কওমী/হেফাজতে ইসলামের আক্বীদা
সদ্য প্রকাশিত এবং বর্তমানে বহুল আলোচিত বদ্-আক্বীদার সংগঠনটির নাম “হেফাজতে ইসলাম”। এরা হলেন কওমী মাদ্রাসার প্রডাক্ট আর কওমী ধারা হলো দেওবন্দী ধারা। দেশে বর্তমানে নাকি ১৫০০০ কওমী মাদ্রাসা আছে যেখান থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বাতিল ফিরকার বিষ-বাষ্প সারাদেশে মহামারির মত ছড়িয়ে পড়েছে। শুনা যাচ্ছে দেশের সিংহভাগ মসজিদই নাকি ওহাবী ও কওমী ধারার বাতিল পন্থী আলেমগন দখল করে নিয়েছে। ইয়াজিদ, আবদুল্লাহ ইবনে সাবা, নজদী, মওদুদী, ইলিয়াস গং-রা জীবিত না থাকলেও তাদের প্রেতাত্মারা এই বাতিল পন্থীদের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে এ দেশের আপামর মুসলিম জনতাকে হক্ব বাদ দিয়ে বাতিলের দিকে ধাবিত করছে।
এ দেশের মানুষ অত্যন্ত ধর্মপ্রান। আর এ ধর্মকে পুঁজি করেই তথাকথিত এই মুসলিম ছদ্মবেশী প্রতারক ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আসছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা নিজেদের অজান্তেই বিদেশী প্রভূ ইহুদি-নাসারা কিম্বা তাদের তেল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের দালাল সরকারদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করায় সক্রিয়। কওমী মাদ্রাসার শিক্ষা পদ্ধতি ও সিলেবাস পরিবর্তন এবং দেশের মসজিদসমূহে বাতিল পন্থী ইমামদিগকে অপসারন/পরিশুদ্ধ ব্যতিত আমাদের কোন পরিত্রান নাই। যাহা হউক, হেফাজতে ইসলামের এবং এই সংগঠনের নেতার আক্বীদা সংক্রান্ত বিষয়গুলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত একটি লিফলেট হইতে সংগ্রহপূর্বক নিম্নে প্রদত্ত হইলঃ-
১। আল্লাহ্ মিথ্যা কথা বলতে পারেন; কিন্তুু বলেন না। আল্লাহ্ ওয়াদা খেলাপি করতে পারেন; কিন্তুু করেন না। (আহমদ শফি কৃত, ভিত্তিহীন প্রশ্নাবলীর মূলোৎপাটন, পৃষ্ঠা-২/৩)
২। আহমদ শফী তার “ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন” নামক গ্রন্থের ৭ পৃষ্ঠায় মুসলিম শরীফের হাদীসে “আঈম্যাতুল মুসলিমীন” দ্বারা মন্ত্রী মিনিস্টার উদ্দেশ্য বলে ব্যাখ্যা করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, এখানে চার মাযহাবের ইমামগণকে বুঝানো হয়েছে। (মিনহাজ শরহে মুসলিম, ১/৪৫২)
৩। সম্বোধনের বাক্যে ‘ইয়া রাসুল’, ‘ইয়া নবী’ ইত্যাদি বলা প্রকাশ্য শিরক। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-৯৫) অথচ সকল ইমামগণ ও মুহাক্কিক ওলামায়ে কেরাম রাসুল (ﷺ)-কে ইয়া রাসুল ও ইয়া নবী ইত্যাদি বলে আহবান করেছেন।
৪। হাযির-নাজির আক্বীদা পোষনকারীদের সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, হাযির-নাজির অর্থ নিজেকে নিজে সাহাবী দাবী করা। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-২২)
৫। রাসুল (ﷺ)-এর হাযির-নাজির আক্বীদা পোষনকারীদের সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, এই আক্বীদা পোষণকারী আবু জেহেল, আবু লাহাবের মতো। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-২২) অথচ, রাসুল (ﷺ)-এর হাযির-নাজির হওয়া কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত। আর কোরআন-সুন্নাহর বিধানের অমান্য করা সুষ্পষ্ট কুফরী। ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী আহমদ শফী নাস্তিক-কাফিরদের কোন কাতারে?
৬। রাসুল (ﷺ)-এর ইলমে গায়েব সংক্রান্ত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীসে প্রিয়নবী (ﷺ) বলেন, আল্লাহ্ আমার সামনে সম্পূর্ণ দুনিয়াকে তুলে ধরেছেন। এতে যা হচ্ছে এবং যা হবে সব আমি দেখতেছি। উক্ত হাদীস সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, কানযুল উম্মাল গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, এই হাদীসটি সনদসূত্রে অত্যন্ত দুর্বল। (কানযুল উম্মাল ১১/৪২০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩১৯৭১)
৭। ইলমে গায়েব সংক্রান্ত মুয়াজ ইবনে জাবাল (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীস, মি’রাজে আল্লাহ্ তাঁর স্বীয় কুদরতী হাত রাসূল (ﷺ)-এর কাঁধ মোবারকে রাখলে তিনি সবকিছু জেনে যান। আহমদ শফী বলেন যে, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) উক্ত হাদীসের সনদ তথা বর্ণনার সূত্রকে দুর্বল বলেছেন। আহমদ শফী কত বড় মিথ্যাবাদী! ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) কোথায় বলেছেন তাও সে উল্লেখ করেনি। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৪৭)
দেখুন, ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ। তিনি আরও বলেন, আমি ইমাম বুখারী (رحمة الله)-কে বলতে শুনেছি হাদীসটি সহীহ। (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা-৭২)
৮। আহমদ শফী বলে, নবী করিম (ﷺ)-এর ইলমে গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞানই ছিল না। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৩৪) অথচ নবী শব্দের অর্থ-যিনি অদৃশ্যের সংবাদ দেন। (মিসবাহুল লুগাত, পৃষ্ঠা-৮৪৭)
৯। আহমদ শফী বলে, নবী (ﷺ)-কে পূর্বাপর সকল বিষয়ে সর্বজ্ঞ মানা চরম বেয়াদবীর শামিল। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৩৪)
১০। আহমদ শফী রাসুল (ﷺ)-এর ইলমে গায়েবের প্রতি আক্বীদা পোষণ সম্পর্কে বলে, যা পরিষ্কার কুফরী, বরং সমস্ত কুফরীর চেয়েও বড় কুফরী। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৪৩)
১১। আল্লাহ্ তা’য়ালা সূরা আর রহমানের শুরুতে বলেন যে, আমি আমার হাবীবকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছি। অথচ আহমদ শফী বলে, আল্লাহ্ তা’য়ালা নবীকে আংশিক জ্ঞান দান করেছেন, অর্থাৎ আংশিক কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৪১)
১২। আহমদ শফী বলে, ইসলামে দুটি ঈদ ব্যতীত অন্য কোন ঈদ নেই। (ধর্মের নামে মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৫) অথচ রাসূল (ﷺ) জুমার দিনকেও ঈদের দিন বলেছেন। (মুসনাদে আহমদ: হাদীস নং ৮০১২, সহীহ ইবনে খুযাইমা: হাদীস নং ২১৬১, মুসতাদরাকুল হাকেম: হাদীস নং ১৫৯৫)
১৩। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, আমাদের বাংলাদেশে এই ভাইরাস আগে ছিল না। মাত্র ১০-১২ বৎসর আগে থেকে এর অপপ্রচার শুরু হয়েছে। সে আওলাদে রাসূল পীরে ত্বরিকত ও রাহনুমায়ে শরিয়ত আল্লামা তাহের শাহ (মা.জি.আ.) কে অকথ্য ভাষায় (যা উল্লেখ করার মতো নয়) কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছে। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৫) অথচ, সে নিজেই উক্ত গ্রন্থের একই পৃষ্ঠায় আবার বলে, “বাস্তব কথা হলো! ইতিহাস সাক্ষী যে, ৬০৪ হিজরী সনের পর এই ঈদে মিলাদুন্নবীর আবিষ্কার ঘটে।” আহমদ শফীর এমন মন্তব্য তার দ্বিমুখী মুনাফিকী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।
১৪। উক্ত সংগঠনের সেক্রেটারি জোনায়েদ বাবুনগরী তার “প্রচলিত জাল হাদীস” বইয়ে “রাসুল (ﷺ)-কে সৃষ্টি করা না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না”, এ হাদীসকে জাল হিসেবে উল্লেখ করে বলে যে, এটা মিথ্যুক ও দাজ্জালদের বানানো। অথচ আহমদ শফী উক্ত হাদীসটিকে সহীহ বলে বর্ণনা করেছেন। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৬৪)
১৫। আহমদ শফী আল্লাহর ওলীদের মাজার যিয়ারতকে হিন্দুদের পুজার সাথে তুলনা করেছে। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৮) অথচ রাসুল (ﷺ) জান্নাতুল বাকীতে সাহাবীদের মাজার যিয়ারত করতেন।
১৬। ওরশ পালনকারীদের সম্পর্কে আহমদ শফী বলে, ধর্ম ব্যবসায়ীরা সাধারন মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য বছর বছর ওরশের আয়োজন করে থাকে। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৪)
১৭। আহমদ শফী ইমামে আহলে সুন্নাত শেরে বাংলা (رحمة الله) সম্পর্কে বলে, তিনি তো শুধু পেট পূজারীর পেছনে ছিলেন। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৪)
১৮। আহমদ শফী মাজার যিয়ারতকারীদের সম্পর্কে বলে, আসলে এ মাজারীরা (মাজার যিয়ারতকারীগণ) হিন্দুুদের অনুসারী। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-২০)
১৯। আহমদ শফী বলে, মাজারীরা ওলীকে নবী বানিয়ে দেয় আর নবীকে বাড়াতে বাড়াতে খোদা পর্যন্ত নিয়ে যায়। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-২০)
অথচ কোরআনুল কারীম সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহর ক্ষমতা ও মর্যাদা অসীম। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। আল্লাহর মর্যাদা পর্যন্ত যেতে হলে আল্লাহর মর্যাদা সসীম হতে হবে। আর আহমদ শফী আল্লাহর ক্ষমতা ও মর্যাদাকে সসীম বিশ্বাস করে বিধায় এমন উক্তি করতে বিন্দুুমাত্র কুন্ঠাবোধ করেনি; যা ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে সুষ্পষ্ট শিরক।
২০। রাসুল (ﷺ)-এর নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনকারীদের ব্যঙ্গ বিদ্রæপ করে আহমদ শফী বলে, তাদের আযান দানকারীর মুখেই চুম্বন দেয়া উচিৎ। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১১১) তার প্রতি আমাদের প্রশ্ন, নবীজির নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুমু খেয়ে চোখে লাগানোর হাদীস যদি জাল হয়, তাহলে মুয়াজ্জিনের মুখে চুমু খাওয়ার ব্যাপারে সহীহ হাদীস কোথায়? নাকি সে জাল হাদীস বানায়?
২১। আহমদ শফী বলে, প্রচলিত ফাতেহা (সুরা ফাতেহা, ইখলাস তিনবার পাঠ করা) বাহ্যত একপ্রকার ভাত পূজা। কোন ভাত পূজা হয়ে থাকলে এটাকেই আখ্যায়িত করতে হবে। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৭০)
অথচ রাসূল (ﷺ) নিজেই ফাতেহা দিয়েছেন। আহমদ শফীর কথা অনুসারে রাসূল (ﷺ) একজন ভাতপূজক ছিলেন। আহমদ শফী আবু লাহাব ও আবু জেহেলের চেয়েও বড় ধরনের কুফরী করেছে।
২২। আহমদ শফী বলে, আমাদের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে ওহাবী বলতে কিছু নেই। (ধর্মের নামে ভন্ডামীর মুখোশ উম্মোচন, পৃষ্ঠা-১৭) অথচ সে অন্যত্র বলে, বর্তমান যুগের জামায়াতে ইসলামীকে ওহাবী বলা যেতে পারে। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-১৬৪) মুনাফিকদের বক্তব্য বিভিন্নরকম হওয়াটা-ই স্বাভাবিক।
২৩। আহমদ শফী বিদআতের প্রকার সম্পর্কে বলে, কোন বিদয়াতকেই হাসানা বা ভাল বলা যাবে না। (সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়, পৃষ্ঠা-৩০) অথচ আহমদ শফী উক্ত বইয়ের ৩১ পৃষ্ঠায় বিদাতকে এক প্রকার ওয়াজিবও বলেছে।
_________________
কিতাব : হক্ব-বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা
গ্রন্থনা ও সংকলনে:
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন