ঋণ গ্রহীতাকে সময় দেয়ারও কি কোন ফযীলত রয়েছে?


প্রশ্ন: ঋণ গ্রহীতাকে সময় দেয়ারও কি কোন ফযীলত রয়েছে? 

উত্তর: জি হ্যাঁ। ঋণ গ্রহীতাকে সময় দেয়া এবং দাবী করাতে নম্রতা অবলম্বন করতে কোরআন ও হাদীসে অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, যেমনটি ৩য় পারায় সূরা বাকারার ২৮০ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন:

وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَىٰ مَيْسَرَةٍۚ وَأَن تَصَدَّقُوا۟ خَيْرٌ لَّكُمْۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ 

কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং যদি ঋণ গ্রহীতা অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে অবকাশ দাও সচ্ছলতা (আসা) পর্যন্ত এবং ঋণ তার উপর সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয়া তোমাদের জন্য আরো কল্যাণকর, যদি জানো। 


এই আয়াতে মুবারাকার আলোকে সদরূল আফাযিল হযরত আল্লামা মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মদ নাঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (رحمة الله) বলেন: “ঋণ গ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্ত কিংবা গরীব হয়, তবে তাকে অবকাশ দেয়া কিংবা ঋণের অংশ-বিশেষ অথবা পুরোপুরি ক্ষমা করে দেয়া সাওয়াব অর্জনের উপায়। মুসলিম শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে: প্রিয় নবী, রাসূলে  আরবী (صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্তকে অবকাশ দিয়েছে কিংবা তার ঋণ ক্ষমা করে দিয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাকে আপন রহমতের ছায়া দান করবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না।” নবীয়ে করীম, রউফুর রহীম (صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ) َইরশাদ করেন: যে ব্যক্তির এই বিষয়টি পছন্দ হয় যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন দুঃখ থেকে রক্ষা করবেন, তবে তার উচিৎ যে, অভাবগ্রস্ত ঋণ গ্রহীতাকে অবকাশ দেয়া বা ঋণের বোঝা তার উপর থেকে নামিয়ে নেয়া (অর্থাৎ ক্ষমা করে দেয়া)।(মুসলিম, কিতাবুল মাসাকাতা, ৮৪৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৫৬৩) আমাদের বুযুর্গানে দ্বীনরা (رحمة الله) শুধু নিজের ঋণ গ্রহীতাকে ঋণ আদায়ে অবকাশ দিতেন না, দাবী করাতেও নম্রতা অবলম্বন করতেন, বরং অনেক সময় ঋণ ক্ষমাও করে দিতেন, যেমনটি হযরত সায়্যিদুনা শাফিক বিন ইব্রাহিম (رحمة الله) বলেন: আমি একদিন হযরত সায়্যিদুনা ইমামে আযম (رحمة الله) এর সাথে কোন একটি পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম আর তিনি (رحمة الله) কোান একজন রোগীকে দেখতে যাচ্ছিলেন। তিনি (رحمة الله) দূর থেকে একজন ব্যক্তিকে আসতে দেখলেন কিন্তু সে দ্রুত নিজেকে হযরত সায়্যিদুনা ইমামে আযম (رحمة الله) থেকে লুকিয়ে পথ পরিবর্তন করে নিলো। তিনি (رحمة الله) তাকে নাম থরে ডাকলেন এবং বললেন: তুমি যে পথে রয়েছো সেই পথ ধরেই চলে আসো, অন্য পথ ধরো না। সে দেখলো যে ইমাম সাহেব তাকে চিনে ফেলেছে এবং ডেকেছে তখন খুবই লজ্জিত হলো আর সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। তিনি (رحمة الله) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি রাস্তা কেনো পরিবর্তন করেছো? সে বললো: আপনার নিকট আমি দশ হাজার দিরহামের ঋণগ্রস্থ এবং তা অনেকদিন হয়ে গেছে কিন্তু আমি আপনার ঋণ শোধ করতে পারিনি, তাই আপনাকে দেখে আমার খুবই লজ্জা অনুভব হলো (অর্থাৎ আমি লজ্জার কারণে আপনাকে মুখ দেখাতে চাইনি)। তিনি (رحمة الله) তাকে বললেন:  সুবহানাল্লাহ  তোমার অবস্থা এতটুকু পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে, তুমি আমাকে দেখে আমার থেকে (ঋণ দাবী করার ভয় এবং লজ্জার কারণে) নিজেকে লুকিয়ে নিলে, যাও! আমি তোমাকে আমার সকল ঋণ ক্ষমা করে দিলাম এবং আমি স্বয়ং এর স্বাক্ষী, ভবিষ্যতে আমার থেকে মুখ লুকাবে না এবং আমার পক্ষ থেকে যা কিছু তোমার মনে প্রবেশ করেছে তা থেকে নিজেকে মুক্ত মনে করে আমার সাথে সাক্ষাত করো। হযরত সায়্যিদুনা শফীক বিন ইব্রাহিম (رحمة الله) বলেন: (তিনি (رحمة الله) এর এই সুন্দর আচরণ দেখে) আমি জেনে গেলাম যে, তিনি (رحمة الله) আসলেই যাহেদ (অর্থাৎ দুনিয়ার প্রতি উদাসিন)।(মানাকিবে ইমামে আযম আবী হানিফা, ১ম অংশ, ১/২৬০) প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! দেখলেন তো আপনারা যে, আমাদের ইমামে আযম (رحمة الله) তাঁর থেকে ঋণ গ্রহীতার লজ্জিত হওয়ার কারণে লুকিয়ে রাস্তা পরিবর্তন করে নেয়াকেও পছন্দ করলেন না এবং অত্যন্ত সদাচরণ ও উদারতা প্রদর্শন করে তার সকল ঋণ ক্ষমা করে দিলেন। আহ! আমাদেরও যদি এই প্রেরণা নসীব হয়ে যেতো যে, আমরাও আমাদের ঋণ গ্রহীতাদের সাথে দাবী করাতে নম্রতা অবলম্বন করতেন এবং সম্ভব হলে ভাল ভাল নিয়্যত সহকারে ঋণ ক্ষমা করে প্রতিদান ও সাওয়াব অর্জনকারী হয়ে যেতাম। 

___________

মসজিদের আদব

মূলঃ আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন