ইসকাতের নিয়ম আমি প্রথমে বর্ণনা করেছি। এর প্রমাণ প্রায় প্রত্যেক ফিকহের কিতাবে রয়েছে।
✾নুরুল ইজাহ গ্রন্থে ইসকাত বিষয়ে একটি বিশেষ পরিচ্ছেদ করা হয়েছে فصل فى اسقاط الصوم والصلوة (নামায রোযার ইসকাত সম্পকির্ত পরিচ্ছেদ) উক্ত পরিচ্ছেদে বর্ণিত আছে - ৪৫৩
➥453. শারাম্বালী, নূরুল ঈযাহ, পৃষ্ঠা-৭৩
ولا يصح ان يصوم ولا ان يصلى عنه وان لم يف ما اوصى به عما عليه يدفع ذالك المقدار للفقير فيسقط عن الميت بقدره يهبه الفقير وهكذا حتى يسقط ما كان على الميت من صيام وصلوة ويجوز اعطاء فدية صلوة لواحد من الفقراء جملة بخلاف كفارة اليمين
(এর তরজুমা সেটাই যা আমি ইসকাতের নিয়ম প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছি)
✾দুর্রুল মুখতারের قضاء الفوائت অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে -৪৫৪
➥454. হাসকাফী, দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা-৭৩, বাবুুল কাযাইল ফাওয়াইত, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/৭৩ পৃ:
وَلَوْ لَمْ يَتْرُكْ مَالًا يَسْتَقْرِضُ وَارِثُهُ نِصْفَ صَاعٍ مَثَلًا وَيَدْفَعُهُ لِفَقِيرٍ ثُمَّ يَدْفَعُهُ الْفَقِيرُ لِلْوَارِثِ ثُمَّ وَثُمَّ حَتَّى يَتِمَّ
(এর অর্থও ইসকাতের নিয়মে বর্ণিত হয়েছে।)
✧ এর ইবারতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে শামীতে আরও ব্যাপকভাবে ইসকাতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন উল্লেখিত আছে-
وَالْأَقْرَبُ أَنْ يَحْسِبَ مَا عَلَى الْمَيِّتِ وَيَسْتَقْرِضَ بِقَدْرِهِ، بِأَنْ يُقَدِّرَ عَنْ كُلِّ شَهْرٍ أَوْ سَنَةٍ أَوْ يَحْتَسِبَ مُدَّةَ عُمْرِهِ بَعْدَ إسْقَاطِ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً لِلذَّكَرِ وَتِسْعِ سِنِينَ لِلْأُنْثَى لِأَنَّهَا أَقَلُّ مُدَّةِ بُلُوغِهِمَا، فَيَجِبُ عَنْ كُلِّ شَهْرٍ نِصْفُ غِرَارَةِ قَمْحٍ بِالْمُدِّ الدِّمَشْقِيِّ مُدِّ زَمَانِنَا.....وَلِكُلِّ سَنَةٍ شَمْسِيَّةٍ سِتُّ غَرَائِرَ، فَيَسْتَقْرِضُ قِيمَتَهَا وَيَدْفَعُهَا لِلْفَقِيرِ ثُمَّ يَسْتَوْهِبُهَا مِنْهُ وَيَتَسَلَّمُهَا مِنْهُ لِتَتِمَّ الْهِبَةُ ثُمَّ يَدْفَعُهَا لِذَلِكَ الْفَقِيرِ أَوْ لِفَقِيرٍ آخَرَ وَهَكَذَا، فَيُسْقِطُ فِي كُلِّ مَرَّةٍ كَفَّارَةَ سَنَةٍ، ....... وَبَعْدَ ذَلِكَ يُعِيدُ الدَّوْرَ لِكَفَّارَةِ الصِّيَامِ ثُمَّ لِلْأُضْحِيَّةِ ثُمَّ لِلْأَيْمَانِ، لَكِنْ لَا بُدَّ فِي كَفَّارَةِ الْأَيْمَانِ مِنْ عَشْرَةِ مَسَاكِينَ، ........بِخِلَافِ فِدْيَةِ الصَّلَاةِ فَإِنَّهُ يَجُوزُ إعْطَاءُ فِدْيَةِ صَلَوَاتٍ لِوَاحِدٍ
-অর্থাৎ এর সহজ নিয়ম হলো-মইয়তের জিম্মায় কি পরিমাণ নামায ও রোযা ইত্যাদি রয়ে গেল, তা হিসাব করুন এবং সেই অনুপাতে কর্জ নিন। অর্থাৎ এক এক মাস অথবা এক এক বছরের অনুপাতে কর্জ নিন। মইয়তের পূর্ণ বয়সের একটা অনুমান করুন এবং সেই পূর্ণ বয়স থেকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পযর্ন্ত কমপক্ষে পুরুষের বেলায় বার বছর আর মহিলার ক্ষেত্রে নয়বছর বাদ দিন। অতঃপর হিসাব করুন। তখন প্রতি মাসের নামাযের ফিদয়া হবে অর্ধ অযারা (প্রায় ৯ মণ) এবং প্রত্যেক বছরের কাফফারা হবে ছয় আরা। মৃত ব্যক্তির অলী ওই পরিমাণ সমতুল্য মুদ্রা কর্জ নিবে এবং ফকীরকে ইসকাতের উদ্দেশ্যে দিবে। ফকীর পুনরায় সেই মুদ্রা সেই ফকীরকে তখন অলী উক্ত হেবা গ্রহণ করে এর অধিকারী হবে। পুণরায় সেই মুদ্রা সেই ফকীরকে বা অন্য কাউকে ফিদয়া হিসেবে দিবে। এবং এভাবে বার বার করতে থাকবে। এতে প্রত্যেক বার এক বছরের কাফফারা আদায় হবে। এরপর রোযা ও কুরবানীর কাফফারার জন্য করা হবে। তবে কসমের কাফফারার বেলায় নামাযের ফিদায়ার ব্যতিক্রম দশজন মিসকীন হওয়া প্রয়োজন অথচ কয়েক নামাযের ফিদায়া একজনকে দেয়া হয়। ৪৫৫
➥455. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ২/৭৩-৭৪ পৃ:
✧ এটা হুবহু সেই নিয়মই, যেটা আমি বর্ণনা করেছি। আল আশবাহ ওয়ান নাজায়ের গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
اراد الفدية عن صوم ابيه او صلوته وهو فقير يعطى منوين من الحنطة فقيرا ثم يستوهيه ثم يعطيه وهكذا الى ان يتم
‘মরাকিল ফালাহ শরহে নুরুল ইজাহ গ্রন্থে উল্লেখিত আছে -৪৫৬
➥456. ইমাম তাহতাভী, তাহতাভী আ’লা মারাকিল ফালাহ, ৪৩৯।
فحيلته لإبراء ذمة الميت عن جميع ما عليه أن "يدفع ذلك المقدار" اليسير ليسير بعد تقديره لشيء من صيام أو صلاة أو نحوه ويعطيه "للفقير" بقصد إسقاط ما يريد عن الميت "فيسقط عن الميت بقدره ثم" بعد قبضه "يهبه الفقير للولي
(ইতিপূর্বে যা বলা হয়েছে, সেটাই এর তরজুমা) ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে আছে -৪৫৭
➥457. নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২৫।
وَإِنْ لَمْ يَتْرُكْ مَالًا يَسْتَقْرِضُ وَرَثَتُهُ نِصْفَ صَاعٍ وَيُدْفَعُ إلَى مِسْكِينٍ ثُمَّ يَتَصَدَّقُ الْمِسْكِينُ عَلَى بَعْضِ وَرَثَتِهِ ثُمَّ يَتَصَدَّقُ ثُمَّ وَثُمَّ حَتَّى يُتِمَّ لِكُلِّ صَلَاةٍ مَا ذَكَرْنَا، كَذَا فِي الْخُلَاصَةِ.
বাহারুর রায়েক শরহে কনযুদ দাকায়েক, জামেউর রুময, মুতমেদুর যহিরা শরহে মুখতাসারুল কেফায়া, ফাতওয়ায়ে কাযী খান, ফরায়েদ, জওযাহেরুল কাউলুল মুখতাসর ইত্যাদি ফিকহের কিতাবে অনুরূপ বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘায়িত হয়ে যাবে মনে করে সে সবের ইবারত উদ্ধৃত করা হলো না। তবে বিবেকবানদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। এবার বিরোধিতাকারীদের অগ্রদূত মওলভী রশীদ আহমদ সাহেব গাঙ্গুহীর ফাতওয়াটিও দেখুন। তিনি ফাতওয়ায়ে রশীদিয়ার প্রথম খণ্ড কিতাবুল বিদআতের ১০৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন-উলামায়ে কিরাম গরীবের জন্য ইসকাতের হীলাটা প্রবর্তন করেছেন, কিন্তু আজকাল এ হীলা ধনীদের মধ্যেও প্রচলিত হয়ে গেছে। আল্লাহ তা’য়ালা নিয়ত সম্পর্কে অবগত। এ হীলা তাদের কোন কাজে আসবে না। গরীবের বেলায় সঠিক নিয়তে করা হলে উপকার হবে বলে আশা করা যায়, অন্যথায় বৃথা।
যদিওবা উপরোক্ত ইবারতে অনেক কুটিলতার আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু জায়েয মেনে নিয়েছেন। সুতরাং এখন আর কোন দেওবন্দীর পক্ষে ইসকাতের উপর আপত্তি করার অধিকার রইলো না। গরীব হওয়ার শর্তটা মওলবী রশীদ আহমদ নিজ থেকে আরোপ করেছেন। আমি যে সমস্ত ফকীহগণের ইবারত উদ্ধৃত করেছি, ওখানে ‘গরীব’ এর শর্ত নেই। ধনী ব্যক্তিও যদি পূর্ণ ফিদায়া আদায় করে, তাহলে সমস্ত তরকা এতেই ব্যয় হয়ে যাবে। ওয়ারিছদের জন্য কিছুই থাকবে না। আর যদি কেউ মৃত্যুর সময় ওসীয়ত করে যায় ‘আমার পক্ষে ফিদয়া যেন দেয়া হয়’ তথাপি এক তৃতীয়াংশ বেশী সম্পদ ওসীয়তের ক্ষেত্রে খরচ করা জায়েয নেই। যদি এক তৃতীয়াংশ মালের দ্বারা নামাযের ফিদয়া আদায় না হয়, তাহলে হীলা করাতে কি অসুবিধা আছে?
_________________
জা’আল হক (দ্বিতীয়াংশ)
মূল: হযরত হাকীমুল উম্মত মুফ্তী আহমদ ইয়ার খান নঈমী (رحمة الله)
অনুবাদ: অধ্যাপক মুহাম্মাদ লুৎফুর রহমান
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন