ইসকাত প্রসঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহ এবং এসবের জবাব


এ বিষয়ে কাদিয়ানী ও দেওবন্দী জমাতের কিছু আপত্তি রয়েছে। তবে তারা কোন উল্লে­খযোগ্য আপত্তি উত্থাপন করতে পারেনি। কেবল গলাবাজী করেছে মাত্র। তবুও সরল প্রাণ মুসলমানেরা যাতে সন্দিহান হয়ে না পড়ে সেজন্য ও সবের জবাব দিচ্ছি।


১নং আপত্তিঃ হীলা করা খোদা ও মুসলমানদেরকে ধোঁকা দেয়ার মত।


✧ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-


يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ


-এসব মুনাফিকগণ আল্লাহ ও মুমিনদেরকে ধোঁকা দিতে চাহে। অথচ তারা যে নিজদেরকে ভিন্ন কাউকেও প্রতারিত করে না, তা তারা বুঝতে পারে না। ৪৫৮


➥458. সূূরা বাক্বারা, আয়াত নং-৯



এটা কি ভাবে সম্ভব যে অল্প মালের বিনিময়ে সম্পূর্ণ জিন্দেগীর নামায মাফ হয়ে যায়?


উত্তরঃ হীলাকে ধোঁকা বলা মূর্খতার পরিচায়ক। হীলার অর্থ হচ্ছে শরীয়তের প্রয়োজনীয়তা পুর্ণ করার জন্য শরয়ী তদবীর, যাকে উর্দূতে-


حليه رزق بهانه موت


(রিযকের আশায় মৃত্যুর বাহানা) বলে। শরয়ী হীলা তো স্বয়ং আল্লাহ তাআলা শিখিয়েছেন এবং হুযর (ﷺ) তালীম দিয়েছেন। এর বিস্তারিত বর্ণনা আমি প্রথম অধ্যায়ে করেছি। ফাতওয়ায়ে আলমগীরীতে উদ্ধৃতিতে উল্লে­খ করা হয়েছে যে কাউকে ধোঁকা দেয়ার জন্য হীলা করা গুনাহ। কিন্তু শরয়ী প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ করার জন্য বা হারাম থেকে বাঁচার জন্য তদবীর করা ছওয়াবের কাজ। কোন জায়গায় মসজিদ তৈরী হচ্ছে, টাকার বিশেষ প্রয়োজন; যাকাতের টাকা এ ক্ষেত্রে ব্যয় করা যাবে না। তবে কোন ফকীরকে যাকাতের টাকা দিন; সে এর দেয়া হলো না, কারো মালও আত্মসাৎ করা হলো না। কেবল শরয়ী প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ করা হলো। পাওয়ার হীলা করাটা খারাপ, কিন্তু দেওয়ার হীলা করাটা ভাল। এখানে গরীবদেরকে দেয়ার হীলা করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলার রহমতও হীলা দ্বারা প্রাপ্ত হয়।


رحمت حق بهانه مى طلبد


খোদার রহমত বাহানা চাহে, মূল্য চাহে না। আপত্তিতে উত্থাপিত আয়াত يُخَادِعُونَ মুনাফিকদের প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে, যারা কলেমায়ে ঈমানীকে নিজেদের জন্য ঢাল বানিয়েছিল এবং অন্তরে কাফির ছিল। মুসলমানদের ভাল ও শরয়ী আমলসমূহের ক্ষেত্রে ওই ধরনের ধারণা করা মারাত্মক অপরাধ। ইসকাতের মালের দ্বারা নামায মাফ হয় না। বরং মৃত ব্যক্তি জীবনকালে নামায পড়ার বেলায় অবহেলার কারণে যে অপরাধ হয়ে গেছে, তা এখন মৃত ব্যক্তি জীবনকালে নামায পড়ার বেলায় অবহেলার কারণে যে অপরাধ হয়ে গেছে, তা এখন মৃত ব্যক্তির পক্ষে আদায় করা সম্ভব নয়। সে এখন অপরাধী। সেই অপরাধ মাফ করানোর জন্যই এ হীলা করা হয়। কেননা-



عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  الصَّدَقَةُ تُطْفِئُ غَضَبَ الرَّبِّ


✧ হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সদকা খোদায়ী গযবকে ঠাণ্ডা করে।  ৪৫৯


➥459. ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ৮/১০৩ পৃ: হা/৩৩০৯, ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/৫১ পৃ: হা/৩০৮০, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৭/৩৭২ পৃ: হা/৭৭৬১, যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসিল মুখতার, ৫/২১৮ পৃ: হা/১৮৪৭, তিনি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’, নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৭৮।



✧ মিশকাত শরীফে الجمعة শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, যার জুমার নামায কাযা হয়ে যাবে, সে যেন এক দিনার দান করে। একই মিশকাত শরীফে الحيض অধ্যায়ে উল্লে­খিত আছে যে, যে ব্যক্তি ঋতুস্রাবকালীন সহবাস করে সে যেন এক দিনার বা অর্ধ দিনার দান করে দেয়। এই খয়রাত হচ্ছে সেই পাপেরই কাফফারা, যার বদলা অসম্ভব হয়ে গেছে। যদি আমরা বলতাম যে মানুষ জীবিত অবস্থায় ভবিষ্যতের নামাযসমূহের জন্য ফিদয়া রাবত সম্পদ দান করুক এবং নামায না পড়ুক, তখন এটা বলা শোভা পেত যে মালের দ্বারা নামায মাফ করানো হয়েছে।



        ২নং আপত্তিঃ নামায-রোযা হচ্ছে শারীরিক ইবাদত আর ফিদায়া হচ্ছে বস্তু বিশেষ। অথচ বস্তু শারীরিক ইবাদতের ফিদয়া কিছুতেই হতে পারে না। সুতরাং এ হীলা বাতুলতা মাত্র।



        উত্তরঃ এ কিয়াসটা কুরআনী আয়াতের বিপরীত। যেমন কুরআন করীম ইরশাদ ফরমান।


وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ


যারা এ রোযা রাখতে অক্ষম, তাদের জন্য এর পরিবর্তে ফিদয়া-একজন অভাব গ্রস্থকে খাদ্যদান। ’’ ৪৬০


➥460. সূূরা বাক্বারা, আয়াত নং-১৮৪



খোদার হুকুমের বিপরীত মনগড়া অনুমান করা শয়তানের কাজ। আল্লাহ শয়তানকে হুকুম করেছিলেন, হযরত আদম (عليه السلام) কে সিজদা করার জন্য। কিন্তু শয়তান আল্লাহর হুকুমের বিপরীত নিজস্ব কিয়াস করেছিল। তাই মরদুদ হয়ে গেল। শারীরিক পরিশ্রমের বিনিময় বস্তু হওয়াটা যুক্তিসঙ্গত। আমরা কারো দ্বারা কোন কাজ করালে এর পরিবর্তে বস্তু প্রদান করি। কোন কোন সময় জ্ঞানের পরিবর্তেও বস্তু প্রদান করা হয়। শরীয়তে কোন কোন কাফফারা কিয়াসেও বিপরীত হয়ে থাকে। কোন নামাযী প্রথম তাশাহুদ ভুলে গেলে, সে সিজদায়ে সুহু দেবে। কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে যিহার করলো (স্ত্রীকে মা-বোনের মত বললো) সে এর কাফফারায় আট রোযা রাখবে। কোন হাজী ইহরাম অবস্থায় শিকার করলো, তিনি এ কাফফারা স্বরূপ উক্ত শিকারের মূল্য খয়রাত করবেন, অথবা রোযা রাখবেন। এ সমস্ত কাফফারা কিয়াসের বিপরীত। কিন্তু শরীয়ত যখন নির্ধারিত করেছে, তা মাথা পেতে মেনে নিতে হবে।



        ৩নং আপত্তিঃ 



ইসকাতের দ্বারা মানুষ বেনামাযী হয়ে যাবে। কেননা যখন ওদের জানা হয়ে যাবে যে ওদের মৃত্যুর পর ওদের নামাযের ইসকাত সম্ভব, তাহলে ওরা নামাযের কষ্ট স্বীকার করতে যাবে কেন? সুতরাং এ পন্থা বন্ধ হওয়া চাই।


        উত্তরঃ এ আপত্তিটা এ রকমই, যেমন আমরা ইসলাম সম্পর্কে আপত্তি করেছিল-যাকাতের মাসআলার দ্বারা মুসলমানদের মধ্যে বেকার সৃষ্টির সহায়তা করে এবং তওবার মাসআলার দ্বারা মানুষ গুনাহের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। কেননা যখন গরীবের জানা হয়ে যাবে যে বিনা কষ্টে যাকাতের মাল পাওয়া যাবে, তাহলে কষ্ট করতে যাবে কোন দুঃখে? অনুরূপ মানুষ যখন জেনে ফেললো যে তওবার দ্বারা গুনাহ মাফ হয়ে যায়, তাহলে বেশী করে গুনাহের কাজ করবে। ইসকাত প্রসঙ্গে আপত্তিটাও অনুরূপ। যে ব্যক্তি ফিদয়ার বলে বলীয়ান হয়ে নামাযের প্রয়োজন বোধ করে না সে কাফির হিসাবে গণ্য। আর এ মাল হচ্ছে নামাযের ফিদয়া, কুফরীর নয়। আর যদি কোন ব্যক্তি কোন সঠিক মাসআলার ভ্রান্ত প্রয়োগ করে, এর জন্য প্রয়োগকারীই দায়ী, মাসআলা নয়। এ ইসকাতের মাসআলাটি শত শত বছর থেকে মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত। কিন্তু আজ পযর্ন্ত আমরা কোন মুসলমানেরা পেলাম না, যিনি ইসকাতের আশায় নামায থেকে উদাসীন হয়ে গেছে।



        ৪নং আপত্তিঃ 



বনী ইসরাঈলের কতেক লোক হীলা (ফন্দি) করে মাছ শিকার করেছিল, যার জন্য তাদের প্রতি খোদায়ী গযব নাযিল হয়েছিল এবং ওদেরকে বানরে পরিণত করা হয়েছিল-’’  ৪৬১


كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ


➥461. সূূরা বাক্বারা, আয়াত নং-৬৫



বোঝা গেল যে হীলা বড় গুনাহের কাজ এবং খোদায়ী গযবের সহায়ক।  



উত্তরঃ বনী ইসরাঈলের জন্য হীলা হারাম হওয়াটাও একটি আযাব ছিল, যেমন অনেক মাংস তাদের জন্য হারাম ছিল। আর উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য বৈধ হীলাসমূহ হালাল হওয়াটা খোদার রহমতই বলতে হয়। অধিকন্তু ওরা হারামকে হালাল করার জন্য হীলা করেছিল অর্থাৎ বুধবার ওদের জন্য মাছ শিকার হারাম ছিল। এ রকম হীলা এখনও নিষিদ্ধ।  



৫নং আপত্তিঃ কুরআন করীম ইরশাদ ফরমান-


لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى


-মানুষ তাই পায়, যা সে করে।’’  ৪৬২


➥462. সূূরা নাজম, আয়াত নং-৩৯



অথচ ইসকাত হচ্ছে মৃতব্যক্তি নামায পড়লো না আর ওর আওলাদ টাকা পয়সা খরচ করে ওকে গুনাহ থেকে মুক্ত করে দিল। এতে বোঝা যায়-এ হীলাটা কুরআনের সম্পূর্ণ বিপরীত।


        উত্তরঃ এর উত্তর ‘ফাতিহা’ শীর্ষক আলোচনায় দেয়া হয়েছে। এ আয়াতের কয়েকটি বিশ্লেষণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো উক্ত আয়াতে, (লাম) দ্বারা স্বত্ব বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ মানুষ স্বীয় উপার্জনেরই স্বত্ত্বাধিকারী অপরের দান খয়রাত এর আওতাধীন নয়। অপরের দানের আশায় হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা বোকামীরই নামান্তর।


بعد مرنے كے تمهيں اپنا پر ايا بهول جائے


فاتحه كو قبر پهر كوئے ائے يا نه ائے


অর্থাৎ মরণের পর অপরের সাহায্যের আশা ত্যাগ করুন। তোমার কবরে ফাতিহা পাঠ করতে কেউ আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে।



অথবা উল্লে­খিত আয়াতটি শারীরিক ইবাদত প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে। অর্থাৎ কেউ যদি কারো পক্ষে নামায আদায় করে বা রোযা রাখে তাতে ওর ফরজ নামায-রোযা আদায় হবে না। উক্ত আয়াতের এ ধরনের বিশ্লেষণ যদি করা না হয়, তাহলে এ আয়াতটি অনেক আয়াত ও হাদীছের বিপরীত সাব্যস্ত হবে। কুরআন করীম মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যেন মুমিনীন ও মা-বাপের জন্য দুআ স্বরূপ। বিভিন্ন হাদীছে মইয়তের পক্ষে দান খয়রাত করার নির্দেশ রয়েছে। এর পূর্ণ বিশ্লেষণ আমার ফাতওয়ার কিতাবে (ফাতওয়ায়ে নাঈমীয়া) দেখুন।



        বিশেষ বক্তব্য-কোন কোন জায়গায় প্রচলিত আছে-যদি কোন মুসলমান জুমার দিন ব্যতীত অন্য কোন দিন মারা যায়, তাহলে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিছ তাঁর কবরের পাড়ে হাফিজ নিয়োগ করে জুমাবার পযর্ন্ত কুরআন খানির আয়োজন করে থাকে। কতেক দেওবন্দী একেও হারাম বলে। কিন্তু এ হারাম বলাটা সঠিক নয়। কবরের কাছে কুরআন খানি করার মধ্যে অনেক ছওয়াব নিহিত রয়েছে।



✧ এর মূল হচ্ছে মিশকাত শরীফের بَاب إِثْبَات عَذَاب الْقَبْر শীর্ষক আলোচনার সেই হাদীছটি যখন মইয়তের কবরে রাখা হয়-


وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ


-‘‘এবং লোকেরা দাফন করে ফিরে আসে, তখন মনকির নকির নামে দু’ফিরিশতা প্রশ্ন করার জন্য আগমন করে।’’  ৪৬৩


➥463. ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৪৫ পৃ: হা/১২৬, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৯০ পৃ: হা/১৩৩৮



এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দাফনকারীদের অবস্থানকালে কবরে প্রশ্ন করার জন্য আগমন করে। এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে দাফনকারীদের অবস্থানকালে কবরে প্রশ্ন করা হয় না।



✧ ফাতওয়ায়ে শামীর ১ম খণ্ড --صلوة الجنائز শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-আট ধরনের লোকের কাছে কবরে প্রশ্ন করা হয় না। এরা হলেন-শহীদ, জিহাদের জন্য উদ্যোগী, প্লেগে মৃত্যুবরণকারী, প্লেগের সময় অন্য রোগে মৃত্যুবরণকারী (শর্ত থাকে যে উভয়ই ধৈর্যশীল হতে হবে) সত্যবাদী, অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু, জুমার দিন বা রাতে মৃত্যুবরণকারী, প্রতি রাত সূরা মুলুক পাঠকারী, মৃত্যু শয্যায় শায়িত অবস্থায় প্রতিদিন সূরা ইখলাস পাঠকারী (কেউ কেউ নবীকেও গণ্য করেছেন) এ ভাষ্য থেকে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি জুমাবার মারা যাবে, ওর থেকে কবরে সওয়াল হবে না। যদি কেউ মনে করুন রোববারে মারা গেল এবং দাফনের পরে তথায় লোক জুমাবার আসা পযর্ন্ত উপস্থিত রইলো, তাহলে লোকের উপস্থিতির কারণে কবর আযাব হলো না আর জুমাবার আগমনের ফলে কবর রহিত হয়ে গেল। এখন আর কিয়ামত পযর্ন্ত কোন প্রশ্ন করা হবে না। আসলে এটা খোদায়ী আযাব থেকে মৃত ব্যক্তি বাঁচানোর জন্য একটি ভাল তদবীর। আল্লাহর রহমতে ওর মাগফিরাতের আশা করা যায়। আর তথায় বেকার বসে থাকার চেয়ে কুরআন তিলওয়াত করা ভাল, যার ফলে মৃত ব্যক্তিরও উপকার হলো, তিলাওয়াতকারীর।



✧ ইমাম নববী (رحمة الله) এর ‘কিতাবুল আযকার’ গ্রন্থের ما يقول بعد الدفن শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে।


قال الشافعي والأصحاب: يُستحبّ أن يقرؤوا عنده شيئاً من القرآن، قالوا: فإن ختموا القرآن كلَّه كان حسناً.


-‘‘অর্থাৎ কবরের কাছে কুরআন থেকে কিছু তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব এবং যদি পূর্ব কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়, তাহলে খুবই ভাল।’’ ৪৬৪


➥464. ইমাম নববী, কিতাবুল আযকার, ১/১৬২ পৃ: হা/৪৬৯



আমি ‘আযানে কবর’ শীর্ষক বর্ণনায় আলোকপাত করেছি যে কবরের উপর যে সবুজ উদ্ভিদ জন্মায়, এর তাসবীহের বরকতে মৃত ব্যক্তির উপকার হয়। তাহলে লোকের কুরআন তিলাওয়াত নিশ্চয়ই উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ। তবে কবর যেন কোন সময় জনহীনভাবে না থাকে, যদিওবা লোক আশপাশে অবস্থান করে।


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কোন কোন জায়গায় মুসলমানেরা রমযানের শেষ জুমাবার দিন যিন্দেগীর কাযা নামাযের মাগফিরাতের আশায় কিছু নফল নামায পড়ে থাকে। কেউ কেউ একে বিদআত ও হারাম বলে এবং জনগণকে এর থেকে বাধা দেয়।



✧ কুরআন করীম ফরমান-


أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهى (৯) عَبْداً إِذا صَلَّى (১০)


-‘‘তুমি কি ওকে দেখছ, যে বাধা দেয় বান্দাকে যখন সে নামায পড়ে।’’ ৪৬৫


➥465. সূরা আলাক, আয়াত, ৯-১০



এতে বোঝা গেল কোন নামাযীকে নামায থেকে বাধা দেয়া জঘন্য অপরাধ। কাযায়ে ওমরীর নামায, তাই এর থেকে বাধা দেয়া কখনও জায়েয নয়। কাযায়ে ওমরীর প্রসঙ্গে তাফসীরে রূহুল বয়ানে সূরা আনআমের আয়াত। وَلِتَسْتَبِينَ سَبِيلُ الْمُجْرِمِينَ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ’’ ৪৬৬


➥466. সূরা আন’আম, আয়াত নং-৫৫



✧  একটি হাদীছ উদ্ধৃত করা হয়েছে। হাদীছটি হচ্ছে-


أيما عبد او امة ترك صلاته فى جهالته فتاب وندم على تركها فليصل يوم الجمعة بين الظهر والعصر اثنتي عشرة ركعة يقرأ فى كل منها الفاتحة وآية الكرسي والإخلاص والمعوذتين مرة لا يحاسبه الله تعالى يوم القيامة) ذكره فى مختصر الاحياء


-‘‘যে পুরুষ বা মহিলা অজ্ঞতার কারণে নামায পরিত্যাগ করেছে। পরে যদি তওবা করে এবং অনুতপ্ত হয়, অতঃপর জুমার দিন যুহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে বার রাকআত নফল নামায পড়ে এবং প্রতি রাকআতে সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা ইখলাস, ফলক ও নাস এক একবার পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন ওর থেকে কোন হিসেব নেবে না। এ হাদীছটা ‘মুখতাসারুল আহয়াহ’ কিতাবেও উল্লে­খ করা হয়েছে।’’ ৪৬৭


➥467. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-৪০।



        সাহেবে রূহুল বয়ানের মতে এ হাদীছে বর্ণিত তওবা করা এবং অনুতপ্ত হওয়ার মমার্থ হলো নামায পরিত্যাগকারী বান্দা লজ্জিত হয়ে সমস্ত নামাযের কাযা আদায় করা। কেননা একেই তওবা বলা হয়। অতঃপর কাযা করার ফলে যে গুনাহ করা হয়েছে, তা মাফ হওয়ার আশা করা যায়। কিন্তু ভাবার্থ এটা নয় যে কাযা নামায পড়ো না, কেবল এ নফল নামায পড়লেই সব আদায় হয়ে যাবে। রাফেজীরাওতো এ রকম বলে না। ওদের মতে কয়েক দিনের কাযা নামায একসময় পড়া জায়েয। কিন্তু এটা কিভাবে হতে পারে যে সারা বছর নামায পড়লো না, কেবল জুমুয়াতুল বিদায় বার রাকআত নফল পড়লেই সব মাফ হয়ে যাবে। ভাবার্থ ওটাই, যা সাহেবে রূহুল বয়ান বর্ণনা করেছেন। মুসলমানগণ সেই নিয়তেই পড়ে থাকে। যেমনঃ



✧ মিশকাত শরীফের কিতাবুল হজ্জ্বের الوقوف بعرفه শীর্ষক অধ্যায়ে একটি হাদীছে বর্ণিত আছে যে হুযুর (ﷺ) আরাফাতের ময়দানে হাজীদের জন্য দুআয়ে মাগফিরাত করলেন। বারগায়ে ইলাহী থেকে উত্তর আসলো। আমি অত্যাচারীগণ ব্যতীত সবাইকে মাফ করে দিলাম। হুযুর (ﷺ) পুণরায় মুযদালাফার ময়দানে দুআ করলেন। তখন অত্যাচারীদেরকেও মাফ করে দেয়া হলো। এ হাদীছের ভাবার্থ এ নয় যে কারো টাকা আত্মসাৎ করে নাও বা কাউকে হত্যা করে ফেল বা কারো জিনিস চুরি করে নিয়ে নাও। অতঃপর হজ্ব সমাপন করে আসলে, সব মাফ হয়ে যাবে। কখনই তা হবে না বরং কর্জশোধ করার বেলায় যে ওয়াদাভঙ্গ ও দেরী ইত্যাদি হয়ে গেছে, তা মাফ করা হবে কিন্তু বান্দার হক যে কোন অবস্থাতেই আদায় করতে হবে। যদি কোন মুসলমান এ কাযায়ে ওমরী পড়া বা বুঝার মধ্যে কোন ভুল করে থাকে, তাহলে তাকে বুঝিয়ে দিন। কিন্তু নামায থেকে কেন বাধা দিবেন? আল্লাহ তাদেরকে শুভবুদ্ধি দান করুন। যদি এ হাদীছ জয়ীফও হয়ে থাকে, তবুও ফযাযেলে আমালের বেলায় গ্রহণযোগ্য।

_________________

জা’আল হক (দ্বিতীয়াংশ)

মূল: হযরত হাকীমুল উম্মত মুফ্তী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله)

অনুবাদ: অধ্যাপক মুহাম্মাদ লুৎফুর রহমান


সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন