوْا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَنُ وُدًّا-



        অর্থ : যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে দয়াময় অবশ্যই তাদের জন্য সৃষ্টি করবেন ভালোবাসা।  ৭০


➥৭০. আল কুরআন : সূরা মরিয়ম, ১৯:৯৬।



নোট : আয়াতদ্বয় থেকে আমরা জানতে পারি যে, আল্লাহ্ নেক বান্দাদেরকে আগে ভালোবাসা শুরু করেন। তারপর (আল্লাহর ভালোবাসার বরকতে) বান্দা আল্লাহকে ভালোবাসতে শুরু করে। আল্লাহ্ কাউকে ভালোবাসা শুরু করলে জিবরাঈল আলাইহিস্ সালামকে ডেকে এর ঘোষণা দিয়ে দেন এবং জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম এর মাধ্যমে আসমান এবং জমিনেও এর ঘোষণা দেওয়া হয়। তখন সকল সৃষ্টি ঐ বান্দাকে ভালোবাসা শুরু করে দেয়। তা ছাড়া উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ের মাধ্যমে অলীগণকে ভালোবাসা আল্লাহর সুন্নাত প্রমাণিত হলো।



আল্লাহর সুন্নাত ২টি। যথা:-



(ক) নবী (ﷺ) এর উপর দরূদ পাঠানো।



(খ) অলীগণকে মহব্বত করা।



৩.        হুযুর (ﷺ) ঘোষণা করেন-



يَضَعُ اللَّهُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ فَيُجْلِسُهُمْ عَلَيْهَا فَيَجْعَلُ وُجُوهَهُمْ نُورًا وَثِيَابَهُمْ نُورًا يَفْزَعُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَفْزَعُونَ وَهُمْ أَوْلِيَاءُ اللَّهِ الَّذِينَ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ.



        অর্থ : একদল লোকের জন্য কিয়ামতের দিন আরশে মুআল্লার চতুর্দিকে আসন স্থাপন করা হবে। তাদের মুখমন্ডল হবে চন্দ্রের মত উজ্জ্বল। সবাই ভীত হলেও তারা ভীত হবে না, সন্ত্রস্ত হবে না, ভয়-ভীতি, দুঃখ-দুর্দশা থাকবে না। তারা কারা জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসবে, তারা আল্লাহর অলী এবং যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালোবেসে ছিলো।  ৭১


➥৭১. আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, ৩৭:৫৪১, হাদিস নং : ২২৯০৬।



        আরো ফরমান-



إِنَّ حَوْلَ الْعَرْشِ مَنَابِرٌ مِنْ نُوْرٍ عَلَيْهَا قَوْمٌ لِبَاسُهُمْ نُوْرٌ وَوُجُوْهُهُمْ نُوْرٌ لَيْسُوْا بِأَنْبِيَاءَ وَلَا شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ النَّبِيُّوْنَ وَالشُّهَدَاءُ، فَقَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ: فَمَنْ هُمْ؟ فَقَالَ: هُمُ اْلمُتَحَابُّوْنَ فِيْ اللهِ وَاْلمُتَجَالِسُوْنَ فِيْ اللهِ وَاْلمُتَزَاوَرُوْنَ فِيْ اللهِ.



        অর্থ : একদল লোককে আরশে মুআল্লার চতুর্দিকে নূরের মিম্বারের উপর উপবিষ্ট দেখা যাবে, যাদের চেহারা ও পোষাক হবে নূরের, অথচ তারা নবী বা শহীদ নয়। তাদের মর্যাদা দেখে নবী-রাসূল ও শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবেন। তাদের গুণাবলি/ পরিচয় সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে, উত্তর আসবে, তারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবাসে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে মাহফিলে বসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ করে।৭২


➥৭২.


ক) তাবরানী : মু’জামুল কবীর, ৩:৪৬৮।


খ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, বাবু হাদিসী আবি মালেক আশ‘আরী, ৪৬:৩৭১, হাদিস নং : ২১৮২১।



        এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেন,



قَدْ حَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَحَابُّونَ مِنْ أَجْلِي وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَصَافُّونَ مِنْ أَجْلِي وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَزَاوَرُونَ مِنْ أَجْلِي وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَبَاذَلُونَ مِنْ أَجْلِي وَحَقَّتْ مَحَبَّتِي لِلَّذِينَ يَتَنَاصَرُونَ مِنْ أَجْلِي.



        অর্থ : যারা আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তাদের জন্য আমার সাহায্য সুনিশ্চিত। হাশরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যারা পরস্পরকে ভালোবেসেছিল আল্লাহ তাদের ডেকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। ৭৩


➥৭৩.


ক) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, বাবু হাদিসী আমর ইবনে আবাসা, ৩৯:৪৩২, হাদিস নং : ১৮৬২১।


খ) বায়হাকী : শু‘আবুল ঈমান, বাবু কিস্সাতি ইবরাহীম ফী মু‘আনাকা, ১৯:৪, হাদিস নং : ৮৭১২।


গ) ইমাম গায্যালী : ইয়াহইয়াউ উলূমিদ্দীন, ৩:১৫৮।



৪.        হাদীস শরীফে আছে যে, হাশরের দিন আল্লাহ তা‘আলা ৭০,০০০ উম্মতে মুহাম্মাদীকে বিনা হিসেবে জান্নাত দান করবেন। এবং তাদের প্রতি হাজারের অথবা প্রতিজনের সাথে আরো ৭০,০০০ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে।



৫.        হাদীস শরীফে আছে, বিনা হিসেবে বেহেস্ত প্রাপ্তগণ সঙ্গী-সাথী ও পরিচিতদের ছাড়া জান্নাতে যাবে না। আল্লাহ সাথে, প্রতিবেশীর সাথে হক আদায়ের মত, ঝগড়া করবে এবং প্রথমে যাদের এক দিনার পরিমাণ ঈমান আছে তাদের জাহান্নাম হতে মুক্ত করাবে; দ্বিতীয় দফায় অর্ধ দিনার পরিমাণ ঈমান ওয়ালাদেরকে এবং তৃতীয় দফায় যাদের এক রক্তি/ কণা পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে।



নোট : আল্লাহ্ দোযখকে পূর্বেই নির্দেশ দিয়ে রাখবেন যেন তাদের চেহারা না জ্বালানো হয়, কারণ আল্লাহ মহা জ্ঞানী, তিনি জানেন যে, অলীগণ তাদের সাথীদের উদ্ধারের জন্য আসবেন। এমন কি পরিচিতগণ ও অলীদের উসিলায় মুক্তি পাবেন।



৬.        হাদীস শরীফ- অলী/ ইমামগণ হাতে হাত ধরিয়া নিজ নিজ নেসাবতের অনুসারীদের নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।



৭.        রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,



أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ.



        অর্থ : তুমি যাকে ভালোবাস তার সাথেই তুমি জান্নাতে থাকবে। ৭৪


➥৭৪.


ক) বুখারী : আস্ সহীহ, বাবুল ক্বদায়া ওয়াল ফাতায়া ফীত্ তরীক, ১৩:৯১, হাদিস নং : ৪৭৭৫।


খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবুস্ সালাম, ১ম পরিচ্ছেদ, পৃ. ৮৫, হাদিস নং : ৫০০৯।


গ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, বাবু মুসনাদি আনাস ইবনে মালেক, ২৫:৩৪৭, হাদিস নং : ১২৩০১।



৮.        হাদীস শরীফ আছে,



الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ.



        অর্থ : যে যাকে ভালোবাসে হাশর-নশর তার সাথেই হবে। ৭৫


➥৭৫.


ক) বুখারী : আস্ সহীহ, বাবু আলামাতি হুব্বিল্লাহি, ১৯:১৪৫, হাদিস নং : ৫৭০২।


খ) মুসলিম : আস্ সহীহ, বাবুল মারয়ি মা‘আ মান আহাব্বা, ১৩:৯৫, হাদিস নং :৪৭৭৯।


গ) তিরমিযী : আস্ সুনান, বাবু মা জা’আ আন্নাল মারআ মা‘আ মান আহাব্বা, ৮:৩৯৬, হাদিস নং : ২৩০৮।


ঘ) আবু দাউদ : আস্ সুনান, বাবু ইখবার্রি রজুলি..., ১৩:৩৩২, হাদিস নং : ৪৪৬২।



৯.        হাদীস শরীফ- আল্লাহ যার মঙ্গল কামনা করেন একজন ধার্মিক বন্ধু/ রফিক তাকে দেন।



১০.        হাদীস শরীফ- প্রত্যেকে হাশরে দিন তার নেতা/ ইমামের সাথে উঠবে।



১১.        পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন,



يَوْمَ نَدْعُوْا كُلَّ أُنَاسِ بِإِمَامِهِمْ-



        অর্থ : প্রত্যেক সম্প্রদায়কে তাদের ইমামের সাথে হাশরে আহবান করা হবে। ৭৬


➥৭৬. আল কুরআন : সূরা বনী ইসরাঈল, ১৭:৭১।



১২.        আল্লাহ তা‘আলা বলেন,



وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَالرَّسُوْلَ فَأُوْلَائِكَ مَعَ الَّذِيْنَ اَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ مِّنَ النَّبِيِّنَ وَالصَّدِيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَحَسُنَ أُوْلَائِكَ رَفِيْقًا-



অর্থ : কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে হাশরে সে নবী, সত্যনিষ্ট, শহীদ ও সৎকর্ম পরায়নদের সঙ্গী হবে। ৭৭


➥৭৭. আল কুরআন : সূরা আন-নিসা, ৪:৬৯।



১৩.        তফসিরে রুহুল বয়ান- হাশরে যাদের কোন নেতা থাকবে না, তাদের শয়তান বলে আহবান করা হবে।



১৪.        হাসীদে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ শপথ করে ফরমান- যে ব্যক্তি আমার অলীদের মুহাব্বত করে, আমিও সেই মুহাব্বতকারীদের মুহাব্বত করি; যারা আমার অলীগণের যিয়ারতে যায়, আমি ঐ যিয়ারতকারীদেরও মুহাব্বত করি এবং যে আমার অলীগণের সোহবতে বা মজলিসে বসে আমি তাদেরও মুহাব্বত করি। (অলীগণের মুহাব্বতকারীদের মুহাব্বত করা আল্লাহ নিজের জন্য ওয়াজিব করে নিয়েছেন)।



নোট



(১)        উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে আমাদেরকে অলীগণের সাথে সম্পর্কিত হওয়া অবশ্যই বাঞ্চনীয়।



(২)        অলীগণের দরবারে আসা-যাওয়া করা উচিত। কারণ যে যারে ভালোবাসে সে তাকে ভুলে না।



(৩)        তোমার মর্যাদা/ আমল অলীদের সমান না হলেও অলীর বন্ধুত্বের কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করে অলীর সাথী করবেন।



(৪)        যারা পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে তারা অবশ্যই সত্যবাদীদের সঙ্গী এবং তরিকাপন্থী।



(৫)        মাওলানা রুমী রাহামাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এক মুহূর্ত কোন অলীর (কামেল-মোকাম্মেল পীর) সংসর্গে থাকা একশত বছরের বেরীয়া (অকপট) বন্দেগী অপেক্ষায়ও উত্তম।

_________________

কুরআন-হাদীসের আলোকে তরীকার প্রয়োজনীয়তা

গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন