প্রশ্নঃ কারবালা সংঘঠিত হওয়ার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট খুব সংক্ষেপ করে বর্ণনা করুন যাতে পাঠক সমাজ উপকৃত হয়।
Answer: খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে বলা আসলেই মুশকিল। তবুও বলছি- হযরত উছমান (رضي الله عنه)-র শাহাদাতের পর হযরত আলী (رضي الله عنه) কে খেলাফতের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। হযরত আমির মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) তখন সিরিয়ার গভর্ণর। তিনি হযরত উছমান (رضي الله عنه)-র শহিদকারীদের বিচারের ইস্যুতে হযরত আলী (رضي الله عنه)-র হস্তে বাইয়াত গ্রহনে অস্বীকৃতি জানান। পরবর্তী পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি মুসলমানদের সিফ্ফিনের যুদ্ধ পর্যন্ত নিয়ে যায়। এখানে এটা পরিস্কার করা দরকার যে, কুরাইশ বংশের বনি হাশিম ও উমাইয়া গোত্রের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক আগ থেকেই বিরোধপূর্ণ ছিল। হযরত আলী (رضي الله عنه) হাশেমী আর হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) উমাইয়া বংশের ছিলেন। যাই হোক সিফ্ফিনের যুদ্ধে হযরত আলী (رضي الله عنه) নিশ্চিত জয় বুঝতে পেরে হযরত আমির মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-র পক্ষ থেকে যুদ্ধ বন্ধ ও ডায়োলগের প্রস্তাব আসে। প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। যুদ্ধ বন্ধ হয়। পরবর্তী পরিস্থিতিতে হযরত আলী (رضي الله عنه) শাহাদাত বরন করেন। এরপর হযরত হাছান (رضي الله عنه) খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। উনি ছয় মাস খেলাফতের দায়িত্ব পালন করে মুসলমানদের বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের খাতিরে শাসনভার হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-র হাতে ন্যস্ত করে স্টেপ ডাউন করেন। উনি স্টেপ ডাউন করার সাথে সাথে খেলাফতে রাশেদার পরিসমাপ্তি ঘটে এবং মুসলমানদের রাজনৈতিক আকাশে রাজতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটে যা থেকে মুসলমানদের আজকের এই যুগ পর্য্যন্ত মুক্তি মিলেনি। হযরত আমীর মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) উনার মৃত্যুর আগে শাসন কার্য পরিচালনার জন্য ইয়াযিদকে নির্বাচিত করে যান। ইয়াযিদের দুশ্চরিত্র, লাম্পট্য আর শরাবখোরি কারো অজানা ছিলনা। তাই তার দায়িত্ব প্রাপ্তির সংবাদে মক্কা শরিফ, মদীনা শরিফ সহ মুসলমানদের দেশে দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেয়। সাধারণ লোকজনের দৃষ্টি ছিল মদীনা শরিফে অবস্থানরত হুযুর (ﷺ) চারজন সাহাবী যারা স্বাভাবিক ভাবেই অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। তম্মধ্যে একজনের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বি এবং তিনি ছিলেন মুসলমানদের অন্তরের মুকুটহীন সম্রাট প্রিয় নবীর (ﷺ) প্রানপ্রীয় দৌহিত্র ইমাম হুছাইন (رضي الله عنه)। তাই ইয়াযিদের কাছে এই চার জনের বাইয়াত বিশেষ করে ইমাম হুছাইন (رضي الله عنه)-র বাইয়াত গ্রহণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বভাবতই তিনি বাইআত গ্রহণে অস্বিকৃতী জানান। আর এটা কস্মিনকালরই জান্নাতি যুবকদের সরদারের জন্য সম্ভব ছিলনা। এজিদ ক্ষমতার জন্য কোনকিছু করতে দ্বিধা করবেনা জেনে সবার পরামর্শে তিনি মদীনা শরিফ ত্যাগ করে মক্কা শরীফে চলে যান। এরই মধ্যে ইরাকের কুফা থেকে হাজার হাজার চিঠি আসতে থাকে। চিঠির সারমর্ম ছিল-আমরা ইয়াযিদকে মানিনা। আপনি কুফা আসেন। এখানকার লোক আপনার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তিনি গ্রাউন্ড রিয়ালিটি দেখার জন্য মুসলিম বিন আকীল (رضي الله عنه) কে কুফায় প্রেরণ করেন। উনি কুফায় পৌছার সাথে সাথে হাজার হাজার লোক তারঁ হাতে ইমাম হোছাইনের (رضي الله عنه) পক্ষে বাইয়াত গ্রহণ করেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে উনি ইমাম হোছাইন (رضي الله عنه) কে কুফায় আসার জন্য সবুজ সংকেত দেন। এই সংবাদ ইয়াযিদের কাছে পৌছাতেই সে অত্যাচারী উবাইদুল্লাহ্ ইবনে যিয়াদকে কুফার গভর্ণর হিসেবে নিয়োগ দেয় এবং শক্ত হাতে পরিস্থিতি দমনের নির্দেশ দেয়। উবাইদুল্লাহ্ এসেই হযরত মুসলিম বিন আকীলকে নির্দয়ভাবে হত্যা করেন। এমনকি তারঁ ছোট ছোট দুই শাহজাদাকেও নিমর্মভাবে হত্যা করে শরীর থেকে মস্তক ছিন্ন করে হারিছ নামের এক পাষন্ড। কুফার পরিবর্তিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অনবগত হওয়ার কারণে ইমাম হোছাইন (رضي الله عنه) কুফাই আগমন করেন। সামগ্রীক পরিস্থিতি জানতে পেরে উনি যারপরনাই আফছোছ করেন। কিন্তু ইবনে যিয়াদের নির্দেশে তার হাজার হাজার সৈন্য তারঁ গতিরোধ করে কারবালার দিকে তাকে পুশ করতে থাকে। এক পর্য্যায়ে উনি কারবালার প্রান্তরে তাবু ফেলেন। এর পর যা হয়েছিল তা পৃথিবীবাসীর জন্য কিয়ামতে ছুগরা। সিমার বিন জাউশান ইয়াযিদি বাহিনীর সাথে যোগদান। ফোরাত অবরুদ্ধ। নবী পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডে। ইমাম হুছাইনের মস্তক শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন। আহলে বাইতে রাছুলের (ﷺ) তাবুতে আগুন।
______________________
আশুরা - শোহাদায়ে কারবালার স্মরণ - সুন্নি-শিয়া বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নত্তোরঃ
🖋শায়খ সাইফুল আজম বাবর আল-আযহারী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন