হাদিস দ্বারা জানাজায় অধিক পরিমাণে যিকিরের বর্ণনা
ইমাম ছুয়ূতী (رحمة الله) প্রণীত ‘জামেউচ্ ছগীর’ নামক কিতাবে উল্লেখ করা হয়, হযরত আনাস (رضي الله عنه) এর বর্ণিত এক হাদিসে হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন-
قَالَ عَلَيْهِ السَّلَام أَكْثِرُوا فِى الْجَنَازَة قَوْلِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ .
অর্থাৎ- তোমরা জানাজায় অধিক পরিমাণে কলেমা তৈয়্যবাহ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্...) পাঠ কর।
হযরত মুফতী আহমদ এয়ার খাঁন নঈমী (رحمة الله) প্রণীত ‘জাআল্ হক’ নামক কিতাবে “নাছর্বু রায়াহ লিতাখ্রিজে আহাদিছিল্ হেদায়া” নামক কিতাব থেকে উদ্ধৃত নিম্নলিখিত হাদিসে উল্লেখ করা হয়-
عن ابن عمر رضى الله تعالٰى عنهما قال لم يكن يسمع من رسول الله صلّى الله عليه وسلّم وهو يمشى خلف الجنازة الا قول لَا اِلٰه اِلَّا الله مبديًا وراجعًا .
অর্থাৎ- “হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, ‘জানাজার’ সাথে পথ চলার সময় হুজুর (ﷺ)কে উচ্চস্বরে নিশ্চয়ই ‘কলেমা তৈয়্যবাহ’ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ...) পাঠ করতে শুনা গিয়েছে।” এখন বলুন! হুজুর (ﷺ) যদি উচ্চরবে যিকির না করতেন তবে তা কিভাবে শুনা যেত? নিশ্চয়ই তিনি (ﷺ) উচ্চরবে যিকির করেছেন বলেই হাদিসের বর্ণনানুযায়ী, তা শুনা গিয়েছিল। এতে প্রমাণিত হল যে এ ধরণের ‘যিকির’ হুজুর (ﷺ) এরই পবিত্র আমল থেকে প্রমাণিত; উপরোক্ত প্রমাণাদির ভিত্তিতে তা জায়েজ ও মোস্তাহাব।
তাছাড়া, ‘যায়েদ’ নামক ব্যক্তির বর্ণনানুযায়ী তা ‘মাকরূহ’ বলে ধরে নেয়া হলেও একথা অনস্বীকার্য যে, শরীয়ত মতে তা নাজায়েজ বা অবৈধ নয়; যেহেতু আমাদের দেশে মুসলিম সমাজে তা প্রচলিত রয়েছে। কেননা- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিসে হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন-
ماراه المسلمون حسنا فهو عند الله حسن .
অর্থাৎ- মুসলমানরা যা ভাল মনে করেছেন তা আল্লাহ্ তায়ালার নিকটও ভাল বা পূণ্যময় বলে পরিগণিত। তদুপরি من سن فى الاسلام سنة حسن الخ (অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলামে একটা ভাল কাজের প্রচলন করবে..) এ হাদিসটাও এ প্রসঙ্গে উপরোক্ত হাদিসের সমার্থক।
‘মুজাল্লাতু আহকামিল আদ্লিয়্যাহ’ নামক কিতাবে ‘আত্তাল্বীহ্’ নামক কিতাব থেকে উদ্ধৃত করা হয়- استعمال الناس حجة يجب العمل بها অর্থাৎ- সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত ‘আমল’ও শরীয়তের দলিল হিসাবে গ্রহণীয়। এমনকি তদানুযায়ী আমল করা ওয়াজিব বা অপরিহার্য। এতদ্ভিত্তিতে ‘দুর্রুল মোখতার’ প্রণেতা উল্লেখ করেছেন-
ولا بأس به عقيب العيد لان المسلمين توارثوا فوجب و عليه البلخيون ولا يمنع العامة من التكبير فى الاسواق فى الايام العشرو به تأخذ.
অর্থাৎ- ঈদের নামাজের পর তকবীর পাঠে কোন ক্ষতি নেই। কারণ, মুসলমানগণ যুগ যুগ ধরে তা করেই আসছেন। সুতরাং তারই অনুসরণ করা ওয়াজিব। তা ‘বলখ’ বাসী ফকীহগণেরও সমর্থিক মতামত। তাই, পথে, বাজারে (সর্বত্রই) জিলহজ্ব মাসের দশ-দিবসে কেউ ‘তাকবীর’ পাঠ করলে তাকে বাধা দেয়া যাবে না। এটাই আমাদের মজহাবে গৃহীত মত।
‘ফতোয়া শামী’-২য় খণ্ডের ১৮০ পৃষ্ঠায় দেখুন! তাতে ‘দুর্রুল মোখতার’ প্রণেতা মুসলমানদের সর্বস্বীকৃত আমল বা কর্ম শরীয়তের দলিল হিসেবে পরিগণিত বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। যদিও তা হুজুর (ﷺ) এবং ‘আইম্মায়ে মোজ্তাহিদীনের’ যুগে প্রচলিত কাজ না হয়। অর্থাৎ তা ‘বিদ্য়াত’ বা ‘পরবর্তী যুগের প্রচলিত কাজ’ হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম সমাজে প্রচলিত এ আমলটি পালনীয়ের মর্যাদায় বহাল রাখার এবং তা পালনে মুসলমানদের বাধা না দেয়ার নির্দেশই উপরোলেখিত উদ্ধৃতি থেকে প্রতিভাত হয়। তদুপরি ভাল কাজে সাধারণ মুসলমানদের অনুসরণ প্রয়োজনীয় বলে উক্ত কিতাবে উল্লেখ করা হয়।
যেমন- ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) হযরত মায়াজ ইবনে জবল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন হুজুর (ﷺ) এরশাদ করেছেন,
وَعَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَالْعَامَّةِ (مشكوٰة شريف)
অর্থাৎ- তোমরা মুসলিম জমাত বা সাধারণ মুসলমানদের (মধ্যে প্রচলিত নিয়মের) অনুসরণ কর। মোদ্দাকথায়, ভাল কাজে মুসলিম জমাতের অনুসরণ করার নির্দেশই উপরোক্ত হাদিসে দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত অবগতির জন্য আমার লেখিত “আস্-সায়েক্বাহ” (الصاعقة) নামক পুস্তিকা দেখুন। যা বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং বুঝা যায় যে, উপরোক্ত নিয়মটি (ভাল কাজে মুসলিম জামাতের অনুসরণ অপরিহার্য) উক্ত হাদিস থেকেই গৃহীত। এতে প্রমাণিত হয় যে, পূণ্যময় কর্মে সাধারণ মুসলমানদের অনুসরণ অপরিহার্য। পরবর্তী যুগের ফকীহগণ তাই ‘ওরফ’কে শরীয়তের ‘পঞ্চম দলিল’ (اصل) হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
হানাফী মাজহাবের কোন কোন ইমাম এ মত পোষণ করেছেন যে, উপরোলেখিত উদ্ধৃতিতে لابأس শব্দটি ‘পারিভাষিক ওয়াজিব’ অর্থে ব্যবহৃত। সুতরাং এতে বুঝা যায় যে, لابأس শব্দটি ‘ওয়াজিবে আমলী’ অর্থাৎ কার্যটির অপরিহার্যতাকেই নির্দেশ করে; ‘ফেক্হশাস্ত্রের পরিভাষায় তা ‘পারিভাষিক ওয়াজিব’ অর্থেই ব্যবহৃত।
_____________
আল্-ক্বাওলুল হক্ব
(জানাজায় উচ্চরবে যিকির জায়েয প্রসঙ্গে)
রচনায়ঃ মুহাম্মদ আজিজুল হক আল-কাদেরী (رحمة الله)
অনুবাদঃ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মন্নান (এম.এম.এম.এফ)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন