কবর যিয়ারতের ফযীলত
** পাপীদের সুপারিশকারী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফায়াত নিশান ফরমান হচ্ছে," যে ব্যক্তি কবরস্থানের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করল এবং সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাছ ও সূরা তাকাসুর পাঠ করল।অত:পর এই দু'আ করল" হে আল্লাহ আযযা ও জাল্লা! আমি কুরআনে পাক থেকে যা কিছু পাঠ করলাম, এর সাওয়াব মু'মিন নারী - পুরুষ উভয়ের কবরে পৌঁছিয়ে দাও। তবে
কিয়ামতের দিন ঐ কবরবাসী তার ( সাওয়াব
প্রেরণকারীর) সুপারিশকারী হবে।( শরহুস
সুদূর,পৃ:- ৩১১,নামাযের আহকাম (হানাফী),
পৃ:-৩৫৫ -৩৫৬)।
** যে ব্যক্তি সাওয়াবের নিয়্যতে নিজের
পিতা - মাতা উভয়ের অথবা যে কোন
একজনের কবর যিয়ারত করে,সে একটি কবুলকৃত হজ্জ্বের সমপরিমান সাওয়াব পাবে এবং যে ব্যক্তি বেশী পরিমানে তাঁদের কবর যিয়ারত করে; ফিরশতাগণ তার কবর ( অর্থাৎ - সে যখন মারা যাবে) যিয়ারত করতে আসবে।"( কানযুল।উম্মাল,খন্ড - ১৬,হাদীস নং- ৪৫৫৩৬,পৃ:- ২০০,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩৫০)।
** যে ব্যক্তি কবরস্থানে এগার বার " সূরা
ইখলাছ" পাঠ করে মৃত ব্যক্তির নিকট এর
সাওয়াব পৌঁছায়, তবে সাওয়াব প্রেরণকারী
মৃত ব্যক্তিদের সংখ্যা পরিমান সাওয়াব পাবে।( কাশফুল খিফা,খন্ড - ২য়,পৃ:- ৩৭১,নামাযের আহকাম( হানাফী),পৃ:- ৩৫৫)।
** যখন কোন ব্যক্তি মৃত ব্যক্তির জন্য
সাওয়াব পৌঁছায়, তখন জিব্রাঈল আলাইহিস
সালাম সেটা একটি নূরানী তশতরীতে রেখে
কবরের পাসে এসে দাঁড়িয়ে যান এবং বলেন,"
হে কবরবাসী! এ উপহার তোমার পরিবারের
সদস্যরা পাঠিয়েছে,গ্রহণ কর।"এটা শুনে সে
খুশি হয়ে যায় এবং তার কবরের প্রতিবেশীরা তাদের পরিবারের উপর পেরেশান হয়ে যায়।( শরহুস সূদুর,পৃ:- ৩০৮,নামাযের আহকাম
( হানাফী),পৃ:- ৩৫৫)।
** হযরতে সায়্যিদুনা হাম্মাদ মক্কী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,আমি এক রাতে
মক্কায়ে মুকাররমার কবরস্থানে শুয়ে গেলাম।
দেখলাম যে,কবরবাসীগণ গোলাকার হয়ে
দন্ডায়মান। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা
করলাম,কিয়ামত কি কায়েম হয়ে গেছে?
তারা বললো ; না। মূলত ব্যাপার হচ্ছে যে,
এক মুসলমান ভাই সূরা ইখলাছ শরীফ
পড়ে,আমাদের প্রতি সাওয়াব পৌঁছিয়েছে,তাই আমরা এই সাওয়াব এক বছর পর্যন্ত বন্টন করছি।(শরহুস সূদুর,মৃতের জন্য কুরআনে পাক তিলাওয়াতের অধ্যায়,পৃ:- ৩১২,নামাযের আহকাম ( হানাফী),পৃ:- ৩৫৬)।
** যিয়ারতকারীর উপর কবরবাসী সন্তুষ্ট
হয়,যেমনিভাবে ইহজগতে মানুষ আত্মীয় -
স্বজনের পক্ষ হতে হাদিয়া, তোহফা, উপহার -
উপঢৌকন পেলে আনন্দিত হয়,অনুরুপ কবর
জগতেও। অত:পর কবরবাসীর মর্যাদানুসারে
যিয়ারতকারী বরকতও লাভ করবে।(কুল্লিয়াতে এমদাদিয়া,আহওয়ালে বরযখ ও
বুশরাল ক্বারীব ইত্যাদি। আমলে শরিয়ত ও
সহীহ নামায শিক্ষা,পৃ:- ৭৪,প্রকাশনায়:-
আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া
ট্রাষ্ট।)।
** তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে নু'মান
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম করে বলেন
যে,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন," যে ব্যক্তি প্রত্যেক শুক্রবারে আপন মা - বাপের অথবা তাঁদের মধ্যে একজনের কবর যিয়ারত করবে,তাকে মাফ করে দেয়া হবে এবং মা - বাপের সাথে
সদ্ব্যবহারকারী বলে লেখা হবে।( বায়হাকী
তাঁর শুআবুল ঈমানে মুরসালরুপে বর্ণনা
করেছেন।মিশকাত শরীফ,হাদীস নং- ১৬৭৬,
পৃ:- ২৬৯)।
অসিয়ত ও তালক্বীনের ফযীলত
______________
** সারকারে মদীনা, ক্বরারে ক্বলবো
সীনা,ফয়যে গাঞ্জীনা,বা - ই - সে নুযুলে
সাকীনা, সাহিবে মুত্তারে পাসীনা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন," যে ব্যক্তি কোন অসিয়ত সম্পাদন করার পর মৃত্যুবরণ করল,সে ( রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর) এক মহা সুন্নাতের উপর আমল করেই মৃত্যুবরণ করল এবং তার মৃত্যু। তাকওয়া ও শাহাদাতের উপরই হল এবং সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েই মৃত্যুবরণ করল।"
( মিশকাতশরীফ,পৃ:- ২৬৬,নামাযের আহকাম
( হানাফী),পৃ:- ৩৪৪)।
** হযরত আবু উমামা বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু এর বর্ণিত হাদীস খানা ইমাম তাবরানী
তার " মুজামে " এভাবে উল্লেখ করেছেন,
হযরত আবু উমামা বাহেলী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত,তিনি।বলেন,নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন," তোমাদের কেউ মারা গেলে যখন তার কবরের মাটি দেওয়া ঠিকঠাক হয়ে যাবে - তখন তোমাদের কেউ যেন তার কবরের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে এভাবে বলে " হে অমুকের মহিলার পুত্র অমুক"তখন সে শুনবে কিন্তু জবাব দেবেনা।
দ্বিতীয় বার বলবে "হে অমুক মহিলার পুত্র
অমু" তখন সে সোজা হয়ে বসবে।তারপর তৃতীয় বার এভাবে ডাক দিবে। তখন মৃত ব্যক্তি এভাবে কথা বলবে " আল্লাহ আপনাকে রহম করুন! মেহেরবানী করে এরশাদ করুন" কিন্তু তোমরা কেউ তার কথা শুনতে পাবে না। এখন তালক্বীনকারী ব্যক্তি তাকে উদ্দেশ্য করে
বলবে " তুমি স্বরণ করো যেসব কালাম বা
আক্বীদা নিয়ে তুমি দুনিয়া ত্যাগ করেছো।"
" উযকুর মা খরাজাত মিনাদ দুনইয়া শাহাদাতু
আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ও আন্না মুহাম্মাদান 'আবদুহু ও রসূলুহ সাল্লাল্লাহু "আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আন্নাকা রদ্বিতু বিল্লাহি রব্বাওঁ ওবিল ইসলামী দ্বীনা - ওবি মুহাম্মাদিং সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাবিয়্যাওঁ ওবিল কুরআনি ইমামা।"
অনুবাদ :- তুমি তা স্বরণ করো,যা বলে তুমি
দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছ অর্থাৎ এ কথা
সাক্ষ্য দাও যে,আল্লাহ ছাড়া আর কোন
মাবুদ নাই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও আলিহী ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রসূল। এবং এটাও বল যে,তুমি আল্লাহকে প্রভূ হিসেবে, ইসলামকে আল্লাহর মনোনীত
ধর্ম হিসেবে, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ও আলিহী ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর প্রেরিত রসূল হিসেবে এবং কুরআন মাজীদকে ইমাম হিসেবে মনে - প্রানে স্বীকৃতি দিয়েছ এবং এর উপর সন্তুষ্ট ছিলে।"
তাঁর এ কথা শুনে মুনকার - নকীর ফিরিস্তা
উভয়েই পিছনে হটে আসবে এবং বলবে - এসো! আমরা চলে যাই। এই ব্যক্তির কাছে বসে থেকে কি লাভ হবে? সে তো মৃত্যুর তালক্বীন পেয়েই গেছে।আল্লাহ তখন তাদের উভয়ের কথার সাক্ষী হয়ে যাবে।
এ হাদীস শুনে জনৈক সাহাবী প্রশ্ন করল - ইয়া রসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি তার মায়ের নাম জানা না থাকে? হুযুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ
করলেন," তাহলে বলবে - হাওয়ার পুত্র অমুক।" ( তাজকিরাহ,পৃ:- ১১৭; কিতাবুর রুহ,পৃ :- ৩৯ ও আল কবীর লিত তাবরানী,খন্ড - ০৮,হাদীস নং- ৭৯৭৯,পৃ:- ২৫০; হায়াত - মউত কবর - হাশর,পৃ :- ১৩৯ -১৪০ এবং নামাযের আহকাম (হানাফী),পৃ:- ৩৩৮ -৩৩৯)।
নোট :- অমুকের ছেলে অমুকের স্থলে মৃত
ব্যক্তি ও তার মায়ের নাম নিবে।যেমন, হে
মুহাম্মাদ ইলইয়াস বিন আমেনা।আর মৃত
ব্যক্তির মায়ের নাম জানা না থাকলে মায়ের নামের স্থলে হাওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এর নাম নিবে।তালক্বীন কেবলমাত্র আরবী ভাষাই পড়াবেন।
__________________
ফয়যানে শরিয়ত ও মারফত (আমলের ভান্ডার)
লেখক : মুহাম্মাদ আবদুল কাদির মাহী
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন