আম্বিয়া (عليه السلام)-এর স্মরণে (যিকরে): হজ্জ্বের বিভিন্ন রীতি ও প্রথা


আম্বিয়া (عليه السلام)-এর স্মরণে (যিকরে): হজ্জ্বের বিভিন্ন রীতি ও প্রথা

ঈমানের ঘোষণা ও নামাযের পরে হজ্জ্ব হলো ইসলাম ধর্মের তৃতীয় ভিত্তিস্তম্ভ। হজ্জ্বের মৌলিক বাধ্যবাধকতা এবং এর প্রথাগুলো বাস্তবিকপক্ষে পয়গম্বর ইবরাহীম (عليه السلام), পয়গম্বর ইসমাঈল (عليه السلام) ও মা হাজেরা (رضي الله عنه)-এর জীবনে ঘটে যাওয়া শৌর্যবীর্যময় ঘটনাগুলোরই উদযাপন।

এই দুই আম্বিয়া (عليه السلام) ও মা হাজেরা (رضي الله عنه)-এর অটল, অবিচলভাব, নিরন্তর সাধনা ও ত্যাগের স্মৃতি বজায় রাখতে আল্লাহতা’লা উম্মতে মুহাম্মদী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি এগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় এবাদত-বন্দেগী হিসেবে আদেশ করেছেন। পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি মুসলমান এসব সাধনাকে স্মরণ করতে প্রতি বছর (হজ্জ্বের মওসূমে) মক্কা মোয়াযযমায় সমবেত হন এবং এরই ফলশ্রুতিতে আল্লাহতা’লার রেযামন্দি (সন্তুষ্টি) হাসিল করেন। আল্লাহতা’লা তাঁর আশীর্বাদধন্য প্রিয় বান্দাদের একনিষ্ঠ ও পরম ভালোবাসাপূর্ণ এই ভক্তিমূলক আমল (পুণ্যদায়ক কর্ম)-গুলোর স্মৃতিকে চিরস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করেছেন এবং তিনি ঘোষণা করেছেন যে এগুলো তাঁরই নিদর্শন (আয়াত)।

মক্কা মোয়াযযমায় অবস্থিত পবিত্র কা’বা শরীফ মসজিদচত্বরে প্রবেশ করলে (অন্তরে) ভক্তি ও প্রেম জাগ্রত হয় এবং অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরে, যার ফলশ্রুতিতে অন্তরের প্রশান্তি দেখা দেয়। এই পবিত্র স্থানে পদার্পণ করে আল্লাহর বান্দা-সকল মহান প্রভুর ঘর তাওয়াফ (চারদিক প্রদক্ষিণ) করেন এবং ধর্মীয় আবেগসহ মানুষের ভিড় ঠেলে কালো পাথরের দিকে অগ্রসর হতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন, যাতে সেটাকে স্পর্শ ও চুম্বন করা যায়। অতঃপর বান্দা ‘সাঈ’ (সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুত হাঁটাহাঁটি) করতে যান। যিলহাজ্জ্ব মাসের নবম দিনে প্রত্যেক হাজ্বী সাহেব/সাহেবা আরাফাতেরময়দানে উপস্থিত হন; সেখানে যোহর ও আসর ওয়াক্তের নামাযগুলো একত্রে পড়া হয়। মোযদালিফা নামের জায়গায় মাগরেব ও ‘এশা ওয়াক্তের নামাযগুলো ’এশা’র সময় একত্রে পড়া হয়। অতঃপর মিনা’তে ‘রামী’ তথা কঙ্কর নিক্ষেপ করা হয়, যা শেষ করে পশু কোরবানী দেয়া হয়।

এসব ধর্মীয় প্রথার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ না থাকলেও এগুলোর উদযাপন ধর্মীয় আবেগ ও ভক্তিরই প্রতিফলন করে। মানব মস্তিষ্ক হয়তো বারংবার এসব প্রথার যুক্তিসঙ্গত কারণ তালাশ করতে পারে, কিন্তু কোনো যুক্তিনির্ভর ব্যাখ্যাতেই সদুত্তর মেলে না। অপর পক্ষে, একই প্রশ্ন যদি কারো আবেগের সামনে স্থাপন করা হয়, তবে এর উত্তরে হজ্জ্বের এসব প্রথার পেছনে যুক্তি দেখানো হবে এই যে, এতে ভক্তি ও ভালোবাসারই এক গোপন ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে।

সর্বশক্তিমান খোদাতা’লা তাঁর প্রিয় বান্দাদের এই ভক্তিমূলক আচরণকে এতোখানি কবূল করেছেন যে তিনি শেষ বিচার দিবস অবধি তাঁদের এই সাধনাকে অনুশীলনীয় এবাদত-বন্দেগী হিসেবে পালনের নির্দেশ জারি করেছেন। হজ্জ্বের আকারে এই (আধ্যাত্মিক) সাধনার পুনঃপুনঃ অনুশীলন প্রকৃতপ্রস্তাবে আল্লাহতা’লার ওই সমস্ত আশীর্বাদধন্য পুণ্যবান বান্দাদেরকে স্মরণ করারই একটি রীতি। তাই হজ্জ্ব হলো মূলতঃ (প্রিয় বান্দাদের) এক স্মৃতিচারণমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান।

আল্লাহর আশীর্বাদধন্য প্রিয় বান্দাদের (পুণ্যদায়ক) কর্ম, এবাদত-বন্দেগী ও কার্যকলাপের স্মৃতির প্রতি হজ্জ্বের রীতিনীতি বাস্তবে কীভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন হতে পারে তা এই অধ্যায়ে প্রকাশ করা হবে। অনুরূপভাবে, পয়গম্বর ইবরাহীম (عليه السلام) ও মা হাজেরা (رضي الله عنه) তাঁদের আমল (পুণ্যদায়ক কর্ম) এমনভাবে পালন করেছিলেন যার দরুন আল্লাহতা’লা তা সম্মানিত করেন এভাবে যে, সর্বশেষ নবী (ﷺ)-এর উম্মতবৃন্দ তা হজ্জ্বের রীতি হিসেবে আমল করবেন। হজ্জ্বের এই প্রথা যেগুলো যিলহজ্জ্ব মাসের ৮ম হতে ১৩তম দিবসের মধ্যে পালন করা হয়।

__________________

মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)

মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন