শাফায়াতের উপর আ’রী, নায়ছারী, দেউবন্দী প্রমুখ ভ্রান্ত ফেরকাদের উত্থাপিত প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ

 

শাফায়াতের উপর আ’রী, নায়ছারী, দেউবন্দী প্রমুখ ভ্রান্ত ফেরকাদের উত্থাপিত প্রশ্নাবলীর উত্তরঃ



১ম প্রশ্নঃ-

অসংখ্য আয়াত থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তায়ালার নিকট কারাে সুপারিশ চলবে না। হুজুর (ﷺ) ধর্ম প্রচারের প্রথম ভাগে হযরত ফাতেমা যােহরা  (رضي الله عنه) কে বলেছিলেন যে, আমি তােমার থেকে আল্লাহর আযাবকে প্রতিহত করতে পারব না। (নায়ছারী ও দেওবন্দীগণ)


উত্তরঃ-


এ ধরণের আয়াত ও হাদিস শরীফ সমুহ কাফেরদের বুঝানাে হয়েছে (অর্থাৎ ঐ সব তাদের বেলায় প্রযােজ্য)। হযরত ফাতেমা যােহরা  (رضي الله عنه) কেও একথা বলা হয়েছে যে, তুমি যদি ঈমান গ্রহণ না কর তাহলে তােমার জন্য সুপারিশ হবে না। এ কারণে কোরআনে পাকের আয়াত সমূহে (ইল্লা) শব্দ দ্বারা মাসয়ালার হুকুমের পরিবর্তন করা হয়েছে।


من ذالذي يشفع عنده الا باذنه


অর্থাৎ-- আল্লাহর অনুমতিক্রমে শাফায়াত করতে পারবে।



২য় প্রশ্নঃ-


যদি আল্লাহ তায়ালা নবীর সুপারিশে বেহেস্ত দান করেন তাহলে বুঝা গেল আল্লাহ তরফদার বা পক্ষপাতিত্বকারী, ( ইস্তিয়ারাত পুরকাশি ১৪নং অধ্যায়)।


উত্তরঃ-


আল্লাহ তায়ালার প্রত্যেক অনুগ্রহ একের নিকট অপরের ওসীলায় পৌঁছে থাকে এবং আল্লাহ তায়ালা নিঃসন্দেহে তার মকবুল বান্দাগণের পক্ষ অবলম্বন করেন।


কারণ, ভালমানুষের পক্ষ অবলম্বন করাও ভাল।



৩য় প্রশ্নঃ-


আরবের কাফেরগণ মূর্তিগুলােকে নিজেদের সুপারিশ কারী মানতো। কোরআন করিম এ আকিদাকে কুফরী ঘােষণা করেছে। অসংখ্য আয়াত এর সাক্ষ্য বহন করে মুসলমানগণ নবীগণ (عليه السلام) ও আউলিয়া কেরাম (رضي الله عنه) কে সুপারিশকারী মেনে কাফের হতে চলছে।


উত্তরঃ-


কাফেরগণ একেত অনুমতি প্রাপ্ত নয়।


দ্বিতীয়ত: অপদার্থ মুর্তিগুলােকে সুপারিশকারী মেনেছে। আর আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদেরকে সুপারিশকারী হিসেবে গ্রহণ করেছি। সুতরাং উভয়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। কাফেরগণ মুর্তিগুলােকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে সুপারিশকারী মেনেছে। আর আমরা আল্লাহর মকবুল বান্দাগণের শাফায়াত খােদার অনুমতিক্রমে প্রাপ্ত মনে করি।



৪র্থ প্রশ্নঃ-


শাফায়াতের আকিদা দ্বারা মুসলমানের আমল খারাপ হয়ে যাবে। কেননা তারা শাফায়াতের উপর ভরসা করে পুন্য কাজ হতে বিমুখ হয়ে যাবে। (দেউবন্দী ওহাবীগণ)


উত্তরঃ-


এ প্রশ্নতো আরীয়গণের উক্তির ন্যায়, যেমন তারা বলে যে, "তওবার মাসয়ালা মানুষকে অপকর্মে লিপ্ত করে।" জনাব, শাফায়াতের দ্বারা আশা বৃদ্ধি পায় এবং আশার মাধ্যমে পুন্য কাজের উৎসাহ বৃদ্ধি হয়।



৫ম প্রশ্নঃ-


আমরাও হুজুর (ﷺ) এর জন্য আল্লাহর রহমত প্রার্থনা করি, তাঁর প্রতি দরূদ প্রেরণ করি এবং হুজুর (ﷺ)ও আমাদের জন্য দোয়া করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। তাহলে বুঝা যায় যে, হুজুর (ﷺ) আমাদের সুপারিশকারী এবং আমরা হুজুর (ﷺ) এর সুপারিশকারী।


উত্তরঃ-


এ উভয় দোয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। হুজুর(ﷺ)


এর দোয়ায় আমরা উম্মতের জাহাজ পার হবে। তার দোয়া ব্যতিত আমাদের কোন সাফল্য হতেই পারে না। উভয় দোয়ার মধ্যে পার্থক্য হলাে এ যে, আমাদের পক্ষ হতে তার জন্য দোয়া করার অর্থ হলাে তার করুনার ভিক্ষা প্রার্থনা করা। যেমন ভিক্ষুক দাতাদের জন্য বিভিন্ন রকমে দোয়া করে ভিক্ষা প্রার্থনা করে। এ কারনে, কোরআনে যেখানে করিম নবী করিম (ﷺ) এর প্রতি দরূদ প্রেরনের আদেশ দিয়েছে ঐ সব স্থানে প্রথমেই ঘােষিত হয়েছে যে,


আমি (আল্লাহ তায়ালা) প্রিয় নবী (ﷺ) এর উপর রহমতের বারিধারা বর্ষণ করছি, তােমরাও তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করো।" (সূরা আহযাব ৫৬)


অর্থাৎ আমার রহমত তােমাদের দোয়া প্রার্থনার উপর নির্ভরশীল নয়।


প্রথম প্রকার দোয়া অর্থাৎ হুজুর (ﷺ) এর দোয়া হলো ‘শাফায়াত’।


আর ২য় প্রকার অর্থাৎ তার জন্য আমাদের দোয়ার অর্থ হলো—তার মহান দরবারে ভিক্ষা প্রার্থনা করা।


সুতরাং প্রমানিত হলাে যে, হুজুর (ﷺ) হলেন—আমাদের সুপারিশকারী আর আমরা হলাম তার করুনার ভিখারী।

________________

কিতাবঃ কোরআন  হাদিসের আলোকে শাফায়াত

মূলঃ- চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত শাহ মাওলানা আহমদ রেযা খান ফাযেলী বেরলভী (রহঃ)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন