দেওবন্দী মুরুব্বিদের আক্বীদা
১। দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা কাশেম নানুতবী বলেন- যুগে যুগে বিভিন্ন নবীর আগমন সম্ভব (তাহযিরুন্নাস)। তার এই আক্বীদার সূত্র ধরে মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবুয়ত দাবী করে।
২। রশিদ আহম্মদ গঙ্গুহী ও খলিল আহম্মদ আম্বোটি বলেন - নবী করিম (ﷺ)-এর এলেম/জ্ঞান বুদ্ধি শয়তান লায়িনের জ্ঞান বুদ্ধির চেয়েও কম ছিল। (বারাহেনে কাতেয়া) (নাউযুবিল্লাহ)
৩। আশরাফ আলী থানবী বলেন - নবী করিম (ﷺ)-এর সামান্য এলেম ছিল যা যায়েদ, আমর, হাউওয়ান ও জীবজন্তুুরও অর্জিত হয়। (হিফজুল ঈমান) (নাউযুবিল্লাহ)
৪। ইসমাইল দেহলভীর আক্বীদা - তিনি গায়রুল্লাহর জন্য এলমে গায়েব এর ঘোর বিরোধী। তার মতে কেউ গায়রুল্লাহর জন্য এলমে গায়েব সাব্যস্ত করবে সে কাফের মুশরিক ভুক্ত হবে। (তাকভিয়াতুল ঈমান)
নোট : ১। ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের আক্বীদা - যারা নবী করিম (ﷺ) সম্বদ্ধে উপরোক্ত আক্বীদা পোষন করবে তারা নিজেরাই ধর্মচ্যুত ও কাফের। তাদের পিছনে নামাজ পড়া, তাদের সাথে আদান-প্রদান, শাদী-বিবাহ ইত্যাদি কার্যক্রম বৈধ নয়।
২। দেওবন্দী একটি ধারা হক্বের উপর এবং একটি বাতিল অক্বীদার উপর প্রতিষ্ঠিত। তবে বর্তমানে অধিকাংশই ভ্রান্ত আক্বীদা পোষণকারী।
বিস্তারিত দেওবন্দী আক্বীদা
১। নামাজে নবী করিম (ﷺ)-এর খেয়াল/ধ্যান গরু-গাধার চেয়ে শতগুনে নিকৃষ্ট; বরং শিরক পর্যায় (ইসমাইল দেহলভী, সিরাতুল মুস্তাকিম)। (অথচ নামাজে নবী করিম (ﷺ) এবং আল্লাহর নেক বান্দার প্রতি সালাম পাঠ করা ওয়াজিব। অতএব তাঁদের খেয়াল ও জায়েয।)
২। শয়তান ও মালাকুল মউতের জ্ঞান হুজুর (ﷺ)-এর জ্ঞানের তুলনায় অধিক (খলীল আহমদ আম্বোটি, বারাহেনে কাতেয়া)। (অথচ সৃষ্টির মধ্যে হুজুর (ﷺ)-এর জ্ঞান হইতে অন্য কারো বেশী জ্ঞান আছে বলে বিশ্বাস রাখা কুফর।)
৩। হুজুর (ﷺ) উর্দু বলার ক্ষমতা দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে অর্জন করেছেন। (খলীল আহমদ আম্বোটি, বারাহেনে কাতেয়া)। (আল্লাহ্ সকল ভাষা জ্ঞান আদম (عليه السلام) কে শিক্ষা দিয়েছেন। হুজুর (ﷺ)-এর জ্ঞান আদম (عليه السلام) হইতে অধিক। অতএব হুজুর (ﷺ) দেওবন্দ থেকে উর্দু শিখেছেন এমন দাবী শুধু জাহেলই করতে পারে।)
৪। হুজুর (ﷺ)-এর নিকট দেওয়ালের পিছনের ইলমও নাই (খলীল আহমদ আম্বোটি, বারাহেনে কাতেয়া)। (অথচ হুজুর (ﷺ) বলেছেন-‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের রুকু-সিজদা ও তোমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে কিনা তাও দেখি।’)
৫। নামাজে “আত্তাহিয়াতু” পড়ার সময় “আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবী” দ্বারা সালামের সময় হুজুর (ﷺ)কে হাজির-নাজির আছেন এমন ধারনা পোষন করা শিরক (খলিল আহমদ আম্বোটি, বারাহেনে কাতেয়া)। (অথচ হুজুর (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আমাকে সালাম দেয় আল্লাহ্ আমার মনোযোগ ফিরিয়ে দেন। তখন আমি তার সালামের জবাব দেই। (মেশকাত শরীফ)
৬। অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা বলে, আর আল্লাহ্ যদি বলতে না পারেন তাহলে মানুষের ক্ষমতা খোদার ক্ষমতা থেকে বেড়ে যাবে (ইসমাইল দেহলভী)। (অথচ আল্লাহ্ তা’আলার পবিত্র সত্ত¡া সকল প্রকার দোষ ত্রুটি থেকে পূূত:পবিত্র। মিথ্যা বলতে না পারা আল্লাহর দূর্বলতা নয় বরং পবিত্রতা।)
৭। হুজুর (ﷺ)-এর যে ইলমে গায়েব আছে এ ধরনের ইলমে গায়েব যায়েদ, আমর এবং প্রত্যেক শিশু, পাগল এমনকি সকল জীব-জন্তুরও আছে (মৌঃ আশরাফ আলী থানভী, হিফজুল ঈমান)।
(অথচ হুজুর (ﷺ)-এর কোন গুন বা বৈশিষ্টকে কোন নিকৃষ্ট জন্তুুর সাথে তুলনা করা বা তাঁর সমকক্ষ বলা তাঁর শানে স্পষ্ট ও চরম অবমাননা ও বেয়াদবী; তাই এটা কুফর। তা’ছাড়া মহান রাব্বুল আ’লামিন তাঁর হাবীব (ﷺ)-কে অফুরন্ত এলমে গায়েব দান করেছেন যাহা সন্দেহাতীতভাবে কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমানিত।)
৮। মীলাদ শরীফে কেয়াম করা বেদআত, শিরক। (অথচ মীলাদ শরীফে কেয়াম করা অর্থাৎ নবী (ﷺ)-কে সম্মান প্রদর্শন আল্লাহর নির্দেশেরই প্রতিপালন এবং ইহা সুন্নী বুজর্গদের মতে মুস্তাহাব।)
৯। হুজুর (ﷺ)-কে বড় ভাইয়ের মত সম্মান করা উচিত (ইসমাইল দেহলবী, তাকবিয়াতুল ঈমান-পৃ:৭১)। (অথচ সম্মানের দিক দিয়া মহান রাব্বুল আ’লামীনের পরই হুজুর (ﷺ)-এর মর্যাদা। নবীর মর্যাদা পিতা-মাতার মর্যাদার চাইতেও অনেক বেশী; তাই তাঁর সম্মান ও অনুরূপভাবে করতে হবে এবং তা’ না হলে ঈমানই থাকবে না।)
১০। যে কোন ব্যক্তি যত বড়ই হোক বা নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেস্তাই হোক আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা চামারের চাইতেও নিকৃষ্ট (ইসমাইল দেহলভী-তাকবিয়াতুল ঈমান- পৃ:২৩)। (অথচ এমন ধারনা ও উক্তি অত্যন্ত ভ্রান্ত এবং জঘন্য বেয়াদবী ও অবমাননাকর। এমন আক্বীদা কোরআন ও হাদীসের পরিপন্থি। নবী-রাসুল, শহীদান, আউলিয়া কেরাম ও ঈমানদারগন আল্লাহর নিকট মর্যাদা সম্পন্ন। নবী-রাসুলগন আল্লাহর মহত্বের প্রমান। আল্লাহ্ বলেন,“নিশ্চয়ই ঐ ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক পরহেজগার।”)
১১। হুজুর (ﷺ)-এর কোন ক্ষমতা নাই। তিনি দূর থেকে শুনতে পান না। অনুরূপভাবে এ’ধরনের ক্ষমতা কোন অলী বুযুর্গেরও নাই। আছে বলে বিশ্বাস করা শিরক (তাকবিয়াতুল ঈমান-পৃ:৩২-৩৩)। (অথচ হুজুর (ﷺ)-এর আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতা (মোজেযা) রয়েছে। নবীগন দূর থেকে শুনতে পান। তাই তো হুজুর (ﷺ) আশেকদের সালামের জবাব সরাসরি প্রদান করে থাকেন। যুদ্ধাবস্থায় মদিনা শরীফ থেকে হযরত ওমর (رضي الله عنه) এর হুশিয়ারী/ নির্দেশ বার্তা হযরত সারিয়া (رضي الله عنه) এক মাসের দূরত্বের জায়গা থেকে শুনতে পেয়েছিলেন।)
১২। মিলাদ মাহফিল করা নাজায়েজ এবং সর্বাবস্থায় নাজায়েজ (ফতোয়ায়ে রশিদিয়া-পৃ:১৬)। (অথচ মিলাদ মাহফিল করা জায়েজ এবং সওয়াবের কাজ। হুজুর (ﷺ) নিজেই মিলাদ বা তাঁর বেলাদত শরীফের বর্ননা করেছেন। তিরমিযী শরীফে মিলাদুন্নবী নামে পৃথক একটি অধ্যায় রয়েছে।)
১৩। নামাজের পর ইমাম ও মোক্তাদী সবাই মিলে হাত তুলে মুনাজাত করা বেদআত। (অথচ সুন্নীদের মতে ইহা মোস্তাহাব।)
১৪। খাদ্যসামগ্রী সামনে রেখে ফাতেহা পাঠ ভাত পূঁজা, গোমরাহদের কাজ (তাকবিয়াতুল ঈমান-পৃ:৯০ ও ৯৩)। (অথচ খাদ্যসামগ্রী সামনে রেখে ফাতেহা পাঠ ও ইসালে সওয়াব জায়েজ। খাদ্য সামগ্রী সামনে রেখে স্বয়ং হুজুর (ﷺ) ফাতেহা দিয়েছেন। (বোখারী ও মেশকাত শরীফ)
১৫। ঈদে মিলাদ্ন্নুবী (ﷺ) উদ্যাপন বেদআত। (অথচ নিঃসন্দেহে ইহা জায়েয ও সওয়াবের কাজ। হুজুর (ﷺ) তাঁর বেলাদত শরীফের দিন অর্থাৎ প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন।)
১৬। হুজুর (ﷺ)-কে হাজির-নাযির মনে করা শিরক (তাকবিয়াতুল ঈমান-পৃ:২৭)। (অথচ হুজুর (ﷺ) আল্লাহ্ প্রদত্ত ক্ষমতায় পৃথিবীর যেকোন স্থানে হাজির হতে পারেন, অবস্থার পর্যবেক্ষন করতে পারেন এবং তলবকারীকে সাহায্য করতে পারেন। তিনি (ﷺ) হাজির-নাযির না হলে হাশরের মাঠে সাক্ষী দিবেন কিভাবে?)
১৭। গোলাম আলী, গোলাম মোস্তফা, গোলাম মুহিউদ্দিন ইত্যাদি নাম রাখা শিরক (তাকবিয়াতুল ঈমান- পৃ:১২)। (অথচ এইরূপ নাম রাখা বৈধ ও জায়েয।)
_________________
কিতাব : হক্ব-বাতিলের পরিচয় ও ঈমান রক্ষা
গ্রন্থনা ও সংকলনে:
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশীদ আলম (অবঃ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন