চেতনায় বালাকোট সম্মেলন স্মারক ২০১০ইং-এর ৫২ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত, কাযী মুহাম্মদ আবুল বয়ান এম, আর, রহমান হাশেমীর লিখিত-
‘মুসলিম চেতনায় বালাকোট ও সৈয়দ আহমদ শহীদ’ নামক প্রবন্ধের শুরুতে উল্লেখ রয়েছে-
‘হযরত সৈয়দ আহমদ শহীদ যিনি তেরোশ হিজরির মুজাদ্দিদ’।
ইসলামী শরিয়তমতে শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হওয়ার জন্য যেসব শর্তাবলী ও গুণাবলী বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন, সৈয়দ আহমদ বেরলভীর কাছে আদৌ তা বিদ্যমান নেই। সুতরাং তাকে তেরোশ হিজরির মুজাদ্দিদ বলে আখ্যায়িত করা, তা প্রচার করা, অবাস্তব, অবান্তর ও বাতুলতামাত্র।
মুজাদ্দিদ শব্দ আরবি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় একটি বিশেষ ধর্মীয় মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিকে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক বলা হয়। তাছাড়া এ বিষয়ে রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যত বাণী করেছেন-
ان الله يبعث لهذه الامة على رأس كل مأئة سنة من يجدد لها امر دينها
অর্থাৎ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা এই উম্মতের ধর্মীয় কার্যা বলী সংস্কার সাধনের জন্য প্রতি শতাব্দীর প্রারম্ভে মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক পাঠাবেন’। (আবু দাউদ শরীফ- ২৪৯ পৃ.)
উপরোক্ত হাদীসশরীফে বর্ণিত من يجدد (মান ইউজাদ্দিদু) শব্দ থেকে মুজাদ্দিদ শব্দের উৎপত্তি।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ফুকাহায়ে এজাম, এ হাদীসশরীফে নির্দিষ্ট শব্দ, ‘মান ইউজাদ্দিদু’ এর পরিপ্রেক্ষিতে মুজাদ্দিদ শব্দটিকে ইসলাম ধর্মের একটি প্রচলিত পরিভাষা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
মুহাদ্দিছীনে কেরাম ও ফুকাহায়ে এজাম ‘মুজাদ্দিদ’ এর অন্যতম বিশেষ পরিচয় বর্ণনা করে বলেছেন, ‘মুজাদ্দিদ এক শতাব্দীর হিজরি সনে জন্ম গ্রহণ করেন এবং জন্ম শতাব্দীতেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে জাহেরি, বাতেনী ইলিম ও মুজাদ্দিদের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন হয়ে নির্দ্ধিধায় তাজদীদে দ্বীন বা দ্বীনের সংস্কারের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। এমনকি মৃত্যুকালীন হিজরি সনেও দায়িত্ব পালন করে যাবেন। অর্থাৎ শরিয়ত মতে প্রকৃত মুজাদ্দিদকে এক শতাব্দীর হিজরির শেষান্তে, পর শতাব্দীর শুরুতে উভয় শতাব্দীতে যথা নিয়মে মুজাদ্দিদের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
মুহাদ্দিসীন ও ফকীহগণের মতে ‘মুজাদ্দিদের পরিচয় হচ্ছে দ্বীন ইসলামের মৃত বিলুপ্ত, বিকৃত হুকুম-আহকাম ও আকিদাকে কোরআন সুন্নাহর মর্মানুসারে সাহাবায়ে কেরামগণের পূর্ণ অনুকরণে পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংশোধন করা অর্থাৎ আকিদা ও আমলের মুর্দা সুন্নাতকে জিন্দা করা।
বিশেষত যথাসময়ে সৃষ্ট ভ্রান্ত মতবাদ ও বদ-আকিদার বিরুদ্ধে লেখা, ফত্ওয়া, ওয়াজ-নসিহত দ্বারা যথা সাধ্য ও নিয়মানুসারে সংগ্রাম করে সত্য ও বিশুদ্ধ আকিদা ও আমলে প্রচার ও প্রবর্তন করা মুজাদ্দিদের প্রধানতম দায়িত্ব।
উপরে বর্ণিত শর্ত-শরায়েত ছাড়া কতেক লোক বর্তমানে সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে মুজাদ্দিদ বলে আখ্যায়িত করে বই-পুস্তক রচনা ও পত্রপত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করে আসছে।
চেতনায় বালাকোট সম্মেলন স্মারক ২০১০ইং ও এরই ধারাবাহিক একটি প্রকাশনা মাত্র।
এতে সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রপথিক সিপাহসালার, শহীদে বালাকোট, আমিরুল মু’মিনীন, ইমামুত তরিকত ইত্যাদি ভূয়া উপাধিতে ভূষিত করে প্রবন্ধ ও নিবন্ধ লিখে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রায় দেড়শত বছর পরে এরূপ ভূয়া দাবি ও প্রচার করে জনসাধারণকে ধোকা দেয়া ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। এসব ভূয়া, মিথ্যা দাবিদার ও প্রচারকদের জন্য সত্যই দঃখ, আফসোস হয়।
বর্তমানে লেখকদের জানা উচিত ছিল যে, সৈয়দ আহমদ বেরলভী কখনো ‘মুজাদ্দিদ’ ছিলেন না। ‘মুজাদ্দিদ’ হওয়ার জন্য যে সব যোগ্যতা, গুণাবলী ও শর্তাবলী থাকা আবশ্যক সেসব যোগ্যতা ও শর্তাবলী তার মধ্যে পাওয়া যায়নি বা তার মধ্যে আদৌ বিদ্যমান নেই।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবের সিলসিলাভুক্ত বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আবুল হাসানাত আব্দুল হাই লাখনভী (ওফাত ১৩০৪ হিজরি) সাহেবের লিখিত ‘মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া’ নামক কিতাবের (যা এইচ, এম, ছাঈদ কোম্পানী আদব মঞ্জিল চক, করাচী পাকিস্তান, থেকে ১৪০৩ হিজরি সনে প্রকাশিত) এর ১১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
ان عبارتوں سے معلوم ہواکہ سید احمد برلوی جو سنہ۱۲۰۱ ھ میں پیدا ہوے ہیں اور انکے مرید مولانا اسمعیل دہلوی بھی اس حدیث کے مصداق میں داخل نہیں کیونکہ مجدد کیلۓ ضروری ہے کہ ایک صدی کے آخر میں اور دوسری صدی کے شروع میں ان اوصاف کا پایا جاۓ
অর্থাৎ ‘শতাব্দীর মুজাদ্দিদসংক্রান্ত হাদীস ও মুহাদ্দিসীনে কেরামের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সৈয়দ আহমদ বেরলভী যার জন্ম ১২০১ হিজরিতে এবং তারই মুরিদ মাও. ইসমাইল দেহলভী ও এই হাদীসশরীফের মিছদাক বা মর্মানুযায়ী মুজাদ্দিদের মধ্যে শামিল নহেন। কেননা ‘মুজাদ্দিদ’ হওয়ার জন্য জরুরি হচ্ছে যে, এক শতাব্দীর শেষপ্রান্তে এবং অন্য শতাব্দীর প্রারম্ভে তার মুজাদ্দিদসুলভ গুণাবলী প্রকাশ পাবে।’
মাওলানা আব্দুল হাই লাখনভী সাহেবের উপরোক্ত ফতওয়া দ্বারা প্রমাণিত হলো, সৈয়দ আহমদ বেরলভী তেরোশ হিজরির মুজাদ্দিদ নন।
বরং ত্রয়োদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ হচ্ছেন শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। তার জন্ম ১১৫৯ হিজরি ওফাত ১২৩৯ হিজরি। উভয় শতাব্দীতে তিনি দ্বীনের সংস্কারমূলক কার্যা বলী আঞ্জাম দিয়েছেন।
মুদ্দাকথা হলো, আল্লাহ তায়ালা যাকে মুজাদ্দিদ হিসেবে প্রেরণ করতে চান, তিনি আবির্ভাবের পূর্বে শতাব্দীতে জন্ম নিয়ে ‘মুকাম্মাল’ আলেম হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। এজন্য بعث (বায়াছা) يبعث (ইউবআছু) এর আভিধানিক অর্থ হলো- কোন কাজ বা দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং সেই দায়িত্বে নিয়োজিত হওয়া।
এ প্রসঙ্গে লোগাতে কেশওয়ারী ৭০ পৃষ্ঠায় এবং আল মনজিদ (আরবি) ২৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
بعثه على الشئ اى حمله على فعله واقامة الخ
ভাবার্থ ‘তাঁকে কোন কিছুর দায়িত্ব দিয়ে যিনি প্রেরণ করেছেন অর্থাৎ তাকে যে কাজের দায়িত্বভার বহন উপযোগী করেছেন এবং তিনিও এ দায়িত্বভারকে পরিপূর্ণরূপে কায়েম করেছেন।
بعث (বায়াছা) শব্দের শরয়ী বা পারিভাষিক অর্থ হলো, (নবীর বেলায়) নিজ নিজ কউমের কাছে খোদাপ্রদত্ত পয়গাম এর তাবলীগ শুরু করে দেওয়া।
(উম্মতের বেলায়) بعث (বায়াছা) শব্দের অর্থ হলো যিনি দ্বীনি খেদমতের দায়িত্বপ্রাপ্ত, তিনি এ কাজে নবীর অনুকরণ ও অনুসরণের মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে যাওয়া।
এজন্যই আম্বিয়ায়ে কেরামের বেলাদত বা জন্ম থেকে অন্তত চল্লিশ বছর পর নবুয়তের প্রকাশ হয়ে থাকে। এ কারণে আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহি মুস্সালাম এর বেলায় يبعث (ইউবআছু) শব্দ প্রয়োগ হয়ে থাকে, এবং মুজাদ্দিদের ক্ষেত্রেও এ হাদীস শরীফে يبعث (ইউবআছু) শব্দ প্রয়োগ হয়েছে।
যিনি এক শতাব্দীর জন্ম নিয়ে শতাব্দীর শেষপ্রান্তে এবং অন্য শতাব্দীর শুরুতে তাঁর তাজদীদের কাজ আরম্ভ হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, হযরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ রাদিয়াল্লাহু আনহু, যিনি সর্ব প্রথম হিজরি দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথম মুজাদ্দিদ।
তাঁর জন্ম ১৯ (ঊনিশ) হিজরি এবং ওফাতশরীফ ১১২ হিজরি। তিনি তাঁর জন্ম শতাব্দীর শেষ প্রান্ত থেকে আরম্ভ করে পর শতাব্দীর ১২ (বারো) বৎসর পর্যন্ত তাজদীদী কাজের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ইজমায়ে মুছলিমীন তথা সকল মুসলমানদের ঐকমত্যে মুজাদ্দিদ হিসেবে গণ্য।
পক্ষান্তরে সৈয়দ আহমদ বেরলভী জন্ম ১২০১ হিজরি (বারোশত এক হিজরি) তাই তার মধ্যে মুজাদ্দিদ হওয়ার শর্ত পাওয়া গেল না। এছাড়াও তিনি কোরআন সুন্নাহর শিক্ষা থেকে একেবারেই বঞ্চিত ছিলেন।
সে প্রসঙ্গে সৈয়দ আহমদ বেরলভীর ভক্তগণের উক্তি মতে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবখানা হেদায়েতের কিতাব। উক্ত কিতাবের ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় মৌলভী ইসমাঈল দেহলভী উল্লেখ করেন-
এক
اس کتاب کے اکثر مضامین کے تحریر کرنے میں صرف جناب سید احمد صاحب کے فرماۓ ہوۓ کلمات کے ترجمہ ہی پراکتفا کیا اسی طرح تمام کتاب کے مضامین میں یہی طریق اختیار کیا جاتا لکین چونکہ آپ کی ذات والاصفات ابتداء فطرت سے رسالت مآب علیہ افضل الصلوۃ والتسلیمات کے کمال مشابھت پرپیدا کی گئ اسیلۓ آپ کی لوح فطرت علوم رسمیہ کے نقش اور تحریر وتقریر کے داشمندون کی راہ روش سے خالی تھیں
ভাবার্থ: ‘এই কিতাব (সিরাতে মুস্তাকিম) এর অধিকাংশ বিষয়বস্তু লিখতে কেবল জনাব সৈয়দ আহমদ সাহেবের মুখনিঃসৃতবাণীর অনুবাদের উপরই করা হয়েছে। এভাবে এ কিতাবের পূর্ণ বিষয়বস্তু লিখার এই ধারাই অবলম্বন করার কথা ছিল। কিন্তু জীবনের শুরু থেকেই সৈয়দ আহমদ সাহেবের জাত ও সিফাত হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কামালে মুশাবিহাত বা পরিপূর্ণ মিল রেখেই সৃষ্টি করা হয়েছে।
এজন্য তার সত্ত্বায় বা স্বভাবে লিখা পড়ার জন্য জ্ঞানী-গুণীদের যে ধারা রয়েছে, তা থেকে তিনি খালি বা মুক্ত ছিলেন।’
অর্থাৎ প্রচলিত লিখাপড়া শিক্ষায় যে নিয়মনীতি রয়েছে, সৈয়দ আহমদ বেরলভীর মধ্যে এর কিছুই ছিল না। এক কথায় সৈয়দ আহমদ লেখাপড়া করতে পারেন নাই তিনি ছিলেন মুর্খ।
দুই
সুতরাং মুজাদ্দিদ হওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য শর্ত হচ্ছে যে, তিনি কোরআন সুন্নাহর পূর্ণ জ্ঞানে জ্ঞানবান হতে হবে। কিন্তু সৈয়দ আহমদ বেরলভী একেবারেই অজ্ঞ ছিলেন, কোরআন সুন্নাহর কোন জ্ঞানই তার মধ্যে ছিল না, মূর্খ ছিলেন। মূর্খ লোক মুজাদ্দিদ হতে পারে না।
অপরদিকে তারই শিষ্য মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরীর ভাষ্য মোতাবেক ইসমাইল দেহলভীর লিখা ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবখানা তারই (সৈয়দ আহমদ বেরলভী সাহেবেরই) মলফুজাত বা বাণী। সিরাতে মুস্তাকিম কিতাবে অনেকগুলি কুফুরি আকিদা বিদ্যমান।
সুতরাং সৈয়দ আহমদ বেরলভী দ্বীনের মুজাদ্দিদ নন।
তিন
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে হয়, সৈয়দ আহমদ বেরলভীর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে। সত্যকথা বলতে কি, তার তেমন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতাই ছিল না।
এ প্রসঙ্গে মাওলানা ইমাদউদ্দিন (মানিক) ফুলতলী সাহেবের লিখিত ‘সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভীর জীবনী ’ নামক পুস্তকের (১ম ছাপা) ১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।
‘তখনকার সম্ভ্রান্ত বংশে প্রচলিত প্রথানুযায়ী সৈয়দ আহমদকে চার বৎসর বয়সে মক্তবে ভর্তি করে দেওয়া হয়। কিন্তু স্বগোত্রীয় অন্যান্য ছেলে মেয়েদের মত লেখাপড়ার দিকে তার তেমন ঝোঁক দেখা গেল না। মা-বাবার একান্ত আদর যত্ন ও শিক্ষকের অকৃতিম ভালবাসা সত্ত্বেও দীর্ঘ তিন বৎসরে তিনি কোরানশরীফের কয়েকটি মাত্র সূরা মুখস্ত করলেন এবং কিছু লিখতে শিখলেন। অবস্থা দৃষ্টে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতৃদ্বয় চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তদীয় পিতা ভ্রাতৃদ্বয়কে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন ‘আহমদের লেখাপড়ার ব্যাপারে চিন্তা না করে আল্লাহর উপর ছেড়ে দাও, দয়াময় তারপক্ষে যা ভাল মনে করেন তাই করবেন। ওকে তাগিদ করে লাভ হবে না।’
উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো সৈয়দ আহমদ বেরলভীর প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সনদ ছিল না। সুতরাং মুজাদ্দিদ হওয়ার জন্য ইলমী যোগ্যতার অতীব প্রয়োজন।
সৈয়দ আহমদ বেরলভীর কাছে কোরআন সুন্নাহর ইলমি যোগ্যতা ছিল অনুপস্থিত। তাই তিনি মুজাদ্দিদ হওয়ার যোগ্যতা রাখেননি।
সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে ভূয়া মুজাদ্দিদ সাজানোর পায়তারা
সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে মুজাদ্দিদ সাজানোর জন্য তার এক শ্রেণীর ভক্তবৃন্দরা সে মুর্খ হওয়া সত্ত্বেও কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে ইলিম অর্জন করেছেন বলে দাবি করেছেন।
১. মাওলনা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী সাহেবের লিখিত ‘সৈয়দ আহমদ শহীদ বেরলভীর জীবনী’ ১ম সংস্করণ ১১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
‘আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উম্মি বা নিরক্ষর বলে ঘোষণা করেও বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তির পক্ষে যতটুকু জ্ঞানের প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি জ্ঞান দান করেছিলেন।
এভাবে আল্লাহ তায়ালা শুধু আম্বিয়াগণকেই নয় তার অনেক মকবুল বান্দাকেও সরাসরি ইলম দান করে থাকেন। সৈয়দ আহমদ ও সে দান থেকে বঞ্চিত হননি।’
২. অনুরূপ মুহাম্মদ হুছামুদ্দিন চৌধুরী ফুলতলী লিখিত ‘ছোটদের সাইয়িদ আহমদ বেরলভী’ নামক পুস্তকের ১১ পৃষ্ঠায় লিখা রয়েছে-
ছোট্ট বন্ধুরা, আল্লাহ চাইলে তার অনেক মকবুল বান্দাকে সরাসরি ইলিম দান করে থাকেন। সাইয়িদ আহমদও সে দান থেকে বঞ্চিত হননি। আল্লাহ তাঁর নিজ আলোকে তাঁকে জাগতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন।’
৩. শাজারায়ে তায়্যিবা’ হযরত ফুলতলী সাহেবের সিলসিলা পরিচিতি’ নামক পুস্তকের ৪র্থ পৃষ্ঠায় রয়েছে-
‘কোন মাধ্যম ব্যতীতই তরীকায়ে মুজাদ্দিদিয়াহ ও মুহাম্মদিয়াহর সরাসরি ফয়েজ ও বরকত লাভ করেছেন মহান আল্লাহ জাল্লাশানুহু থেকে।’
বড়ই পরিতাপের বিষয় উপরোল্লেখিত তিনটি পুস্তকে নিরক্ষর সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে মুজাদ্দিদ বানানোর অভিপ্রায়ে আলেম বা জ্ঞানী সাজানোর জন্য আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তুলনা করে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা যেভাবে তাঁর হাবীবকে সরাসরি ইলিম দান করেছেন ঠিক সেভাবে সৈয়দ আহমদ বেরলভীকেও সরাসরি ইলিম দান করেছেন। (নাউজুবিল্লাহ)
দেখুন কত বড় গাজাখুরি কথা! কোথায় আল্লাহর হাবীব রাহমাতুল্লিল আলামীন আর কোথায় সৈয়দ আহমদ বেরলভী।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের তথা ইসলামের সঠিক আক্বিদা হলো, কোন ব্যক্তিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওয়াছাতত বা মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহ জাল্লাশানু থেকে ফয়েজ ও বরকত হাসিল করতে পারে না। এরূপ দাবি করা অমূলক, অবান্তর, অবাস্তব ও বিভ্রান্তি বই কিছুই নয়।
নিম্নে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদী থেকে কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক দলিলসমূহ পেশ করা হল:
দলিল-১. মুফতিয়ে বাগদাদ আবুল ফজল শিহাব উদ্দিন সৈয়দ মাহমুদ আলুছি বাগদাদী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১২৭০ হিজরি) তদীয় ‘তাফসির রূহুল মায়ানী’ নামক কিতাবে ১৭ পারা ১০৫ পৃষ্ঠা- আল্লাহরতায়ালার কালাম وما ارسلناك الارحمة العالمين (ওমা আর সালনাকা ইল্লা রাহমাতাল্লিল আলামীন)
আমি আপনাকে সমস্ত জগতের রহমত করে প্রেরণ করেছি। এ আয়াতে কারীমার তাফসিরে উল্লেখ করেন-
وكونه صلى الله عليه وسلم رحمة للجميع باعتبار انه عليه الصلوة والسلام واسطة الفيض الالهى على الممكنات على حسب القوابل ولذا كان نوره صلى الله عليه وسلم اول المخلوقات ففى الخبر اول ما خلق الله تعالى نور نبيك يا جابر وجاء الله تعالى المعطى وانا القاسم
অর্থাৎ ‘ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত জগতের জন্য রহমত, এই দৃষ্টিকোণ থেকে নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত মমকিনাত তথা: সকল সৃষ্টির জন্য তাদের যোগ্য অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালার ‘ফয়েজ’ লাভের মাধ্যম। এজন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূর মোবারকই সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম। যেহেতু হাদীসশরীফে বর্ণিত আছে, হে জাবির! আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম তোমার নবীর নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন। অপর হাদীসশরীফে বর্ণিত আছে- আল্লাহর হাবীব নিজেই এরশাদ করেছেন- আল্লাহ দিচ্ছেন এবং দিতে থাকবেন এবং আমি বণ্টনকারী।’
উপরোক্ত তাফসীরে কোরআনের আলোকে দিবালোকের মত প্রমাণিত হলো- আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ফয়েজ ও বরকত লাভ করার মাধ্যম হচ্ছেন ছরকারে কায়েনাত ফখরে মওজুদাত নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর মাধ্যম ছাড়া কেহ কোন প্রকার ফয়েজ ও বরকত লাভ করতে পারবে না।
আল্লাহ তায়ালা যা অতীতে দিয়েছেন এবং বর্তমানে দিচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে দিতে থাকবেন, সব কিছুরই বণ্টনকারী হচ্ছেন দু’জাহানের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহর হাবীবের মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কেউ কিছু পেতে পারে না।
সুতরাং সৈয়দ আহমদ বেরলভী সরাসরি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ইলিম অর্জন করেছেন এ দাবি করে তাকে মুজাদ্দিদ বানানোর পায়তারা চালানো হচ্ছে জঘণ্যতম অপরাধ।
দলিল- ২. প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ হযরত আল্লামা মূল্লা আলী ক্বারী মক্বী রাদিয়াল্লাহু আনহু (ওফাত ১০১৪ হিজরি) তদীয় ‘মিরকাত শরহে মিশকাত’ নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
وقال القرطبى من ادعى علم شئ منها غير مسند اليه عليه الصلوة والسلام كان كاذبا فى دعواه
অর্থাৎ ‘আল্লামা কুরতুবী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যে ব্যক্তি রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যম বিহীন কোন প্রকারের ইলিম (ইলমে শরিয়ত, ইলমে মা’রিফত) লাভ করার দাবি করে, তবে সে তার দাবিতে মিথ্যাবাদী।’
উপরোক্ত দলিলের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, সৈয়দ আহমদ বেরলভী আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সরাসরি ইলিম লাভ করার দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট।
দলিল-৩.
قال الامام مالك علم الباطن لايعرفه الا من عرف علم الظاهر فمتى علم علم الظاهر وعمل به فتح الله عليه علم الباطن ولايكون ذالك الامع فتح قلبه وتنويره (الحديقة الندية ۱/۱۶۵)
আল্লামা আব্দুল গণি নাবুলিছি হানাফী (আলাইহির রহত) তদীয় ‘আল হাদীকাতুন নাদিয়া’ নামক কিতাবের ১/১৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
অর্থাৎ ‘ইমাম মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইলমে জাহির (ইলমে শরিয়ত) যারা অর্জন করতে পারবে না তারা কস্মিনকালেও মারেফাতের ইলিম লাভ করতে পারবে না। সুতরাং শরিয়তের প্রয়োজনীয় ইলিম যারা অর্জন করে, সে মোতাবেক আমল ও করতে থাকে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য বাতেনী ইলিম ( মারেফাতের দরজা) খুলে দেন।’
মারেফাতের ইলিম অর্জন করতে হলে, তার জন্য অতিব প্রয়োজন যে, সে একাগ্রচিত্তে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর হাবীবকে রাজী বা সন্তুষ্ট করার মানসে খালিস নিয়তে আমল করতে হবে এবং জিকির আযকার, মোরাকাবা, মোশাহাদার মাধ্যমে কলবকে সচ্ছ করে কলবে ঈমানী নূর পয়দা করতে হবে।’
উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, সৈয়দ আহমদ বেরলভী যেহেতু ইলমে জাহের বা ইলমে শরিয়ত অর্জন করতে সক্ষম হননি, তার জন্য মারেফাত লাভ করা অসম্ভব।
এখন যদি কোন ব্যক্তি এ দাবি উত্থাপন করে বলে সৈয়দ আহমদ বেরলভী এলহাম বা বাতেনী ওহীর মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ইলিম বা জ্ঞান অর্জন করেছেন, যাকে ইলমে লাদুনি বলা হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে অত্র কিতাবের ১/১৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
فاعلم ان الالهام ليس حجة عند علماء الظاهر والباطن بحيث تثبت به الاحكام الشرعية فيستغون بذلك عن النقل من الكتاب والسنة بل هو طريق صحيح لفهم معانى الكتاب والسنة عند المحققين من علماء الباطن بعد تصحيح العمل على مقتضى ما فهم بالاجتهاد من معانى الكتاب والسنة والا كان وسوسة شيطانية لايجوز العمل به كما قال الامام القسطلانى فى مواهب لايظهر على احد شئ من نور الايمان الاباتباع السنة ومجانبة البدعة واما من اعرض عن الكتاب والسنة ولم يتعلق بالعلم من مشكاة الرسول صلى الله عليه وسلم بدعواه علما لدنيا اوتيه فهو من لدن النفس والشيطان وانما يعرف كون العلم لدنيا روحانيا موافقته لما جاء به الرسول عن ربه تعالى فالعلم اللدنى نوعان لدنى روحانى ولدنى شيطانى فالروحانى هو الوحى ولا وحى بعد الرسول صلى الله عليه وسلم واما قصة موسى مع الخضر فالتعلق بها فى تجويز الاستغناء عن الوحى بالعلم اللدنى الحاد وكفر مخرج عن الاسلام (الحديقة الندية ۱۶۶/۱۶۵)
অর্থাৎ ‘জ্ঞাতব্য বিষয় এই যে, জাহির ও বাতেন (শরিয়ত ও তরিকতের) ওলামায়ে কেরামগণের অভিমত হলো, কোরআন-সুন্নাহর দলিল আদিল্লাহর মাধ্যমেই শরিয়তের হুকুম আহকাম প্রমাণ করতে হবে। ওলী আল্লাহগণের ‘এলহাম’ কস্মিনকালেও দলিলরূপে গণ্য হতে পারে না।
বরং মারেফাত তত্ত্ববিধ মুহাক্কিকীন উলামায়ে কেরামগণের অভিমত হলো, সহীহ শুদ্ধভাবে আমল করার জন্য কোরআন-সুন্নাহ থেকে মুজতাহিদগণের ইজতেহাদী মাসআলা মোতাবেক আমল করাই সঠিক পন্থা। কোরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র এলহামের উপর নির্ভর করে আমল করা শয়তানী ওয়াছ ওয়াছা বৈ কিছুই নয় বরং ইহা না জায়েয।
ইমাম কাছতালানী (আলাইহির রহমত) তদীয় ‘মাওয়াহিবে লাদুনিয়া’ নামক কিতাবে এ মাসআলার ব্যাপারে কী সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন, (আক্বাইদী ও আমল) সুন্নাতের অনুকরণ ও অনুসরণ করা এবং (আকাইদী ও আমলী) বিদআত থেকে পরিহার করা ব্যতিরেকে কারো জন্য ঈমানী নূর প্রকাশ হতে পারে না।
যারা ইলমে লাদুনিয়ার দাবিদার হয়ে কোরআন-সুন্নাহ থেকে দূরে সরে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার মাধ্যম ব্যতিরেকে ইলিম অর্জন করার দাবিদার হয়েছে, তারা লাদুনে নফস বা শয়তান।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ থেকে যে ইলিম নিয়ে আসছেন তার পূর্ণ অনুকূল হলেই ইলমে লাদুনিয়ায়ে রূহানী বলে অভিহিত করা যাবে। সুতরাং ইলমে লাদুনী দুভাগে বিভক্ত। ১. ইলমে লাদুনিয়ে রূহানী। ২. লাদুনিয়ে শয়তানী। ফলে লাদুনিয়ে রূহানী হল ওহী এবং আল্লাহর রাসূলের পরে ওহীর দরজা বন্ধ।
واما قصة موسى مع الخضر فالتعلق بها فى تجويز الاستغناء عن الوحى بالعلم اللدنى الحاد وكفر مخرج عن الاسلام الخ
উপরন্তু যারা হযরত মুছা ও খিজির আলাইহিস সালাম এর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলে থাকে ইলমে লাদুনি অর্জন করতে গেলে ওহীর প্রয়োজন নেই তারা হবে মূলহিদ, কাফের, ইসলাম থেকে বহির্ভূত।’
প্রশ্ন হতে পারে খিজির আলাইহিস সালাম ওলী হওয়া সত্ত্বেও ইলমে লাদুনি কিভাবে অর্জন করলেন?
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (আলাইহির রহমত) এ প্রশ্নের জওয়াবে তদীয় ‘ শরহে ফেকহে আকবর’ নামক কিতাবে নূতন ছাপা ১১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
ونبى واحد افضل من جميع الاولياء. وقد ضل اقوام بتفضيل الولى على النبى حيث امر موسى بالتعلم من الخضر وهو ولى قلنا الخضر كان نبيا وان لم يكن كما زعم البعض
অর্থাৎ ‘যে কোন একজন নবী সমস্ত আউলিয়ায়ে কেরাম থেকে অধিক মর্যাদাবান। তবে কোন কোন সম্প্রদায় ওলী আল্লাহকে নবীর উপর মর্যাদা দিয়ে বিপথগামী হয়েছে।
তারা তাদের দাবির স্বপক্ষে দলিল দিতে গিয়ে বলে থাকে, হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে হযরত খিজির আলাইহিস সালাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার হুকুম করা হয়েছিল, যার নিকট থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়, তিনি শিক্ষার্থী অপেক্ষা উত্তম হয়ে থাকেন। অথচ খিজির আলাইহিস সালাম ওলী ছিলেন। এর উত্তরে আমরা বলব, হযরত খিজির আলাইহিস সালাম নবী ছিলেন, ওলী ছিলেন না।
হযরত খিজির আলাইহিস সালাম নবী নন বলে যদিও একদল লোকের ধারণা রয়েছে।’
(الحديقة الندية) আল হাদীকাতুন নাদিয়া’ নামক কিতাবের ১/৩৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
‘কোন কোন ওলী আল্লাহগণ এমনও রয়েছেন, যারা এলহামের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে (মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর বাতেনী সাহায্যের দরুণ) নেক আমল ও সঠিক আক্বিাদার উপর ইস্তেকামত বা অটল থাকার সৌভাগ্য লাভ করেছেন এবং সেই আক্বিদা ও নেক আমল কোরআন সুন্নার পূর্ণ মুয়াফিক হয়েছে।’
মোদ্দাকথা হলো, আল্লাহর হাবীবের এলহাম সঠিক এবং সত্য যার মধ্যে সন্দেহের কোন অবকাশমাত্র নেই। পক্ষান্তরে আউলিয়ায়ে কেরামগণের এলহাম মশকুক বা সন্দেহজনক। এ এলহাম সত্যও হতে পারে আর মিথ্যাও হতে পারে।
যদি ওলী আল্লাহগণের এলহাম কোরআন সুন্নাহ মুয়াফিক হয়ে থাকে, তা হবে সঠিক ও সত্য।
অপরদিকে কেরআন-সুন্নাহর বিপরীত হলে তা হবে মিথ্যা। (নুরুল আনওয়ার)
তালিম তায়াল্লুম বা শিক্ষাদীক্ষা ব্যতিরেকে শুধুমাত্র এলহামের মাধ্যম শরিয়তের হুকুম আহকাম সম্বন্ধে অবগত হওয়া যা কোরআন সুন্নাহর মুয়াফিক হয়, সে প্রসঙ্গে ‘আল হাদীকাতুন নাদিয়া’ কিতাবের ১/৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
كما وقع لاويس القرنى رضى الله عنه مع وجوده فى زمان النبى صلى الله عليه وسلم ولم يجتمع بالنبى عليه السلام استغناء بالامداد الباطنى المحمدى له عن الاخذ من حيث الظاهر ومن كان موفقا كذالك
অর্থাৎ ‘যেমন ওয়ায়েছ কুরুনী রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার যামানায় থাকা সত্ত্বেও অনিবার্য কারণবশত আল্লাহর নবীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেন নাই, এমতাবস্থায় তিনি জাহিরী ইলিম (শরিয়তের হুকুম আহকাম) লাভ করার জন্য শিক্ষাদীক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকা সত্ত্বেও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাতেনী সাহায্যের দরুণ তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন এবং সঠিক আক্বিদা ও নেক আমল যথাযথভাবে আদায় করেছেন। এ পর্যায়ে তার আক্বিদা ও আমল সঠিক ছিল বলে আল্লাহর হাবীবের সম্মতিও পেয়েছেন।’
উপরোক্ত দলিলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো- আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এলহাম দ্বারা শরিয়তের হুকুম আহকাম এর ইলিম অর্জন করতে গেলে আল্লাহর হাবীবের বাতেনী সাহায্যের অতীব প্রয়োজন এবং সাথে সাথে কোরআন সুন্নাহর সঙ্গে তার পূর্ণ মুয়াফিক আছে কি না এদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
আল্লাহর হাবীবের বাতেনী সাহায্য বা ওছীলা ব্যতিরেকে সরাসরি আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে কেহ কোন সঠিক ইলিম লাভ করতে সক্ষম হবে না।
সুতরাং সৈয়দ আহমদ বেরলভী আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সরাসরি ইলিম অর্জন করার দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন এবং শরিয়তবিরোধী।
এ ব্যক্তি মুজাদ্দিদ হওয়া তো দূরের কথা বরং ঈমানের গণ্ডির ভেতরে আছে কি না, তাও সন্দেহজনক।
মূল কথা হলো, তার ভক্তবৃন্দরা তাকে নবী বানানোর পায়তারা চালাচ্ছে।
এ প্রেক্ষাপটে ‘সিরাতে মুস্তাকিম’ কিতাবের ৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
‘পূর্ণাঙ্গ শরিয়ত ও দ্বীনের যাবতীয় হুকুম আহকামের ব্যাপারে সৈয়দ আহমদ বেরলভীকে নবীগণের ছাত্রও বলা চলে এবং নবীগণের উস্তাদের সমকক্ষও বলা চলে। সৈয়দ আহমদ বেরলভীর নিকট এক প্রকারের ওহী এসে থাকে, যাকে শরিয়তের পরিভাষায় নাফাসা ফির রাও বলা হয়।
কোন কোন আহলে কামাল ইহাকে বাতেনী ওহী বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন এবং সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও তার ন্যায় অন্যদের ইলিম যা হুবহু নবীদের ইলিম কিন্তু প্রকাশ্য ওহী দ্বারা নয় বরং বাতেনী ওহী দ্বারা অর্জিত।’ (নাউজুবিল্লাহ)
উক্ত সিরাতে মুস্তাকিমের ৭৫ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ রয়েছে- ‘মা’ছুম বা নিষ্পাপ হওয়া নবীদের জন্য খাস নয় বরং নবী ছাড়া অন্যরাও মা’ছুম হতে পারে সেজন্য সৈয়দ আহমদ বেরলভী ও মা’ছুম।’ (নাউজুবিল্লাহ)
উল্লেখ্য যে নবী ব্যতিত অন্য কেহ তার কাছে ওহীয়ে বাতেনী আসে ও মা’ছুম হওয়ার দাবিদারই নবুয়তী দাবির নামান্তর মাত্র।
এরই স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওলী উল্লাহ আলাইহির রহমত তদীয় در الثمين (দুররুছ ছামিন) কিতাবে স্পষ্ট বর্ণনা দিয়ে বলেন-
الحديث التاسع : سألته صلى الله عليه وسلم سوالا روحانيا عن الشيعة فا وحى الى ان مذهبهم باطل وبطلان مذهبهم يعرف من اللفظ الامام ولما افقت عرفتم الامام عندهم وهو المعصوم للفرض الوحى اليه وحيا باطنا وهذا هو المعنى النبى فمذهبهم يستلزم انكارختم النبوة قبحهم الله تعالىا
ভাবার্থ: শাহ ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত বলেন- আমি শিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কে আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে রূহানী হালতে প্রশ্ন উপস্থাপন করলে হাবীবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশারা দিয়ে বললেন শিয়া সম্প্রদায়ের মাযহাব হল বাতিল।
শিয়া সম্প্রদায় বাতিল হওয়ার একমাত্র কারণ হলো ‘আল ইমাম’ শব্দ দ্বারা শিয়াদের বাতুলতার পরিচয় পাওয়া যায়।
তিনি (শাহ ওলী উল্লাহ) বলেন- আমি জাগ্রত হয়ে স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম শিয়া সম্প্রদায় তাদের ইমামকে মা’ছুম বলে আখ্যায়িত করে এবং তাদের কাছে বাতেনী ওহী আসে বলে দাবি করে। মা’ছুম ও বাতেনী ওহী আসার দাবিদার হওয়াই নবী দাবীর নামান্তর বটে। শিয়া সম্প্রদায়ের মতবাদই আল্লাহর হাবীব যে সর্বশেষ নবী তা অস্বীকার করা হয়ে থাকে। শাহ সাহেব বদদোয়া করে বলেন আল্লাহতায়ালা তাদেরকে ধবংস করুন। (আদদুররুছ ছামিন)
_______________
ইজহারে হক্ব
লেখক : অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা:জি:আ:)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন