বিষয় নং-১: রাসূল (ﷺ) এর নাম শুনে চুমু খাওয়ার হাদিস সম্পর্কে তাত্ত্বিক দীর্ঘ আলোচনা:
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৪৮২ পৃষ্ঠায় এবং মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ১১৭ পৃষ্ঠায় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)‘র নাম শুনে চুমু খাওয়ার হাদিসকে জাল প্রমাণ করার অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছেন। মাওলানা মুতীউর রহমান লিখিত বিভ্রান্তিকর আরেক পুস্তক ‘এসব হাদীস নয়’ ১০৭ পৃষ্ঠায়ও বিনা প্রমাণে একে জাল বলে উল্লেখ করেছেন। ড. আহমদ আলী তার ‘বিদআত’ পুস্তুকের প্রথম খণ্ডেও জাল প্রমাণ করতে অনেক অপচেষ্টা করেছেন। এ হাদিসটির বিরোদ্ধে অপপ্রচারের জন্য বাংলা ভাষায় অনেক পুস্তক রচিত হয়েছে তাদের সকলের নাম কিতাব দীর্ঘায়িত হওয়ার আশংঙ্কায় উল্লেখ করলাম না।
আমি এ ব্যাপারে যতগুলো সূত্র বর্ণিত হয়েছে সবগুলো সূত্রই এখানে উল্লেখ করবো ইনশা আল্লাহ।
ক. এ ব্যাপারে হযরত আদম (عليه السلام) এর আমলঃ
❏ বিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাঁর উল্লেখযোগ্য তাফসীর তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ লিখেন,
وفى قصص الأنبياء وغيرها ان آدم عليه السلام اشتاق الى لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان فى الجنة فاوحى الله تعالى اليه هو من صلبك ويظهر فى آخر الزمان فسأل لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان فى الجنة فاوحى الله تعالى اليه فجعل الله النور المحمدي فى إصبعه المسبحة من يده اليمنى فسبح ذلك النور فلذلك سميت تلك الإصبع مسبحة كما فى الروض الفائق. او اظهر الله تعالى جمال حبيبه فى صفاء ظفرى ابهاميه مثل المرآة فقبل آدم ظفرى ابهاميه ومسح على عينيه فصار أصلا لذريته فلما اخبر جبرائيل النبي صلى الله عليه وسلم بهذه القصة قال عليه السلام (من سمع اسمى فى الاذان فقبل ظفرى ابهاميه ومسح على عينيه لم يعم ابدا
-‘‘কাসাসুল আম্বিয়া কিতাবে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম (عليه السلام) জান্নাতে অবস্থানকালে মহানবি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)‘র সাথে সাক্ষাতের জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেন। অত:পর আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর নিকট ওহী প্রেরণ করেন যে, হে আদম! তিনি তোমার পৃষ্ঠ হতে শেষ যামানায় প্রকাশ হবেন। তা শুনার পর তিনি জান্নাতে অবস্থানকালে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানালেন। বিনিময়ে আল্লাহ্ তা‘য়ালা ওহী প্রেরণ করলেন, যে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) তোমার ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলীর মধ্যে স্থানান্তরিত করেছি, তখন সে অঙ্গ হতে তাসবীহ পাঠ আরম্ভ হলো। এজন্যই এই আঙ্গুলকে তাসবীহ পাঠকারী আঙ্গুল বলা হয়। যেমন ‘রওযাতুল ফায়েক’ কিতাবেও বর্ণিত আছে, অথবা আরেক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ্ তা‘য়ালা আপন হাবীব (ﷺ) এর সৌন্দর্য প্রকাশ করলেন দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর উপর যেভাবে আয়নাতে দেখা যায়। তখন আদম (عليه السلام) দুই বৃদ্ধাঙ্গুলে চুম্বুন করে স্বীয় চোখের উপর মালিশ করলেন। এটি দলীল হিসেবে প্রমাণিত হলো যে, তাঁর সন্তানাদীর জন্য। অতঃপর জিবরাঈল (عليه السلام) এই ঘটনা হুযূর (ﷺ) কে জানালেন। হুযূর (ﷺ) বললেন, যেই ব্যক্তি আযানের মধ্যে আমার নাম মোবারক শুনে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করবে আর চোখে মালিশ করবে, সে কখনো অন্ধ হবে না।’’ ১
১. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ৭/২২৯ পৃ. সূরা মায়েদা আয়াত : ৫৭ নং এর ব্যাখ্যা, আবদুর রহমান ছাফুরী, নুযাহাতুল মাযালিস, ২/৭৪ পৃ.।
খ. হযরত মূসা (عليه السلام)-এর যুগে আমল:
❏ ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ جَعْفَرٍ، ثنا أَبُو بَكْرٍ الدَّيْنُورِيُّ الْمُفَسِّرُ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَيُّوبَ الْعَطَّارُ، ثنا عَبْدُ الْمُنْعِمِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ وَهْبٍ قَالَ: كَانَ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ رَجُلٌ عَصَى اللهَ مِائَتَيْ سَنَةٍ ثُمَّ مَاتَ، فَأَخَذُوا بِرِجْلِهِ فَأَلْقُوهُ عَلَى مِزْبَلَةٍ، فَأَوْحَى اللهُ إِلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنِ اخْرُجْ فَصَلِّ عَلَيْهِ. قَالَ: يَا رَبِّ، بَنُو إِسْرَائِيلَ شَهِدُوا أَنَّهُ عَصَاكَ مِائَتَيْ سَنَةٍ، فَأَوْحَى اللهُ إِلَيْهِ: هَكَذَا كَانَ، إِلَّا أَنَّهُ كَانَ كُلَّمَا نَشَرَ التَّوْرَاةَ وَنَظَرَ إِلَى اسْمِ مُحَمَّدٍ ﷺ قَبَّلَهُ وَوَضَعَهُ عَلَى عَيْنَيْهِ، وَصَلَّى عَلَيْهِ، فَشَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ، وَغَفَرْتُ ذُنُوبَهُ، وَزَوَّجْتُهُ سَبْعِينَ حَوْرَاءَ
-‘‘৭১টি আসমানী কিতাবের জ্ঞানী হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه) বলেন, বনী ইসরাঈলের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল অত্যন্ত পাপী যে ২০০ বছর পর্যন্ত আল্লাহর নাফরমানী করেছিল, যখন সে মৃত্যুবরণ করে মানুষেরা তাকে এমন স্থানে নিক্ষেপ করল, যেখানে আবর্জনা ফেলা হতো। তখন হযরত মূসা (عليه السلام) এর প্রতি ওহী এলো যে, লোকটিকে ওখান থেকে তুলে যেন তার ভালভাবে জানাযার নামায পড়ে তাঁকে দাফন করা হয়। হযরত মূসা (عليه السلام) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! বনী ইসরাঈল সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, লোকটি ২০০ বছর পর্যন্ত তোমার নাফরমানী করেছিল। ইরশাদ হলো, হ্যাঁ, তবে তার একটি ভাল অভ্যাস ছিল। যখন সে তাওরাত শরীফ তেলাওয়াত করতো, যতবার আমার হাবীব হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর নাম মোবারক দেখত তখন সেটা ততবার চুম্বন করে চোখের উপর রাখতো এবং তার প্রতি দুরূদ পাঠ করত। এজন্য আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং সত্তর জন হুর স্ত্রী স্বরূপ তাকে দান করেছি।’’ ২
২. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পহানী: হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৩/১৪২ পৃ., আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালভী : সিরাতে হালবিয়্যাহ ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা-৮৩, আল্লামা শফী উকাড়ভী : জিকরে জামীল : ৩৫৪ পৃষ্ঠা, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা :১/৩০ পৃ. হা/৬৮, মাকতুত-তাওফিকহিয়্যাহ, বয়রুত, আল্লামা আবদুর রহমান ছাফ‚রী : নুযহাতুল মাযালিস : ২/১৪২ পৃ., আল্লামা দিয়ার বকরী : আল খামীস ফি আহওয়ালে আনফাসে নাফীস : ১/২৮২ পৃ.
সনদ পর্যালোচনা:
এ হাদিসটিকে আমি ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله)-এর শর্তানুসারে ‘হাসান’ মত পোষণ করে থাকি।
✦ ইমাম হাকেম তার আল-মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে ‘আবদুল মুনাঈম বিন ইদরীস’ যিনি এ হাদিসের বর্ণনাকারী হযরত ওহ্হাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه)-এর আপন নাতী ছিলেন তার হাদিসকে সহীহ বলেছেন।
✦ উক্ত হাদিসটিকে এক দেওবন্দী আলেম মাওলানা আবদুল মালেক তার ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ২৩৪ পৃষ্ঠায় এটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। উক্ত রাবীর বিষয়ে দেওবন্দী হযরত লিখেছেন যে, তার পিতা থেকে তার হাদিস শুনা প্রমাণিত নয়; অথচ ইমাম খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন-
حدث عن أبيه بكتاب المبتدأ
-‘‘তিনি তার পিতার কিতাব ‘মুবতাদা’ গ্রন্থ হতে বর্ণনা করতেন।’’
✦ ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
روى عن ابيه عن جده وهب بن منبه
-‘‘তিনি তার পিতা থেকে এভাবে তার দাদা থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন।’’ তাই বুঝা গেল যে তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করা মানে তার পিতার পাণ্ডুলিপি থেকে বর্ণনা করা। তিনি উক্ত রাবীকে ইমাম ইবনে মাঈনের একটি মতামত উল্লেখ করে (অথচ তার থেকে উক্ত ৩ রাবী বিষয়ে আরেকটি মত রয়েছে) এবং ইমাম আহমাদের অর্ধেক ইবারত দ্বারা তিনি দাবি করেছেন যে এটি জাল। এই হাদিসটি কোন আহকাম সংক্রান্ত নন; যার কারণে মুহাদ্দিসগণ কঠোর যাচাই বাছাই করেননি। এ রাবীর বিষয়ে হুকুম হল তিনি যখন কোন যুহুদ, রিকাক সংক্রান্ত কোন হাদিস বর্ণনা করতেন তা মুহাদ্দিসগণ লিপিবদ্ধ করতেন। আর উক্ত ৪ রাবী যখন আহকাম সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনাকারী হন সে ক্ষেত্রে তিনি সিকাহ নন; বরং যঈফ।
৩. খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ১১/১৩৩ পৃ. ক্রমিক. ৫৮২৫, ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলামী, ৫/৬২৬ পৃ. ক্রমিক. ২৬৮
৪. ইমাম আবু হাতেম, র্জারাহ ওয়া তা‘দীল, ৬/৬৭ পৃ. ক্রমিক. ৩৫৩
✦ বিশ্ববিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
قال ابن معين: يكتب من حديثه الرقاق
-‘‘আমরা তাঁর রিকাক সংক্রান্ত হাদিসগুলো লিপিবদ্ধ করতাম।’’ ৫
৫. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত-তাহযিব, ১/১৯৪ পৃ., তাহযিবুল কামাল, ২/২৯৯ পৃ.
✦ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ (৬) মুনাঈম সুপ্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ছিলেন।
৬. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত-তাহযিব, ১/১৯৪ পৃ.
✦ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-
رَوَى عَنْهُ: أبو بكر بن أبي الدُّنيا، ومحمد بن أحمد بن البراء، وجماعة.
-‘‘তার থেকে বিখ্যাত হাদিসের ইমাম আবু বকর আবিদ্দুনীয়া (رحمة الله) ও মুহাম্মদ বিন আহমদ ইবনে বার (رحمة الله)সহ এক জামাত মুহাদ্দিগণ হাদিস বর্ণনা করেছেন।’’ (ইমাম যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৫/৬২৬ পৃ.)
আহকাম সংক্রান্ত হাদিসে তিনি দুর্বল। যেমন-ইমাম আহমদ ইবনে শুয়াইব নাসাঈ (رحمة الله) বলেন-
حَدَّثَنَا أبي قال: عبد المنعم بن إدريس لَيْسَ بثقة.
-‘‘তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত নয়।’’ ৭
৭. খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ১১/১৩৫ পৃ. ক্রমিক. ৫৮২৫, নাসাঈ, দ্বুআফা ওয়াল মাতরুকুন, ১/৭০ পৃ. ক্রমিক. ৩৮৭
✦ এমনটি ইমাম আলী ইবনে মাদীনী (رحمة الله)ও বলেছেন। ৮
৮. ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৫/২৯৯ পৃ.
✦ ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেন- لَا يكْتب حَدِيثه-‘‘তার হাদিস আমরা লিপিবদ্ধ করতাম না।’’ ৯
৯. যাহাবী, তারিখুল আওসাত, ২/১৭৯ পৃ. ক্রমিক. ২২২০
✦ তবে ইমাম হাকেমের (رحمة الله) বিখ্যাত হাদিসের গ্রন্থ ‘আল-মুস্তাদরাকে’ তার থেকে তিনি ১৬ টি হাদিস সংকলন করেন। যেমন উদাহরণ দেখুন-
أَخْبَرَنَا الْحَسَنُ بْنُ مُحَمَّدٍ الْإِسْفَرَايِينِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ الْبَرَاءِ، ثنا عَبْدُ الْمُنْعِمِ بْنُ إِدْرِيسَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: وَسُئِلَ وَهْبُ بْنُ مُنَبِّهٍ.....
৪০৬৩ - سكت عنه الذهبي في التلخيص
ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) একে সহীহ বলেছেন আর যাহাবী (رحمة الله) (سكت عنه الذهبي في التلخيص) এর বিষয়ে চুপ থেকেছেন। (ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, হা/৪০৬৩)
✦ এমনিভাবে ইমাম হাকেমের অনেকগুলো হাদিসের বিষয়ের সাথে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) চুপ থেকে থেকে একমত পোষণ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ১০
১০.ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ২/৬১৫ পৃ. হা/৪০৬৩, ২/৬২০ পৃ. হা/৪০৭৩, ২/৬৩৬ পৃ. হা/৪১১৮, ২/৬৩৯ পৃ. হা/৪১২৮, ২/৬৪০ পৃ. হা/৪১৩০
তাহলে বুঝা গেল, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক সাহেব তাদের থেকে বড়বিজ্ঞ। কেউ কেউ ইমাম আহমদ (رحمة الله) এর বরাত দিয়ে তাকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করতে চান, মূলত তিনি তাকে মিথ্যাবাদী বলার উদ্দেশ্য ছিল তিনি তার পিতা থেকে শুনা প্রসঙ্গে নিয়ে। যাই হোক এই হাদিস কখনই জাল হতে পারে না। এ ধরনের হাদিসের উপর আমল করা মুস্তাহাব হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
✦ এই হাদিসটি ইমাম হালাবী (رحمة الله) ও ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সিরাত গ্রন্থে সংকলন করেছেন। আল্লামা বুরহান উদ্দিন হালাবী (رحمة الله) তার বিখ্যাত সিরাত গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেন-
ولا يخفى أن السير تجمع الصحيح والسقيم، والضعيف والبلاغ، والمرسل والمنقطع والمعضل دون الموضوع-
-‘‘সীরাত গ্রন্থ সমূহে সহিহ, সাক্বীম, দ্বঈফ, বালাগ, মুরসাল, মুনকাতা ও মু‘দাল হাদিস সমূহ একত্রিত করা হয়, কিন্তু মওদ্বু বা জাল হাদিস নয়।’’ ১১
১১. আল্লামা বুরহান উদ্দিন হালবী : সিরাতে হালবিয়্যাহ : ১ম খণ্ড : পৃ-৭
গ. হযরত খিযির (عليه السلام) কর্তৃক রাসূল (ﷺ)‘র নাম শুনে চুমু খাওয়ার আমল:
✦ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) সংকলন করেন-
ما أورده أبو العباس أحمد ابن أبي بكر الرداد اليماني المتصوف في كتابه "موجبات الرحمة وعزائم المغفرة بسند فيه مجاهيل مع انقطاعه، عن الخضر عليه السلام أنه: من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمد رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه ﷺ ، ثم يقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يرمد أبدا-
-‘‘ইমাম আবু আব্বাস আহমদ বিন আবি বকর ইয়ামানী (رحمة الله) তাঁর লিখিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
موجبات الرحمة و عزائم المغفرة
এর মধ্যে হযরত খিযির (عليه السلام) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসূলূল্লাহ’ শোনে বলবে,
مرحبا بحبيبى و قرة عينى محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم ) মারহাবা বি হাবিবি ওয়া কুররাতো আইনী মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ (ﷺ)) অতঃপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে তার চোখে কখনও ব্যথা হবে না এবং সে কোন দিন অন্ধ হবে না।’’ ১২
১২.
(ক) আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/৩৮৩ : হা/১০২১
(খ) আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ : হা/২২৯৬
(গ) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওদ্বুআতুল কাবীর : ১০৮ পৃ
(ঘ) মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জাআল হক : ২/২৪৬ পৃ
সনদটি ইনকিতা হওয়ার কারণে যঈফ, উসূলে হাদিসবিদগণ একমত যে ইনকিতার জন্য হাদিস যঈফ, জাল হয় না। এবার আমি হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিস নিয়ে পর্যালোচনা করবো।
ঘ. প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)‘র আমল:
❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أشهد أن محمد رَسُولُ اللَّه قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ ﷺ : مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي، رواه الديلمى المسند الفردوس
-‘‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি মুয়ায্যিনকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার’ রাসূলূল্লাহ বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন। তা দেখে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর ন্যায় আমল করবে, তার জন্য আমার সুপারিশ বৈধ হয়ে গেল।’’ ১৩
১৩.
ক. ইমাম আবদুর রহমান সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৩ পৃ. : হা/১০২১
গ. আল্লামা ইমাম আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৫৯ পৃ. হা/২২৯৬
ঘ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূ : ৩১২ পৃ. হা/৪৫৩
ঙ. আল্লামা ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১৬৫ পৃ., কিতাবুল আযান
চ. শাওকানী : ফাওয়াহিদুল মাওদ্বুআত : ১/৩৯ পৃ.
ছ. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ.
জ. আল্লামা তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওদ্বুআত : ৩৪ পৃ.
ঝ. আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়তী : লা-আলীল মাসনূআ : ১৬৮-১৭০ পৃ.
ঞ. আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী : আসারুল মারফ‚আহ, ১৮২ পৃ.
ঠ. আলবানী : সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১/১০২ পৃ. হা/৭৩
এ হাদিসের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের অভিমত:
এ হাদিসের বিষয়ে এখন গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসগণের অভিমত তুলে ধরবো ইনশা আল্লাহ।
১. ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র অভিমত
✦ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিসটি সংকলন করে বলেন, لا يصح ‘হাদিসটি সহীহ পর্যায়ভুক্ত নয়।’ ১৪
১৪. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ. : হা/১০২১
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, দেখুন ইমাম সাখাভী (رحمة الله) কী বললেন, আর ‘এসব হাদিস নয়’ গ্রন্থের ১০৭ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান কি লিখেছেন। তিনি লিখেছেন ইমাম সাখাভী (رحمة الله) নাকি বলেছেন, ‘এটি প্রমাণিত নয়’ বলেছেন। দেখুন ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র নামে বাংলা ভাষায় কী ধরনের মিথ্যাচার করেছে। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের বাংলায় কতিপয় মুহাদ্দিসদের নাম উল্লেখ করে এ হাদিসকে জাল বলে চালিয়ে দেবার অহেতুক অপচেষ্টা চালিয়েছেন।
আমি কিতাবের ভূমিকায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি যে, কোনো মুহাদ্দিসদের বক্তব্য ‘হাদিসটি সহীহ নয়’ বললে তা দ্বারা জাল হওয়া বুঝায় না। বরং ‘হাসান’ বা কমপক্ষে যঈফ হওয়া বুঝায়।
✦ এমনকি মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন,
قَوْلَ السَّخَاوِيِّ لَا يَصِحُّ لَا يُنَافِي الضَّعْفَ وَالْحُسْنَ
-‘‘ইমাম সাখাভী (رحمة الله)-এর বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ এর দ্বারা হাদিসটি ‘হাসান’ এবং (কমপক্ষে) যঈফ হওয়াতে নিষেধ করে না।’’ ১৫
১৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসারুল মারফ‚আ, ২৩৬ পৃ.
বুঝা গেল, হাদিসটি কমপক্ষে ‘হাসান’ হাদিস যা দলীল হিসেবে দাঁড় করানোর গ্রহণযোগ্যতা রাখে। কোনো মুহাদ্দিসদের বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কী বুঝায় এ সম্পর্কে হাদিসের নীতিমালায় কিতাবের শুরু আমি বিস্তারিত আলোচনা করে এসেছি, পাঠকবৃন্দের সেখোনে নেয়ার অনুরোধ রইলো।
২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)‘র অভিমত:
✦ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর গ্রন্থে ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র রায় পেশ করে সমাধানের কথা লিখেন যে-
قُلْتُ وَإِذَا ثَبَتَ رَفْعُهُ عَلَى الصَّدِّيقِ فَيَكْفِي الْعَمَلُ بِهِ لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسِنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِين َمن بعدى-
-‘‘আমার কথা হলো হাদিসটির সনদ যেহেতু হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) পর্যন্ত প্রসারিত (মাওকুফ হিসেবে প্রমাণিত), সেহেতু আমলের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কেননা হুযূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, তোমরা আমার পর আমার সুন্নাত ও আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আকড়ে ধরো।’’ ১৬-১৭
১৬.
ক. ইমাম আবু দাউদ : আস্-সুনান : হা/৪৬০৭, হযরত উমর (رضي الله عنه) এর সূত্রে।
খ. ইমাম তিরমিযী : আস্-সুনান : হা/২৬৭৬
গ. ইমাম ইবনে মাজাহ : আস্-সুনান : হা/৪২
ঘ. ইমাম ইবনুল বার : জামিউল বায়ান ওয়াল ইলমে বি ফাদ্বলিহী : ২/৯০ পৃ
ঙ. ইমাম আহমদ : আল মুসনাদ : ৪/১২৭ পৃষ্ঠা, হযরত ইরবায বিন সারিয়া (رضي الله عنه) এর সূত্রে।
১৭.
ক. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওদ্বুআতুল কাবীর : ৩১৬ : হা/৪৫৩
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসারুল মারফ‘‚আ : ২১০ : হা/৮২৯
গ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ পৃ. হা/২২৯৬
দেখুন! আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেছেন যে, এতটুকুই যথেষ্ট যেহেতু হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) আমলটি করেছেন এবং তিনি পর্যন্ত সনদটি প্রসারিত, তাই বুঝা গেল যারা না করবে এবং আমলটিকে অস্বীকার করে তারা সাহাবীদের বিরোধী ৭২ দলের সদস্য, বাতিল ফির্কা হিসেবেই গণ্য। অপরদিকে ধোঁকাবাজ ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থে মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)এর বক্তব্যটিকে বিকৃত করে বর্ণনা করেছেন।
৩-৪. আল্লামা তাহের পাটনী ও শাওকানীর অভিমতঃ
✦ আহলে হাদিস মাওলানা কাযী শাওকানী তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ফাওয়াহিদুল মওদ্বুআত ১/১৯ পৃষ্ঠায় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনার পর লিখেন,
رواه الديلمى فى مسند الفردوس عن ابى بكر مرفوعا قال ابن طاهر فى التذكرة: لا يصح
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম দায়লামী (رحمة الله) ‘মুসনাদিল ফিরদাউস’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন মারফূ হিসেবে (যার সনদ রাসূল (ﷺ) পর্যন্ত পৌঁছেছে) উক্ত হাদিস সম্পর্কে আল্লামা তাহের পাটনী (رحمة الله) তার ‘তাযকিরাতুল মওদ্বুআত’ গ্রন্থে বলেন, হাদিসটি ‘সহীহ পর্যায়ের নয়’।’’
আর আল্লামা তাহের পাটনীর মূল বক্তব্যটি হচ্ছে তার তাযকিরাতুল মওদ্বুআত গ্রন্থের : ১/৩৪ পৃষ্ঠায়। মুহাদ্দিসদের বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কি বুঝায় তা কিতাবের শুরুতে এবং ইতোপূর্বে আলোকপাত হয়েছে পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইলো।
৫. আল্লামা আজলূনী (رحمة الله)‘র অভিমত:
✦ আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) হাদিসটি তার গ্রন্থে বর্ণনা করেন বলেন,
رواه الديلمى فى مسند الفردوس عن ابى بكر مرفوعا ...... قال السخاوى لا يصح
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম দায়লামী (رحمة الله) তার মুসনাদিল ফিরদাউস গ্রন্থে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন .........ইমাম সাখাভী (رحمة الله) হাদিসটি সম্পর্কে বলেন, হাদিসটি সহীহ পর্যায়ের নয়।’’১৮
১৮ .আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১৮৫পৃ.হা/২২৯৪
এ ছাড়া আল্লামা আজলূনী, মোল্লা আলী ক্বারী এর বক্তব্য সহ অনেক ঘটনা বর্ণনা করেছেন যার আলোচনা সামনে আসছে। মুহাদ্দিসদের বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কি বুঝায় তা কিতাবের শুরুতে এবং ইতোপূর্বে আলোকপাত হয়েছে পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইল।
৬. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله)‘র অভিমত:
✦ ইমাম শামী (رحمة الله) উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে বলেন, ইমাম ইসমাঈল জারহী (رحمة الله) বলেন-
قَالَ: وَلَمْ يَصِحَّ فِي الْمَرْفُوعِ مِنْ كُلِّ هَذَا شَيْءٌ.
-“এ ব্যাপারে মারফূ হিসেবে যে ক‘টি সনদ বর্ণিত হয়েছে সে সবগুলোর একটিও সহীহ পর্যায়ের নয়।’’ ১৯
১৯ .আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী : রুদ্দুল মুখতার : বাবুল আযান : ১/৩৯৮ পৃ
ইমাম শামী (رحمة الله) এর বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় হাদিসটি “সহীহ নয়” আর মুহাদ্দিসদের বক্তব্য হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কি বুঝায় তা কিতাবের শুরুতে এবং ইতোপূর্বে আলোকপাত হয়েছে পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইল।
৭.আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله)‘র অভিমত:
✦ বিশ্ব বিখ্যাত মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, ফকিহ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) এর অদ্বিতীয় তাফসীর গ্রন্থ ‘রুহুল বায়ানে’ ষষ্ঠ পারার সূরা মায়েদার ৫৭ নং আয়াতের তাফসীরে লিখেন,
تقبيل ظفرى ابهاميه مع مسبحتيه والمسح على عينيه عند قوله محمد رسول الله لانه لم يثبت فى الحديث المرفوع لكن المحدثين اتفقوا على ان الحديث الضعيف يجوز العمل به فى الترغيب والترهيب
-‘‘আযানে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় নিজের শাহাদাতের আঙ্গুলসহ বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু দেয়ার বিধানটিতে কিছুটা দুর্বলতা বিদ্যমান। কেননা এ বিধানটা মারফূ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় দ্বঈফ সনদের হাদিসের উপর আমল করা জায়েয।’’ (আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বয়ান, ২/৪১০ পৃ.)
✦ তিনি অন্যত্র লিখেন-
قال الامام السخاوي فى المقاصد الحسنة ان هذا الحديث لم يصح فى المرفوع والمرفوع من الحديث هو ما اخبر الصحابي عن قول رسول الله عليه السلام
-‘‘ইমাম সাখাভী (رحمة الله) তার আল ‘মাকাসিদুল হাসানা’ কিতাবে বলেছেন, উক্ত হাদিসটি মারফূ হিসেবে সহীহ পর্যায়ের অন্তর্ভূক্ত নয়। আর মারফূ বলা হয় ঐ হাদিসকে যা সাহাবী রাসূলে পাক (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন।’’ ২০
২০. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৭/২২৯ পৃ. দারূল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
✦ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তার এ গ্রন্থে আরও বলেন যে,
يقول الفقير قد صح عن العلماء تجويز الاخذ بالحديث الضعيف فى العمليات فكون الحديث المذكور غير مرفوع لا يستلزم ترك العمل بمضمونه وقد أصاب القهستاني فى القول باستحبابه وكفانا كلام الامام المكي فى كتابه فانه قد شهد الشيخ السهروردي فى عوارف المعارف بوفور علمه وكثرة حفظه وقوة حاله وقبل جميع ما أورده فى كتابه قوت القلوب ولله در ارباب الحال فى بيان الحق وترك الجدال
-‘‘এই অধম আরজ করেছি যে, ওলামায়ে কেরাম থেকে বিশুদ্ধ ভাবে বর্ণিত আছে, আমলের ব্যাপারে দ্বঈফ সনদের হাদিস গ্রহণযোগ্য। এ ব্যাপারটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে। অতএব হাদিস টি মারফূ না হওয়ার দ্বারা এটা আবশ্যক হয় না যে ঐ হাদিসের মর্মানুসারে আমল করা যাবে না। সুতরাং আল্লামা কুহিস্তানী যে এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন তাই সঠিক। ‘কুউয়াতুল কুলুব’ কিতাবে ইমাম আবু তালিব মক্কী (رحمة الله)-এর বর্ণনাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তার হিফ্য, ইলমের ব্যাপারে আল্লামা শায়খ সোহরাওয়ার্দী সাক্ষ্য দিয়েছেন ‘আওয়ারিফুল মা’আরিফ’ গ্রন্থে এবং কূউয়াতুল কুলুব কিতাবের বর্ণিত সকল মাস‘আলা তিনি গ্রহণ করেছেন।’’ ২১
২১. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৭/২২৯ পৃ.
ঙ. ফকিহগণের দৃষ্টিতে এ হাদিসের ব্যাপারে আমল:
✦ বিশ্ব বিখ্যাত ফকিহ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) তাঁর ফতোয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে শামীতে باب الاذان লিখেন-
يُسْتَحَبُّ أَنْ يُقَالَ عِنْدَ سَمَاعِ الْأُولَى مِنْ الشَّهَادَةِ: صَلَّى اللَّهُ عَلَيْك يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَعِنْدَ الثَّانِيَةِ مِنْهَا: قَرَّتْ عَيْنِي بِك يَا رَسُولَ اللَّهِ، ثُمَّ يَقُولُ: اللَّهُمَّ مَتِّعْنِي بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ بَعْدَ وَضْعِ ظُفْرَيْ الْإِبْهَامَيْنِ عَلَى الْعَيْنَيْنِ فَإِنَّهُ - عَلَيْهِ السَّلَامُ - يَكُونُ قَائِدًا لَهُ إلَى الْجَنَّةِ، كَذَا فِي كَنْزِ الْعِبَادِ. اهـ. قُهُسْتَانِيٌّ، وَنَحْوُهُ فِي الْفَتَاوَى الصُّوفِيَّةِ. وَفِي كِتَابِ الْفِرْدَوْسِ مَنْ قَبَّلَ ظُفْرَيْ إبْهَامِهِ عِنْدَ سَمَاعِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ فِي الْأَذَانِ أَنَا قَائِدُهُ وَمُدْخِلُهُ فِي صُفُوفِ الْجَنَّةِ وَتَمَامُهُ فِي حَوَاشِي الْبَحْرِ لِلرَّمْلِيِّ عَنْ الْمَقَاصِدِ الْحَسَنَةِ لِلسَّخَاوِيّ-
-‘‘মুস্তাহাব হলো আযানের সময় শাহাদাত বলার মধ্যে صلى الله عليك يا رسول الله বলা এবং দ্বিতীয় শাহাদাত বলার সময় বলবে قرة عينى بك يا رسول الله। অতঃপর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে স্বীয় চোখদ্বয়ের উপর রাখবে এবং এই দোয়াটি اللهم متعنى بالسمع و البصر পড়বে এর ফলে হুযূর (ﷺ) তাকে নিজের পিছনে পিছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কানযুল উব্বাদ ও কুহস্থানী গ্রন্থে বর্ণিত আছে। ফাতাওয়ায়ে সূফিয়াও তদ্রুপ উল্লেখিত আছে। কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বুন করে, আমি তাকে আমার পিছনে পিছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাব এবং তাকে বেহেশতদের কাতারে অন্তর্ভূক্ত করবো। এর পরিপূর্ণ আলোচনা বাহারুর রায়েক এর টীকায় ফতোয়ায়ে রমলীতে আছে।’’ ২২
২২.
ক. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী ১/৩৯৮ পৃষ্ঠা কিতাবুল আযান অধ্যায়
খ. মুফতী আমিমুল ইহসান মুজাদ্দেদী : কাওয়াইদুল ফিক্হ : ১/২৩৩ পৃ.
গ. ইমাম আহমদ রেযা খাঁন : আহকামে শরীয়ত : ১/১৭২ পৃ.
ঘ. ইমাম আহমদ রেযা : ফতোয়ায়ে আফ্রিকা : ৭৮ পৃ.
ঙ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা‘আল হক্ব : ২/২৪৬ পৃ.
চ. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান : ৭/২২৯ পৃ.
‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১০৮ পৃষ্ঠায় মাওলানা মুতীউর রহমান মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভী এর বক্তব্য উল্লেখ করেছেন অথচ তার আসল অভিমত কী এ আমলের বিষয়ে তা তিনি ব্যক্ত করেননি, অথচ দেখুন তিনি নিজেই এই হাদিসের উপর আমল করতেন এবং তাঁর উপর ফতোয়া দিয়েছেন। যেমনঃ
✦ তার গ্রন্থ “মাজমুআয়ে ফতোয়ায়ে আব্দুল হাই”-এ লিখেন-
اعلم انه يستحب ان يقال عند سماع الاول من الشهادة صلى الله عليك يا رسول الله و عند سماع الثانية قرة عينى بك يا رسول الله ثم قال اللهم متعنى بالسمع و البصر" بعد وضع ظفر اليدين على العينين فانه صلى الله عليه و سلم يكون قائدا له الى الجنة كذا فى كنز العباد-
-‘‘জেনে রাখুন! নিশ্চয় মুস্তাহাব হলো আযানে যখন প্রথম শাহাদাত বাক্য বলবে, তখন শ্রোতারা বলবে صلى الله عليك يا رسول الله তারপর যখন দ্বিতীয় শাহাদাত বাক্য বলবে তখন শ্রোতারা বলবে যে قرة عينى بك يا رسول الله অতঃপর বলবে যে, اللهم متعنى بالسمع والبصر তারপর দুই বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বয়ের নখের পৃষ্ঠে চুমু দিয়ে চক্ষুদ্বয়ের উপর মুছে দেবে, যে অনুরূপ করবে নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) তাকে বেহেশতের দিকে টেনে নিজের পিছনে নিবেন, এটা ‘কানযুল উব্বাদে’ আছে।’’ ২৩
২৩. আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভি : মাজমূআয়ে ফতোয়ায়ে : ১/১৮৯ : কিতাবুস সালাত অধ্যায়
প্রমাণ হয়ে গেলো, মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভি নিজেই এটার উপর আমল করতেন।
✦ হানাফী মাযহাবের অন্যতম প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম তাহতাভী (رحمة الله) তার ফতোয়ার কিতাবে লিখেছেন,
ذكر القهستاني عن كنز العباد أنه يستحب أن يقول عند سماع الأولى من الشهادتين للنبي ﷺ صلى الله عليك يا رسول الله وعند سماع الثانية قرت عيني بك يا رسول الله اللهم متعني بالسمع والبصر بعد وضع إبهاميه على عينيه فإنه صلى الله عليه وسلم يكون قائدا له في الجنة
-‘‘ইমাম কুহিস্তানী (رحمة الله) কানযুল উব্বাদ কিতাবের উদ্ধিৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন নিশ্চয় মুস্তাহাব হলো আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ শুনবে তখন বলবে صلى الله عليك يا رسول الله আর যখন দ্বিতীয়বার শুনবে তখন বলবে قرة عينى بك يا رسول الله তারপর এই দোয়া পড়বে اللهم متعنى بالسمع و البصر পড়ার পর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে চক্ষুদ্বয়ে রাখবেন। যে এরূপ করবে তাকে হুযূর (ﷺ) নিজের পিছনে টেনে টেনে জান্নাতে নিয়ে যাবেন।’’ ২৪
২৪. ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১/২০৬ পৃ: কিতাবুল আজান অধ্যায়, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
✦ আল্লামা তাহতাভী (رحمة الله) আরও একটু সামনে অগ্রসর হয়ে উল্লেখ করেন-
وكذا روي عن الخضر عليه السلام وبمثله يعمل في الفضائل
-‘‘এ ব্যাপারে হযরত খিযির (عليه السلام) থেকে অনুরূপ একটি বর্ণনা রয়েছে, এ ধরনের হাদিস ফাযায়েলে আ‘মালের জন্য অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।’’ ২৫
২৫. ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : ১/২০৬ পৃ: কিতাবুল আযান অধ্যায়, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ , বয়রুত, লেবানন।
✦ প্রসিদ্ধ কিতাব সালাতে মসউদী কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ড باب نماز অধ্যায়ে আছে-
روى عن النبى ﷺ انه قال من سمع اسمى فى الاذان و ودع ابهاميه على عينيه فانا طالبه فى صفوف القيامة و قائده الى الجنة-
-‘‘হুযূর (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আযানে আমার নাম শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখের উপরে রাখে আমি তাকে কিয়ামতের দিন কাতার সমূহের মধ্যে খোঁজ করবো এবং নিজের পিছে পিছে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাব।’’ ২৬
২৬. আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জাআল হক : ২৪৬ পৃ.
✦ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এর লিখিত ফতোয়ার কিতাব ‘শরহে নেকায়ার’ প্রথম খণ্ডের باب الاذان অধ্যায়ে উল্লেখ আছে-
واعلم انه يستحب ان يقال عند سماع الاولى من الشهادة الثانية صلى الله عليك يا رسول الله و عند الثانية منها قرة عينى بك يا رسول الله بعد وضع ظفرى ابهامين على العينين فانه عليه السلام يكون له قائدا الى الجنة كذا فى كنز العباد-
-‘‘জানা দরকার যে, মুস্তাহাব হচ্ছে যিনি দ্বিতীয় শাহাদাতের প্রথম শব্দ শোনে বলবেন صلى الله عليك يا رسول الله দ্বিতীয় শব্দ শোনে বলবেন قرة عينى بك يا رسول الله এবং নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু খেয়ে চক্ষুদ্বয়ে রাখবেন, তাকে হুযূর (ﷺ) (হাশরে) নিজের পিছনে পিছনে টেনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কানযুল উব্বাদ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।’’
الفجر الصادق কিতাবের ৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
قال شيخ المشائيخ رئيس المحققين سيد العلماء الحنفية بمكة المكرمة مولانا جمال بن عبد الله بن عمر المكى فى الفتوى سئلت عن تقبيل الابهامين و وضعهما على العينين عند ذكر اسمه صلى الله عليه و سلم فى الاذان هل هو جائز ام لا اجيب بما نصه نعم تقبيل الابهامين و وضع على العينين عند ذكر اسمه صلى الله عليه و سلم فى الاذان جائز بل هو مستحب صرح به مشائخنا-
-‘‘শাইখুল মাশাইখ রঈসুল মুহাক্কিকীন মক্কায়ে মোকাররমার হানাফী উলামায়ে কেরামের নেতা মাওলানা কামালুদ্দীন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর আল মক্কী (رحمة الله) তাঁর ফতোয়ায় বলেন, আজানের মধ্যে রাসূলে পাক (ﷺ) এর নাম শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বন করে তা উভয় চোখের পাতার উপর রাখার ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছে এটা জায়েয নাকি নাজায়েয? উত্তরে আমি বলছি, হ্যাঁ, এটা জায়েয বরং মুস্তাহাব। আমাদের মাশায়েখগণ এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।’’ ২৭
২৭. আল্লামা আবু হামিদ মারযুক : আল ফাজরুস্ সাদিক্ব, পৃষ্ঠা নং-৮৩
✦ আল্লামা মুহাদ্দিস তাহের পাটনী হানাফি (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ تكمله مجمع بحار الانوار (মাযমাউল বিহারুল আনওয়ার) এ আবু বকর (رضي الله عنه) এর হাদিস উল্লেখ করে ইমাম সাখাভী (رحمة الله)‘র রায় প্রকাশ করে তার পর লিখেন,
وروى تجربة ذالك عن كثيرين
-‘‘এটি পরিক্ষিত আমল হিসেবে অনেকের থেকেই বর্ণিত হয়েছে।’’
আল্লামা শামসুদ্দীন বিন আবু নসর বুখারী (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে এ আমল
✦ হযরত ইমাম তাউস (رحمة الله) বলেন, আমি আবু নসর বুখারী (رحمة الله) কে হাদিস বর্ণনায় শুনেছি যে,
قال الطاوسي: إنه سمع من الشمس محمد ابن أبي نصر البخاري خواجه حديث: من قبل عند سماعه من المؤذن كلمة الشهادة ظفري إبهاميه ومسهما على عينيه وقال عند المس: اللَّهم احفظ حدقتي ونورهما ببركة حدقتي محمد رسول اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ونورهما لم يعم
-‘‘কোন ব্যক্তি মুয়ায্যিনকে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে স্পর্শ করবে এবং এই দোয়া পাঠ করবে,
اللَّهم احفظ حدقتي ونورهما ببركة حدقتي محمد رسول اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
তাহলে সে কখনো অন্ধ হবে না।’’ ২৮
২৮.
ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১/২৮৫ পৃ. হা/১০২১
খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭১ পৃ. হা/২২৯৬
গ. মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক : ২/২৪৬ পৃ.।
আল্লামা আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে এ আমলঃ
✦ আল্লামা আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ (ﷺ) বলেন,
من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمدا رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه ﷺ ويقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يعم ولم يرمد، -
-‘‘যে ব্যক্তি আযানে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলূল্লাহ (ﷺ) শোনে যদি বলে مرحبا بحبيبى و قرة عينى محمد بن عبد الله صلى الله عليه و سلم তারপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, সে কোনদিন অন্ধ হবে না এবং তার চোখ কখনও রোগাক্রান্ত হবে না।’’ ২৯
২৯.
ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ., হা/১০২১
খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭১ পৃ. হা/২২৯৬
গ. মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী : জা’আল হক, ২/২৪৬ পৃ.
আল্লামা ইমাম ফকীহ মুহাম্মদ বিন শায়বানী (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে এ আমল:
✦ আল্লামা ইমাম ফকীহ মুহাম্মদ বিন শায়বানী (رحمة الله) হাদিস নকল করে এটার উপর আমলের ব্যাপারে বলেন,
هبت ريح فوقعت منه حصاة في عينه، فأعياه خروجها، وآلمته أشد الألم، وأنه لما سمع المؤذن يقول أشهد أن محمدا رسول اللَّه قال ذلك، فخرجت الحصاة من فوره، قال الرداد: وهذا يسير في جنب فضائل الرسول ﷺ،
-‘‘এক সময় জোরে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছিল। তখন তার চোখে একটি পাথরের কণা পড়েছিল যা তিনি বের করতে পারেননি এবং খুবই ব্যথা অনুভব হচ্ছিল। যখন তিনি মুয়ায্যিনের কণ্ঠে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলূল্লাহ শুনলেন, তখন তিনি উপরোক্ত দু‘আটি পাঠ করলেন এবং অনায়াসে চোখ থেকে পাথর বের হয়ে গেল।’’ ৩০
৩০.
ক. আল্লামা ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ. হা/১০২১
খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭১ পৃ., হা/২২৯৬
গ. মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক, ২/২৪৯
এ বিষয়ে মিশরের পুরাতন আলেমদের আমল:
✦ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) তাঁর গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন,
وحكى الشمس محمد بن صالح المدني إمامها وخطيبها في تاريخه عن المجد أحد القدماء من المصريين أنه سمعه يقول: من صلى على النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذا سمع ذكره في الأذان وجمع أصبعيه المسبحة والإبهام وقبلهما ومسح بهما عينيه لم يرمد أبدا -
-‘‘মসজিদে তৈয়্যবাহ আল মদিনার ইমাম ও খতিব ছিলেন হযরত শামস মুহাম্মদ বিন সালেহ আল মাদানী (رحمة الله) স্বীয় ইতিহাস গ্রন্থে লিখেন তিনি মিশরে বুজুর্গ হতে শুনেছেন যে, আযানে রাসূল (ﷺ) এর নাম মোবারক শ্রবণ করে রাসূল (ﷺ) এর প্রতি দুরূদ পড়ে তারপর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু দিয়ে অতঃপর চোখে মাসেহ করবে সে কোনো দিন চোখের অসুস্থতায় ভোগবে না।’’ ৩১
৩১.
ক. ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ : হা/১০২১
খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ : হা/২২৯৬
গ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক : ২/২৪৯
আল্লামা ইবনে সালেহ (رحمة الله)‘র দৃষ্টিতে আমল:
✦ আল্লামা ইবনে সালেহ (رحمة الله) বর্ণনা করেন,
وسمعت ذلك أيضا من الفقيه محمد بن الزرندي عن بعض شيوخ العراق أو العجم أنه يقول عندما يمسح عينيه: صلى اللَّه عليك يا سيدي يا رسول اللَّه يا حبيب قلبي ويا نور بصري ويا قرة عيني، وقال لي كل منهما: منذ فعلته لم ترمد عيني
-‘‘আমি ফকীহ মুহাম্মদ বিন যারানাদি (رحمة الله) হতে শ্রবণ করেছি তিনি ইরাক ও আজমের বড় শায়খ হতে বর্ণনা করেছেন, হুযূর (ﷺ) এর নাম মোবারক আযানের মধ্যে শ্রবণ করে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ে চুমু দিয়ে চোখে মালিশ করিবে তারপর বলবে-
صلى الله عليك يا سيدى يا رسول الله يا حبيب قلبى و يا نور بصرى و يا قرة عينى
দুজন শায়খই বলছেন, যখন থেকে আমরা এই আমল করতে লাগলাম তখন থেকে আমাদের চোখ কোনদিন অসুস্থ হয়নি।’’ ৩২
৩২.
ক. ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৩৮৪ পৃ. হা/১০২১
খ. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/২৭০ পৃ. : হা/২২৯৬
গ. মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী : জা’আল হক : ২/২৪৯ পৃ.
এ হাদিসের বিষয়ে আহলে হাদিস আলবানীর তাহকীক:
শুধু তা-ই নয়, আহলে হাদিসের মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী তার “সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ” গ্রন্থের ১/১০২ হাদিস নং:৭৩-এ, রাসূল (ﷺ) এর নাম মোবারক শুনে চুমু খাওয়ার হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত হাদিস প্রসঙ্গে বলেন, لا يصح অর্থাৎ, হাদিসটি সহীহ পর্যায়ের নয়। তাই বুঝা গেল, হাদিসটি জাল বা বানোয়াট নয়। কারণ আলবানী জাল হাদিসকে সরাসরি موضوع বা বাতিল, মুনকার ইত্যাদি বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু এখানে সে এই শব্দ ব্যবহার করেননি। অপরদিকে তার এ বক্তব্যের পিছনে দলীল পেশ করেছে,
رواه الديلمي في مسند الفردوس عن أبي بكر رضي الله عنه مرفوعا. قال ابن طاهر في التذكرة : لا يصح، كذا في الأحاديث الموضوعة للشوكاني (ص ৯) وكذلك قال السخاوي في المقاصد
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম দায়লামী (رحمة الله) তাঁর ‘মুসনাদিল ফিরদাউস’ গ্রন্থে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আল্লামা তাহের পাটনী তাঁর “তাযকিরাতুল মাওদ্বুআত” গ্রন্থে বলেন, হাদিসটি ‘সহীহ নয়’, তেমনিভাবে শাওকানী তার জাল হাদিস বিষয়ক গ্রন্থ “ফাওয়াইদুল মাজমূআ ফি আহাদিসিল মাওদ্বুআহ” এর ৯ পৃষ্ঠায় এবং ইমাম সামসুদ্দীন সাখাভী (رحمة الله) তাঁর “মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে অনুরূপ বলেছেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল...দ্বঈফাহ, হা/৭৩)
আর হাদিসটি সহীহ নয় বলতে কী বুঝায় আমি এ গ্রন্থের শুরুতে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে এসেছি। তাই আমরা সর্বশেষ এই সিদ্বান্তে উপনীত হতে পারি যে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের। আর হযরত মূসা (عليه السلام) এর যুগের হাদিসটির সনদ সামান্য যঈফ হলেও শাওয়াহেদ থাকায় মুটামুটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের। আর খিযির (عليه السلام) এর আমলের বর্ণনাটি মুনকাতি‘য় হওয়ার দরুন কিছুটা দ্বঈফ। সব মিলিয়ে ফাযায়েলে আমলের জন্য এ ধরনের হাদিস মুস্তাহাব হিসেবে আমল করতে কোন অসুবিধা নেই। সবগুলো হাদিস মিলে এ বিষয়টির যে ভিত্তি আছে তা সুস্পষ্ট করে দেয় এবং আমল করতে শক্তি যোগায়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে এ বিষয়ের উপর আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন