তরীকার প্রয়োজনীয়তা
১. পবিত্র কুরআন-হাদীসে বর্ণিত আদেশ ও নিষেধাবলীর নাম হলো শরীয়ত।
২. আল্লাহকে চিনা বা আল্লাহর পরিচয় পাওয়ার যে পথ তার নাম হলো তরীকত।
৩. কুরআনে আল্লাহ্ ফরমান¬-
وَمَا خَلَقْتُ الجِّنَّ وَالْاِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُوْنِ-
জ্বীন ও ইনসানকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদতের জন্য। ১
➥১. আল কুরআন : সূরা আয-যারিয়াত, ৫১:৫৬।
৪. আর ইবাদত করার জন্য প্রয়োজন ইলম বা জ্ঞান। তাই আল্লাহ্ প্রত্যেক নারী-পুরুষের জন্য ইলম তথা বিদ্যা অর্জন ফরজ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ.
অর্থ : প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর ওপর জ্ঞানার্জন ফরজ। ২
➥২.
ক) ইবনে মাজাহ : আস্ সুনান, বাবু ফদ্বলিল ওলামায়ি ওয়াল হাস্সি আলা তালাবিল ইলম, ১:২৬০, হাদিস নং : ২২০।
খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইলম, ১ম পরিচ্ছেদ, পৃ. ৪৭, হাদিস নং : ২১৮।
গ) তাবরানী : মু’জামুস্ সগীর, বাবু তালাবিল ইলমি ফারিদাতু আলা কুল্লি মুসলিম, ১:২৫, হাদিস নং: ২২।
ঘ) বায়হাকী : শু‘আবুল ঈমান, বাবু তালাবিল ইলমি ফারিদাতু আলা কুল্লি মুসলিম, ৪:১৭৬, হাদিস নং : ১৬১৪।
৫. ইলম আবার দুই প্রকার। যথা-
(ক) জাহেরী বা প্রকাশ্য ইলম, যাকে বলা হয় শরীয়ত।
(খ) বাতেনী বা র্সিরি বা অপ্রকাশ্য বা গোপন ইলম, যাকে বলা হয় তরীকত-মা‘রিফত বা তাসাউফ।
৬. আল্লাহ্ যেহেতু ইলম অর্জনকে ‘আম’ বা ব্যাপকার্থে ফরজ করেছেন, সেহেতু উভয় প্রকার ইলম অর্জনই ফরজ হয়ে যায়। অথচ আমরা শুধু জাহেরী ইলম বা শরীয়ত মানব, কিন্তু বাতেনী ইলম বা তরীকত মানব না- এটা তো হতে পারে না। আল্লাহর যে কোন হুকুম না মানাই কুফরি।
৭. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
اَفَتُؤْمِنُوْنَ بِبَعْضِ فَمَا جَزَاءُ مَنْ يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنْكُمْ إِلَّا خِزْىٌ فِىْ الْحَيَوَاةِ الدُّنِيَا وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرَدُّوْنَ إِلىَ أَشَدِّ الْعَذَابَ-
অর্থ : তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখান কর? সুতরাং তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে হীনতা ও কিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। ৩
➥৩. আল কুরআন : সূরা বাকারা, ২:৮৫।
৮. ইমাম মালেক (رحمة الله) বলেন,
مَنْ تَفَقَّهَ وَلَمْ يَتَصَوَّفْ فَقَدْ تَفَسَّقَ، وَمَنْ تَصَوَّفَ وَلَمْ يَتَفَقَّهْ فَقَدْ تَزَنْدَقَ، وَمَنْ جَمَعَ بَيْنَهُمَا فَقَدْ تَحَقَّقَ،
অর্থ : যে ব্যক্তি ইলমে শরীয়ত হাসিল করলো এবং ইলমে মা‘রিফাত হাসিল করেনি সে ফাসেক, আর যে ব্যক্তি শুধু মা‘রিফত বিদ্যা অর্জন করেছে কিন্তু শরিয়তের ইলম নেই, সে হচ্ছে জিন্দিক (কাফের), আর যেই ব্যক্তি উভয় প্রকার ইলম অর্জন করেছেন, সে-ই হচ্ছে হক্কানী আলেম বা নবীর খাঁটি ওয়ারিশ। ৪
➥৪. মোল্লা আলী কারী : মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে সহীহুল বুখারী, কিতাবুল ইলম, ১:৩৩৫।
৯. পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ، ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً-
অর্থ : তোমাদের প্রতি তাঁর (আল্লাহর) জাহেরী ও বাতেনী নিয়ামত সম্পূর্ণ করেছেন। ৫
➥৫. আল কুরআন : সূরা লোকমান, ৩১:২০।
উল্লেখ্য যে, জাহেরী নিয়ামত হলো শরীয়ত আর বাতেনী নিয়ামত হলো তরীকত, মা‘রিফত বা তাসাউফ।
১০. মি’রাজের রজনীতে প্রাপ্ত ইলম- ৯০,০০০। তন্মধ্যে ৩০,০০০ হলো সাধারণ লোকদের জন্য প্রযোজ্য, যা শরীয়ত। ৩০,০০০ খাছ, বিশেষদের কিংবা অলীদের জন্য প্রযোজ্য, যা তরীকত এবং ৩০,০০০ হলো আখাচ্ছুল-খাছ, যা আল্লাহ্ ও তাঁর প্রিয় রাসূল (ﷺ) এর জন্য প্রযোজ্য। ৬
➥৬. মোল্লা জিওন : তাফসীরে আহমদিয়া, পৃ. ৩৩৯। [সূরা নজমের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য]
১১. জাহেরী বা শরিয়তের ইলম ফিকাহ শাস্ত্রে পাওয়া যায় এবং শিখার জন্য প্রয়োজন মাদ্রাসা ও ওস্তাদ। আর বাতেনী ইলম অর্জন বা তরিকত্বের নিয়মাবলী শিখার জন্য প্রয়োজন খানকা ও শায়খ বা পীর।
১২. শরিয়তের মূল শাখা তিনটি। যথা-
(ক) ইলম-জ্ঞান বা বিদ্যা;
(খ) আমল- ইলম অনুযায়ী আমল।
(গ) এখলাস- আন্তরিক বিশ্বাস/ বিশুদ্ধ নিয়ত।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে,
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ.
অর্থ : নিশ্চয় কর্মকান্ড নিয়্যতানুযায়ী সম্পাদিত হয়। ৭
➥৭. বুখারী : আস্ সহীহ, বাবু বদউল ওহী, ১:৩, হাদিস নং : ০১।
উল্লেখ্য যে, ইলম ও আমল হলো শরিয়তের বিষয় আর এখলাস হলো শরীয়ত, তরীকত ও মা‘রিফতের বিষয়। আর বিশুদ্ধ এখলাস অর্জনের সাহায্যকারী খাদেম হলো তরীকত তথা পীর।
১৩. হাদীসে জিব্রাঈল এর আলোকে আমাদের ধর্মের পূর্ণতার জন্য প্রয়োজন-
(ক) ইসলাম- কলেমা পড়বে, নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে, যাকাত দিবে, হজ্জ করবে।
(খ) ঈমান- বিশ্বাস আল্লাহকে, আসমানী কিতাবে, রাসূলগণে, কিয়ামতে, তকদিরের ভাল-মন্দের উপর।
(গ) এহসান- এমন করে ইবাদত করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ বা অন্তত এই বিশ্বাস রাখবে যে আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে দেখছেন।
নোট :
(১) ইসলাম ও ঈমান হলো শরিয়তের বিষয়। আর এহসান হলো তরিকতের। আমাদের জীবনে ইসলামের পূর্ণতার জন্য এহসান অবশ্যই প্রয়োজন, আর এহসান অর্জনের জন্য তরীকত। তরিকতের পীর-মাশাঈখদের চৌকাট ব্যতিত অন্য কোথাও এহসান অর্জন করা যায় না। (২) শুধু শরীয়তের মাধ্যমে দ্বীনের পূর্ণতা আসবে না। (৩) শরীয়তকে মজবুত করার জন্যই হলো তরীকত এবং মা‘রিফত। (৪) শরীয়ত হলো দুধ আর তরীকত মাখন। (৫) শরীয়ত হলো দেহ আর তরীকত প্রাণ। (৬) শুধু শরীয়তের অনুসারীরা হলো ফাসিক, আর শুধু তরীকতের অনুসারীরা হলো যিন্দীক (কাফির)। শরীয়ত এবং তরীকত নিয়েই পূর্ণতা।
১৪. ইয়াকীনের স্তর ০৩টি। যথা-
(ক) ইলমুল ইয়াকীন;
(খ) আইনুল ইয়াকীন;
(গ) হাক্কুল ইয়াকীন।
উল্লেখ্য যে, আইনুল ইয়াকীন এবং হাক্কুল ইয়াকীন অর্জনের জন্য প্রয়োজন তরীকত।
_________________
কুরআন-হাদীসের আলোকে তরীকার প্রয়োজনীয়তা
গ্রন্থনা ও সংকলনেঃ
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন