শাফায়াত-ই-কুবরা' (সর্বোত্তম ও চুড়ান্ত সুপারিশ) এর হাদিসসমূহ, যে গুলোতে সুস্পষ্ট ভাবে এরশাদ হয়েছে যে, হাশরের ময়দানে দিনটি এত দীর্ঘায়িত হবে যে, তা অতিবাহিত হয়েও যেন হবে না, মাথার উপর সূর্য দীপ্ত হবে, দোযখ হবে নিকটবর্তী। ঐদিন সূর্যে পূর্ণ দশ বৎসরের প্রখরতা একত্রিত করা হবে এবং মাথার কিঞ্চিত পরিমাণ দুরত্বে সেটা স্থাপন করা হবে।
এমন কঠিন পিপাসা হবে যে, খোদা তা না দেখাক। সে কিয়ামতের উত্তাপ এত বেশী হবে যে, (আল্লাহ রক্ষা করুন) কয়েক কাঠি গভীর হবে ঘর্মের স্রোত, যা জমীন শােষণ করার পর উপরের দিকে প্রবাহিত হবে। এমন কি মানুষের গলা পরিমাণ উঁচু হবে। জাহাজ ছাড়লে তা ভাসতে থাকবে। মানুষ তাতে হাবুডুবু খাবে। ভয়ে প্রাণ কষ্ট পর্যন্ত এসে যাবে। মানুষ এমন কঠিন। বিপদে প্রাণ বাঁচাতে অক্ষম হয়ে সুপারিশকারীর তালাশে এদিকে সেদিকে ছুটাছুটি করতে থাকবে। হযরত আদম, নুহ, খলিল, কলিম, মছিহ (তাঁদের উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হােক।) এর নিকট হাজির হয়ে তাদের সুস্পষ্ট জওয়াব শুনবে। সমস্ত নবী (عليه السلام) বলবেন—“আমাদের এ পদমর্যাদা নেই। আমরা এর উপযুক্ত নই। আমাদের পক্ষে এ কাজ সম্ভবপর হবে না। নফলী! নফসী। অবস্থা আমাদের। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও।” শেষ পর্যন্ত সবার পরে, হুজুরে পুরনূর সর্ব শেষ নবী পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সৃষ্টিকুলের সরদার গুনাহগারদের সুপারিশ কারী সমস্ত বিশ্ববাসীর কল্যাণ রাহমাতুললিল আলামীন ﷺ এর দরবারে হাজির হবে। হুজুর আকরাম (ﷺ) এরশাদ করবেন!
অর্থাৎ : “সুপারিশের জন্য আমি উপযুক্ত, সুপারিশ করা আমারই শান।” অতঃপর তিনি (ﷺ) আপন প্রতিপালকের দরবারে হাজির হয়ে সেজদা করবেন। তখন তার প্রতিপালক এরশাদ করবেন,
یا محمد ارفع رأسك وقل تسمع وسل تعطه واشفع تشفع
অর্থাৎ “হে মােহাম্মদ (ﷺ)! স্বীয় শির উঠান এবং আরজ করুন। আপনার ফরিয়াদ শ্রবণ করা হবে এবং প্রার্থনা করুন, অাপনাকে তা দান করা হবে এবং শাফায়াত করুন, তা কবুল করা হবে।
[সহীহ্ বুখারী, অধ্যায়ঃ তাওহীদ, অনুচ্ছেদঃ কিয়ামতের দিন নবী-রাসূল ও অন্যদের সাথে আল্লাহর কথা বলার বিবরণ, হাঃ ৬৯৫৬]
এটাই হবে–“মকামে মাহমুদ যেখানে পূর্ব ও পরবর্তী সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে হুজুর (ﷺ) এর প্রশংসা, গুনগানের তােল পড়ে যাবে এবং শত্রু-মিত্র সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে- আল্লাহর দরবারে মর্যাদার যে উচ্চাসন অামাদের মুনিবের রয়েছে তা অন্য কারো জন্য নয়। মহান প্রভুর নিকট যে মহত্ব আমাদের মালার জন্য রয়েছে তা অন্য কারাে জন্য নয় (আলহামদুলিল্লাহ)।
এরই জন্যে আল্লাহতায়ালা আপন পরিপূর্ণ হিকমত মােতাবেক মানুষের অন্তর সমুহে অনুপ্রেরণা যোগাবেন যে, প্রথমে তারা অন্যান্য নবীগণের (عليه السلام) নিকট যাবে এবং সেখান থেকে বঞ্চিত হয়ে ফিরে এসে তাঁরই (ﷺ) খেদমতে উপস্থিত হবে। যাতে করে সবাই জেনে নেয় যে, শাফায়াতের মর্যাদা একমাত্র সে সরকারেরই বৈশিষ্ট্য, অন্যান্যদের জন্য অবকাশ নেই যে, এর দরজা খুলবেন।
যে হাদিসসমূহ ‘ছহীহ বােখারী' ছহীহ মুসলিম সহ সমস্ত হাদিস গ্রন্থে রয়েছে এবং বিশ্ব মুসলিম মিল্লাতের মধ্যেও বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ, সেগুলাের উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। কেননা বিবরণ দীর্ঘায়িত হবে। সন্দেহকারী যদি দুটি শব্দ পড়তে চায়, তবে যেন মিশকাত শরীফের অনুদিত উর্দু কিংবা বাংলা অনুবাদ সংগ্রহ করে দেখে নেয়। অন্যথায়, কোন শিক্ষিত মুসলমান ব্যক্তিকে বলবেন যেন একটু পড়ে শুনান। পরন্তু এ হাদিস সমূহের শেষাংশে এটা ও এরশাদ হয়েছে যে, সুপারিশ করার পর হুজুর শফিউল মুযনেবীন (ﷺ) পাপীদের পাপ-মার্জনার জন্য বারংবার শাফায়াত [ সুপারিশ ] করবেন। প্রত্যেকবার আল্লাহ তায়ালার ঐ বাক্য সমূহ এরশাদ করবেন এবং প্রত্যেক বার হুজুর (ﷺ) অাল্লাহুর অগণিত বান্দাদেরকে মুক্ত করবেন। আমি ঐ সব বিখ্যাত হাদিস সমুহ ব্যতীত "আরবাঈন" অর্থাৎ চল্লিশখানা হাদিস অতিরিক্ত লিপিবদ্ধ করার প্রয়াস পাচ্ছি যেগুলাে মুসলিম সাধারণের কমই কর্ণগোচর হয়েছে, যাতে মুসলমানদের ঈমান উন্নতি লাভ করে ; অস্বীকারকারীদের আত্ম হিংসার আগুণে ভস্মীভূত হয়ে যায়।
বিশেষতঃ যেগুলো দ্বারা এই বিকৃতির খণ্ডন হবে, যা কোন কোন বদ-দ্বীন, খােদাদ্রোহী, অপচেষ্টাকারী ও ভ্রান্ত পন্থী শাফায়াতের অর্থ করেছে। এবং শাফায়াতকে অস্বীকার করার কুৎসিৎ চেহারা ঢাকা দেয়ার মিথ্যা আকৃতি ও শাফায়াতের নামে তাদের মনগড়া ধারণাটুকু ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সে হাদিস সমুহ থেকে সুস্পষ্ট হবে যে, আমাদের মহান আকা (ﷺ), শাফায়াতের জন্য নির্দিষ্ট আছেন। তাঁরই দরবারে অসহায়দের আশ্রয়স্থল, তারই দরবারে নিঃসহায়দের সহায়স্থল। তেমন নয় যেমন কোন ভ্রান্তমতবাদী বলে, আল্লাহ যাকে চান কোন একজনকে আপন নির্দেশে সুপারিশকারী নিয়োগ করবেন।
এ হাদিস সমূহে আমাদেরকে খোদা এবং রাসুল (ﷺ) প্রকৃত সুপারিশকারীর প্রিয় নামটা বলে দিয়েছেন এবং পরিস্কার করে ঘোষণা করলেন যে তিনি হচ্ছেন হযরত মােহাম্মদ (ﷺ)। অতএব, এ কথা বলার কোন অবকাশ নেই যে তিনি যাকে চান, আমাদের সুপারিশকারী নির্ণয় করবেন।
_ এ হাদিস সমূহ সুসংবাদ দিচ্ছে যে, হুজুর (ﷺ) এর শাফায়াত আমাদের জন্যে নয়, যাদের থেকে ঘটনাচক্রে, গুনাহ সংগঠিত হয় এবং এর জন্য যারা সব সময় লজ্জিত, অনুতপ্ত ও ভীত সন্ত্রস্ত।
যেমনঃ আব্দুল করিম পেশাগত চোর নয় এবং চুরিকে সে স্বীয় পেশা হিসেবে গ্রহণ করেনি, কিন্তু আত্মার দুর্ভাগ্যবশতঃ ত্রুটি হয়ে গেল। তাই এর জন্য সে লজ্জিত হয়েছে এবং দিন-রাত ভীত রয়েছে। তার জন্য সুপারিশের প্রয়ােজন নেই। তার শাফায়াত আমাদের ন্যায় অপরাধী, পরিপূর্ণ পাপাচারী এবং আত্মার উপর অত্যাচারীদের জন্য; যাদের প্রতিটি লোমে গুনাহ, যাদেরকে দেখে গুনাহ্ পর্যন্ত লজ্জিত হয়।
________________
কিতাবঃ কোরআন হাদিসের আলোকে শাফায়াত
মূলঃ- চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ ইমামে আহলে সুন্নাত আলা হযরত শাহ মাওলানা আহমদ রেযা খান ফাযেলী বেরলভী (রহঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন