পাক-ভারত উপমহাদেশে ওহাবী ফিতনার অনুপ্রবেশ ও এর সূত্রপাত যাদের মাধ্যমে সংগঠিত হয়েছিল তাদের মধ্যে মৌলভী ইসমাইল দেহলভী অন্যতম। (নিহত ১৮৩১ ইং)
সে আরবের কুখ্যাত মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব নজদীর প্রণীত কিতাবুত তাওহীদ এর তত্ত্বানুসারে উর্দু ভাষায় ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক একটি কিতাব রচনা করে এবং ইহা বহুসংখ্যক মুদ্রিত করে সারা উপমহাদেশে বহুল পরিমাণে তা প্রচার করে। ফলে তার প্রণীত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ কিতাবটি সমগ্র ভারতবর্ষে ওহাবী ফিতনার সুতিকাগার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এবং ওহাবী ফিতনার সূত্রপাত ঘটে।
প্রসঙ্গত আরো উল্লেখ্য যে, ত্রয়োদশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ শাহ আব্দুল আজিজ মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) ও মোজাহিদে মিল্লাত আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী রহমতুল্লাহ আলাইহি উভয়ে পর্যায়ক্রমে যে মুহূর্তে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদের ফতওয়া প্রদান করে ভারতীয় মুসলমানদেরকে সোচ্চার ও জেহাদী চেতনায় উজ্জীবিত করেছিলেন এবং তাদের আপসহীন নেতৃত্বে মুসলমানদের আজাদী আন্দোলনের কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন ঠিক সে সময়ে মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর লিখিত ঈমান বিধ্বংসী ফেতনা ও অনৈক্য সৃষ্টিকারী কিতাব ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ প্রচারের ফলে মুসলমানদের বৃহত্তর ঐক্য ও আজাদী আন্দোলনে ইহা বিরাট আঘাত হানে। ফলশ্রুতিতে এই উপমহাদেশে ইংরেজ স্বার্থ ও ঔপনিবেশ আরো দীর্ঘায়িত হয়।
উপরোক্ত ঈমান বিধ্বংসী কিতাব ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ এর অপতত্ত্ব ও ভ্রান্ত মতবাদসমূহ হারামাইন শরীফাইন তথা মক্বাশরীফ ও মদিনাশরীফের উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজাম অবগত হয়ে তার বিভ্রান্তির কবল থেকে মুসলিমসমাজকে মুক্তির লক্ষ্যে ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ ও তার লেখক মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর বিরোদ্ধে ফতওয়া প্রদান করেন। যা আল্লামা কাযী ফজল আহমদ লুদিয়ানভী তদীয় ‘আনোয়ারে আফতাবে ছাদাকাত’ নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ৫৩৩ পৃষ্ঠায় সংকলন করেন। তা নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো-
لا شك فى بطلان منقول من تقوية الايمان بكونه موافقا للنجدية مأخوذ من كتاب التوحيد لقرن الشيطان وايضاله نسبت تقوية الايمان ومولف ان هذا الدجال والكذاب استحق اللعنة من الله تعالى وملئكة واولى العلم وسائر العالمين الخ ...
অর্থাৎ নিঃসন্দেহে (মৌ: ইসমাইল দেহলভীকৃত) তাকভীয়াতুল ঈমান নামক গ্রন্থটি বাতিল। উহা শয়তানের শিং (মুহাম্মদ বিন আব্দুল ওহাব) নজদীর কিতাবুত তাওহীদ এর অনুকরণে লেখা হয়েছে। এই কিতাবটির রচয়িতা দাজ্জাল কাজ্জাব যা আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ, বিচক্ষণ উলামায়ে কেরাম এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলের পক্ষ থেকে লানত বা অভিশাপ পাওয়ার যোগ্য।’
উক্ত ফতওয়ার মধ্যে মক্বাশরীফ ও মদিনাশরীফ এর যে সকল উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজাম স্বাক্ষর করেছিলেন তাদের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
১. আব্দুহু জামান শায়খ ওমর, মক্বা মুয়াজ্জমা।
২. আহমদ দাহলান, মক্বা মুয়াজ্জমা।
৩. আব্দুহু আব্দুর রহমান, মক্বা মুয়াজ্জমা।
৪. মুফতি মোহাম্মদ আল কবী, মক্বা।
৫. সৈয়দ আল ওয়াছউদ আল হানাফী মুফতি, মদিনা মুনাওয়ারা।
৬. মোহাম্মদ বালী, খতিব মদিনা মুনাওয়ারা।
৭. সৈয়দ ইউসুফ আল আরাবী, মদিনা মুনাওয়ারা।
৮. সৈয়দ আবু মোহাম্মদ তাহির ছিদ্দেকী, মদিনা মুনাওয়ারা।
৯. মোহাম্মদ আব্দুছ ছায়াদত, খতিব মদিনা মুনাওয়ারা।
১০. আব্দুল কাদির দিতাবী, মদিনা মুনাওয়ারা।
১১. মৌলভী মোহাম্মদ আশরাফ খুরাসানী, বেলাওতী, মদিনা মুনাওয়ারা।
১২. শামছুদ্দিন বিন আব্দুর রহমান, মদিনা মুনাওয়ারা।
রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ। (আনোয়ারে আফতাবে ছাদাকাত- ১ম খণ্ড ৫৩৪ পৃষ্ঠা)
হারামাইন শরীফাইনের উপরোক্ত ফতওয়াখানা মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর যুগে ১৮৩১ ইংরেজি সনের পূর্বে প্রদত্ত হয়েছিল।
অনুরূপ মৌলভী ইসমাইল দেহলভীর লিখিত ‘তাকভীয়াতুল ঈমান’ নামক কিতাবের বাতিল আক্বিদা খণ্ডনে মোজাহিদে মিল্লাত আল্লামা ফজলে হক খায়রাবাদী (আলাইহির রহমত) (ওফাত ১৮৬১ ইং ১২৭৮ হিজরি) তিনি ১২৪০ হিজরি রমজানশরীফের ১৮ তারিখে ‘তাহক্বীকুল ফতওয়া’ নামক একখানা কিতাব প্রণয়ন করে মুসলিমসমাজকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন।
উক্ত ফতওয়ার মধ্যে তৎকালীন যুগশ্রেষ্ঠ ১৭ (সতের) জন উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজামের স্বাক্ষর রয়েছে। তন্মধ্যে বিশ্ববিখ্যাত মোহাদ্দিস শাহ ওলী উল্লাহ মোহাদ্দিসে দেহলভী (আলাইহির রহমত) এর নাতী মাওলানা মাখছুছ উল্লাহ (আলাইহির রহমত) ও মাওলানা মুছা (আলাইহির রহমত) ছিলেন অন্যতম।
উল্লেখ্য যে, ‘হুসামূল হারামাইন’ নামক আরো একখানা ফতওয়া ১৩২৪ হিজরি সনে প্রকাশিত হয়। এ ফতওয়াখানা চতুর্দশ শতাব্দীর মোজাদ্দিদ আলা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা শাহ আহমদ রেজা খাঁন বেরলভী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক প্রণীত এবং তৎকালীন মক্বাশরীফ ও মদিনাশরীফের প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে এজাম কর্তৃক প্রশংসিত ও স্বাক্ষরিত।
_______________
ইজহারে হক্ব
লেখক : অধ্যক্ষ শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী (মা:জি:আ:)
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন