প্রশ্নঃ- ইসলামী শরীয়তের ওলামায়ে কেরামের প্রতি আরজ, শাফায়াত বা নবী করীম(ﷺ) সুপারিশকারী হওয়া সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কি? ইহা কোন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কি-না?
উত্তরঃ- সমস্ত প্রশংসা সর্বদ্রষ্টা, সর্বশ্রোতা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম সুসংবাদদাতা, সুপারিশকারী নবী করীম(ﷺ) তাঁর বংশধর ও ছাহাবা কেরামের উপর অহরহ (বর্ষিত হােক) সােবহানাল্লাহ! এমন প্রশ্ন শুনে কতই বিস্ময় বােধ করছি যে, মুসলমান এবং সুন্নিয়াতের দাবীদারগণ এমন সমুজ্জ্বল আকায়েদ সম্পর্কেও সন্দেহ পােষণ করে ! ইহাও কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার পূর্বাভাস!
শাফায়াত সম্পর্কিত হাদিসসমুহ এমন সুস্পষ্ট, যা কি ভাবে গােপন করা যায় ?
বিশ এর অধিক সাহাবী, শত শত তাবেঈন, হাজার হাজার মুহাদ্দিছ সেগুলাের বর্ণনাকারী। হাদিসের প্রত্যেক প্রকার গ্রন্থ যেমন সিহাহ, সুনান, মাসানীদ, মাআজিম, জাওয়ামি, মুছান্নাফাত, শাফায়াত সম্পর্কিত হাদিসসমুহ দ্বারা সমৃদ্ধ। আহলে ছুন্নাতের প্রত্যেক অনুসারী এমনকি নারী-শিশু | বরঞ্চ গ্রামীন মুখরাও এ আকিদা সম্পর্কে অবহিত। খােদার সাক্ষাৎ, মােহাম্মদ(ﷺ) এর শাফায়াত, প্রত্যেকের মুখে মুখে মুখরিত। আমি (আলা হযরত, ইমাম আহমদ রেযা খান (রহঃ) “সামউন ওয়াতাআহ লি-আহাদীছিশ শাফায়াহ্” নামক গ্রন্থে শাফায়াত সম্পর্কিত বহু হাদিছ সংকলন করেছি। এখানে তা থেকে সংক্ষেপে শুধু চল্লিশটা হাদিস উল্লেখ করার প্রয়াস পাচ্ছি! এর পূর্বে কোরআন পাকের কতেক আয়াত উল্লেখ করলাম।
কোরআনের আলোকে শাফায়াতঃ
◾আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন -
عَسَى أَنْ يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَحْمُودًا
অর্থাৎ :- "অতি শীঘ্রই আপনাকে আপনার প্রভু “মকামে মাহমুদ” পর্যন্ত পৌঁছাবেন।"
(আল কুরআন, সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত-৭৯)।
◾বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থ বােখারী শরীফে বর্ণিত আছে, হুজুর শফীউল মুযনেবীন (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হলাে “মকামে মাহমুদ” কি জিনিষ ? এরশাদ করেন,
অর্থাৎ : সেটা হলাে শাফায়াত।
ولسوف يعطيك ربك فترضی
অর্থাৎ : "এবং নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক অচিরে আপনাকে এ পরিমাণ দিবেন যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।" (আল-কুরআন)
◾ঈমাম দায়লমী “মুসনদুল ফেরদৌস” নামক হাদিস-গ্রন্থে আমিরুল মােমনীন মাওলা আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যখন উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হলো তখন হুজুর শাফীউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,
اذن لا أرضى و واحد من أمتي في النار
অর্থাৎ: যখন আল্লাহ তায়ালা আমাকে সন্তুষ্ট করবেন বলে ওয়াদা করেছেন, তখন আমি সন্তুষ্ট হবো না, যতক্ষণনা আমার একটি মাত্র উম্মতও দোযখে থাকবে।
[হে আল্লাহ! তার (ﷺ) উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।]
◾ইমাম তাবরাণী, মুজামুল আওসাত এবং বাযযার ‘মুসনাদে বাযযারে" মাওলা-ই-মুসলেমীন হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন- হুজুর শাফীউল মুযনেবীন (ﷺ) এরশাদ করেন,
اشفع لامتی حتی ينادنی ربی ارضيت يا محمد فاقول ای ربی رضيت
অর্থাৎ : আমি আমার উম্মতের জন্য ততক্ষণ সুপারিশ করবাে, যতক্ষণ না আমার প্রতিপালক আমায় ডেকে বলবেন, 'হে মােহাম্মাদ, আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর আমি আরজ করবে—হে আমার প্রতিপালক, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি।
◾আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
واستغفر لذنبك وللمؤمنين والمٶمنات
এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আপন প্রিয় হাবীব (ﷺ)কে নির্দেশ দিচ্ছেন ‘আপনি মুসলিম নর-নারীদের গুণাহ আমার থেকে মার্জনা করিয়ে নিন। এটাইতো শাফায়াত।
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللّهِ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَآؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
আর সেসব লোক যখন নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করে, তখন যদি আপনার দরবারে আসে অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং রাসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাপরবশ ও পরমদয়ালুরূপে পাবে। [ সুরা নিসা ৪:৬৪ ]
এ আয়াতে মুসলমানদেরকে এরশাদ ফরমাচ্ছেন- যদি কোন গুণাহ হয়ে যায়, তবে এ নীয়ে পাকের (ﷺ) দুয়ারে উপস্থিত হও এবং তাঁর সমীপে শাফায়াতের দরখাস্ত কর, মাহবুব (ﷺ) যদি তোমাদের পক্ষে শাফায়াত করেন; তবে আমি আল্লাহ নিশ্চয় তােমাদের গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেব।
◾আল্লাহ এরশাদ করেন,
واذا قيل لهم تعالوا يستغفرلکم رسول الله لووا رٶسهم
অর্থাৎ যখন ঐ সমস্ত মুনাফিককে বলা হয়, এসো। আল্লাহর রাসুল (ﷺ) তোমাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করেন। তখন তারা স্বীয় শিরসমুহ ফিরিয়ে নেয়।
এ আয়াতে মুনাফিকদের অশুভ পরিণতির কথা এরশাদ হয়েছে যে, তারা হুজুর শাফীউল মুযনেবীন (ﷺ) থেকে শাফারাত" চায় না। অতঃপর যারা আজ চায়না, তারা আগামীকালও পাবে না। আর যারা আগামীকাল পাবে না; তারা কিছুই পাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে তার (ﷺ) সুপারিশদ্বারা ধন্য করুন!
◾জনৈক কবি বলেন -
ور دیکھیں گے ۔ حشر می شم بھی
مگر اب ان سے التجا نہ کرے ۔
অর্থাৎ, হাশরে আমরাও প্রিয়নবীর দ্বারা পরিতুষ্ট হতে দেখবাে।
(আফসোস) তাঁকে অস্বীকারকারীগণ আজ তাঁর নিকট অাশ্রয় প্রার্থনা করছেনা! আল্লহুতায়ালা গুণাহগারদের জন্য সুপারিশকারী হুজুর করীম (ﷺ) এর উপর এবং তার বংশধরগণ, সাহাবা কেরাম ও তার দলের সবার উপর রহমত বর্ষণ করুন !
________________
কিতাবঃ কোরআন হাদিসের আলোকে শাফায়াত
মূলঃ- চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত শাহ মাওলানা আহমদ রেযা খান ফাযেলী বেরলভী (রহঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন