পয়গম্বর সালেহ (عليه السلام)-এর মাদী উটের সাথে সংশ্লিষ্ট কুয়ো হতে জলপানসম্পর্কিত আদেশ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে (সামূদ গোত্রের অধ্যুষিত) আল-হিজর এলাকায় হুযূর পাক (ﷺ)-এর সাথে গমনকারী কিছু মানুষ সেখানকার কুয়ো থেকে পানি সংগ্রহ করে তা দ্বারা আটার কাই বানান এবং নিজেদের পানির থলেগুলো পূর্ণ করেন। মহানবী (ﷺ) তাঁর সাহাবাবৃন্দ (رضي الله عنه)-কে ওই কুয়োর পানি ঢেলে ফেলে দিতে বলেন এবং আটার কাই তাঁদের উটগুলোকে খেতে দিতে আদেশ করেন। আর তিনি (পয়গম্বর সালেহ আলাইহিস্ সালামের) উটনী যে কুয়ো থেকে পানি পান করতো, তা হতে পানি সংগ্রহ করতে বলেন। [আল-বুখারী কৃত ‘আল-সহীহ: কিতা’ব অাল-আম্বিয়া’, ‘আল্লাহর বাণী: আর সামূদের প্রতি তাদের ভাই সালেহ’ শীর্ষক অধ্যায়, ৩:১২৩৭ #৩১৯৯; মুসলিম রচিত ‘আল-সহীহ: কিতা’ব আল-যুহদ’, ‘নিজেদের (আত্মার) প্রতি যুলূমকারীদের বসতিতে প্রবেশ করো না’ শীর্ষক অধ্যায়, ৪:২২৮৬ #২৯৮১; ইবনে হিব্বা’ন লিখিত ‘আল-সহীহ, ১৪:৮২ #৬২০২; আল-বায়হাক্কী প্রণীত ‘আল-সুনান আল-কুবরা’, ১:২৩৫ #১০৫০; এবং আল-ক্বুরতুবী কৃত ‘আল-জামে’ লি-আহকা’ম আল-ক্বুরআন’, ১০:৪৬]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে তাবূকের যুদ্ধের বছর মুসলিম সেনাবাহিনী ‘সামূদ’গোত্রের বসতির ধ্বংসাবশেষের পাশে তাঁবু ফেলেন। তাঁরা নিজেদের পাত্র সেখানকার কুয়োর পানি দ্বারা পূর্ণ করেন এবং আটার কাই বানান, আর গোশত-ও রান্না করেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) (এ সম্পর্কে জানতে পেরে) তাঁদেরকে ওই পানি ফেলে দিতে বলেন; আর তাঁরাও পানি ফেলে দেন এবং আটা নিজেদের উটগুলোকে খাওয়ান। অতঃপর হুযূর পাক (ﷺ) তাঁদেরকে (পয়গম্বর সালেহ আলাইহিস সালামের) ওই উটনী যে কুয়ো হতে জলপান করতো, সেখানে নিয়ে যান। তিনি তাঁদেরকে (সামূদ গোত্রের) শাস্তিপ্রাপ্ত সেসব লোকের বসতভিটায় প্রবেশ করতে মানা করে বলেন, ‘আমি আশঙ্কা করি যে তাদেরকে যে শাস্তি আক্রান্ত করেছে, তা তোমাদেরকেও আক্রান্ত করতে পারে। অতএব, ওদের ঘরে প্রবেশ করো না।’ [আহমদ ইবনে হাম্বল রচিত ‘আল-মুসনাদ’, ২:১১৭ #৫৯৮৪; এবং ইবনে হিব্বা’ন প্রণীত ‘আল-সহীহ’, ১৪:৮৩ #৬২০৩; ইমাম আহমদ (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা সর্ব-ইমাম বুখারী (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله)-এর আরোপিত শর্ত পূরণ করেছে]
এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, শরীয়তের দৃৃষ্টিতে কুয়োর ওই পানি স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল না, বরং সুপেয় জল ছিল। কিন্তু (পয়গম্বর সালেহ আলাইহিস্ সালামের) উটনী হত্যার দায়ে (ঐশী) শান্তিপ্রাপ্ত গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত হওয়ার একমাত্র কারণেই প্রিয়নবী (ﷺ) তাঁর সাহাবা (رضي الله عنه)-বৃন্দকে তা ব্যবহার করতে বারণ করেন। এরই বিপরীতে অপর কুয়োটি পয়গম্বর সালেহ (عليه السلام)-এর উটনীর সাথে সম্পর্কিত ছিল। আর এই সম্পর্কের সূত্রেই কুয়োটিকে সম্মান দেয়া হয় এবং সেটাকে (ঐশী) করুণা ও আশীর্বাদের উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। [বঙ্গানুবাদকের জরুরি জ্ঞাতব্য: লা’নতপ্রাপ্ত তথা অভিশপ্ত গোষ্ঠীর সাথে ওঠা-বসা, নামায-সমাজ ইত্যাদি বজায় রাখাও মুসলমানদের জন্যে এই দলিলে নিষিদ্ধ প্রমাণিত হয়। এব্যাপারে উদাসীনতা পতনের কারণ হবে।]
২.৪.৩ পয়গম্বর সালেহ (عليه السلام)-এর মাদী উটের স্মরণে
ওপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান করে যে কোনো নবী (عليه السلام) বা রাসূল (عليه السلام)-এর সাথে সম্পর্কিত আশীর্বাদ স্থায়ী প্রভাব ফেলে। সেগুলোকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা এবং সেগুলো হতে বরকত তথা আশীর্বাদ গ্রহণ করা এমনই এক শিক্ষা যা স্বয়ং মহানবী (ﷺ) প্রদান করেছেন। এখানে বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় হলো আলোচ্য কুয়োটি সে-ই কুয়ো, যেটা থেকে পয়গম্বর সালেহ (عليه السلام)-এর মাদী উটটি পানি পান করতো; কিন্তু পয়গম্বর সালেহ (عليه السلام) তা থেকে পানি পান করেছিলেন বলে উল্লেখিত হয়নি।
অতঃপর সহস্র সহস্র বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, আর আল্লাহ-ই ভালো জানেন ওই সময় হতে পানির কতোটুকু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, অথবা উটনীর পানকৃত জল এখনো আগের মতোই আছে কি না। তবে একমাত্র নিশ্চিত বিষয় হচ্ছে আল্লাহতা’লার আম্বিয়া (عليه السلام)-বৃন্দের মধ্যে একজনের মালিকানাধীন উটনীর সাথে কুয়োটির সংশ্লিষ্টতা। এই সংশ্লিষ্টতাকে এতোই উচ্চমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে যে দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও কুয়োর পানিকে শ্রদ্ধা করা হয়েছে এবং এর আশীর্বাদ-ও বহাল আছে।
__________________
মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)
মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন