ফজরের নামায: পয়গম্বর আদম (عليه السلام)-এর স্মরণে

ফজরের নামায: পয়গম্বর আদম (عليه السلام)-এর স্মরণে  

ভোরে (ফজরের ওয়াক্তে) পয়গম্বর আদম আলাইহিস্ সালামের তওবা যখন কবূল করা হয়, তখন তিনি দুই রাক’আত নামায (কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে) আদায় করেন; ফলে এটা ফজর ওয়াক্তের নামায হিসেবে পরিণত হয়।


১.৪ যোহরের নামায: পয়গম্বর ইবরাহীম (عليه السلام)-এর স্মরণে

পয়গম্বর ইবরাহীম আলাইহিস্ সালাম দুপুরে তাঁর পুত্র পয়গম্বর এসহাক্ব আলাইহিস্ সালামের জন্ম দ্বারা আশীর্বাদধন্য হলে চার রাক’আত নামায আদায় করেন; ফলে এটা যোহর ওয়াক্তের নামায হিসেবে পরিণত হয়।




১.৫ আসরের নামায: পয়গম্বর উযায়র (عليه السلام)-এর স্মরণে

পয়গম্বর উযায়র আলাইহিস্ সালামকে এক ’শ বছর পরে পুনরুত্থিত করে জিজ্ঞেস করা হয়, ‘কতোকাল তুমি এই অবস্থায় ছিলে?’ তিনি আরয করেন, ‘একদিন বা তার কিয়দংশ।’ অতঃপর তিনি চার রাক’আত নামায (শোকরানা) নামায আদায় করেন। এটাই ’আসর ওয়াক্তের নামায হিসেবে পরিণত হয়।




১.৬ মাগরেবের নামায: পয়গম্বর দাউদ (عليه السلام)-এর স্মরণে

বর্ণিত আছে যে সর্ব-পয়গম্বর উযায়র (আলাইহিস্ সালাম) ও দাউদ (আলাইহিস্ সালাম)-কে সূর্যাস্তের সময় ঐশী ক্ষমা মঞ্জুর করা হয়। তাঁরা চার রাক’আত নামায আদায় করার নিয়্যত করেছিলেন, কিন্তু (শারীরিক) দুর্বলতা বা ক্লান্তির কারণে তৃতীয় রাক’আত-শেষে বসে থাকেন (নামায পুরোপুরি সম্পন্ন করতে অক্ষম হয়ে)। ফলে এটা মাগরেব ওয়াক্তের নামায হিসেবে পরিণত হয়, যা তিন রাক’আতবিশিষ্ট।




১.৭ ’এশার নামায: মহানবী (ﷺ)-এর স্মরণে

’এশা’র নামায, যেটা দিনের সর্বশেষ প্রার্থনা, সেটা যিনি সর্বপ্রথম আদায় করেন তিনি হলেন আমাদের মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম। [ইমাম আল-তাহাবী কৃত ‘শারহ মা’আনী আল-আসা’র’: কিতাব আস্ সালাহ (নামাযের বই), অধ্যায়: ‘মধ্য প্রার্থনা তথা নামায’, ১:২২৬ #১০১৪]

এই দুই এবং চার রাক’আত নামায, যেগুলো সম্মানিত পয়গম্বর (عليه السلام)-বৃন্দ কর্তৃক আল্লাহতা’লার দয়া ও করুণার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে আদায় করা হয়েছিল, সেগুলো তাঁদের নবুওয়্যত (প্রচার-প্রতিষ্ঠার) মিশন বাস্তবায়ন  প্রচেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ স্মরণের আমলস্বরূপ বিবেচিত হয়েছে। ফলে আল্লাহতা’লা এসব নামাযের মাধ্যমে সারাটা দিন আমাদেরকে তাঁরই নবী-রাসূল (عليه السلام)-মণ্ডলীর স্মৃতি নিয়মিতভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

একই প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে আবেদীন শা’মী (১২৪৪-১৩০৬ হিজরী) তাঁর রচিত ‘রাদ্দ আল-মোহতার ‘আলা দুর্র আল-মোখতার’ গ্রন্থে লিখেন:

কথিত আছে, ফজরের নামায পয়গম্বর আদম (عليه السلام)-এর; যোহর পয়গম্বর দাউদ (عليه السلام)-এর; আসর পয়গম্বর সোলাইমান (عليه السلام)-এর; মাগরেব পয়গম্বর এয়া’ক্বুব (عليه السلام)-এর; আর ‘এশা পয়গম্বর ইয়াহইয়া (عليه السلام)-এর; অতঃপর এসব নামাযের সবগুলো এই উম্মতের জন্যে একত্রিত করা হয়েছে। [ইবনে আবেদীন, রাদ্দ আল-মোহতার ‘আলা দুর্র আল-মোখতার ‘আলা তানউইর আল-আবসার, ১:৩৫১]

এই পবিত্র মুহূর্তগুলো, যেগুলোতে আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দ তাঁদের প্রভু খোদাতা’লার প্রতি কৃতজ্ঞতা, বিনয় ও সমর্পণের (আত্মিক) অবস্থায় ছিলেন, সেগুলোকে তিনি (বাধ্যতামূলক) এবাদত-বন্দেগী হিসেবে ঐশী বিধান জারি করেন; যে বিধান সর্বশেষ পয়গম্বর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের এই উম্মতের জন্যে আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও তাঁরই অসীম করুণা অর্জনের এক মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই প্রসিদ্ধ আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের মকবূল তথা (আল্লাহর দরবারে) গ্রহীত এসব এবাদত-বন্দেগী আমাদের মহানবী (ﷺ)-এর মধ্যস্থতায় এই উম্মতের প্রতি চিরকাল স্মরণ করার আমল হিসেবে মঞ্জুর করা হয়েছে। ধর্মীয় বিষয়াদিতে যিকর তথা স্মরণ করার গুরুত্বের ব্যাপারে এর চেয়ে আর বড় প্রমাণ কী হতে পারে এই মর্মে যে, ইসলামের বুনিয়াদি স্তম্ভগুলোর মধ্যে মৌলিক একটি স্তম্ভ, অর্থাৎ, পাঁচ ওয়াক্ত নামায-ই হচ্ছে পয়গম্বর (عليه السلام)-বৃন্দের যিকর-তাযকেরা’র ব্যবহারিক এক বহিঃপ্রকাশ?

অতএব, পরিশেষে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিতে পারি যে যিকর-তাযকেরা’র আমল বা ঘটনা যেগুলো আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়েছে, সেগুলো কেবল অনুমতিপ্রাপ্ত-ই নয়, বরং সেগুলো ইসলামী চিন্তা-ভাবনা ও দর্শনেরই মৌলভিত্তি। মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন আল্লাহতা’লার মাহবূব (প্রেমাস্পদ) ও সেরা সৃষ্টি এবং আম্বিয়াকুল শিরোমণি হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের ধরাধামে শুভাগমনের স্মরণ বৈ কিছু নয়। এটা এমন-ই এক উদযাপনের নজির যা পুরোপুরি জায়েয এবং আল্লাহতা’লার ঐশী বিধানের সাথে সম্পূর্ণভাবে সঙ্গতিপূর্ণ।

__________________

মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)

মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন