রাসূল (ﷺ) তাঁর সম্মানিত মাতা-পিতা ও চাচাকে পুনর্জীবিত করিয়া ঈমান গ্রহণ করানোর বর্ণনা

 রাসূল (ﷺ) তাঁর সম্মানিত মাতা-পিতা ও চাচাকে পুনর্জীবিত করিয়া ঈমান গ্রহণ করানোর বর্ণনা


❏ “আখবারুল আখয়ার” নামক গ্রন্থের অনুবাদ “আনোয়ারে ছুফিয়ায়” হযরত ছৈয়দ মাহমুদ গীসুদরাজ (رضي الله عنه) এর উন্মত্তাবস্থার (حالات) মধ্যে বর্ণিত আছে, তিনি (গীসুদরাজ রা.) বলিয়াছেন, তাফসীরে উম্মুল মায়ানীর মধ্যে লিখিয়াছেন, রাসূল করিম (ﷺ) বিদায় হজ্জ্বের মধ্যে হযরত আলীকে (رضي الله عنه) কোন একটি যুক্তি সিদ্ধতার জন্য পাঠাইয়াছিলেন। যখন হযরত আলী (رضي الله عنه) সেই যুক্তি সিদ্ধতা হইতে আবর্তিত হইলেন, তখন রাসূলে খোদা (ﷺ) ফরমাইয়াছেন যে, হে আলী! গতকল্য আল্লাহ্ তায়ালা আমাকে কোন মাহাত্ম্য দ্বারা বিশিষ্ট ও যথাযথ করিয়াছেন তাহা তোমার জ্ঞাত আছে কি? তিনি (আলী) উত্তর করিলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ্! গতকল্য আপনাকে কোন মর্যাদা দ্বারা বিশিষ্ট করা হইয়াছে তাহা আমি শুনি নাই। হুজুর (ﷺ) ফরমাইয়াছেন, গতকল্য আমি একটি পরিষদ করিয়াছি এবং আবু তালেব ও আমার আম্মা-আব্বার রেহাই দেওয়ার জন্য মিনতি করিয়াছি, তখন রাজাজ্ঞা হইল, রায় আমার (আল্লাহ্র) উপর স্থগিত রহিয়াছে। যেই ব্যক্তি আমার একত্ত্বতা ও তোমার নবুয়াতের উপর ঈমান আনে না এবং প্রতিমাসমূহকে রহিত ও বাতিল বলেনা তাহাকে স্বর্গের   অন্তর্ভূক্ত করিব না। অতঃপর তুমি (নবী) তামুজ উপত্যকার উপর যাও এবং তোমার আম্মা-আব্বা ও আবু তালেবকে ডাক দাও, তাঁহারা জীবিত হইয়া তোমার সামনে আসিবে। অতঃপর তাহাদিগকে ইসলামের আমন্ত্রণ জানাইবে এবং তাঁহারা ঈমান নিয়া আসিবে। অতএব, আমি সেই রকমই করিয়াছি এবং আমি একটা উঁচু স্থানে যাইয়া আওয়াজ দিয়াছি, হে আম্মাজান! হে আব্বাজান! হে চাচাজান! অতঃপর তাঁহারা তিনজনই মাটির ভিতর হইতে প্রকাশ হইয়া আমার উপর ঈমান নিয়া আসিয়াছেন এবং শাস্তি হইতে নাজাত পাইয়াছেন। ২৮৭পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

❏ হযরত নিজামুদ্দীন মাহবুবে ইলাহী (رحمة الله) এর মলফুজাত ‘রাহাতুল মুহিব্বীনে’র তরজুমার মধ্যে উল্লেখ আছে। তিনি বলিয়াছেন যে, হুজুর (ﷺ) এর চাচা আবু তালেব সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা আরম্ভ হইয়াছে। সুতরাং তিনি (মাহবুবে ইলাহী) বলিয়াছেন, আবু তালেব কিয়ামতের দিন নরকে যাইবে না। কোন এক সময় হযরত খাজা খিজির  (عليه السلام)-এর সহিত হযরত খাজা শফিক বলখি (رحمة الله)-এর মোলাকাত হইয়াছে। তখন তিনি (শফিক বলখি) খাজা খিজির হইতে ভীতূ ও বিস্ময়কর কয়েকটি প্রশ্ন করিয়াছেন। মোটামুটি ইহাও একটি ছিল যে, আমি (বলখি) শুনিয়াছি, কিয়ামতের দিন আবু তালেব জাহান্নামে যাইবেনা, তিনি (খিজির) ইহাকে সত্য বলিয়া আখ্যায়িত করিলেন। আমি (খিজির) মর্যাদাসম্পন্ন নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর কল্যাণকর রসনা হইতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছেন যে, আবু তালেব কিয়ামতের দিন বেহেশতে যাইবে। খাজা শফিক বলখি আরজ করিলেন, ইহার উপর কি যুক্তি রহিয়াছে? খাজা খিজির (عليه السلام) বলিলেন, প্রথম যুক্তি হইল তিনি (আবু তালেব) যখন দুনিয়া হইতে ঈমানসহকারে মৃত্যুবরণ করিয়াছেন সেই দিন হইতে পিশাচ (শয়তান) বিষন্ন হইয়া গিয়াছে। তাঁহার গোত্রের লোকজন যখন শয়তান হইতে বিষন্নতার কারণ জিজ্ঞাসা করিল তখন সে বলিল তিনি (আবু তালেব) যখন দুনিয়া হইতে ঈমান সহকারে বিদায় নিয়াছেন এবং কেয়ামতের দিন বেহেশতে প্রবেশ করিবে সেহেতু আমি দুঃখিত ও বিষন্ন হইয়াছি।

দ্বিতীয় যুক্তি হইল এই যে, আমি নবী (ﷺ) হইতে একবার শুনিয়াছিলাম, যখন শেষকালে সর্দার ঈসা (عليه السلام) দুনিয়াতে অবতরণ করিবেন, তখন আল্লাহ্ রাব্বুল ইজ্জত তাঁহাকে এই অলৌকিক ঘটনা বা মু’জিযা প্রাচুর্য করিবেন সে যেই কোন মৃত ব্যক্তিকে কবরের উপর যাইয়া আওয়াজ দিবেন সেই মৃত ব্যক্তি তৎক্ষণাৎ জীবিত হইয়া যাইবে। অতঃপর তিনি (ঈসা) আমার চাচা আবু তালেবের সমাধির উপর আসিয়া আওয়াজ দিবেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাহাকে জীবিত করিবেন। অতএব, তিনি ইসলাম গ্রহণ করিয়া মর্যাদাবান হইবেন এবং বলিবেন,

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

অতঃপর খাজা সাহেব বলিলেন হুজুর (ﷺ) তাহার ব্যাপারে অনেক শ্রম ও উদ্যম করিয়াছেন যাহার সৌভাগ্য তাঁহাকে জীবিত করিয়া ঈমান যোগে বেহেশতে পাঠাইবেন। ১১৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

❏ হযরতুল আল্লামা কেবলা মুফ্তি আমীমুল ইহসান মোজাদ্দেদী বরকতী (رحمة الله) ছিরতে হাবীবে ইলার হাশিয়া বা প্রান্তস্থিত নোটে লিখিতেছেন যে ছরদার আবু তালেবের কুফর ও ঈমানের মধ্যে মতভেদ রহিয়াছে। ছহীহাঈনের বর্ণনা হইতে জ্ঞাত হওয়া যায় যে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তিনি মুসলমান হন নাই। ৩৭ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

কিন্তু সীরতে ইবনে হিশামের মধ্যে ইবনে ইসহাকের বর্ণনানুযায়ী ঈমানের সহিত মৃত্যুবরণ করার উল্লেখ রহিয়াছে। ১৪৬ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

❏ ছহীহাঈনের বর্ণনাকে সাঈদ ইবনুল মুসায়্যেব তাঁহার আব্বা হইতে মুরসাল হিসাবে রেওয়ায়েত করিয়াছেন, যাহা মোহাদ্দেসীনগণের মতে ছহীহ ও বিশুদ্ধ এবং ইবনে ইসহাকের সনদে (স্বীকারপত্রে) এনকেতা (কর্তন) রহিয়াছে। যদিও অন্যান্য হাদিস বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য হয় উহা ও মুরসালে কবী (বলবান)। যথোচিত সনদের (স্বীকারপত্রের) শক্তি ও গুণ ছহীহাঈনের বর্ণনার প্রাধান্য চাহিতেছে কিন্তু শরীয়্যতের রীতিনীতি হইল, ’’الاسلام يعلو ولا يعلى‘‘ অর্থাৎ ইসলাম জয়ী ও প্রায় নিশ্চিত হয় এবং পরাজিত ও প্রতিভাবিত হয় না। যখন তাঁহার (ইবনে ইসহাকের) স্বীকারপত্রে কর্তন ব্যতীত অন্য কোন প্রত্যক্ষ ত্র“টি নাই তখন আবু তালেবের ঈমানের উপর অনুজ্ঞা করা হইবে, আল্লাহই অধিক জানেন।

❏ আবদুল্লাহিল এমাদির পক্ষ হইতে তারীখে তবরী’র অনুবাদ তারীখে ইসলামের মধ্যে উল্লেখ আছে, হযরত খাদীজাতুল কোবরা (رضي الله عنه) এর ওফাতের তিনদিন পরে ছিয়াশি বছর বয়সে এবং দুর্বল মতানুযায়ী নব্বই বছর বয়সে আবু তালেব মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। নবী করিম (ﷺ)কে সংবাদ দেওয়া হইলে তাঁহার পবিত্র অন্তরে এই দুর্ঘটনার নতুন সূচনা জাগে ও শক্ত হৃদয়গ্রাহী হইয়া তশরীফ নিয়া আসিলেন এবং তাঁহার (আবু তালেবের) ললাট-দেহের ডান পার্শ্বে যাইয়া চারিবার ও বামপার্শ্বে তিনবার হাত ফিরাইয়া ফরমাইলেন, হে আমার চাচা! ছোটবেলায় আপনি আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন, যখন পিতৃহীন হইয়াছি আপনি আমার জেমানত করিয়াছেন এবং বড় হওয়ার পরে দয়া ও সহায়তা করিয়াছেন। তাই আমার পক্ষ হইতে আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে সুপ্রতিফল দান করুক। শবাধারের সম্মুখে সম্মুখে চলিয়া আবু তালেবের সামনে আসিতেন এবং সম্বোধন করিয়া বলিতেন যে, সদ্ব্যবহারের প্রতিফল আপনার হাতে আগমন করুক এবং সুপ্রতিদান অর্জন হউক। তিনি (নবী) ইহা ও ফরমাইয়াছেন যে, উক্ত বিপদদ্বয়ের অবতারণ এই উম্মতদের উপর হইয়াছে। উক্ত বিপদদ্বয় অর্থাৎ খাদিজা ও আবু তালেবের মৃত্যুর মধ্য হইতে কোনটি দ্বারা হুজুর (ﷺ) স্পর্শকাতর হইয়াছেন তাহা জ্ঞাত নাই। প্রাগুক্ত, ৪৫ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

❏ হযরত মৌলানা আবদুর রব ইবনে শেখ মোহাম্মদ আবদুল খালেক হানাফী, কাদেরী, কোরাইশী তাঁহার গর্ভের সামগ্রী কিতাব: দরকুল মাআরেব’ফী মানাকেবে আছদিল্লাহিল গালেবে’র মধ্যে লিখিত আছে যে ইমাম আবদুল ওহাব শারানী ‘কাশফুল গুম্মাহ’ ২য় খন্ডের ২৫৬ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন, হুজুর (ﷺ) যখন শেষকালে হেদায়ত করিলেন তখন তাঁহার (আবু তালেবের) ওষ্ঠদ্বয় আন্দোলিত করিলেন। সেই সময় হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) তাঁহার মুখের নিকটে কর্ণ লাগাইলেন। অতঃপর বলিলেন হে আমার ভাইপো! আমি খোদার শপথ করিয়া বলিতেছি যে, আপনি আমার ভাই আবু তালেবের পক্ষ হইতে যেই কলমা চাহিয়াছিলেন সে তাহা বলিয়াছে। হুজুর (ﷺ) ফরমাইলেন, الحمدلله الذى هداك ياعم (হে চাচা যে খোদা আপনাকে পথ প্রদর্শিত করিয়াছেন আমি সেই খোদার প্রশংসা করিতেছি। এতদ্যতীত অধিকাংশ জ্ঞানীগণ তাহার মুখ হইতে কলমা বাহির হওয়ার উপর মত দিয়াছেন।

❏ হুজুর (ﷺ) হইতে ইহাও বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আমার সহিত চারি ব্যক্তি সম্পর্কে চুক্তি বা ওয়াদা করিয়াছেন। ইহারা আমার আম্মাজান, আব্বাজান, চাচাজান এবং অপর একজন ভাই যিনি জাহেলিয়্যাত বা অন্ধকার যুগে সৃষ্ট হইয়াছিল। উপরোক্ত উক্তিসমূহ হইতে সঠিকভাবে জ্ঞাত হওয়া যায় যে নবী করিম (ﷺ) এর চাচা আবু তালেব মুক্ত, তাঁহার গুনাহ মাফ করা হইয়াছে।

________________

নবী করীম (ﷺ) এর চাচা আবু তালেবের নাজাত সম্পর্কে বর্ণনা

রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন