নারীদের বিভিন্ন অপরাধ ও আর্থিক কর্মকাণ্ডের চুক্তিতে সাক্ষ্য হিসাবে আদৌ গ্রহণ করা হবে কিনা অথবা তাদের সাক্ষ্য কতটুকু গ্রহণ করা হবে এ নিয়ে বর্তমান সময়ে ইসলামিক স্কলারগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কোন কোন বিষয়ের সাক্ষী নারী কর্তৃক অপরাধ প্রমাণে ব্যবহৃত হবে সে ব্যাপারেও কিছু বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক বিশেষ করে আর্থিক লেনদেনজনিত সুরা বাকারার ২৮২ নম্বর আয়াতের দৃষ্টান্ত তুলে সকল ক্ষেত্রে মহিলার সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক এমন যুক্তিও তুলে ধরা হচ্ছে আর এতে করে নারীবাদীরা বলার সুযোগ পায় যে ইসলাম নারীকে পুরুষের সমান মর্যাদা ও সম্মান দেয়নি। নারী শুধুমাত্র তার নারীত্বের কারনেই পুরুষের সমান জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, পারদর্শিতা ও বুদ্ধিমত্তা থাকার পরও সকল ক্ষেত্রে সাক্ষ্যদানের বিষয়ে এক পুরুষ দুই নারী এই নীতি গ্রহণ করতে হবে-এমন বক্তব্যের সাথেও আধুনিক অনেক স্কলার একমত নন। পবিত্র কুরআনের ‘এক পুরুষ সমান দুই নারীর’ সাক্ষ্য বিষয়ের আয়াতটার অনুবাদ হল-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা একে অন্যের সাথে যখন নির্ধারিত সময়ের জন্য ঋণের (আর্থিক লেনদেন) কারবার করো তখন তা লিখে রাখবে। তোমাদের মধ্যে কোন লেখক যেন ন্যায্যভাবে লিখে দেয়, লেখক লিখতে অস্বীকার করবে না। খোদ আল্লাহ তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং সে যেন লিখে এবং ঋণগ্রহীতা যেন লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয় এবং তার রবকে ভয় করে আর উহার কিছু যেন না কমায় কিন্তু ঋণ গ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলে দিতে না পারে তবে যেন তার অভিভাবক লেখার বিষয়বস্তু বলে দেয়। সাক্ষীদের মধ্যে যাদের উপর তোমরা রাজী তাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ সাক্ষী রাখবে, যদি দুইজন পুরুষ না থাকে তবে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোক, স্ত্রীলোকের একজন ভুল করলে তাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করিয়ে দিবে। সাক্ষীদের যখন ডাকা হবে তখন তারা যেন যেতে অস্বীকার না করে। ছোট হোক বা বড় হোক মেয়াদসহ লিখতে তোমরা কোনরূপ বিরক্ত হয়ো না। আল্লাহর নিকট এটা ন্যায্যতর ও প্রমাণের জন্য দৃঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক না হওয়ার নিকটতর।” ২৮২
২৮২.সূরা বাকারা: ২৮২
একটা আর্থিক লেনদেনের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কুরআন শরীফের দীর্ঘতম সূরার এই দীর্ঘতম আয়াতটা পড়লে তা বুঝা যায়-এর প্রতিটা শব্দ ব্যাখ্যাযোগ্য। এখান থেকে কয়েকটা তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় বের করা যায়-
ক. ঋণ, ধার, বিনিয়োগ আর্থিক লেনদেন নগদ ব্যতীত অন্য যে কোন রূপেই হোক তা লিখিত চুক্তির আকারে হতে হবে।
খ. চুক্তির শর্ত থাকবে, মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকবে, দিন তারিখ থাকবে এবং সাক্ষী থাকবে।
গ. লিখার বিষয়টা ঋণগ্রহীতা ঠিক করবে অর্থাৎ ঋণদাতার শর্তাবলী ঋণ গ্রহীতার কাছে গ্রহণীয় হতে হবে।
ঘ. লিখিত চুক্তিপত্রে কোন অন্যায্য শর্ত চাপিয়ে দেয়া যাবে না।
ঙ. লিখা লিখতে রাজী হবে এই কারণে যে আল্লাহ তাকে লেখাপড়ার জ্ঞান দিয়েছেন।
চ. চুক্তিপত্র লিখার সময় এতটুকু সতর্ক থাকবে যাতে ঋণদাতা ও গ্রহীতার কোন বিষয়বস্তু যেন বাদ না যায়। এ কাজে যেন আল্লাহকে ভয় করে।
ছ. ঋণগ্রহীতা অশিক্ষিত হলে চুক্তিপত্রের শর্ত চাপিয়ে দেয়ার মত কোন বিষয় না হয় সেজন্য সে প্রয়োজনে পেশাদার কোন ব্যক্তির সাহায্য নিবে।
জ. সাক্ষীগণ আস্থাশীল ও স্মরণকারী হবেন। ঋনদানকালে যেন কোন বিষয় ভুলে না যান।
ঝ. সাক্ষীদের তলব করা মাত্র যেন হাযির হতে পারেন এবং অনুপস্থিত থাকার মত অজুহাত তালাশ না করেন।
ঞ. চুক্তিপত্র বিস্তারিত হলে কোন পক্ষ যেন বিরক্ত না হয়।
ইসলাম আর্থিক কাজে চুক্তিতে দুজন নারী সাক্ষীর প্রসঙ্গে বলেছেন তারা বিস্মৃতিপ্রবণ এবং চুক্তির বিষয় ভুলে থাকার আশংকা আছে তাই দুজনের একজন যেন অপর জনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। আর্থিক লেনদেনের মত বিষয়বস্তু আমাদের সমাজে পুরুষরাই সম্পন্ন করেন। ব্যক্তিগত কিংবা ব্যাংক বীমার মতো প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেনে খাপলা বাঁধে না এমন ঘটনা খুবই কম। সময়মত টাকা পরিশোধের সংস্কৃতি সর্বত্রই দুর্বল ফলে এগুলো নিয়ে মামলা মোকদ্দমাও হয়। এখন আদালতে এ রকম একটা ঘটনা ঘটলে পুরুষ যত দ্রুত হাযির হতে পারবে এবং নির্ভয়ে বিচারকের সামনে ঘটনার বর্ণনা দিতে পারবে নারী সংসার, বাচ্চা ও চাকুরী থাকলে সেগুলো সামাল দিয়ে কোর্টে হাযিরার দিন হয়তো যেতে পারবে না। তাছাড়া এই মামলা যে কত বছর চলে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। ফলে একজন মহিলাকে এরূপ একটা জটিল পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার সুবিধা দেওয়াই সমাজ ও সংসারের জন্য কল্যাণ।
আল্লাহপাকের সবচেয়ে বড় হল নারীদের প্রতি মাসেই একটা প্রাকৃতিক অসুস্থতার সম্মুখীন হতে হয়। তখন নারী তার স্বাভাবিক কাজকর্ম কমিয়ে দেয়, আল্লাহও তার বন্দেগীতে ছাড় দেন, তার জন্য নামায, রোযাও স্থগিত করে দেন। তার স্মৃতি পূর্ণভাবে কাজ করে না, মেজাজের ভারসাম্য থাকে না এবং শারীরিক শক্তি সামর্থও হ্রাস পায়। এ সময় তাকে যদি কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করতে হয় তখন তার জন্য সেটা অবশ্যই সুবিচার হয় না। এটা কি নারীর প্রতি আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ নাকি তার সম্মানের জন্য হানিকর? সাক্ষী হওয়া না হওয়ার সাথে তার মর্যাদার সম্পর্ক কি? নারীবাদীরা কি তাদের প্রতি
___________
কিতাব: নন্দিত নারী
লেখক: হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান গণি
আরবি প্রভাষক, জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন