ঘাম মুবারক থেকে বরকত হাসিল-
সায়্যিদুনা হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে,
নবী করিম (ﷺ) হযরত উম্মু সুলাইম (رضي الله عنه)’র ঘরে তাশরীফ নিলেন এবং তাঁর বিছানায় শুয়ে পড়লেন, তিনি (সুলাইম) যখন আসলেন তাকে বলা হল যে, তোমার ঘরে তোমার বিছানায় নবী করিম (ﷺ) শুয়ে আছেন।
তিনি এসে দেখলেন যে, নবী করিম (ﷺ)’র ঘাম মুবারক বের হচ্ছে এবং চামড়ার বিছানার সাথে নবী করিম (ﷺ)’র ঘাম মুবারক মিশে যাচ্ছে।
তখন হযরত উম্মু সুলাইম (رضي الله عنه) নিজের শিশিটি খুললেন এবং ঘাম মুবারক মুছে মুছে শিশিতে নিলেন। তখন রাসূূল (ﷺ) তাকে বললেন, হে উম্মে সুলাইম তুমি কী করছ? তিনি বললেন-
نَرْجُو بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا
আমি এই ঘাম মোবারক বাচ্চাদের জন্য বরকতের আশা রাখি। তখন রাসূল (رضي الله عنه) বললেন, أَصَبْتَ “তোমার আশা সঠিক।” ১৩৩
{ ১৩৩. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১৫ পৃ, হা/২৩৩১, পরিচ্ছেদ: بَابُ طِيبِ عَرَقِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالتَّبَرُّكِ بِهِ , খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬১১পৃ., হা/৫৭৮৮, ইমাম কাযি আয়াজ মালেকী, শিফা শরীফ, ১/৬৩ পৃ.}
আক্বিদা
রাসূল (ﷺ)’র পবিত্র শরীর মুবারাকের সাথে স্পর্শকৃত বস্তু থেকে বরকত হাসিল করা সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) গণের আমল ছিল। আর রাসূূল (ﷺ) এর সত্যায়নও করেছেন। এ বিষয়ে ইমাম মুসলিম (رحمة الله) সংকলন করেন, উক্ত সাহাবী হযরত আনাস ইবনু মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন-
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عِنْدَنَا، فَعَرِقَ، وَجَاءَتْ أُمِّي بِقَارُورَةٍ، فَجَعَلَتْ تَسْلِتُ الْعَرَقَ فِيهَا، فَاسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا الَّذِي تَصْنَعِينَ؟ قَالَتْ: هَذَا عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِي طِيبِنَا، وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ
-‘‘নাবী কারীম (ﷺ) আমাদের গৃহে আগমন করলেন এবং ‘কায়লুলা’ (দ্বিপ্রহরের নিদ্রা) করলেন। তাঁর শরীর থেকে ঘর্ম মুবারক প্রবাহিত হতে লাগল। আমার জননী শিশি নিয়ে এলেন এবং ঘর্ম মুছে তাতে ভরতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চোখ মুবারক খুলে গেল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: উম্মু সুলায়ম! তুমি কি করছো? তিনি বললেন, এ ঘর্ম সুগন্ধি রূপে আমরা ব্যবহার করি। কেননা, এটা অত্যন্ত উৎকৃষ্ট সুগন্ধি।’’ ১৩৪
{১৩৪. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১৫ পৃ, হা/২৩৩১, পরিচ্ছেদ: بَابُ طِيبِ عَرَقِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالتَّبَرُّكِ بِهِ , খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬১১পৃ., হা/৫৭৮৮ }
এ হাদিসের সাথে কিছুটা মিলসহ আরেকটি হাদিসে পাক রয়েছে। ইমাম মুসলিম (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنْ أَنَسٍ، عَنْ أُمِّ سُلَيْمٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِيهَا فَيَقِيلُ عِنْدَهَا فَتَبْسُطُ لَهُ نِطْعًا فَيَقِيلُ عَلَيْهِ، وَكَانَ كَثِيرَ الْعَرَقِ، فَكَانَتْ تَجْمَعُ عَرَقَهُ فَتَجْعَلُهُ فِي الطِّيبِ وَالْقَوَارِيرِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا؟ قَالَتْ: عَرَقُكَ أَدُوفُ بِهِ طِيبِي
-‘‘নাবী কারীম (ﷺ) উম্মু সুলায়ম (رضي الله عنه) এর কাছে আসতেন এবং কায়লুলা করতেন। তিনি তাঁর জন্যে চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন। রাসূল (ﷺ) তাতে কায়লুলা বা দুপুর কালিন বিশ্রাম করতেন। তাঁর খুব বেশি ঘাম নির্গত হত। উম্মু সুলায়ম (رضي الله عنه) এ ঘাম জমা করে আতরের সাথে মিশিয়ে নিতেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: উম্মে সুলায়ম, ঘাম দিয়ে তুমি কি কর? তিনি জাওয়াব দিলেন, আতরের সাথে মিশিয়ে নেই।’’ ১৩৫
{১৩৫. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১৫ পৃ, হা/২৩৩২, পরিচ্ছেদ: بَابُ طِيبِ عَرَقِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالتَّبَرُّكِ بِهِ}
এটাও বুঝা গেল যে, মুহাব্বত এবং আক্বীদার কারণে এমন কোন কাজ করা যা দ্বারা ইসলাম এবং শারীয়াতের মর্যাদার কোন পার্থক্য হয় না, চায় তা নবী করিম (ﷺ) করার জন্য হুকুম দান না করুক। যেমন- তাঁর ঘাম মুবারাক শিশির মধ্যে নেয়া এবং তা হতে বারকাত লাভ করার জন্য তিনি বলেননি। কিন্তু উম্মু সুলাইম (رضي الله عنه) তা নিজের আক্বীদা ও মুহাব্বাতের কারণে করেছেন। রাসূল (ﷺ) তাকে নিষেধ করেননি, বরং তাঁর আক্বীদাকে সত্যায়ন করেছেন। এটিই হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আতের মসলকের জন্য তায়িদ।
____________________
আকাইদে সাহাবাহ
(সাহাবায়ে কিরামদের সাথে সুন্নি আক্বিদার সাদৃশ্য)
মূল:আল্লামা আবুল হামিদ মুহাম্মদ যিয়াউল্লাহ
ক্বাদেরী আশরাফী (رحمة الله)
বঙ্গানুবাদ: মাওলানা হাফেয মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
সূত্রঃ 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন