কুরবানি করা ওয়াজিব হওয়ার দলিল হলো


* মহান আল্লাহ্ পাকের বাণী-

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

-“অতএব, আপনি স্বীয় রবের জন্য নামায পড়–ন এবং কুরবানি করুন।” ৪২


৪২ - সূরা কাউছার: ০২।



আলোচ্য আয়াতে কারিমায় বর্ণিত انْحَرْ আদেশসূচক শব্দটি দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে- এ ব্যাপারে ‘তাফসিরে ইবনে কাছির’-এ বিভিন্ন মতামত উল্লেখ করার পর আল্লামা ইবনু কাছির বলেন:



كُلُّ هَذِهِ الْأَقْوَالِ غَرِيْبَةٌ جِدًّا وَالصَّحِيْحُ الْقَوْلُ الْأَوَّلُ أَنَّ الْمُرَادَ بِالنَّحْرِ ذَبْحُ الْمَنَاسِكِ وَلِهَذَا كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي الْعِيْدَ ثُمَّ يَنْحَرُ نُسُكَهُ



-“এ সকল মতামতই অত্যন্ত দূর্বল। সহিহ মত হচ্ছে, ‘কুরবানির পশু জবাই করা তথা কুরবানি করা’। আর এ জন্যই নবীজি (ﷺ) ঈদের নামায আদায় করতেন এবং এরপরে স্বীয় পশু কুরবানি করতেন।” ৪৩


৪৩ - ইবনু কাছীর, আত-তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৮/৫০৩।



*সুনানু ইবনি মাজাহ্ কিতাবের কুরবানি অধ্যায়ের ‘কুরবানি ওয়াজিব নাকি না?’ শীর্ষক পরিচ্ছেদে এবং ইমাম হাকিম নাইসাবুরি-সহ আরো অনেক ইমাম তাঁদের স্ব-স্ব গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে মারফূ‘ সূত্রে ‘সহিহ্’ সনদে বর্ণনা করেছেন-



أخبرنا الحسن بن الحسن بن أيوب ثنا أبو حاتم الرازي ثنا عبد الله بن يزيد المقري ثنا عبد الله بن عياش ثنا عبد الرحمن الأعرج عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ كَانَ لَهُ مَالٌ فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا وَقَالَ مَرَّةً مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يَذْبَحْ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا هَذَا حَدِيْثٌ صَحِيْحُ الْإِسْنَادِ ولم يخرجاه



-“রাসুলুল্লাহ্ (ﷺ) ইরশাদ করেন: যার নিকট (নিসাব পরিমাণ) সম্পদ আছে, অথচ কুরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের দিকেও না আসে।” হাকিম নাইসাবুরি তাঁর ‘আল-মুসতাদরাক’ কিতাবে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।” ৪৪


৪৪ - ইমাম হাকিম, আল-মুসতাদরাক, হাদিস নং- ৭৫৬৫;


     সুনানু ইবনি মাজাহ, হাদিস নং- ৩১২৩;


     কানযুল উম্মাল, হাদিস নং- ১২২৬১।



এ হাদিসের রাভি হযরত আইয়াশ সম্পর্কে কেউ কেউ আপত্তি করতে চেষ্টা করেন, কিন্তু তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা, তিনি মুসলিম শরিফের বর্ণনাকারী। আবু হাতিম রাযি তাকে ‘সাদূক্ব’ এবং ইবনু হিব্বান তাঁকে ‘ছিক্বাত’ হিসেবে গণ্য করেছেন। আবার হাদিসটি ‘মাওকূফ’ হিসেবেও হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হয়েছে। আর ‘উসূলুল হাদিস’-এর একটি কায়দা হচ্ছে, যখন একই হাদিস মারফূ‘ ও মাওকূফ দু’টি সূত্রেই সহিহ হিসেবে বর্ণিত হয়, তখন মারফূ‘ হিসেবেই প্রাধান্য পাবে। যেমন, ইমাম নবভি তার (আল-মিনহাজ শারহু সহীহ মুসলিম, ৭/১৬) কিতাবে বলেন:



وَلِأَكْثَرِ الْمُحَدِّثِينَ أَنَّهُ إِذَا تَعَارَضَ فِي رِوَايَةِ الْحَدِيثِ وَقْفٌ وَرَفْعٌ أَوْ إِرْسَالٌ وَاِتِّصَالٌ حُكِمُوا بِالْوَقْفِ وَالْإِرْسَالِ وَهِيَ قَاعِدَةٌ ضَعِيْفَةٌ مَمْنُوعَةٌ وَالصَّحِيحُ طَرِيْقَةُ الْأُصُولِيِّيْنَ وَالْفُقُهُاءِ وَالْبُخَارِيِ وَمُسْلِمٍ وَمُحَقِّقِي الْمُحَدِّثِينَ أَنَّهُ يُحْكَمُ بِالرَّفْعِ وَالْاِتِّصَالِ لِأَنَّهَا زِيَادَةُ ثِقَةٍ



উল্লেখিত কুরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কুরবানি করার হুকুম হলো ‘ওয়াজিব’।



তবে ইমাম শাফেয়িসহ কিছু কিছু ইমামের মতে কুরবানি করা ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ’। কেননা হাদিস শরিফে এসেছে- مَنْ اَرَادَ اَنْ يُّضَحَّي مِنْكُمْ فَلَا يَأْخُذُ مِنْ شَعْرَةٍ وَاَظْفَارِهِ شَيْئًا -“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কুরবানি করতে ইচ্ছা করবে, সে যেন চুল ও শরীরের চামড়া হতে কোন কিছু না কাটে।” এ বর্ণনায় যেহেতু ‘ইচ্ছা করবে’ বলে কুরবানিকে ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে, তাই তা ওয়াজিব হবে না, বরং সুন্নাত হবে।



আমাদের পক্ষ হতে এর জবাব হলো- ‘ইচ্ছা করা’ শব্দটি এখানে ওয়াজিবের বিপরীতার্থে ব্যবহার হয় নি, বরং ‘নিয়্যত করা’ অর্থে ব্যবহার হয়েছে। হাদিস শরিফে ‘ইচ্ছা করা’-র কথাটি ফরয ইবাদাতের ক্ষেত্রেও বর্ণিত হয়েছে। যেমন, হজ্জ সম্পর্কে নবীজি ফরমান-


 مَنْ اَرَادَ مِنْكُمُ الْحَجَّ فَلْيَتَعَجَّلْ


-“তোমাদের মধ্যে যে হজ্জ আদায়ের ইচ্ছা করল, সে যেন তারাতারি করে।” ৪৫


৪৫ - আবু দাউদ, আস-সুনান।

_________________

কুরবানি (ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও আহকাম)

গ্রন্থনা ও সংকলন:

মুফতি মুহাম্মদ আলমগীর হোসাইন আন-নাজিরী

অধ্যক্ষ, জামি‘আ-এ-‘ইলমে মদীনা, নেত্রকোণা

 🌍 ইসলামী বিশ্বকোষ এপ্স।

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.islamboi.rizwan]


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন