নারায়ে রেসালাতের বৈধতা (১)

 

নারায়ে রেসালাতের বৈধতা  (১)


প্রসঙ্গ

বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহীম


 الحمد لله وكفى والصلوة والسلام على حبيبه المصطفى وأله وأصحابه أولى الدق والشقاء .


জবাবঃ উপরােক্ত বাক্যাবলী অবশ্যই বৈধ। যার বৈধতার ব্যাপারে নির্বোধ, মুখ অথবা পথভ্রষ্ট ও পথভ্রষ্টকারী ব্যতিত কেউ মুখ খুলবেনা। তাদের জন্যই এ মাসয়ালা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়াস। শিফাউস সিকাম কৃতঃ ইমাম তত্ত্বীউদ্দীন আবুল হাসান আলী সুবকী (رحمة الله) মাওয়াহেবে লাদুনিয়া কৃতঃ ইমাম আহমদ কুস্তলানী (رحمة الله) বুখারী শরীফ ভাষ্যকার, শরহে মাওয়াহিব কৃতঃ আল্লামা জুরক্বানী (رحمة الله), মুতালিউল মুসাররাত কৃতঃ আল্লামা ফারেসী (رحمة الله), মিরকাত শরহে মিশকাত কৃতঃ মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), লুমআত, আশয়াতুল লুমআত, মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থাবলী, জযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব ও মাদারেজুন্নবুয়ত ইত্যাদির গ্রন্থকার শেখ মােহাক্কেক আবদুল হক মােহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله),আফজালুল কুরা শরহে ইমামুল কুরা ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) ইত্যাদি আকায়েদ ও কালাম শাস্ত্রের ইমাম, আলিম ও মুজতাহিদদের গ্রন্থাদি ফিরিয়ে নিন।কেননা, এগুলােতে এর বৈধতা সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে) অথবা অধমের পুস্তিকা “আল ইহলাল বিষয়যিল আওলিয়ায়ে বাদাল বেসাল” পাঠ করুন। | এ নগণ্য বান্দা এখানে সংক্ষিপ্তভাবে প্রয়ােজনীয় কতেক বর্ণনা উদ্ধৃত করছি।

নিম্নোক্ত হাদিসটি বিশুদ্ধ বলে অভিমত প্রকাশ করে ইমাম নসায়ী, ইমাম তিরমিজী, ইবনে মাজা, হাকেম, বায়হাক্বী, ইমামুল আয়িম্মাহ্ ইবনে খুযায়মাহ্ ও আবুল কাসেম এবং তাবরানী হযরত উসমান (رحمة الله)-এর সুত্রে বর্ণনা করেন। আর তিরমিজী, হাসনে গরীবে সহীহ, তাবরানী ও বায়হাকী সহীহ এবং হাকেম বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ (বিশুদ্ধ) বলেছেন। আর ইমাম আবদুল আজীম মুনজেরী প্রমুখ অনুসন্ধানী ইমামগন এর বিশুদ্ধতা নির্ভরযােগ্য বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যাতে হুজুরে সৈয়দে আলম (ﷺ) একজন অন্ধকে দোয়া শিক্ষা ও দিয়েছেন যে, এ দোয়া নামাজের পরে পাঠ করবে-


اللهم ان اسئلك واتوه إليك بنبيك محمد نبي الرحمة يا محمد إني أتوجه بك الى ربى في حاجتي هذه ليقضي لي اللهم فقعه ف -


অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। আর আপনার রহস্যপূর্ণ নবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর উসিলায় ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি হুজুরের উসিলায় আপনার দিকেই মনােনিবেশ করছি। স্বীয় রবের দিকে এ প্রয়ােজনে (হাজত) মনােনিবেশ করছি যে, আমার প্রয়ােজন এবং অভাব পুরণ হােক। হে আল্লাহ! তাঁর শাফায়াত আমার পক্ষে কবুল করুন।




হাদিস-১


হাদিস

প্রথমঃ-

ইমাম তাবরানীর মু’জাম গ্রন্থে এভাবেই রয়েছে-


اين رجلا كان يختلف الى ثمان بن عفان رضى الله تعالی عنه في حاجته له وگان عثمان لا يلتفت إليه ولا ينظر في حاجه فلقى عثمان بن حنيني رضى الله تعالی عنه فشكي ذلك إليه فقال له عثمان بن حنیف رضى الله تعالی عنه إئت الميضاة فتوضاء ثم ائت المسجد فصلي فيه ركعتين ثم قال- اللهم اى اشتالك واتوه اليك بنبينا محمد صلي الله تعالي عليه وسلم نبي الرحمة يا محمد اني اتوجه بك الي ربي                 ليقضى حاجتي وتذكر حاجتك مع مماثطلق الرجل صنع ما قال له ثم اتي باب ثمان بن عفان رضي الله عنه فجاء اليواب حتي أخذه بيده فادخله عثمان بن عفان رضی الله تعالى عنه فاجلسه معه على الثقة وقال ل  ما حاجتك فذكر حاجته فقضاها ثم قال ماذكرت حاجتك حتى كانت هذه الساقة وقال ماكان لك من حاجة فأتنا ثم أن الرجل خرج من عنده فلقى عثمان بن حنيف رضى الله تعالی عنه فقال له جزاك الله خيرا ماكان ينظر في حاجتي ولا يلتفت إلى حتى كلمته في تقال عثمان بن حنيف رضى الله تعالى عنة والله ماكلمته ولكن شهدت رسول الله صلی الله تعالى عليه وسلم وأتاه رجل ضريرفشكا اليه هاب بصره فقال له النبي صلى الله تعالى عليه وسم ائت الميضاة فتوضئا مع ركعتين ثم ادع بهذه الدعوات فقال عثمان بن حنيف رضى الله تعالى عنه فوالله مافرقنا وطال بنا الحديث حتی دخل علينا الرجل كانه لم يكن به ضر قط..


অর্থাৎ, একজন অভাবগ্রস্ত নিজ অভাব ও প্রয়ােজন দূরিভূত হওয়ার জন্য আমীরুল মুমেনীন হযরত ওসমান ইবনে আফফান (رضي الله عنه)-এর খেদমতে আসা যাওয়া করতেন। আমীরুল মুমেনীন না তার দিকে দৃষ্টিপাত করতেন, না তাঁর হাজতের দিকে দেখতেন। তিনি হযরত ওসমানের নিকট এর অভিযােগ উত্থাপন করেন। তিনি বললেন, ওযু করে মসজিদে দু'রাকাত নামাজ পড়াে; অতঃপর এভাবে দোয়া প্রার্থনা করাে -“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি। এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ (ﷺ)-এর উসিলায় আপনার দিকে মনােনিবেশ করছি। ইয়া রাসুলাল্লাহ্ (ﷺ) আমি হুজুরের প্রার্থনায় স্বীয় রবের দিকে মনােনিবেশ করছি যে, আমার অভাব পুরন করুন। আর নিজ হাজত বর্ননা পূর্বক পুনরায় আমার কাছে আসবে, আমিও তােমার সাথে গমন করবাে। হাজত প্রার্থী (তিনিও সাহাবী অথবা কতকের মতে শীর্ষস্থানীয় তাবেয়ী ছিলেন) এভাবেই করেন,অতঃপর খলিফার দ্বারে উপস্থিত হন। দারােয়ান আসলেন এবং হাত ধরে আমীরুল মুমেনীনের সম্মুখে নিয়ে গেলেন। আমীরুল মুমেনীন (رضي الله عنه) তাঁকে নিজের সাথে স্বীয় মসনদে বসালেন এবং উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করলেন। তিনি নিজ উদ্দেশ্য আরজ করলেন। অতঃপর তিনি তা পুরণ করলেন এবং ইরশাদ করলেন-এতদিন পরেই তুমি নিজের উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেছে। অতঃপর বললেন, তােমার যেই অভাবই হউক না কেন, আমার নিকট চলে আসবে। ঐ ব্যক্তি সেখান থেকে বের হয়ে হযরত উসমান ইবনে হুনাইফ-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। আমীরুল মুমেনীন আমার দিকে এবং আমার অভাবের দিকে এতদিন দৃষ্টিপাত করেননি, এমনকি শেষ পর্যন্ত আপনি তাঁর নিকট আমার জন্য সুপারিশ করেছেন। হযরত উসমান ইবনে হুনাইফ (رضي الله عنه) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তােমার সম্পর্কে আমীরুল মুমেনীনকে কোন কিছু বলিনি। কিন্তু ব্যাপার হলাে এ যে, আমি সৈয়দে আলম হুজুর পুরনুর (ﷺ) কে দেখেছি, তাঁর নিকট একজন অন্ধ উপস্থিত হলেন এবং তার অন্ধত্বের অভিযােগ করলেন। হুজুর (ﷺ) এভাবেই ইরশাদ করলেন যে, ওযু করে দু'রাকাত নামাজ আদায় করাে অতঃপর এ দোয়া করাে। আল্লাহর শপথ! আমরা এখনও উঠতেই পারেনি। সে কথা বলতে বলতে আমাদের নিকট এসে গেলাে।যেমন সে কখনাে অন্ধ ছিলাে না। |

ইমাম তাবরানী অতঃপর ইমাম মানজুরী (رحمة الله) বলেন -হাদীসটি বিশুদ্ধ।




হাদিস-২


হাদিস

দ্বিতীয়-

ইমাম বুখারী (رحمة الله) কিতাব “আল-আদাবুল মুফরাদাত”, ইমাম ইবনে বিশকওয়াল বর্ণনা করেন-


 ان بر عمر رضي الله تعالي عنهما خدرت رجله فقيل له اذكر احب الناس اليك فصاح يا محمداه فانتشرت..


অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رحمة الله)-এর উভয় পা অবশ হয়ে গেলাে, কেউ জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে স্বরণ করুন, যিনি আপনার সবচেয়ে প্রিয় মাহবুব। হযরত ইবনে ওমর (رحمة الله)সমুস্বরে আহবান করলেন ‘ইয়া মুহাম্মদাহ' (হে মুহাম্মদ (ﷺ)) সাথে সাথে তাঁর পা খুলে গেলাে। ইমাম নববী (رحمة الله) মুসলিম শরীফ ভাষ্যকার ‘কিতাবুল আযকারে’, অনুরূপ হাদীস হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন-“তাঁর পায়ে কাঁটাবিদ্ধ হলাে, তিনি ইয়া মুহাম্মদাহ্ বললে তা ভালাে হয়ে গেলাে। এ কার্য এ দু’মহান সাহাবী ছাড়া আরাে অনেকের থেকে বর্ণিত হয়েছে। মদীনাবাসীদের মধ্যে প্রাচীন কাল থেকেই “ يا محمداه” (ইয়া মুহাম্মাদাহ) বলার প্রচলন চলে আসছিলাে।

আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফাজী মিসরী (رحمة الله) নসীসুর রিয়াদ শরহে শিফা কৃতঃ ইমাম কাজী আয়াজ-এ বলেন-


 هذا مما تعاهده اهل المدينة..


অর্থাৎ মদীনাবাসীরা (তাঁদের এ প্রাচীন) প্রচলন নবায়ন করলেন। | হযরত বেলাল ইবনে হারিছ মুনী (رحمة الله) থেকে ‘আমুর রুমাদাহ’ দুর্ভিক্ষে যা হযরত ফারুকে আযম (رحمة الله) -এর খেলাফতের পর ১৮ হিজরীতে সংঘটিত হয়েছিলাে। তাঁর সম্প্রদায় বনু মুনিয়া আবেদন করেন, মরে যাচ্ছি, কেউ ছাগল জবেহ করুন। বললেন, ছাগলের মধ্যে কিছু নেই, তাঁরা স্বীকার করলেন। পরবর্তীতে জবেহ করলেন। খাল (চামড়া) পরিশােধন করা হলে লাল হাডিড বের হলাে। এটা দেখে হযরত বেলাল (رحمة الله) প্রার্থনা করেন, ‘ইয়া মুহাম্মদাহ'। অতঃপর হযরত হুজুর আকদাস (ﷺ) স্বপ্নে তশরীফ এনে সু-সংবাদ প্রদান করেন। এ ঘটনা কামিল’ গ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে।

ইমাম, মুজতাহিদ, ফকীহ্ আবদুর রহমান হুজালী কুফী মাসউদী, যিনি হযরত ইবনে মাসউদের প্রপৌত্র এবং শীর্ষস্থানীয় তবে-তাবেয়ীন ও মােজতাহিদের অন্যতম ছিলেন। মাথার উপর টুপী রাখতেন যাতে লিখা ছিলাে-


محمد يا منصور


(মুহাম্মদ ইয়া মানসুরু’), আর প্রকাশ থাকে যে,


 القلم احد للسائلين


(আল কালামু আহাদুল লিসানাইন) ..

হায়শম ইবনে জমীল ইনতাকী যিনি নির্ভরযােগ্য মুহাদ্দিস ওলামাদের অন্যতম। তিনি যুগের ইমাম সম্পর্কে বলেন-


ورأيته وعلى رأسه قلنسوة أطول من ذراع مكتوب فيها محمد یا منصور ذكره في تهذيب التهذيب وغيره


অর্থাৎ আমি তাকে এ অবস্থায় দেখেছি যে, তাঁর মাথার উপর এক গজ পরিমাণ টুপী ছিলাে। যাতে মুহাম্মদ ইয়া মানসুরু’ লিপিবদ্ধ ছিলাে। যা ‘তাহযীবুত তাহযীব ইত্যাদিতে উল্লেখ করেন।




ফতোয়া-

ইমাম শায়খুল ইসলাম শিহাবুদ্দীন রামলী আনসারীর ফতােয়ায়’ রয়েছে-


سئل عما يقع من العامة من قولهم ثد الشدائد يافلان ونحو ذلك من الإستقائ بايد نبياء والمرسلين والإلحين وهل للمشائخ امائة بعد موتهم أم لا فأجاب بما له آ الاستغاثة بالأنبياء والمرسلين  والعلماء الصالحين جائزة للانبياء والمرسلين والأولياء والصالحين اغاثة بعد موتهم..


অর্থাৎ তার থেকে ফতােয়া তলব করা হলাে যে, সর্ব সাধারণ লােকেরা কঠোর বিপদের মুহুর্তে নবী, রাসুল, ওলী ও সৎলোেকদের থেকে প্রার্থনা করেন আর “ইয়া রাসুলাল্লাহইয়া আলী;‘ইয়া শেখ আবদুল কাদের জিলানী এবং এ ধরণের বাক্য বলে থাকেন। এটা বৈধ কিনা? আর ওলীগণের ইনতিকালের পরও তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন। এটা কি বৈধ? তিনি জবাব দিলেন যে, নিশ্চয়ই নবী, ওলী, রাসুল ও ওলামাদের থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ এবং তাঁরা ইনতিকালের পরও সাহায্য করে থাকেন।

আল্লামা খায়রুদ্দীন রমলী ‘দুররে মােখতার' গ্রন্থকারের উস্তাদ ফতােয়ায়ে খায়রিয়ায় বলেন-


  قولهم ياشيخ عبد القادر ندا فما الموجب لحرمته 


(লােকেরা বলে থাকেন যে, “ইয়া শেখ আব্দুল কাদের’,এটা একটা আহবান। অতঃপর এর অবৈধতার কারণ কি?) সৈয়দী জামাল ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর মককী (رحمة الله) স্বীয় ফতােয়ায়’ বলেন-


سئلت عمن يقولون في حال الشدائد يا رسول الله ويا على اشيخ عبد القادر مثلا هل جا ئز شرعا آم لا أحيت نعم الإشتقائه بالأولياء ونداء هم والتوسل بهم آمر مشروع وشي مرغوب لا ينكره الأمكابر ومعاند وقد حرم بركة الولياء الكرام


অর্থাৎ আমাকে জিজ্ঞেস করা হলাে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার অভিমত কি যে বিপদের সময় ইয়া রাসুলাল্লাহ’ ‘ইয়া আলী’ এবং ইয়া শেখ আবদুল কাদের ইত্যাদি বলে থাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এগুলাে বৈধ কিনা? আমি জবাব দিলাম হাঁ! আওলিয়ায়ে কিরাম থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা, তাঁদের আহবান করা এবং তাঁদের সাথে অন্যের জন্য প্রার্থনা করা, শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ ও পছন্দনীয়। যা অস্বীকার করা যায় না কিন্তু গোঁয়ার ও অবাধ্যরা। নিশ্চয়ই তারা আওলিয়ায়ে কেরামের বরকত থেকে বঞ্চিত।

ইমাম ইবনে জুজী ‘উয়ুনুল হিকায়াত' গ্রন্থে তিনজন মহান ওলীর ঐতিহাসিক ঘটনা পরস্পর সনদ সহকারে রেওয়ায়েত করেন। তিনি বলেন, তাঁরা তিন ভাই শামের ‘দেলাওয়ার’ নামক স্থানে সওয়ার ছিলাে। তাঁরা সর্বক্ষণ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতেন।


 فاسر هم الروم مرة فقال لهم الملك اني اجعل فيكم الملك وازوجكم بناتي وتدخلون في نصرانية فابوا قالوا يا محمداه


অর্থাৎ একদা রােমের খৃষ্টানরা তাদের বন্দী করে নিয়ে যায়। বাদশাহ তাঁদের বললেন, আমি তােমাদের রাজত্ব প্রদান করবাে এবং আমার মেয়েদের তােমাদের নিকট বিবাহ প্রদান করবাে, তােমরা খৃষ্টান হয়ে যাও। তারা অস্বীকার করেন এবং আহবান করেন ‘ইয়া মুহাম্মাদাহ'। বাদশাহ তৈল গরম করে দু’জনকে তাতে নিক্ষেপ করেন। তৃতীয় ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা একটি কারণ সৃষ্টি করে বাঁচালেন। ঐ দু’জন ছয়মাস পর একদল ফেরেস্তা সহকারে জাগ্রতাবস্থায় তাঁর নিকট আসেন আর বলেন, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তােমার বিবাহানুষ্ঠানে অংশ গ্রহণের জন্য প্রেরণ করেন। তিনি তাদের থেকে অবস্থা জিজ্ঞেস করেন, তারা বলেন


 ماکائث الا العظة التي رأيت حتى خرجنا في الفردوس -


(ঐটা একটা তৈলের কুন্ড ছিলাে যা তুমি দেখেছিলে। এরপর আমরা জান্নাতুল ফেরদাউসে চলে গেলাম ) ইমাম ইবনে জুজী (رحمة الله) বলেন -


 كانوا مشهورين بذالك معروفين بالشام في الزمن الأول


(এ মহাত্মারা পূর্ববর্তী (সলফে সালেহীনের) পূণ্যবান লােকদের যুগে সিরিয়ায় প্রসিদ্ধ। ছিলাে আর তাঁদের এ ঘটনাও সাপী প্রসিদ্ধ ছিলাে।)। অতঃপর বলেন, কবিগণ তাঁদের প্রশংসায় (কৃাসীদা) কবিতা লিখেছেন। যার একটি পংক্তি –


 يغطى الضيقين بفضل صدق * نجاة في الحيات وفى الممات


অর্থাৎ অতিসত্তর আল্লাহ তায়ালা সত্যিকার ঈমানদারদেরকে তাঁদের সত্যের বরকত দ্বারা ইহজগত ও পরজগতে মুক্তি প্রদান করেন। এটা বিস্ময়কর, সুক্ষ্ম এবং রহস্যে পরিপূর্ণ ঘটনা। দীর্ঘ হওয়ার আশংকায় সংক্ষেপ করেছি।



শরহুস সুদুর(ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী রহঃ)-

________________


পরিপূর্ণ ঘটনা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতির (رحمة الله) শরহুস সুদুরে রয়েছে। বিস্তারিত ঘটনা জানতে হলে ‘শরহুস সুদুর' পাঠ করুন। এখানে উদ্দেশ্য শুধু এটুকু যে, বিপদের সময় “ইয়া রাসুলাল্লাহ্” তথা নারায়ে রেসালতের বৈধতার প্রমান করা। যদি তা শিরক হয়, তাহলে মুশরিকের ক্ষমা ও শাহাদাত নসীব হলাে কিভাবে এবং জান্নাতুল ফেরদাউসে স্থান লাভ করার মর্মার্থ কি? আর তাঁদের বিবাহে ফেরেস্তা প্রেরণ কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? আর এ ইমামগণও কিভাবে তা গ্রহনযােগ্য এবং তাঁদের শাহাদাত ও বেলায়তের স্বীকৃতি প্রদান করলেন? আর ঐ মহাত্মারা স্বয়ংও সলফে সালেহীনের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। কেননা, এ ঘটনা তারতম-এর আবাদের পূর্বেকার ছিলাে।


 كما ذكر في الرواية نفسها


(যেমন মূল রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে আর তারতােমে একটি নগর রয়েছে অর্থাৎ দারুস সালামের সীমান্ত নগর, যা খলীফা হারুনুর রশীদ আবাদ করেছেন। যেমন ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি (رحمة الله) তারীখুল খােলাফায় বর্ননা করেছেন। বাদশাহ্ হারুনুর রশীদের যুগ তাবেয়ীন ও তবেতাবেয়ীনের যুগ ছিলাে। সুতরাং এ শহীদদ্বয় তাবেয়ী ছিলেন না বলে ধরে নিলেও কমপক্ষেতাে তবেতাবেয়ীন অবশ্যই ছিলেন। আল্লাহ তায়ালাই পথ-প্রদর্শনকারী।

টীকা:- ১. ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতি (رحمة الله) “শরহুস সুদুরে পূর্ণাঙ্গ ঘটনাটি এভাবেই ব্যক্ত করেন। সম্মানিত পাঠক পাঠিকার সুবিধার্তে আমি নিম্নে তা উল্লেখ করছি। সিরিয়ায় তিন সহােদর ভাই উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, প্রবল সাহসী যােদ্ধা, বাহাদুর এবং মুজাহিদ ছিলাে। রােম সৈনিকরা তাঁদের গ্রেফতার করে নিলাে। রােম সম্রাট ভ্রাতৃত্রয়ের যৌবন এবং সৌন্দর্য দর্শনে প্রভাবিত হয়ে বললাে, তােমরা যদি খৃষ্টান হয়ে যাও, তাহলে আমি নিজ শাহজাদীদের সাথে তােমাদের বিবাহ করিয়ে দিবাে এবং তােমাদের রাজত্বও প্রদান করবাে। ভ্রতত্রয় বাদশাহর এ প্রস্তাব সবিনয়ে প্রত্যাখান করেন। তাদের আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে বাদশাহ তিনটি পাত্রে চর্বি ও সরিষার তৈল পাক করার নির্দেশ দেন। তিনদিন পর্যন্ত তৈলের পাত্র খােলা ছিলাে, আর ঐ। পাত্রগুলাে দৈনিক তাদের দেখানাে হতাে এবং বলা হতাে, হয়তঃ তােমরা খৃষ্টান হয়ে যাও, নয়তাে তােমাদের এ পাকানাে তৈলে দগ্ধ করা হবে। কিন্তু তাঁরা মজবুত, সুদৃঢ় ও পাহাড়সম। ঈমানের উপর স্থির থাকেন। ঐ জালেমরা প্রথমে বড় ভাইকে আগুনে নিক্ষেপ করেন, অতঃপর মেঝ ভাইকে। ভ্রাতৃদ্বয় يا محمداه (ইয়া মুহাম্মাদাহ) নারা ও আহবান করে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং শাহাদাতের মহান গৌরব অর্জন করেন। ছােট ভাইকে যখন পাত্রের নিকটে নেয়া হলাে, বাদশাহর এক রাজকর্মকর্তার তাঁর প্রতি করুণা হলাে। তিনি বললেন, হে সম্রাট! একে চল্লিশ দিনের জন্য অবকাশ প্রদান করুন। আমি তাকে যে কোন প্রকারে খৃষ্টান বানিয়ে ফেলবাে। রাজ কর্মচারী ঐ মুজাহিদকে নিজ গৃহে নিয়ে যান এবং নিজের যৌবনা ও অতিসুন্দরী মেয়েকে তাঁর পাশে রেখে দেন। যেন ঐ সুন্দরী মেয়ের প্রতি মুগ্ধ হয়ে মুজাহিদ খৃষ্টান হয়ে যায়। কিন্তু এ মুত্তাকী, পরহেজগার এবং আবেদ মুজাহিদ সারারাত্র নফল নামাজ ও ইবাদতে অতিবাহিত করেন, আর সারা দিন রােযায় কেটে দেন। রাজকর্মচারীর মেয়ে মুজাহিদের তাকওয়া ও ইবাদতে এমনভাবে মুগ্ধ হলাে যে, সে নিজেই তাঁর প্রেমে পড়ে গেলাে এবং কলেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলাে। আর রাত্রে দু’টি ঘােড়া নিয়ে মুজাহিদকে বললাে, চলাে আমরা উভয় এ নগর ত্যাগ করে চলে যাই এবং তথায় আমরা বিবাহ করে এক সাথে থাকবাে। এরপর তাঁরা সেখান থেকে এভাবেই বেরিয়ে গেলেন যে, সারারাত্র তাঁরা সফর করতেন আর দিনে লুকিয়ে থাকতেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা একরাত্রে চলে যাচ্ছেন এমতাবস্থায় কতেক ঘােড়ার আওয়াজ তাঁদের কর্ণে প্রবেশ করলাে। মুজাহিদ সামনে এগেিয় দেখেন যে, এরা তাঁর ঐ দু’ভাই যাদের পাকানাে তৈলে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছিলাে এবং তাঁদের সাথে কতেক ঘােড়ার দৌড়ের আওয়াজ আসছিলাে। মুজাহিদ আরাে নিকটে গিয়ে দেখেন তাঁরা হলেন তাঁর ঐ দু’ভাই যাদের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিলাে। আর তাঁদের সাথে ঘােড়ায় আরােহীরা ফিরিস্তাদের একটি দল ছিলাে। মুজাহিদ তাঁর ঐ দু’ভাইকে সালাম করেন এবং তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে খােজ-খবর নেন। তাঁরা উভয় বলতে লাগলেন, আমাদের অবস্থা এ যে, আমরা তৈলে ডুব মেরেছি এরপর জান্নাতে পৌঁছে গেছি। এখন আমরা আল্লাহর নির্দেশে এখানে এসেছি যেন এ পবিত্র ও নেক মেয়ের বিবাহে শরীক হতে পারি। এরপর এ উভয় ভাই ফেরেস্তাদের সাথে তাঁদের বিবাহে শরীক হন অতঃপর রওয়ানা হয়ে যান। আর এ বর-কন্যা নিরাপত্তার সাথে সিরিয়ায় (নিজ বাড়ীতে) পৌঁছে যান। (অনুবাদক)।

__________________

কিতাবঃ নারায়ে রেসালাতের বৈধতা

মূলঃ আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান বেরলভী (রহঃ)

অনুবাদঃ আবু সাঈদ মুহাম্মদ ইউসুফ জিলানী।

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন