যেসমস্ত ঝাড়-ফুঁক নাজায়েজ ও শিরিক-কুফর

 

যেসমস্ত ঝাড়-ফুঁক নাজায়েজ ও শিরিক-কুফর :

মোট কথায় যা অকল্যানকর ও শরীয়ত বিরোধী কুফরী কালাম ব্যবহৃত তাবিজ বা আয়াত দ্বারা যে সমস্ত ঝাড়ফুঁক সেগুলো স্পষ্ট শিরিক-কুফর :

নিম্নে উল্লেখিত বিষয় দ্বারা ঝাড়ফুঁক বা তাবিজ জায়েয নয়:

(১) এমন শব্দ বা বাক্যের অর্থ যা বোধগম্য নয় (এর দ্বারা শরীয়ত বিরোধী কাজ সংঘঠিত হওয়ার আশংকা রয়েছে);


যেমন : আল্লাহর নাম, দুয়ায়ে মানকুলা ইত্যাদি দ্বারা তাবিজ দেয়া জায়েজ। তবে শর্ত হল তাবিজের মধ্যে নিজস্ব মতা আছে মনে করে তার উপর ভরসা না করা। তাছাড়া কুফুরী কালাম দ্বারা তাবিজ দেয়া বা অর্থ জানা যায়না এমন কালাম দ্বারা তাবিজ দেয়া জায়েজ নয়। (আহসানুল ফাতওয়া, খন্ড ৮, পৃঃ ২৫৫)।



(২) আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় (ব্যবহার না করা ভাল), তবে না জায়েজ নয় তা যে কোন ভাষায় হোক না কেন তাতে কুফুরী বাক্য না থাকা অত্যবশ্যক।



(৩) কুফুরী-শিরিকী কালাম দ্বারা;



(৪) ঝাড়-ফুঁকের মধ্যে নিজস্ব ক্ষমতা আছে মনে করা।



(৫) ঝাক-ফুঁক (আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত) নিজের ক্ষমতায় তকদীর পরিবর্তন করতে পারে মনে করা ইত্যাদি।



যে সব হাদীছে ঝাড়ফুঁককে নিষেধ করা হয়েছে বা শিরক বলা হয়েছে তা উপরোক্ত ধরনের ঝাড়ফুঁক, সব ধরনের ঝাড়ফুঁক ওই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়। যেমন আবু দাউদ শরীফের হাদীছ -


ان الرقى والتمائم والتولة شرك


অর্থাৎ, ঝাড়ফুঁক ও তাবীজ শিরক।



পূর্বের হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে বৈধ পন্থায় বৈধ বিষয়ে ঝাড়ফুঁক জায়েয। বর্তমান যুগের গায়রে মুকাল্লিদ ও সালাফীরা তাবীজ-কবজকে নিষিদ্ধ এমনকি শিরক বলে থাকে।



নিচের সমস্ত শিরিক-কুফর সংক্রান্ত হাদিস গুলোর মুল উদ্দেশ্য হল উপরের শর্তসমুহ বা কুফরী-কালাম ব্যবহৃত তাবিজ বা ইহুদী ও বিধর্মীদের বিভিন্ন শরীয়ত বিরোধী মন্ত্র Step 2 তে তাবিজ ঝাড়ফুঁক জায়েজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন :



❏ হাদিস ১:



আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের স্ত্রী যায়নাব আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদের কাছ থেকে বর্ণনা করেন: “আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে ঝাড়ফুঁক তাবিজ ও কবচ হচ্ছে শিরক।” আমি বললাম, ‘আপনি কেন একথা বললেন? আল্লাহর কসম, আমার চোখ দিয়ে অসুখের কারণে পানি ঝরছিল এবং আমি অমুক ইহুদীর কাছে গিয়েছিলাম, সে ঝাড়ফুঁক করতেই পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেল।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘এটা শয়তানের কারসাজি ছিল, সে তার হাত দিয়ে তোমার চোখে খোঁচা দিচ্ছিল,


ইহুদীটি মন্ত্র উচ্চারণ করতেই সে থেমে গেল। কারণ যখন তুমি তাকে মেনে নিচ্ছিলে সে থেমে যাচ্ছিল আর যখন তুমি তার অনুগত হচ্ছিলে না তখন সে খোঁচা দিচ্ছিল। তোমার যা বলা উটিত ছিল তা হচ্ছে এই দু’আ: ইযহাবিল বা’স রাব্বান নাস ওয়া আশফি আনতা আশ শাফি’ লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা, শিফা’ আল লা ইউঘাদিরু সাকামান।’ (অর্থ: মন্দ দূর কর, হে মানবজাতির রব, এবং সুস্থতা দাও, তুমিই সুস্থতা দানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া কোন আরোগ্য নেই, এমন আরোগ্য যা রোগের কোন চিহ্ন রাখে না।)


তথ্যসূত্রঃ


(আবু দাউদ ৩৮৮৩; ইবন মাজাহ ৩৫৩০)



টিকা____________________ 


ইহুদীদের মন্ত্র তো আর কুরআন হাদিস নয় তাই নিষিদ্ধ শিরিক এসব বলা হয়েছে।



❏ হাদিস ২:



ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর পত্নী জয়নাব (رضي الله عنه) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, “এক (● 0) বুড়ি আমাদের বাড়ি আসা যাওয়া করত এবং সে বাতবিসর্প - রোগে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমাদের ছিল লম্বা খুরো বিশিষ্ট খাট। (স্বামী) আব্দুল্লাহ বিন মসউদ যখন বাড়িতে প্রবেশ করতেন, তখন গলা সাড়া বা কোন আওয়াজ দিতেন। একদিন তিনি বাড়িতে এলেন। (এবং অভ্যাস মত বাড়ি প্রবেশের সময় গলা সাড়া দিলেন।) বুড়ি তার আওয়াজ শোনামাত্র লুকিয়ে গেল। এরপর তিনি আমার পাশে এসে বসলেন । তিনি আমার দেহ স্পর্শ করলে (গলায় ঝুলানো মন্ত্র পড়া) সুতো (● 1) তার হাতে পড়ল। তিনি বলে উঠলেন, ‘এটা কি?’ আমি বললাম, ‘সুতা পড়া, বাতবিসর্প রোগের জন্য ওতে  মন্ত্র পড়া হয়েছে (●2) ।’ একথা শুনে তিনি তা টেনে ছিঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘ইবনে মসউদের বংশধর তো শিরক থেকে মুক্ত।’ আমি রাসুল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, “নিশ্চয় মন্ত্র তন্ত্র (●3) , তাবীয কবচ (●4) এবং যাদু-টোনা করা শিরক (●5) ।”


জয়নাব (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, ‘কিন্তু একদা আমি বাইরে বের হলাম। হটাৎ করেই আমাকে অমুক লোক দেখে নিল। অতঃপর আমার যে চোখটা ঐ লোকের দিকে ছিল সেই চোখটায় পানি ঝরতে লাগলো। এর পর যখনই আমি ঐ চোখে মন্ত্র পড়াই, তখনই পানি ঝরা বন্ধ হয়ে যায়। আর যখনই না পড়াই, তখনই পানি ঝরতে শুরু করে। (অতএব বুঝা গেল যে, মন্ত্রের প্রভাব আছে।)’


ইবনে মসউদ  (رضي الله عنه) বললেন, “ওটা তো শয়তানের কারসাজি (●6) । যখন তুমি ( মন্ত্র পড়িয়ে ) ওর অনুগত্য কর, তখন সে ছেড়ে দেয়। (এবং তোমার চোখে পানি আসে না)। আর যখনই তুমি তার অনুগত্য কর না, তখনই সে নিজ আঙ্গুল দ্বারা তোমার চোখে খোঁচা মারে ( এবং তার ফলে তাতে পানি আসে, যাতে তুমি মন্ত্রকে বিশ্বাস কর এবং শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়)। তবে যদি তুমি সেই কাজ করতে, যা আল্লাহর রাসুল (ﷺ) করেছেন, তাহলে তা তোমার জন্য উত্তম ও মঙ্গল হতো এবং অধিকরূপে আরোগ্য লাভ করতে। আর তা এক যে, চোখে পানি ছিটাতে এবং বলতে,


“আযহিবিল বা’স, রাব্বানা-স, ইসফি আন্তাস শা- ফী, লা সিফা-আ ইল্লা সিফ-উক, সিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাকামা।”  


তথ্যসূত্রঃ


(ইবনে মাজাহ ৩৫৩১ নং, সিলসিলাহ সহিহাহ ৩৩১ নং)



টিকা____________________


(● 0)  বুড়িটি ছিল ইহুদী তাই সে তো তাদের দেব-দেবীর মন্ত্রই পড়বে সে তো আর কুরআন হাদিসের মন্ত্র পড়বে না। এতে শিরিক বা কুফুরি কালাম থাকতেই পারে।


(● 1) এটা ছিল ইহুদী মন্ত্র পঠিত সুতা।


(● 2) ওদের দেব-দেবীর নামে মন্ত্র পড়া হয়েছে। আল্লাহ ব্যাতীত অন্য কাউকে প্রভু হিসেবে ডাকা স্পষ্ট শিরিক।


(● 3) ইহুদী-নাসারাদের মন্ত্র


(● 4) তাদের মন্ত্র পঠিত তাবিজ-কবজ ব্যবহার শিরিক।


(● 5) জাদু-টোনা শব্দটি দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়ে গেল এটা বিধর্মীদের তাবিজ-কবজ বা মন্ত্রের কথা বলা হয়েছে।


(● 6) এটা শয়তানের চালাকী। কারন ইহুদী নাসারাগন তাদের ধর্মগ্রন্থ পরিবর্তন করে ফেলেছে। আল্লাহ, তাওরাত,  যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন মাজিদে কোথাও কি নিজে ১ প্রভু হয়ে একাধিক প্রভুর ব্যপারে সমর্থন দিতে পারে? কখনোই না। সুতরাং সেসব মন্ত্র ব্যবহারকারীরা তাদের বিভিন্ন দেব-দেবীর নামে মন্ত্র পড়ে আর এটা মুলত তারা শয়তান থেকে সাহায্য চাওয়া। তাই এখানে স্পষ্ট শিরিকি তাবিজের কথাই নিষেধ করা হয়েছে।




❏ হাদিস ৩:



ঈসা ইবন হামযা বলেন: “আমি আব্দুল্লাহ ইবন আকিমকে দেখতে গিয়েছিলাম, তাঁর মুখ জ্বরে লাল হয়ে গিয়েছিল। আমি বললাম, ‘আপনি কেন তাবিজ ব্যবহার করছেন না?’ তিনি বললেন, ‘আমরা এ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই। রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যে (ব্যক্তি) কোন ধরনের (শরীয়তবিরোধী) তাবিজ পরবে সে সেটার অধীনে আছে বলে বিবেচিত হবে… ’ ”(অর্থাৎ সে তারই উপর নির্ভরশীল) (আবু দাউদ)



টিকা____________________


কুফরী-কালাম ও শিরিকি বাক্য লিখিত তাবিজ ব্যবহার বা যাদু-টোনা শিরিক।



❏ হাদিস ৪:



আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ একদিন তাঁর স্ত্রীকে দেখলেন একটি ● গিঁট দেয়া সূতা গলায় পরতে। তিনি সেটা টেনে ছিঁড়ে ফেলে বললেন, “আব্দুল্লাহর পরিবার আল্লাহর সাথে অন্য কোন কিছুকে শরীক করা থেকে মুক্ত।” তারপর তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি: ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ও ● বশীকরণ (মানে জাদু-টোনার দ্বারা বশীভুত করা) এগুলি হচ্ছে শিরক।”



টিকা____________________


এর মানে হল নাজায়েজ তাবিজ। কারন ● দিয়ে কথাটিতে বশীকরন মানে হল জাদু-টোনা যা স্পষ্ট হারাম ও শিরিক।



❏ হাদিস ৫:



ইমরান ইবন হুসাইন বর্ণনা করেছেন যখন রাসূল (ﷺ) এক ব্যক্তির বাহুতে ● পিতলের বালা দেখতে পেলেন, জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার ধ্বংস হোক! এটা কি?” সে বলল, “এটা তাকে একটা রোগ যার নাম ● আল-ওয়াহিনা (দুর্বলতা, সম্ভবত: বাত), তা থেকে রক্ষা করবে।” রাসূল (ﷺ) তখন বললেন “ওটা ছুঁড়ে ফেলে দাও, কারণ এটা তোমার দুর্বলতাই বৃদ্ধি করবে এবং যদি তুমি এটা পরা অবস্থায় মারা যাও, তুমি কখনও সফল হবে না।” (আহমাদ; ইবন মাজাহ; ইবন হিব্বান)



টিকা____________________ 


তার ধারনা ছিল উক্ত পিতলের বালাই রোগমুক্তির ক্ষমতা রাখে। কিন্তু আমাদের আকিদা হল যেসব  তাবিজ বা ঝাড়ফুঁক জায়েজ সেগুলো শুধুমাত্র উসীলাস্বরুপ সুস্থতা দান করার মালিক আল্লাহ।

যেমন : এই হাদিসের উত্তম ব্যাখ্যা অপর হাদিসে পাওয়া যায়ঃ

রাসূল (ﷺ) বলেন “তোমরা অসুস্থতার চিকিৎসা কর, কিন্তু হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করো না।” (আবু দাউদ, বায়হাকী)।

__________________

কিতাবঃ তাবিজ ও ঝাড়ফুঁকের বিধান

লেখক, অনুবাদক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন