আরাফাত ও মুযদালিফায় আদায়কৃত নামাযের একত্রীভবন: মহানবী (ﷺ)-এর সুন্নাহ
মুসলমানবৃন্দ আল্লাহতা’লার ইচ্ছা মোতাবেক সর্বদা নির্দিষ্ট ওয়াক্তের নামায যথাসময়ে আদায় করে থাকেন। কিন্তু (এর ব্যতিক্রমস্বরূপ) আরাফাতের ময়দানে হাজ্বী সাহেবান যোহর ও আসর ওয়াক্তের নামায একত্রে পড়েন। এটা শুধু এ কারণেই যে প্রিয়নবী (ﷺ) এই দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে পড়েছিলেন; আর তাই হাজ্বী সাহেবানের প্রতি অনুরূপ রীতি পালনের (শরঈ) বিধান জারি করা হয়। একইভাবে, সূর্য ডোবার সাথে সাথে হাজ্বী সাহেবান মাগরেব ও এশা’র নামায-ও একত্রে পড়েন। তাঁরা সরাসরি নামায আদায় করেন না, বরং মুযদালিফায় না পৌঁছুনো পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করেন। এটা নিম্নের রওয়ায়াত দ্বারা সপ্রমাণিত:
১. মুহাদ্দেসীনে কেরাম হযরত জাবের ইবনে আব্দিল্লাহ (رضي الله عنه) হতে মহানবী (ﷺ)-এর বিদায়ী হজ্জ্ব সম্পর্কে একটি বিশদ বর্ণনা উদ্ধৃত করেন। তাঁরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ব্যক্ত করেন যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আরাফাত ময়দানে এক আযান ও দুই এক্বা’মত সহকারে যোহর ও আসরের নামায একত্রে আদায় করেছিলেন, আর মুযদালিফায় মাগরেব ও এ’শার নামাযের ক্ষেত্রেও একই রকম করা হয়েছিল। [মুসলিম রচিত ‘আল-সহীহ: কিতা’ব আল-হাজ্জ্ব’, ‘মহানবী (ﷺ)-এর হজ্জ্ব’ শীর্ষক অধ্যায়, ২:৮৮৬-৮৯২ #১২১৭; এবং আবূ দাউদ লিখিত ‘আল-সুনান: কিতা’ব আল-মানা’সিক’, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হজ্জ্বের বিবরণ’ শীর্ষক অধ্যায়, ২:১৮৫ #১৯০৫]
২. ইমাম জা’ফর আল-সা’দিক্ব (رحمة الله) তাঁর পিতা ইমাম বা’ক্বির (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন: হুযূর পূর নূর (ﷺ) আরাফা’তে যোহর ও আসরের নামায এক আ’যা’ন ও দুইটি এক্বা’মত সহকারে (একত্রে) আদায় করেন। তিনি উভয়ের মাঝে আল্লাহ পাকের কোনো ‘তাসবীহ’ (প্রশংসা-বাক্য) পাঠ করেননি। অতঃপর তিনি এক আ’যা’ন ও দুইটি এক্বা’মত সহকারে মাগরেব ও এ’শার নামাযও (মুযদালিফায়) আদায় করেন এবং সেখানেও তিনি উভয়ের মাঝে কোনো তাসবীহ পাঠ করেননি। [আবূ দাউদ প্রণীত ‘আল-সুনান: কিতা’ব আল-মানা’সিক’, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হজ্জ্বের বিবরণ’ শীর্ষক অধ্যায়, ২:১৮৬ #১৯০৬; এবং আল-বায়হাক্বী কৃত ‘আল-সুনান আল-কুবরা’, ১:৪০০ #১৭৪১]
৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (رضي الله عنه) বলেন: আমি কখনোই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে নামায তার নির্দিষ্ট ওয়াক্ত ছাড়া পড়তে দেখিনি (মানে নামায তরক করেননি); ব্যতিক্রম শুধু (হজ্জ্বের সময়) দুইটি নামায – মাগরেব ও এশা’ একত্রে আদায়। [মুসলিম রচিত ‘আল-সহীহ: কিতা’ব আল-হজ্জ্ব’, ‘মুযদালিফায় নাহর দিবসে অন্ধকার থাকতে ফজরের নামায আদায়ের বাঞ্ছনীয়তা’ শীর্ষক অধ্যায়, ২:৯৩৮ #১২৮৯; এবং আল-বুখারী লিখিত ‘আল-সহীহ: কিতা’ব আল-হাজ্জ্ব’, ‘জাম’ (মুযদালিফা)-এ ফজরের নামায পড়ার সময়’ শীর্ষক অধ্যায়, ২:৯০৪ #১৫৯৮]
ক্বুরআ’ন মজীদে যদিও নামায সুনির্দিষ্ট ওয়াক্ত অনুযায়ী আদায়ের হুকুম রয়েছে [আল-ক্বুরআ’ন ৪:১০৩], তবুও হজ্জ্বের সময় আরাফা’ত ও মুযদালিফায় এই সাধারণ আদেশের ব্যতিক্রম করা হয়েছে। এটা প্রিয়নবী (ﷺ)-এর অনুশীলিত রীতির কারণেই হয়েছে।
__________________
মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)
মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন