৮০ জন সাহাবা ও সামান্য পরিমাণ খাবার


হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বলেন: হযরত সায়্যিদুনা আবূ তালহা (رضي الله عنه) ঘরে গিয়ে হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) কে বললেন: “আমি তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বল ইয্যত (ﷺ) এর দূর্বল আওয়াজ শুনলাম, যাতে আমি তাঁর-ক্ষুধার্ত থাকার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম।আপনার নিকট কি খাবারের কোন কিছু আছে?” উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) বললেন: “জ্বী হ্যাঁ।" অতঃপর তিনি জবের রুটির কিছু টুকরা বের করলেন,আর নিজের ওড়না নিয়ে সেটার এক প্রান্তে রুটি পেঁচিয়ে দিয়ে সেটা আমার কাপড়ের নীচে আঁড়াল করে দিয়ে ওড়নার অন্য প্রান্ত আমার (অর্থাৎ- সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) এর) উপর জড়িয়ে/ঝুলিয়ে দিলেন।অতঃপর আমাকে রাহমাতুল্লিল আলামীন, শফিউল মুনিবীন, রাসুলে  আমীন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর পবিত্র দরবারে পাঠালেন।আমি ঐ রুটি নিয়ে হাজির হলাম। তখন দেখলাম, আল্লাহর প্রিয় হাবীব, :হাবিবে লবীব, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) অনেক মানুষসহ মসজিদে বসা আছেন। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে গেলাম। মদীনার তাজেদার, নবীকুল সরদার, হুযুরে আনওয়ার (ﷺ) (গায়বের সংবাদ দেয়াবস্থায়) ইরশাদ করলেন: “তােমাকে কি আবূ তালহা পাঠিয়েছে?" আমি আরয করলাম: “জ্বী হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ " (ﷺ)! ইরশাদ করলেন:খাবার খাওয়ানাের জন্য এসেছ?” আমি আরয করলাম: “জ্বী সারকার"।প্রিয় রাসুল, মা আমেনার বাগানের সুবাসিত ফুল, রাসুলে মাকবুল (ﷺ) সাহাবায়ে কিরাম عليم الر رضون এ কে ইরশাদ করলেন: “চলাে।" সবাই চলতে শুরু করলেন আর আমি তাঁদের আগে আগে চলতে লাগলাম। অবশেষে আমি হযরত সায়্যিদুনা আবু তালহা (رضي الله عنه) এর নিকট আসলাম এবং অবস্থা সম্পর্কে বললাম। তখন আবু তালহা (رضي الله عنه) বললেন:“ওহে উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه)! নবীকুল সুলতান, সরদারে দোজাহান, মাহবুবে রহমান (ﷺ) লােকদের সাথে নিয়ে আসছেন, আর আমাদের কাছে এমন কিছু নেই যা। তাঁদের সকলকে খাওয়ানাে যেতে পারে।হযরত সায়্যিদুনা উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) বললেন:(الله ورسوله اعلم) অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল (ﷺ) -ই ভাল জানেন। হযরত সায়্যিদুনা আবূ তালহা (رضي الله عنه) চললেন। অবশেষে নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত, তাজেদারে রিসালাত (ﷺ) এর নিকট উপস্থিত হলেন। প্রিয় আকৃা, উভয় জাহানের দাতা, রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) তাঁর সাথে ঘরে এসে পৌঁছলেন। ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার,রাসুলদের সরদার (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “ওহে উম্মে সুলাইম(رضي الله عنه)! যা কিছু তােমার নিকট রয়েছে তা নিয়ে এসাে।"  তিনি (رضي الله عنه) ঐ রুটি গুলাে নিয়ে আসলেন। ছরকারে নামদার, মদীনার তাজেদার, রহমতের ভান্ডার, রাসুলদের সরদার (ﷺ) এর নির্দেশে রুটি টুকর করা হল। অতঃপর হযরত সায়্যিদাতুনা উম্মে সুলাইম (رضي الله عنه) সে গুলােতে ঘিয়ের বাসন থেকে ঘি লাগালেন। আর তা তরকারী হিসাবে ব্যবহার করলেন। অতঃপর নবী করীম, রউফুর রহীম, হুযুর পুরনূর (ﷺ) এগুলাের উপর কিছু পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন: “দশজনকে ভেতরে আসার অনুমতি দাও।" তারা দশজনকে ডাকলেন। তাঁরা খেলেন এমনকি পরিতৃপ্ত হয়ে বাইরে চলে গেলেন। পুনরায় বললেন “আরাে দশজনকে ডাক।” তারা দশজনকে ডাকলেন। তাঁরা খানা খেলেন এবং বাইরে চলে গেলেন। পুনরায় বললেন: “আরাে দশজনকে ডাক।" শেষ পর্যন্ত দলের সকলে খাবার খেলেন এবং পরিতৃপ্ত হলেন। ঐ দলটি ৭০ কিংবা ৮০ জন সাহাবা عليم الر رضون বিশিষ্ট ছিল। (মুসলিম শরীফ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭৮, হাদীস নং-২০৪০)



এক বর্ণনা মতে; পর্যায়ক্রমে দশজন করে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন আর দশজন করে বের হতে থাকেন। অবশেষে তাঁদের মধ্যে । কেউই এমন ছিল না, যিনি ভেতরে গিয়ে খাবার খাননি। সবাই পরিতৃপ্ত হয়ে গেলেন। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ঐ খাবারকে যখন একত্রিত করলেন তখন তা ততটুকুই ছিল যতটুকু খাওয়ার পূর্বে ছিল। অন্য আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, দশজন করে সাহাবায়ে কিরাম খাবার খেতে থাকেন এমনকি ৮০জন সাহাবা খাবার খান। এরপর খাতেমুল ; মুরসালীন, শফীউল মুনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) ও ঘরের বাসিন্দারা খাবার খেলেন তবুও তা অবশিষ্ট রইলাে। আরাে এক বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, “যে খাবার বেঁচে গেছে তা তাঁরা প্রতিবেশীদেরকে দিয়ে দিলেন।” (সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড, ১৭৮ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ২০৪০)।



আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।  


প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! এটা রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম,রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম(ﷺ) এর মু'জিযা ছিল, বাহ্যিকভাবে দেখতে সামান্য পরিমাণ খাবার ৮০ জন সাহাবায়ে কিরাম عليم الر رضون খাওয়ার পরও পূর্বে যতটুকু ছিল ততটুকুই রয়ে গেল। اَلْحَمْدُ اللهِ عَزَّوَجَلَّ  তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রব্বুল ইয্যত (ﷺ) এর সম্মান মর্যাদাই কিরূপ যে, নিজে ক্ষুধার্ত থাকেন আর নিজের গােলামদেরকে প্রচুর পরিমাণে নেয়ামত সমূহ খাওয়ান।



হুযুর (ﷺ) এর ঈমান সতেজকারী বাণী হচ্ছে انما انا قاسم و الله يعطى অর্থাৎ- আল্লাহ্ তাআলা দান করেন আর আমি বণ্টন করি। (বুখারী শরীফ, ১ম খন্ড, ৩০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৭১)। 


রব হে মু'তি ইয়ে হে কাসিম, রিযিক উসকা হে খিলাতে ইয়ে হে


ঠান্ডা ঠান্ডা মিঠা মিঠা, পিতে হাম হে পিলাতে ইয়ে হে


 উছ কি বখশিশ ইন কা সদকা, দেতা উহ হে দিলাতে ইয়ে হে


انا اعطينك الكوثر সারি কাসরাত পাতে ইয়ে হে,


 কেহ দো রযা  ছে খুশ হাে কুশ রাহ, মুঝদাহ রযা কা ছুনাতে ইয়ে হে।। 

_______________

কিতাব : ফয়যানে সুন্নাত

লেখক : আমীরে আহলে সুন্নাত মাওলানা মুহাম্মদ বিলাল মুহাম্মদ ইলইয়াস আত্তার কাদেরী রযবীয়া (দা.)

সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন