ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ২৮৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘প্রচলিত আছে যে, আদম (عليه السلام) ও হাওয়ার (عليه السلام) মধ্যে বিবাহের মোহরানা ছিল দরূদ শরীফ পাঠ ....ইতাদি এ সকল কথার কোনো ভিত্তি বা সনদ আছে বলে জানা যায় না।’’
উক্ত মূর্খ বক্তব্যের জবাব:
এখানে বলা বাহুল্য যে, আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের না জানাটা কোন শরীয়তের দলীল হতে পারে না, বরং এ সমস্ত বক্তব্য দ্বারা তার মূর্খতার প্রমাণই বহন করে।
✦ ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله), ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) ও ইমাম জুরকানী (رحمة الله) ঘটনাটি বর্ণনা করেন। হাদিসটি হল :
وذكر ابن الجوزى فى كتابه سلوة الأحزان : أنه لما رام القرب منها طلبت منه المهر، فقال: يا رب، وماذا أعطيها، فقال: يا آدم صل على حبيبى محمد بن عبد الله عشرين مرة، ففعل -
-‘‘নিশ্চয়ই হযরত আদম (عليه السلام) যখন হাওয়া (عليه السلام) এর নিকটবর্তী যাওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা মহর আদায় করার জন্য বললেন। হযরত আদম (عليه السلام) বললেন, হে প্রভু! আমি তার জন্য কী মহর প্রদান করবো? তখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইরশাদ ফরমান, হে আদম (عليه السلام)! তুমি আমার হাবীব মুহাম্মদ (ﷺ)-এর প্রতি বিশ বার দরূদ শরীফ পড় তাহলে তোমার মহর আদায় হয়ে যাবে। অতপর তিনি তা করলেন।’’ ৩৩
৩৩.
ক. আল্লামা ইমাম ইবনুল জাওযী : سلوة الاحزان : ১৪২ পৃ.
খ. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/৭৬ পৃ.
গ. আল্লামা ইমাম জুরকানী : শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/১০১ পৃ.
ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৪৬ পৃ.
✦ অনুরূপ ঘটনাটি কিছুটা শব্দ পরিবর্তন করে আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) তাঁর জাওয়াহিরুল বিহার এর ৩য় খণ্ডের ৩৪৬ পৃষ্ঠায় এভাবে বর্ণনা করেছেন,
ثم دخل أدم الجنة ونوره صلى الله عليه وسلم يلمع فى جبينه ، فبينما هو فى الجنة اذا خلق الله تعالى حواء من ضلعه الا يسر فأراد أن يمد يده اليها ، فكفته الملائكة فقالت: مه يا أدم حتى تؤدى مهرها قال : وما مهرها؟ قالوا: أن تصلى على سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم عشرين مرة-
-‘‘হযরত আদম (عليه السلام) যখন জান্নাতে প্রবেশ করলেন এবং নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) তাঁর পেশানীতে চমকাতে ছিল, তখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা আদম (عليه السلام) এর বাম পাঁজরের হাড় হতে হাওয়া (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন। হযরত আদম (عليه السلام) হাওয়া (عليه السلام) কে হাত দ্বারা ধরতে গেলেন, এমন সময় ফেরেশতারা নিষেধ করে বললেন, আপনি (عليه السلام) মহরানা আদায় করুন। হযরত আদম (عليه السلام) ফেরেশতাদেরকে বললেন, কী মহর প্রদান করবো? তখন ফেরেশতারা বললো, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর প্রতি ২০ বার দরূদ শরীফ পড়ুন।’’ ৩৪
৩৪.
ক. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী: জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৪৬ পৃ.
খ. আল্লামা ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/৭৬ পৃ.
গ. আল্লামা জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব, ১/১৭২ পৃ.
ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : আনোওয়ারে মুহাম্মাদিয়া : ১১ পৃ.
✦ অপরদিকে ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) তিন বার দরূদ শরীফ পড়ার অন্য আরেকটি রেওয়ায়েত পেশ করেছেন। যেমন, তার ভাষ্য হল নিম্নরূপ-
وعن ابن عباس: كان يوم الجمعة من وقت الزوال إلى العصر.ثم خلق الله تعالى له حواء زوجته من ضلع من أضلاعه اليسرى، وهو نائم، وسميت حواء لأنها خلقت من حى، فلما استيقظ ورآها سكن إليها، فقالت الملائكة مه يا آدم، قال: ولم وقد خلقها الله لى؟ فقالوا: حتى تؤدى مهرها، قال: وما مهرها؟ قالوا: تصلى على محمد- صلى الله عليه وسلم- ثلاث مرات -
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। জুম‘আর দিন জোহর থেকে আসর পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে আল্লাহ্ হাওয়া (عليه السلام) কে হযরত আদম (عليه السلام) এর বাম পাজর থেকে সৃষ্টি করলেন, আর তখন তিনি ঘুমায়ে ছিলেন। .....আদম (عليه السلام) যখন হাওয়া (عليه السلام) এর নিকট গেলেন তখন ফিরিশতা মহরানা আদায় করতে বললেন, তখন আদম (عليه السلام) বললেন তার মহরানা কী? তখন ফিরিশতারা বললেন, আপনি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর উপর তিনবার দরুদ শরীফ পড়ুন।’’ ৩৫
৩৫.
ক. ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ১/৭৬ পৃ. মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন।
খ. ইবনে কাসির : বেদায়া ওয়ান নেহায়া : ১/৭৪ পৃ.
গ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মাওয়ারিদুর-রাবি ফি মওলুদুন্নবী : পৃ. ১৫ পৃ.
ঘ. ইমাম দিয়ার বকরী, তারিখুল খামীস, ১/৪৭ পৃ.
এছাড়া আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), ইবনে কাসির, কাস্তালানী (رحمة الله) তাদের প্রসিদ্ধ গ্রন্থে হাদিসটি গ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। আজ পর্যন্ত কোনো মুহাদ্দিস বিষয়টিকে মিথ্যা বা বানোয়াট বলেননি।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন