প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর রওজা যিয়ারত ও তার উদ্দেশ্যে সফর (১)
যিয়ারতের ক্ষেত্রে রাসূলে পাক (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর রওজা মােবারক যিয়ারত করা সবচেয়ে উত্তম আমল। প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর রওজা মােবারক যিয়ারত ও তদ্বউদ্দেশ্যে সফর করা অত্যন্ত ফজিলত ও বরকতময় আমল। বিষয়টি নিম্নোক্ত হাদিস সমূহের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। যেমন নিচের হাদিস গুলাে লক্ষ্য করুনঃ
হাদিস নং ১-৬
●হাদিস নং ১
حدثنا أبو القاسم بن سعيد قالঃ ثنا سعد قالঃ ثنا حفص بن سليمان ، عن لي ، (ل عن مجاهد ، عن ابن عمر رضي الله عنهما قالঃ قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حج فار بي بعد وقتي كان من زارني في حياتي
-”হজরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হজ্ব করল ও আমার ওফাতের পরেও রওজা যিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার যিয়ারত করল।”
(ইমাম দারে কুতনীঃ আস-সুনান, ৩ য় খন্ড, ৩৩৩ পৃঃ হাদিস নং ২৬৯৩ ; ইমাম তাবারানীঃ মুজামুল কবীরে, ৬ ষ্ঠ খন্ড, ৩৩৫ পৃঃ হাদিস নং ১৩৪৯৭ ও আওছাতে ২ য় খন্ড, ৩০৭ পৃঃ হাদিস নং ৩৩৭৬ ; ইমাম বায়হাক্বীঃ সুনানে কুবরা, ৫ ম খন্ড, ৫৩৫ হাদিস নং ১০২৭৪ ; ইমাম বায়হাকীঃ শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ৩৮৫৭ ; ইমাম কাস্তালানীঃ মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৪ র্থ খন্ড, ৫৭১ পৃঃ ; ইমাম হিন্দীঃ কানজুল উম্মাল, ১৫ তম খন্ড, ২৭৪ পৃঃ ; ইমাম ছিয়তী ; জামেউছ ছাগীর, ২ য় জিঃ ৫২৩ পৃঃ ইবনুল হুমামঃ ফাতহুল কাদির, ৩ য় খন্ড, ১৬৭ পৃঃ ; ইবনে আবেদীনঃ ফতােয়ায়ে শামী, ৪ র্থ খন্ড, ৫৪ পৃঃ)
হাদিস খানা সনদের দিকে হাছান ' পর্যায়ের, কেউ কেউ জয়ীফ বললেও ইহা মাওজু বা ভিত্তিহীন নয়। সকল ইমামগণ ফাজায়েলের ক্ষেত্রে এরূপ হাদিস অবশ্যই আমলযােগ্য। কেননা এর সনদে ا البث بن ابي سايم (লাইছ ইবনে আবী সুলাইম) ও حفص بن سليمان (হাফছ ইবনে সুলাইমান) নামক দুজন রাবী রয়েছে যাদের ব্যাপারে ইমামগণের সামান্য আলােচনা ও সমালোচনা রয়েছে। যেমন حفص بن سليمان-(হাফছ ইবনে সুলাইমান) এর আরেক নাম হলঃ ‘ হাফছ ইবনে আবী দাইদ '
-”ইমাম ওয়াকী (رحمة الله) বলেন ; সে বিশ্বস্ত ছিলেন।
(ইমাম যাহাবীঃ মিযানুল এতোল, রাবী নং ২১২১)
-”ইমাম হাম্বল ইবনে ইসহাক বলেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) বলেছেনঃ তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”
(ইমাম যাহাবীঃ তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫৭ ; ইমাম যাহাবীঃ মিযানুল এতেদাল, রাবী নং ২১২১ ; ইমাম মিযযীঃ তাহজিবুল কামাল, রাৰী নং ১৩৯০)
-”আব্দুল্লাহ তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেনঃ সে নেক বান্দাহ।”(ইমাম মিযযীঃ তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৩৯০)
-”ইবনে মুঈন (رحمة الله) বলেনঃ সে বিশ্বস্ত রাবী নয়।
-”ইবনে মাদানী (رحمة الله) বলেনঃ তার হাদিস জয়ীফ।”
-”ইবনে আবী হাতিম যুরআ বলেছেনঃ তার হাদিস জয়ীফ।”
قال وكيع كان ثقة . روی لهঃ الترمذي ، والنسائي في “مسند علي متابعة وابن ماجه .
-”আবু আমর আদ দানী বলেন, ওয়াক্বী বলেছেনঃ সে বিশ্বস্ত রাবী। ইমাম নাসাঈ তার থেকে মুসনাদে আলী ' এর মধ্যে হাদিস বর্ণনা করেছেন ও ইবনে মাজাহ তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন।”(ইমাম মিযযীঃ তাহজিবুল রাবী নং ১৩৯০)
-"দারে কুতনী (رحمة الله) বলেছেনঃ সে জয়ীফ। (তাহজিবুল কামাল, তারিখে ইসলামী, মিযানুল এ'তেদাল, ২ য় খন্ড, ১০৬-৭ পৃষ্টা ও তাহজিবুত তাহজিব, ২ য় খন্ড, ২৪৬-৪৭ পৃঃ; মজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, ৩ য় খন্ড, ৬৬৬ পৃ)
উল্লেখিত ইমামগণের মতামত গুলাে বিশ্লেষণ করে বলা যায়, حفص بن سليمان (হাফছ ইবনে সুলাইমান) ' এর বর্ণিত হাদিস হাছান পর্যায়ের। কারণ অনেক ইমামগণ তাকে বিশ্বস্ত ও নেক বান্দাহ বলেছেন, আবার কেউ কেউ ' দুর্বল ' রাবী বলেছেন। তাই উভয়ের মধ্যে সমযােতা সরূপ বলা যায় ইহা ' সহিহ'ও নয় আবার ‘ জয়ীফ'ও নয় বরং ' হাছান '।
البث بن ابي سايم (লাইছ ইবনে আবী সুলাইম)
এই হাদিসের রাবী البث بن ابي سايم (লাইছ ইবনে আবী সুলাইম) সম্পর্কে ইমামগণের অনেকে সমালােচনা করলেও অনেকেই তার উপর নির্ভর করেছেন। যেমন ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন,
الليث بن أبي شيم الكوفيঃ حسن الحديث
-”লাইছ ইবনে আবী সুলাইমান কুফী হাছানুল হাদিস।”(ইমাম যাহাবীঃ দিওয়ানুদ দোয়াফা, রাবী নং ৩৫০৩)
وقال ابن معين أيضا لا بأس به
-”অনুরূপভাবে ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেছেন ; তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”(ইমাম যাহাবীঃ আল মুগনী ফিদ দোয়াফা, রাবী নং ৫১২৬)
وقال أبو داود . ال يحيى عن لي ، فقالঃ ليس به بأس .
-”ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) বলেন, আমি ইয়াহইয়া (رحمة الله) কে লাইছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই।”(ইমাম আসকালানীঃ তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫ ; ইমাম যাহাবীঃ সিয়ারে আ'লামী নুবালা, রাবী নং ৮৪)।
وقال بن عدي له أحاديث صالحة
“ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গুলাে গ্রহণযােগ্য।”(ইমাম আসকালানীঃ তাহজিবুত তাহজিব, রাৰী নং ৮৩৫ ; ইমাম যাহাবীঃ তারিফুল ইসলাম, নং ৫০১৭)
وقال البرقيঃ سأل الدارقطني عنه ، فقالঃ صاحب شينة ، تخرج حديثه .
-”বারকানী বলেন, আমি ইমাম দারে কুতনী (رحمة الله) কে লাইছ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ সে সুন্নাহর অনুসারী ও তার হদিস বর্ণনা করি।”
(ইমাম আসকালানীঃ তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৫ ; ইমাম যাহাবী তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭ ; ইমাম যাহাবীঃ সিয়ারে আ'লামী নুবালা, রাবী নং ৮৪)
وقد استشهد به البخاري في الصحيح ، وروى له في كتا رفع اليدين في الصلاة ، وغيره .
-”ইমাম বুখারী তার সহিহ গ্রন্থে তার ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন এবং ' রফে ইয়াদাইন ফিস সালাত ' ও অন্যান্য গ্রন্থে লাইছ থেকে রেওয়াত করেছেন।”
(ইমাম যাহাবীঃ তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৫০১৭ ; ইমাম যাহাবীঃ দিয়ারে আলামী নুবালা, রাবী নং ৮৪)
قال الساجي وكان أبو داود لا يدخل حديثه في كتاب السنن الذي ضعفه كذا قال وحديثه ثابت في السنن لكنه قليل
-”ইমাম ছাজী رحمة الله বলেন, ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) লাইছ এর দুর্বল হাদিস গুলাে তার সুনান গ্রন্থে উল্লেখ করেননি। যেমনটি তিনি বলেছেন এবং তার হাদিস গুলাে ছহীহু প্রমাণিত যেগুলাে সুনান গ্রন্থে রয়েছে কিন্তু এগুলাের সংখ্যা কম।”(ইমাম আসকালানীঃ তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৩৫)
অতএব, ইমামগণের অনেকেই লাইছ এর উপর নির্ভর করেছেন ও (হাছানুল হাদিস) বলেছেন। অতএব, এই হাদিসের সর্বনিম্ন স্তর হবে, ' হাছান আফছুছ হলাে! নাছিরুদ্দিন আলবানী তার কিতাবে লিখেছেন এ দু'জন রাবী কর্তৃক বর্ণিত হাদিস নাকি জাল ও ভিত্তিহীন।
●হাদিস নং ২
حدثنا على بن معبد بن نوح قالঃ نا موسی بن هلال ، قالঃ نا عبد الله بن عمر أبو عبير المين ، أو عبيد الله عن نافع عن ابن عمر ، قالঃ قال رسول الل صلى الله عليه وسلمঃ من زار قبري وجبت له قاعتي
-”হজরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার রওজা যিয়ারত করল তার জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেছে।”
(সুনানে দারে কুতনী, ৩ য় খন্ড, ৩৩৪ পৃঃ ; কাজী আয়ায শিফা শরীফ, ১ ম। জিঃ ৪৪৪ পূ ; হাফিজ ইবনে কাছিرحمة الله জামেউল মাসানিন ওয়াস সুনান, ২৮ ৭৬৮৯ পৃঃ ; ইমাম হিন্দীঃ কানজুল উম্মাল, ১৫ তম খন্ড, ২৭৪ পৃঃ ইমাম কাস্তালানীঃ মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৪ র্থ খন্ড, ৫৭০ পৃঃ ; ইমাম ছিয়তীঃ জামেউছ ছাগীর, ২ য় জিঃ ৫২৮ পৃ ; হাকেম তিরমিজিঃ নাওয়াদেরুল উসূল, ৪৮ পৃঃ: হাফিজ উকালী কৃত ; আয় ঘােয়াফা “৪ র্থ খন্ড, ১৭০ পূঃ ইমাম হায়হামীঃ মাজমুয়ায়ে জাওয়াইদ, ৩ য় খন্ড, ৬৬৬ পৃঃ ইবনে আদী তার কামিলে)
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা মােল্লা আলী কারী (رحمة الله) বলেন,
رواه الدارقطني وغيره وصححه جماعة من أئمة الحديث
-”ইমাম দারে কুতনী (رحمة الله) সহ অন্যান্য ইমামগণ ইহা বর্ণনা করেছেন, হাদিস শাস্ত্রের একদল ইমাম এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।”(ইমাম মােল্লা আলীঃ শরহে শিফা, ২ অক্ত, ১৫০ পৃঃ)।
শরহে বুখারী আল্লামা ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) বলেন,
ورواه عبد الحق في أحكامه الوسطى ، وفي الصغرى وسكت عنه ، وسكوته عن الحديث فيهما دليل على صحته .
-”ইমাম আব্দুল হক্ব তার “আহকামুল অছতী ও ছুগরা ' গ্রন্থে ইহা বর্ণনা করেছেন এবং চুপ থেকেছেন। তার এই হাদিসের উপর চুপ থাকা হাদিসটি সহিহ হওয়ার প্রমাণ।”(ইমাম কান্তালানীঃ মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৩য় খন্ড, ৫৮৮ পৃঃ)।
আল্লামা ইমাম যুরকানী (رحمة الله) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় তদীয় কিতাবে বলেন, تحققت وثبتت-”ইহা তাহকিক করলাম ও প্রমাণিত করলাম।”(ইমাম যুরকানীঃ শরহে মাওয়াহেব, ১২ তম খন্ড, ১৭৯ পৃঃ)
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন (رحمة الله) বলেন, وحذا إسناد حيد-”এই সনদ অতি-উত্তম।”(আল্লামা ইবনে মুলাক্কিনঃ বাদরুল মুনীর, ৬ ষ্ঠ খন্ড, ২৯৬ পৃঃ)
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা নুরুদ্দিন সানাদী (رحمة الله) বলেছেন,-”ইমাম দারে কুতনী ও অন্যান্যরা ইহা বর্ণনা করেছেন, ইমাম আব্দুল হক্ব رحمة الله একে সহিহ বলেছেন।”
(হাশিয়াতুল সানাদী আলা সুনানি ইবনে মাজাহ, ২ য় খন্ড, ২৬৮ পৃঃ)।
আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله.) বলেন,
-”হাদিস শাস্ত্রের একদল ইমাম এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।”(যাওয়াহিরুল মুনাজ্জম, ৪২ পৃঃ)।
আল্লামা শায়েখ ইউছুফ নাবহানী (رحمة الله) তদীয় গ্রন্থে বলেন,
-”হাদিস শাস্ত্রের একদল ইমাম এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।”(শাওয়াহিদুল হক, ৭৭ পৃঃ)।
তিনি আরাে বলেনঃ-”ইমাম ইবনে সুকন (رحمة الله)। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এর সহিহ বলেছেন।”(শাওয়াহিদুল হক্ব, ৭৭ পৃঃ)।
সুনানে দারে কুতনীর সনদে (মুসা ইবনে হেলাল আব্দী) নামক একজন রাবী রয়েছে, যার সম্পর্কে ইমামগণের অভিমত গুলাে দল লক্ষ্য করুন,
-”ইবনে আদী (رحمة الله) বলেনঃ নিশ্চয় তার ব্যাপারে কোন অসুবিধা নেই।”(হাফিজ ইবনে কাছিرحمة الله তাকমীল ফি জারহি ওয়া তাদিল, রাবী নং ৪৪৭ ; ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৩৭৯)
-”ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন, আমি বলিঃ তিনি হাদিসের ব্যাপারে গ্রহণযােগ্য।”(ইমাম যাহাবীঃ মিযানুল এতেদাল, রাবী নং ৮৯৩৭)
আল্লামা নুরুদ্দিন ছামহুদী (رحمة الله) বলেনঃ
وقد روى عنه ستة منهم الإمام أحمد ، ولم يكن يروي إلا عن ثقة ،
-”তার থেকে ছয়জন হাদিস বর্ণনা করেছেন এর মধ্যে ইমাম আহমদ (رحمة الله) একজন। ইমাম বিশ্বস্ত রাবী ব্যতীত কারাে কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেননি।”(আল্লামা হামহুদীঃ অাফাউল অফা, ২ য় জিলদ, ২০০ পৃঃ)
অতএব, হাদিসটি সর্বনিম্ন হাছান অথবা ছহীহ্ হওয়ার যােগ্যতা রাখে। কারণ ইমাম আবু হাতেম তাকে না চিনলেও ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) তাকে চিনেন ও তাকে গ্রহণযােগ্য রাবী বলেছেন। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার হাদিস গ্রহণযােগ্য বলেছেন। এ সম্পর্কে অন্যত্র আরাে উল্লেখ আছে,
وهذا إسناد جيد ، لكن موسى هذا قال أبو حاتم الرازي بعد أن ذكر أن جماعة رووا عنهঃ هو مجهول .
-”এই হাদিসের সনদ অতি-উত্তম কিন্তু মূসা সম্পর্কে আবু হাতেম রাজী (رحمة الله) বলেন ; তার থেকে একদল রেওয়াত করেছেন আর সে মাজহুল রাবী।”(আল্লামা ইবনে মুলাক্কিন ; বাদরুল মুনীর, ৬ ষ্ঠ খন্ড, ২৯৬ পৃঃ)
বাস্তবে বর্ণনাকারী অন্যান্য ইমামদের দৃষ্টিতে মাজহুল নয় বরং মারুফ বা প্রসিদ্ধ। সুতরাং সনদের বিবেচনায় হাদিসটি হাছান ' পর্যায়ের। তবে এই হাদিস খানা ' মুসনাদে বাজ্জার শরীফে ' ' জয়ীফ ' সনদে উল্লেখ রয়েছে। উভয় সনদ মিলিয়ে আরাে শক্তিশালী হবে। এ সম্পর্কে আরেকটি রেওয়াতে আছে,
وعن ابن عمر أيضا أن النبي صلى الله عليه وسلم قالঃ من زار قبري حلت له شفاعتي رواه البزار بسند ضعيف
-”হজরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে এরূপ বর্ণিত আছে আল্লাহর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বলেছেনঃ যারা আমার রওজা যিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে যাবে। ইমাম বাজ্জার (رحمة الله) দুর্বল সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন।”(ইমাম ইবনে ছালেহীঃ সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২ তম খন্ড, ৩৭৯ পৃঃ)।
●হাদিস নং ৩
حدثنا قتيبة، ثنا عبد الله بن إبراهيم ، ثنا عبد المن بن يزيد ، عن أبيه ، عن ابن عمر ، عن النبي صلى الله عليه وسلم من زار قبري خلت له شفاعتي
-”হজরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি (ﷺ) বলেছেনঃ যারা আমার রওজা যিয়ারত করবে তাদের জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হবে।”(মুসনাদে বাজ্জার ; কাশফুল আসতার আনিজ জাওয়াইদিল বাজ্জার, ২ য় খন্ড, ৫৭ পৃঃ ; ইমাম তক্বীউদ্দিন সুবকীঃ শিফাউছ ছিকাম, ১৭ নং পৃঃ)।
এই হাদিসের রাবী ‘ কুতাইবা ’ ইমাম আবু বকর ইবনে বাজ্জার (رحمة الله) এর বিশ্বস্ত শায়েখ। বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে ইব্রাহিম ' বিশ্বস্ত রাবী। ইমাম আবু হাতিম, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান, ইবনে খালিফুন (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী বলেছেন। (তাহজিবুল কামাল, ইকমালু তাহজিবুল কামাল)
এই হাদিসের সনদে “আব্দুর রহমান ইবনে জায়েদ ইবনে আসলাম “রাবী বা বর্ণনাকারী রয়েছে, যার ব্যাপারে কেউ কেউ সমালােচনা করেছেন তবে ইমাম মিযযী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন,
وقال أبو أحمد بن عديঃ له أحاديث حسان . وهو ممن احتمله الناس ، وصدقه بعضهم . وهو ممن يكتب حديثه .
-”আবু আহমদ ইবনে আদী (رحمة الله) বলেনঃ তার অনেক হাদিস হাছান রয়েছে। সে এমন ব্যক্তি যার রেওয়াত লােকেরা গ্রহণ করেছেন এবং অনেকে তাকে সত্যবাদী বলেছেন এবং সে ব্যক্তির হাদিস লিখেছেন।”(ইমাম মিযযীঃ তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৮২০)
ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেনঃ
”সে ছাহেবুল হাদিস। (ইমাম যাহাবীঃ তারিখে ইসলামী, রাৰী নং ২০১)
তদীয় পিতা ‘ জায়েদ ইবনে আছলাম বুখারী-মুসলীমের রাবী। অতএব, বর্ণিত হাদিস গ্রহণযােগ্য ও হাছান পর্যায়ের হবে। কেননা এর সমর্থনে আরো অনেক রেওয়াত রয়েছে।
●হাদিস নং ৪
حدثنا عبدان بن محمد قالঃ نا عبد الله بن محمير العبادي البصري قالঃ تا مسلم بن سالم الجهني قالঃ حدني عبيد الله بن عمر ، عن نافع ، عن سالم ، عن ابن عمر قالঃ قال ترشول الله صلى الله عليه وسلمঃ من جاءني رانيا لا غيره حاجة إلا زيارتي ، كان لها على أن أكون له شفيعا يوم القيامة
-”হজরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার কাছে শুধু যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসবে অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, তাহলে কেয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত কারী হওয়া আমার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে।”(ইমাম তাবারানী তার কবীরে, ৬ ষ্ঠ খন্ড, ১৭৪ পৃষ্টা হাদিস নং ১৩১৪৮ ও আগুছাতে, ৩ য় খন্ড, ২৬৬ পৃঃ হাদিস নং ৪৫৪৬ ; সুনানে দারে কুতনী, ৩ য় খন্ড, ৩৩৩ পৃঃ ; মুজামে ইবনে মুকরী, হাদিস নং ১৫৮ ; ইমাম হাছামীঃ মাজমুয়ারে জাওয়াই, ৩ য় খন্ড, ৬৬৬ পৃঃ ; ফতােয়ায়ে শামী, ৩ য় খন্ড, ৫৪ পৃঃ ; ইমাম কাস্তালানীঃ মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া, ৪ র্থ খন্ড, ৫৭১ পৃঃ ইমাম তকীউদ্দিন সুবকীঃ শিফাউছ ছিকাম, ১৯ নং পৃঃ)
এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজ ইরাকী (رحمة الله) এর অভিমত,
قال العراقيঃ رواه الطبراني من حديث ابن عمر وصححه ابن السكن .. وكذا صححه عبد الحق في سكوته عنه والسبكي في رد مسألة الزيارة لابن تيمية
-”হাফিজ ইরাকী বলেন, ইমাম তাবারানী (رحمة الله) ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর হাদিসটি বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম ইবনে সুকান (رحمة الله) ইহাকে সহিহ বলেছেন। অনুরূপভাবে ইমাম আব্দুল হাক্ব (رحمة الله) ইহার থেকে চুপ থেকে সহিহ বলেছেন। ইমাম তাজউদ্দিন সুকী (رحمة الله) ইবনে তাইমিয়ার যিয়ারতের মাসয়ালায় হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।”(হাফিজ ইরাকীঃ তাখরিজু আহাদিছিল এহইয়া, ১ ম খন্ড, ৩০৬ পৃঃ ৪ নং হাদিস ; তাখরিজু আহাদিছি এহইয়াই উলুমুদ্দিন, ৭৭২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)।
এই হাদিসের রাবী ' সালেম, নাফে ও উবাইদুল্লাহ ইবনে উমর ' সকলেই বুখারী-মুসলীমের রাবী। বর্ণনাকারী মুসলীম ইবনে সালেম জুহানী ' কে ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম যাহাবী ; তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ২৭৩)
ইমাম আবু হাতিম ও ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান (رحمة الله) বলেছেন তার ব্যাপারে অসুবিধা নেই। ইমাম ইবনে শাহিন (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। (ইমাম মুগলতাঈঃ ইকমালু তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৪৫৩৮)
হাদিসটি ‘ মুসলীম ইবনে ছালিম জুহানী ' থেকে ভিন্ন আরেকটি সূত্রে সামান্য শাব্দিক ব্যবধানে ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) এভাবে বর্ণনা করেছেন,
حدثنا أبو محمد بن حيان ، ثنا محمد بن أحمد بن سليمان القروي ، ثنا مسلم بن خاتم الأنصاري ، ثنا مسلم بن سالم الجه ، ځني عبد الله يعنيঃ العمري ني نافع ، عن سالم ، عن ابن عمر ، قالঃ قال رسول الله صلى الله عليه وسلمঃ من جاءني رانيا لم ته ځاجه إلا زيارتي ، كان حقا على الله أن أكون له شفيقا يوم القيامة
-”হজরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন রাসূলে পাক (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার কাছে শুধু যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসবে অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়, তাহলে কেয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত কারী হওয়া আমার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে।”(ইমাম আবু নুয়াইম ; তারিখে ইস্পাহান, ২ য় খন্ড, ১৯০ পৃঃ)
দুইটি সুত্র মিল হাদিসটি আরাে শক্তিশালী হবে। ফলে হাদিসটি সহিহ হওয়াতে কোন বাধা থাকবেনা।
●হাদিস নং ৫
حدثنا أبو داود قالঃ كنا سوار بن ميمون أبو الجاح العبدي ، قالঃ ځني رجل من آل عمر ، عن عمر رضي الله عنه ، قالঃ سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقولঃ من ار قبري أو قالঃ من زارني گن له شفيقا أو شهيدا ومن مات في أحد الحرمين بعين الله في الآمنين يوم القيامة
-”হজরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল পাক (ﷺ) কে বলতে শুনেছিঃ যারা আমার রওজা যিয়ারত করবে অথবা বললেন যারা আমার যিয়ারত করবে আমি তার সুপারিশকারী বা সাক্ষী হব।”
(মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালুছী, হাদিস নং ৬৫ ; ইমাম বায়হাকীঃ শুয়াইবুল ঈমান, হাদিস নং ৩৮৫৭ ; ইমাম বায়হাকী সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১০২৭৩ ; সুনানে দারে কুতনী, হাদিস নং ২৬৯৪)
এই হাদিস সম্পর্কে আল্লামা আবুল আব্বাস বুয়ূছিরী কেননী (رحمة الله) বলেন,
-وله شاهد من حديث بيعة رواه أبو يعلى والطبراني في الكبير بسند صحيح .
-”ইহার জন্য ৭ টি হাদিস সাক্ষ্য রয়েছে, ইমাম আবু ইয়ালা এবং ইমাম তাবারানী তার কবীরে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন।”(ইত্তেহাফুল খাইরাতিল মিহরাত, হাদিস নং ২৬৯১)।
_______________
সহিহ হাদিসের আলােকে মাজার যিয়ারত পূজা নয় ও কদমবুছির সমাধান
গ্রন্থনায়ঃ মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আলাউদ্দিন জিহাদী
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন