মি‘রাজে আল্লাহর দিদার-
❏ ইমাম আহমদ (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَأَيْتُ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি আমার রব তা‘আলাকে (চর্ম চোখে) দেখেছি।’’ ৮৭
{৮৭ . ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৪/৩৫১ পৃ. হা/২৫৮০, ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, হা/৫৭৭৯, তিনি বলেন, সনদটি সহীহ। মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১৪/৪৪৮ পৃ. হা/৩৯২০৯, আল্লামা মানাভী (رحمة الله) বলেন- بِإِسْنَاد صَحِيح -‘‘এ সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।’’ (মানাভী, তাইসির, ২/২৫ পৃ.) ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন- رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ. -‘‘এ হাদিসটির সনদের সমস্ত রাবী সহীহ বুখারীর ন্যায়।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১/৭৮ পৃ. হা/২৪৭) ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-
وَأخرج احْمَد بِسَنَد صَحِيح عَن ابْن عَبَّاس
-‘‘ইমাম আহমদ (رحمة الله) এটি সহীহ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’ (সুয়ূতি, আল-খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৬৭ পৃ.)}
আক্বিদা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বিদা হল যে রাসূল (ﷺ) মি‘রাজে চর্ম চোখ দ্বারা মহান প্রতিপালককে দেখেছেন। ৮৮
{ ৮৮. তবে এ বিষয়ে আরেকটি বর্ণনা রয়েছে যা ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেছেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ: إِنَّ مُحَمَّدًا - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - رَأَى رَبَّهُ مَرَّتَيْنِ: مَرَّةً بِبَصَرِهِ، وَمَرَّةً بِفُؤَادِهِ
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) তাঁর রব তা‘আলাকে দুই বার দেখেছেন। একবার চর্ম চোখে, আরেকবার হৃদয় দ্বারা দেখেছেন।’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হা/২৪৯) ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন-
وَأخرج الطَّبَرَانِيّ فِي الاوسط بِسَنَد صَحِيح
-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে এটি সহীহ সনদে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’ (ইমাম সুয়ূতি, আল-খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৬৭ পৃ.) ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ، خَلَا جَهْوَرِ بْنِ مَنْصُورٍ الْكُوفِيِّ، وَجَهْوَرُ بْنُ مَنْصُورٍ ذَكَرَهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي الثِّقَاتِ.
-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তাঁর মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে এটি সংকলন করেছেন। এ হাদিসের সমস্ত রাবী সহীহ বুখারীর শুধু ‘জাহওয়ার ইবনে মানছুর’ ব্যতিত; তবে ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হা/২৪৯, ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস সিকাত, ৮/১৬৭ পৃ. ক্রমিক.১২৭৮৩) ইমাম হাইসামী (رحمة الله) আরেক স্থানে এ রাবী সম্পর্কে লিখেন-
رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ، غَيْرَ جَهْوَرِ بْنِ مَنْصُورٍ وَهُوَ ثِقَةٌ.
-‘‘তাবরানী হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, এ হাদিসের সমস্ত রাবী সহীহ বুখারীর শুধু ‘জাহওয়ার ইবনে মানছুর’ ব্যতিত; তবে তিনিও সিকাহ।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৮/৫ পৃ. হা/১২৫৬৭)}
❏ ইমাম কাযি আয়্যায (رحمة الله) লিখেন-
وَقَالَ أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ إِسْمَاعِيل الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّه عَنْهُ وَجَمَاعَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ أنَّهُ رَأَى اللَّه تعالى ببصره وعيسى رَأسِهِ وَقَالَ كُلّ آيةٍ أُوتِيهَا نَبِيّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَقَدْ أُوتِي مِثْلَهَا نَبِيُّنا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخُصَّ مِنْ بَيْنِهِمْ بِتَفْضِيلِ الرُّؤْيَةِ-
-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আলী আশ‘আরী (رحمة الله) ও তাঁর এক জামাত সঙ্গী-সাথী বলেন হুযুর (ﷺ) আল্লাহ তা‘য়ালাকে কপালের চোখ দ্বারা অবলোকন করেছেন। তাঁরা আরও বলেন, অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামকে যত মু‘যিজা দেওয়া হয়েছে অনুরূপ মু‘যিজা হুযুর (ﷺ) কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হুযুর (ﷺ) কে অগ্রবর্তী করে দিদারে এলাহী মু‘যিজা দেওয়া হয়েছে।’’ ৮৯
{ ৮৯ .কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৯ পৃ.}
বুঝা গেল, কেউ যদি রাসূল (ﷺ)‘র মি‘রাজে আল্লাহ দেখার বিষয়টি অস্বীকার করে তাহলে সে নিঃসন্দেহে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বহির্ভূত এবং পথভ্রষ্ট বাতিল ফিরকা হিসেবে গণ্য। এ বিষয়ে সমাধান তুলে ধরেন ইমাম নববী (رحمة الله) এভাবে-
فَالْحَاصِلُ أَنَّ الرَّاجِحَ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ إن رسول الله صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنَيْ رَأْسِهِ لَيْلَةَ الْإِسْرَاءِ لِحَدِيثِ بن عَبَّاسٍ وَغَيْرِهِ مِمَّا تَقَدَّمَ وَإِثْبَاتُ هَذَا لَا يَأْخُذُونَهُ إِلَّا بِالسَّمَاعِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘পরিশেষে বলা যায়, অধিকাংশ উলামার নিকট এই মতই প্রাধান্য পেয়েছে যে, নাবী কারীম (ﷺ) মি‘রাজের রজনীতে স্বীয় প্রতিপালককে তাঁর কপালের চক্ষু দ্বারা দেখছেন। যেমনটি ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়ে যারা (সাহাবীরা) রাসূল (ﷺ) হতে মি‘রাজের সময় (মি‘রাজের ঘটনা) শ্রবণ করেছেন কেবল তাদের অভিমত ছাড়া বাকি অভিমত (যেমন মা আয়েশার অভিমত; কেননা তিনি তখন খুব ছোট ছিলেন) গ্রহণ করা হবে না।’’ ৯০
{ ৯০ . ইমাম নববী : শরহে মুসলিম : ৩/৫পৃ. দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৬পৃ, মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৫ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী, যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পৃ.}
তাই বুঝা গেল বিশুদ্ধ মত এটাই যে রাসূল (ﷺ) মি‘রাজে মহান রবকে স্বচক্ষে দেখেছেন। ৯১
{ ৯১. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
____________________
আকাইদে সাহাবাহ
(সাহাবায়ে কিরামদের সাথে সুন্নি আক্বিদার সাদৃশ্য)
মূল:আল্লামা আবুল হামিদ মুহাম্মদ যিয়াউল্লাহ
ক্বাদেরী আশরাফী (رحمة الله)
বঙ্গানুবাদ: মাওলানা হাফেয মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন