এ’সকল খারেজী সম্প্রদায়ের আক্বীদা ও লক্ষণ সম্বন্ধে পূর্বাভাষ

 

এ’সকল খারেজী সম্প্রদায়ের আক্বীদা ও লক্ষণ সম্বন্ধে পূর্বাভাষ


অসংখ্য দলিলাদির ভিত্তিতে খারেজীদের অন্যতম লক্ষণ ও সুষ্পষ্ট নিদর্শন সমূহ নিম্নে বর্নিত হলো:

১।এরা হবে স্বল্পবয়স্ক ছেলেপিলে। (বুখারী ও মুসলিম)

২।বিবেক বুদ্ধি ও মস্তিস্কের দিক থেকে এরা হবে নেহায়েতই অপরিপক্ক (Immature)। (বুখারী ও মুসলিম)

৩।(এদের বাহ্যিক দ্বীনি আমলগুলি অতিরঞ্জিত হবে) এরা দাঁড়ি ঘন করে রাখবে। (বুখারী ও মুসলিম)

৪।এরা লুঙ্গি পরবে অনেক উপরে। (বুখারী ও মুসলিম)

৫।এসব খারেজী (হেরেমদ্বয়ের) পূর্ব দিক থেকে বের হবে। (বুখারী)



৬।এরা সর্বদা বের হতেই থাকবে। এমনকি এদের সর্বশেষ দল দাজ্জালের সাথেই বের হবে। (নাসাঈ শরীফ)



৭।ঈমান এদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (বুখারী ও মুসলিম) (অর্থাৎ এদের ঈমান হবে লোক দেখানো। কিন্তু প্রকৃত ঈমানী বৈশিষ্ট তাদের মনোভাব ও কর্মকান্ডতে প্রতিফলিত হবে না।)



৮।এরা এবাদত-বন্দেগীতে ও দ্বীন পালনে অতিশয় চরমপন্থী ও সীমাতিরিক্ত হয়ে থাকবে। (আব্দুর রায্যাক: আল মুসান্নাফ)



৯।“তোমাদের যে কেউ তাদের নামাজের সামনে নিজেদের নামাজকে তুচ্ছ মনে করবে। আর তাদের রোজার সামনে নিজেদের রোযাগুলোকে হীন জ্ঞান করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)



১০।তাদের নামাজ তাদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (মুসলিম)



১১।এরা কুরআন মজীদ এমনভাবে তেলাওয়াত করবে যে, তাদের তেলাওয়াতের সামনে তোমাদের তেয়াওয়াত কিছুই নয় মনে হবে। (মুসলিম)



১২।তাদের কুরআন তেলাওয়াত তাদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (বুখারী ও মুসলিম) অর্থাৎ তাদের অন্তরে কুরআনের কোন সৌন্দর্য ও প্রভাব পড়বে না।



১৩।তারা এই বুঝে কুরআন পড়বে যে, সম্পূর্ন কুরআন তাদেরই পক্ষে; অথচ বাস্তবে কুরআন তাদের বিপরীতে হুজ্জত হয়ে থাকবে। (মুসলিম)



১৪।তারা (বল পূর্বক) লোকজনকে আল্লাহর কিতাবের প্রতি আহবান করবে; অথচ কুরআনের সাথে তাদের বাস্তবিক কোন সম্পর্কই থাকবে না। (আবু দাউদ)



১৫।তারা (বাহ্যত) খুবই ভাল ভাল কথাবার্তা বলবে। (বুখারী ও মুসলিম) অর্থাৎ ইসলামী শ্লোগান দিবে ও ইসলামে প্রচার-প্রসারের দাবী করবে।



১৬।তাদের শ্লোগানগুলো এবং বাহ্যিক কথাবার্তা অপরাপর লোকজন থেকে উত্তম হবে এবং তা মানুষের মনে দাগ কাটবে। (তাবরানী)



১৭।কিন্তু এরা হবে অসৎকর্মপরায়ন, বড়ই জুলুমবাজ, রক্ত পিপাসু ও অসাধু প্রকৃতির লোক। (আবু দাউদ)



১৮।এরা সুন্দর ও ভাল কথা বলবে এবং খারাপ কাজ করবে। (তাবরানী)



১৯।তারা হবে সমগ্র সৃষ্টিজগতের মাঝে সর্ব নিকৃষ্ট লোক। (মুসলিম)



২০।তারা বিদ্যমান সরকার ও প্রশাসকদের বিরূদ্ধে অতিশয় গালমন্দ করবে। আর তাদের (সরকারের) বিরূদ্ধে দিবে গোমরাহীর ফতোয়া। (ইবনে আবী আসেমঃ আস সুন্নাহ)



২১।তারা তখনই জনসমক্ষে প্রতিভাত হবে, যখন লোকজনের মাঝে বিভেদ ও বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)



২২।তারা কতল করবে মুসলমানদেরকে; আর রেহাই দেবে মুর্তি পূজারীদেরকে। (বুখারী ও মুসলিম)



২৩।তারা অন্যায়ভাবে রক্তপাত ঘটাবে। (মুসলিম) অর্থাৎ এরা নিরপরাধ মুসলিম ও অমুসলিমকে নির্বিচারে হত্যা করা বৈধ মনে করবে।



২৪।তারা হবে ডাকাত ও ছিনতাইকারী। অন্যায়ভাবে রক্তপাত করবে এবং সংখ্যালঘু অমুসলিমদের হত্যা করা বৈধ জ্ঞান করবে। [হাকেম: আল মুসতাদরাক; রাবী-হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه)]



২৫।তারা ঈমান আনবে কুরআনের মুহকাম (স্পষ্টভাবে নির্দেশিত) আয়াত সমূহে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে মুতাশাবিহ (অস্পষ্ট) আয়াত সমূহের কারনে। (তাবারী) (ইহা হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর বানী)



২৬।তারা মুখে সত্যের বানী উচ্চারন করবে। কিন্তু তা তাদের গলদেশের নিচে পৌছবে না। (মুসলিম)(হযরত আলী (رضي الله عنه) এর বানী)



২৭।কাফেরদের উদ্দেশ্যে নাযিল হওয়া আয়াতগুলোকে তারা মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেবে। (বুখারী)



অনুরূপভাবে তারা অপরাপর মুসলমানদেরকে গোমরাহ, কাফের, মুশরিক ঘোষনা দেবে। যাতে করে তারা এদেরকে অবৈধভাবে হত্যা করতে পারে। (হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) এর বানী)



২৮।তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বহিস্কৃত হবে, যেমন ধনুকের তীর শিকার থেকে বের হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম)



২৯।তাদের যারা হত্যা করবে তাদের মিলবে মহান প্রতিদান। (মুসলিম)



৩০।সে ব্যক্তি সর্বোত্তম মৃত (শহীদ) হবে, যাকে তারা কতল করে। (তিরমিযী)



৩১।তারা হবে আসমানের নিচে যে-কোন মৃতের মাঝে সর্ব নিকৃষ্ট। (তিরমিযী) অর্থাৎ সেই সব খারেজী সন্ত্রাসী যারা মুসলিম বাহিনীর হাতে নিহত হবে তারা হবে সর্ব নিকৃষ্ট মৃত।



৩২।এ সব (সন্ত্রাসী-খারেজী) লোক হবে জাহান্নামের কুকুর। (তিরমিযী)



৩৩।কবীরা গুনাহে অপরাধী ব্যক্তিদেরকে এরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী মনে করবে। আর তাদের জান-মাল বৈধ ঘোষনা করবে।



৩৪।জালিম ও ফাসিক সরকারের বিরূদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ও অসহযোগিতা ফরজ বলে ঘোষনা করবে। (ইবনে তাইমিয়া: মাজমূয়ে ফতোয়া, ১৩/৩১)



৩৫।খারেজী সন্ত্রাসীরা কোন বিশেষ অঞ্চলকে অবরোধ করে নিজেদের সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডের কেন্দ্র বানিয়ে নিবে। যেমন তারা হযরত আলী (رضي الله عنه) এর খেলাফতকালে হারূরিয়াকে তাদের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছিল।



৩৬।এরা সত্য পন্থীদের সাথে সাধারনত কোনরূপ গঠনমূলক আলোচনায় বসতে রাজি হবে না।



উপরোক্ত হাদীস সমূহের আলোকে খারেজীদের বিষয়ে যে সব আলামত বর্নিত হয়েছে এতে করে বুঝা যায়, যে সব সশস্ত্র গোষ্ঠী বা দল সমূহ হক্কানী মুসলিম উম্মাহকে গোমরাহ, বেদআতী, মুশরিক ও কাফের ইত্যাদি বলে থাকে, মুসলিম কি অমুসলিম সকল মানুষের জান-মালকে বৈধ মনে করে, সত্য বানীকে অস্বীকার করে, শান্তিপূর্ন ও নিরাপদ পরিস্থিতিকে ঘোলাটে ও আশঙ্কাময় করে তোলে তারাই হলো খারেজী।

_________________

কিতাব : হক্ব-বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা

গ্রন্থনা ও সংকলনে:

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন