হযরত উমর ফারূক (رضي الله عنه) কর্তৃক ব্যক্ত অনুতাপ
কারো দ্বারা স্মৃতিরোমন্থনে আনন্দ-বেদনার আবেগ-অনুভূতি লাভ করা একেবারেই স্বাভাবিক; তাদের চেহারাতেই ওই অভিব্যক্তি দৃশ্যমান হয়। কোনো আনন্দঘন মুহূর্ত দেখা দিলে মানুষের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে; কিন্তু দুঃখবেদনায় চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে। এই সূত্রে হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه)-এর একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে: হযরত আবদুর রাহমান বিন আবী লায়লা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, হযরত উমর (رضي الله عنه) ফজরের নামাযে আমাদের ইমাম হন। তিনি সূরা ইউসুফ তেলাওয়াত করছিলেন যখন নিম্নের আয়াতে পৌঁছেন – “আর তাঁর নয়নযুগল শোক-সন্তাপে শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছিল, কিন্তু তিনি তাঁর দুঃখ চেপে রেখেছিলেন।” এ সময় হযরত উমর (رضي الله عنه) কাঁদতে থাকেন অঝোর ধারায়। এরপর তিনি রুকু (দাঁড়িয়ে নত) অবস্থায় গমন করেন। [আল-শায়বানী লিখিত ‘কিতা’ব আল-হুজ্জা ‘আলা’ আহল আল-মাদীনা’, ১:১১৩ ও ১১৫-১১৬; এবং আল-তাহা’বী প্রণীত ‘শারহ মা’আনী আল-আসা’র’: কিতা’ব আল-সালা’ত’, ‘ফজর ওয়াক্তের সময়’ শীর্ষক অধ্যায়, ১:২৩৩ #১০৫১]
ইবনে আবযী বলেন, আমি হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর ইমামতিতে নামায পড়ছিলাম। তিনি সূরা ইউসুফ তেলাওয়াত করছিলেন যখন নিম্নের আয়াতে উপনীত হন – “আর তাঁর নয়নযুগল শোক-সন্তাপে শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছিল, কিন্তু তিনি তাঁর দুঃখ চেপে রেখেছিলেন।” এমতাবস্থায় হযরত উমর (رضي الله عنه) কান্নায় আপ্লুত হয়ে পড়েন; অতঃপর তিনি রুকূতে যান। [ইবনে ক্বুদা’মা রচিত ‘আল-মুগ্বনী’, ১:৩৩৫]
এই হাদীসগুলোতে আমরা দেখতে পাই যে হযরত উমর (رضي الله عنه) পয়গম্বর এয়াক্বূব (عليه السلام)-এর কষ্টে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আহাদীসে এবং ক্বুরআন মজীদের তাফসীরগুলোতে এমন অসংখ্য নজির আছে, যা প্রমাণ করে যে ঈমানদারীর নির্যাস মানুষের অন্তরের অন্তস্তলে নিহিত – এই হালত বা আত্মিক/আধ্যাত্মিক অবস্থার ধারণ প্রত্যেক ঈমানদারকে এর মিষ্টস্বাদের আশীর্বাদ এনে দেয়। এমন কি মহানবী (ﷺ)-এর প্রতি ঈমান আনাও মূলতঃ কোনো ঈমানদারের অন্তরসংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য; হুযূর পাক (ﷺ)-এর আনুগত্য ও অনুসরণ-ও তাঁরই প্রতি ঈমানদারের অন্তরের মহব্বত হতে সৃষ্ট। তাঁর আশীর্বাদধন্য বেলাদত (ধরাধামে শুভাগমন)-কে আল-ক্বুরআনে মানবজাতির জন্যে আল্লাহতা’লার সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত (করুণা) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে [আল-ক্বুরআন, ৩:১৬৪]। এই রহমতের প্রতি কীভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যায়? রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর এই শুভাগমনকে তার প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা কীভাবে দেয়া যায়? প্রিয়নবী (ﷺ)-এর জন্যে ঈমানদারের পরম এশক্ব-মহব্বত কীভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে একটি (সিদ্ধান্তের) দিকেই নিয়ে যায়, আর তা হচ্ছে মওলিদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা। এই শুভক্ষণে আমরা সভা-সমাবেশের আয়োজন করি এবং হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর ভালোবাসায় আবেগাপ্লুত হই; আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ-ই তাঁর আনুগত্যে আমরা নিয়ে থাকি।
এই আলোচনার সারমর্ম হলো, অতীত ঘটনাবলীর প্রতি আনন্দ বা দুঃখ প্রকাশ এবং নিজের মধ্যে ওই অবস্থা সৃষ্টি করা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাহ’রই আওতায় পড়ে। যদিও মহানবী (ﷺ)-এর বেলাদত শরীফের পরে চৌদ্দশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, তবুও ধরাধামে তাঁর আশীর্বাদধন্য শুভাগমনকে স্মরণ করে আমরা আমাদের খুশি প্রকাশ করে থাকি। মওলিদুন্নবী (দ) পালনের ক্ষেত্রে যে কারণে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করি তা হলো, নবী করীম (ﷺ) স্বয়ং অতীতে সংঘটিত ঘটনাবলীর ব্যাপারে তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (رضي الله عنه)-কে সেগুলো স্মরণ করতে আদেশ দিয়েছিলেন এবং ওইসব ঘটনার অভিজ্ঞতা নিজেদের (অন্তরের) মধ্যে পুনরায় জীবন্ত করে তুলতে বলেছিলেন। তাই এটা মহানবী (ﷺ) ও তাঁর সাহাবা-এ-কেরাম (ﷺ)-এর সুন্নাহ বটে।
এই ধূলির ধরায় মহানবী (ﷺ)-এর শুভাগমন আল্লাহতা’লার সর্বসেরা রহমত তথা করুণা; এ এক মহা অনুগ্রহ ও ঐশীদান। এই উম্মতের জন্যে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লগ্ন। মা আমেনা (رضي الله عنه) যে আনন্দ ও আবেগের কম্পনভাব অনুভব করেছিলেন, প্রত্যেক মুসলমান-ব্যক্তিকেও অনুরূপ খুশি ও উৎফুল্লচিত্ত হওয়া চাই। মহাসম্মানিত পয়গম্বর সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের উম্মত হিসেবে মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপনের মাধ্যমে এই চৌদ্দশ বছরের (ঐতিহ্যবাহী) ঘটনার স্মৃতি অন্তরে জাগুরূক রাখা আমাদের জন্যে তাই অবশ্যকর্তব্য হয়েছে।
__________________
মওলিদুন্নবী (ﷺ)-এর উদযাপন ও অনুমতি (১ম খণ্ড)
মূল: শায়খুল ইসলাম ড: মুহাম্মদ তাহিরুল কাদেরী
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন