জুমার নামায


জুমার নামায যোহরের সময় আদায় করা হয়। প্রত্যেক আকেল তথা জ্ঞানবান, বালেগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) মুসলমানের উপর জুমার নামায ফরয। তবে মহিলা, গোলাম, রোগাক্রান্তদের উপর ফরয নয়। এরপরেও যদি তারা পড়ে তাহলে আদায় হয়ে যাবে। জুমার দিন গোসল করা সুন্নাত এবং খোশবু তথা সুগন্ধি লাগানো, পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা মুস্তাহাব। যে ব্যক্তি যত আগে জামে মসজিদে জুমার নামায আদায়ের জন্য আসবে সে ব্যক্তি তত বেশী সাওয়াব অর্জন করবে। রাসূলে করিম (ﷺ) এরশাদ ফরমায়েছেন যে, ফিরিশতা জুমার দিন মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকে এবং সবার আগে যে ব্যক্তি প্রথমে মসজিদে আসে তার নাম লিখে নেয়, এভাবে একের পর এক যারা মসজিদে আসে তাদের নাম ক্রমানুযায়ী লিখে নেন।



হাদিস শরীফে এসেছে সৈয়্যদুল মুরসালীন (ﷺ) এরশাদ ফরমায়েছেন- যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম মসজিদে আসবে সে এমন পরিমাণ সাওয়াব পাবে, যেভাবে আল্লাহর রাস্তায় উট কোবরবানী করলে সাওয়াব পাওয়া যায়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম জুমার মসজিদে আসবে সে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় উট কোরবানী করার পরিমাণ সাওয়াব পাবে। এরপর যে আসবে সে গরু কোরবানী করার পরিমাণ সাওয়াব পাবে। তারপর মুরগী কোরবানী করার পরিমাণ, এরপর আল্লাহর রাস্তায় ডিম দান করার পরিমাণ সাওয়াব পাবে। আর যখন খোতবা আরম্ভ হয় তখন ফিরিশতারা খোতবা শ্রবণ করেন এবং লিখা বন্ধ করে দেন। আর যে পরে আসবে সে শুধুমাত্র নামাযের সাওয়াব পাবে।



জুমার নামায ১৪ রাকাত। ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ্, ২ রাকাত ফরয, ৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ, ২ রাকাত সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদাহ, ২ রাকাত নফল।


তাছাড়াও ২ রাকাত তাহিয়্যাতুল অযু এবং ২ রাকাত দুখূলুল মসজিদ নামায রয়েছে।



নিম্নে নামাযের নিয়ত দেওয়া হলো-



২ রাকাত তাহিয়্যাতুল অযূর নামাযের নিয়ত


نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ التَّحِيَّةُ الْوُضُوْءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.


উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিত্ তাহ্হিয়াতুল ওযুয়ী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহী তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।



২ রাকাত দুখূলুল্ মসজিদ নামাযের নিয়ত


نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ الدُّخُوْلِ الْمَسْجِدِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.


উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক্‘আতাই সালাতীত্ দুখুলীল্ মাস্যীদী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহে তা‘আলা মুতাওয়ায্যিহান ইলা যিহাতীল্ কা’আবাতীশ শারিফাতী আল্লাহু আক্বর।



৪  রাকাত ক্বাব্লাল জুমআর নামাযের নিয়ত


نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ قَبْلَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.


উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা আরবা‘আ রাক্’আতি সালাতী কাবালাল্ জুম‘আতে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহে তা‘আলা মুতাওয়ায্যিহান ইলা যিহাতীল্ কা‘আবাতীশ শারিফাতী আল্লাহু আক্বর।



জুমআর ২ রাকাত ফরয নামাযের নিয়ত


نَوَيْتُ اَنْ اُسْقِطَ عَنْ ذِمَّتِـىْ فَرْضُ الظُّهْرِ بِاَدَاءِ رَكْعَتَـىْ صَلٰوةِ الْجُمُعَةِ فَرْضُ اللهِ تَعَالٰى اِقْتَدَيْتُ بِهٰذَالْاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ .


উচ্চারণ: নাওয়াই তু-আন্ উস্কীতা আন্যীমাতী ফারযুয্ যোহরে বী-আদায়ে রাকা‘আতাই সালাতীল্ যুম্’আতী র্ফাদ্দুল্লাহি তা‘আলা ইক্তাদায়তু বীহাযাল ইমামী মুতোয়ায্যীহান ইলা যীহাতীল্ কা‘আবাতিশ্ শারীফাতী আল্লাহু আক্বর।



উল্লেখ্য যে, ইমাম সাহেব اِقْتَدَيْتُ بِهٰذَا الْاِامَامُ  (ইক্তাদাইতু বিহাযাল্ ইমাম) এর পরিবের্ত اَنَا اِمَامُ لِّمَنْ حَضَرَ وَمَنْ يَّحْضُرُ (আনা ইমামুল্লিমান্ হাদারা ওয়া মাইঁয়াহ্দোরু) পড়বেন।



৪  রাকাত বা‘দাল জুমআর নামাযের নিয়ত


نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ رَكْعَاتِ صَلٰوَةِ بَعْدَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.


উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহে তা‘আলা আরবা’আ রাক্’আতে সালাতি বা’আদাল্ জুম্’আতী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহী তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।



২ রাকাত ওয়াক্তিয়া সুন্নাতের নিয়ত


نَوَيْتُ أَنْ اُصَلِّـىَ لِلّٰهِ تَعَالٰى رَكْعَتَىْ صَلٰوَةِ الْوَقْتِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالٰى مُتَوَجِّهًا اِلٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ أَكْبَرُ.


উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন্ উছাল্লিয়া লিল্লাহে তা‘আলা রাক্য়াতাই সালাতিল্ ওয়াক্তে সুন্নাতু রাসূলিল্লাহী তা‘আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ্ শারীফাতে আল্লাহু আক্বর।



২ রাকাত নফল নামায-এর নিয়ত ও নিয়ম যোহরের নফল নামাযের অনুরূপ।


পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাসবীহ


سُبْـحَانَ الله (সুবহানাল্লাহ) অর্থ- আল্লাহ্ পবিত্র। ৩৩বার


اَلْـحَمْدُ لِلّٰهِ (আল্হামদুলিল্লাহ্) অর্থ- সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। ৩৩ বার।


اَللهُ اَ كْـبَـرْ (আল্লাহু আকবর) অর্থ- আল্লাহ মহান। ৩৪ বার।


এরপর ১ বার কালেমা তায়্যিবা পাঠ করবে।



* তারপর একবার আয়াতুল কুরছি পড়বে


اَللهُ لَآ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ وَلَا يَئُوْدُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ.


উচ্চারণ: আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল্ হাইয়্যুল্ ক্বাইয়্যুম্। লা তা’খুযুহু ছিনাতুওঁ ওয়ালা নাউম। লাহু মাফিছ্ছামাওয়াতি ওয়া মাফিল্ আরদ। মান্যাল্লাযী ইয়াশ্ফাউ ইন্দাহু ইল্লা বি-ইয্নিহী ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম্ ওয়ামা খাল্ফাহুম্ ওয়া- লা ইউহীতুনা বিশাই-য়িম্ মিন্ ইল্মিহী ইল্লা বিমা শাআ ওয়াছি‘আ কুরছিয়্যুহুছ্ ছামাওয়াতি ওয়াল্ আরদ, ওয়া লাইয়াউদুহু হিফ্যুহুমা ওয়া হুয়াল্ আলিয়্যুল আযীম।


অর্থ: আল্লাহ্, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ নাই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, তাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই। এমন কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর সমীপে সুপারিশ করবে? তাদের (লোকদের) সম্মুখে যা কিছু আছে এবং তাদের পশ্চাতে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন এবং তারা তাঁর (আল্লাহ তা‘আলার) জ্ঞানের কিছুই আয়ত্বে আনতে পারে না, তবে তিনি যা ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরছী আসমান সমূহ ও জমিনের সর্বত্রই ঘিরে রয়েছে। আর এ দুইটির রক্ষণাবেক্ষণ করা তাঁর পক্ষে মোটেই কঠিন নয় এবং তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান।



নতুন চাঁদ দেখার সময় দু‘আ


اَللّٰهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْاَمْنِ وَالإِيْمَانِ ، وَالسَّلاَمَةِ وَالإِسْلاَمِ ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ.


উচ্চারণঃ আল্লাহুমা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি ওয়াস্ সালামাতি ওয়াল ইসলামী রাব্বি ওয়া রাব্বুকাল্লাহু।

___________________

গাউছিয়া আজিজিয়া নামায শিক্ষা

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল্-কাদেরী (রহ)

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন