(لَوْلاكَ لَمَا خَلَقْتُ الأَفْلاكِ) ‘রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না’ হাদিসের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: (২য় পর্ব)



পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ হাদিস:

প্রথম সূত্র: ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) দীর্ঘ হাদিস সনদসসহ হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে সংকলন করেন, হাদিসের শেষের অংশ হল-

وَلَقَدْ خَلَقْتُ الدُّنْيَا وَأَهْلَهَا لأُعَرِّفَهُمْ كَرَامَتَكَ عَلَيَّ وَمَنْزِلَتَكَ عِنْدِي وَلَوْلاكَ يَا مُحَمَّدُ مَا خَلَقْتُ الدُّنْيَا

-“আমি পৃথিবী এবং পৃথিবীবাসীকে সৃষ্টি করেছি আমার নিকট আপনার মর্যাদা ও সম্মান কতটুকু তা দেখানোর জন্য। হে আমার হাবিব! যদি আপনি না হতেন তাহলে আমি এ দুনিয়া বানাইতাম না।” ৭৫

৭৫. ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৩/৫১৮ পৃ. ক্রমিক: ৮০১, ইমাম ইবনে জাওযী, কিতাবুল মাওদ্বুআত, ১/২৮৯ পৃ. ইমাম সুুয়ূতি, লা-আলিল মাসনূূ, ১/২৪৯ পৃ. কিতাবুল মানাকেব, আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : আনোয়ার-ই-মুহাম্মাদিয়া : পৃষ্ঠা নং : ১১, ইমাম ইবনে আসাকীরঃ তারীখে দামেস্ক ৩/৫১৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী, আসরারুল মারফুআ, ১০১ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইমাম জুরকানী, শরহে মাওয়াহেব, ১/১২১ পৃ. এবং ৭/১৮৬ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবেল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৫৫ পৃ., শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ১/২৮৯ পৃষ্ঠা, ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, ৪/৩৩১ পৃ., ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদাদ ওয়ার রাশাদ, ১/৭৫ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/৩৩০ পৃ., ইমাম কাজী আয়াজঃ শিফা শরীফঃ ২/১০৫ পৃ.


সনদ পর্যালোচনা: আহলে হাদিস আলবানী ইমাম ইবনুল জাওযীর কট্টর ভুল সিদ্ধান্তের অনুসরণ করে হাদিসটিকে জাল বলেছেন। ৭৬

৭৬. আলবানী, সিলসিলাতু আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ১/৪৫১ পৃ. হা/২৮২


যারা ইলমে হাদিস নিয়ে গবেষণা করেন তারা অনেকেই জানেন যে, ইমাম ইবনুল জাওযী  (رحمة الله) হাদিস সমালোচনায় কট্টর। উনার অভিমত যাচাই বাছাই ছাড়া গ্রহণ করা বৈধ নয়। তাই এবার দেখবো তিনি কোন দৃষ্টিকোনে এই সনদকে জাল বানোয়াট বলেছেন।


✦ ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) এই হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

هَذَا حَدِيثٌ مَوْضُوعٌ لَا شَكَّ فِيهِ، وفى إِسْنَاده مَجْهُولُونَ وضعفاء والضعفاء أَبُو السكين وَإِبْرَاهِيم من اليسع. قَالَ الدَّارَقُطْنِيُّ: أَبُو السكين ضَعِيف وَإِبْرَاهِيم وَيحيى الْبَصْرِيّ مَتْرُوكَانِ.

-“এই হাদিসটি জাল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই সনদে অপ্রসিদ্ধ ও যঈফ রাবী আবুল সাকীন এবং ইবরাহিম ইবনে আল ইয়াছাঈ দুর্র্বল রাবী। ইমাম দারাকুতনী বলেন, আবুল সাকীন যঈফ রাবী। ইবরাহিম এবং ইয়াহইয়া বসরী দুজন পরিত্যাক্ত রাবী।” ৭৭

৭৭. ইমাম ইবনুল জাওযী, কিতাবুল মাওদ্বুআত, ২/২৮৯ পৃ. কিতাবুল ফাযায়েল ওয়াল মানাকিব।


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তিনি যে আপত্তি এ হাদিসের সনদের বিষয়ে করেছেন তাতে এই সনদ যঈফ প্রমাণ হয় জাল নয়। এবার তিনি এই সনদের যে ৩ জন রাবীকে দোষী করেছেন আসলে আসমাউর রিজালবিদগণ তাদের বিষয়ে বা তাদের হাদিস গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে কী বলেছেন আমরা এখন তা গবেষণা করে দেখবো।


প্রথম আপত্তিকর রাবী:


এই সনদের প্রথম আপত্তিকর রাবী দাবী করা হয়েছে محمد بن عيس بن حيان (মুহাম্মদ বিন ঈসা বিন হাইয়্যান) নামক রাবী যার উপনাম হল আবুল সাকীন।


✦ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে শুরুতেই লিখেন- المحدث المقرئ الامام -“তিনি একজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ছিলেন, ক্বারী ছিলেন, হাদিসের ইমাম ছিলেন।”৭৮

৭৮. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ১৩/২১ পৃ. ক্রমিক: ১২ এবং তারিখুুল ইসলাম, ৬/৬১৭ পৃ. ক্রমিক: ৪০৫, ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ., ক্রমিক: ৭২৮৬


✦ তিনি আরও উল্লেখ করেন- قال البرقانى لا بأس به -‘‘ইমাম বারকানী (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ ৭৯

৭৯. ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ., ক্রমিক: ৭২৮৬


✦ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন-

وكذا ذكره ابن حبان فى الثقات-

-“ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ ৮০

৮০. ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ. ইবনে হিব্বান, কিতাবুস-সিকাত, ৯/১৪৩ পৃ. ক্রমিক: ১৫৬৫১


✦ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইমাম লালকায়ী (رحمة الله) বলেন- صالح তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ব্যক্তি ছিলেন।  ৮১

৮১. ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ৭/৪২৮ পৃ. ইবনে হিব্বান, কিতাবুস-সিকাত, ৯/১৪৩ পৃ. ক্রমিক: ১৫৬৫১


তবে তিনি কেরাতের প্রতি বেশী মনযোগের কারণে অনেকে তাকে দুর্বলতার ইঙ্গিত করেছেন যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই একক ইমাম দারাকুতনীর অভিমত দিয়ে তাকে যঈফ বলা মানে অধিকাংশ মুহাদ্দিসের অভিমতকে হেয় করা।


দ্বিতীয় আপত্তিকর রাবী:


এই সনদের দ্বিতীয় আপত্তিকর রাবী হিসেবে ইমাম ইবনুল জাওযী ابراهيم بن اليسع (ইবরাহিম বিন আল-ইয়াছঈ) যার উপনাম হল ইবনে আবি হায়াত। তার হাদিস ‘হাসান’ পর্যায়ের।


✦ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-

ونقل عثمان بن سعيد الدارمى عن يحيى بن معين أنه قال شيخ ثقة كبير

-“উসমান বিন সাঈদ দারেমী (رحمة الله) তিনি ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, উক্ত রাবী হাদিসের শায়খ, উঁচু মানের বিশ্বস্ত মুহাদ্দিস ছিলেন।” ৮২

৮২ ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ১/২৭১ পৃ. ক্রমিক: ১১৬


✦ ইমাম মুগলতাঈ (رحمة الله) বলেন,

وفى قول المزى: ذكره ابن حبان فى كتاب الثقات

ইমাম মিয্যী (رحمة الله) তার আসমাউর রিজাল গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে বিশ্বস্ত রাবীদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ৮৩

৮৩. মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩০২ পৃ. ক্রমিক: ৫১১৮, ইবনে হিব্বান, কিতাবুস্-সিকাত, ৭/৫৯৭ পৃ. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৯ পৃৃ.


✦ তবে যা তার জীবনী থেকে বুঝা যায় তা হল তিনি তাদলিস করতেন বলেই তাকে অনেকে কেউ কেউ দুর্বলতার ইঙ্গিত করেছেন।  ৮৪

৮৪. মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩০২ পৃ. ক্রমিক: ৫১১৮, ইবনে হিব্বান, কিতাবুস্-সিকাত, ৭/৫৯৭ পৃ. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৯ পৃৃ.


✦ তবে ইমাম ইবনে হিব্বান বলেন-

 كان يدلس على الثقات -

‘‘তিনি সিকাহ রাবীর নামে তাদলিস করতেন।’’ ৮৫

৮৫. মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩০২ পৃ. ক্রমিক: ৫১১৮


তাই অন্যান্যের তাদলিসের ন্যায় তার তাদলীস অবস্থা নয়। যেমনঃ


✦ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া যুহালী তিনি ইয়াযিদ ইবনে হারুন থেকে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেছেন

-كان صدوقا ولكن يدلس

-‘‘তিনি সত্যবাদী ছিলেন, তবে তিনি তাদলীস করতেন।’’৮৬

৮৬. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৬ পৃ. ক্রমিক: ৬৮১৭


✦ ইমাম মিয্যী (রহ.) আরও উল্লেখ করেন-

قال أبو نعيم: كان ثقة وكان يدلس

-‘‘ইমাম আবু নুয়াইম বলেন, তিনি সিকাহ রাবী, তবে তিনি তাদলীস করতেন। ৮৭

৮৭. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৬ পৃ. ক্রমিক: ৬৮১৭


✦ তিনি আরও উল্লেখ করেছেন ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেন- صدوق তিনি সত্যবাদী ছিলেন। তিনি অন্য বর্ণনায় এনেছেন ليس به بأس -তার হাদিস গ্রহন করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ ৮৮

৮৮. ইমাম মিয্যী, তাহজিবুল কামাল, ৩১/২৮৬ পৃ. ক্রমিক: ৬৮১৭


✦ ইমাম ইজলী (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন এবং বলেছেন, كان يدلس لا بأس به -‘‘তিনি তাদলীস করতেন। তার হাদিস গ্রহণে কোনো অসুবিধা নেই।’’ ৮৯

৮৯. ইমাম ইজলী, তারিখুস্-সিকাত, ২/৩৫০ পৃ. ক্রমিক: ১৯৭৩


তাই বুঝতে পারলাম এই রাবীকে যঈফ বলা মানে অসংখ্য ইমামদের অভিমতকে হেয় করা।


তৃতীয় আপত্তিকর রাবী:


ইমাম ইবনুল জাওযী (رحمة الله) এই সনদের তৃতীয় আপত্তিকর রাবী হিসেবে ইয়াহইয়া বসরী রাবীকে দায়ী করেছেন। যার মূূল নাম হল (يحيى بن ميمون بن عطاء) ইয়াহইয়া ইবনে মায়মুন বিন আতা।


✦ বিখ্যাত হাদিসের ইমাম ইবনে হিব্বান তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন। ৯০

৯০. ইমাম ইবনে হিব্বান, কিতাবুস্-সিকাত, ৭/৬০৩ পৃ., আল্লামা মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১২/৩৭২ পৃ. ক্রমিক: ৫২০৮


তবে তাকে ইমাম আহমদ থেকে শুরু করে আরও অনেকে যঈফ রাবী বলেছেন। তাই সর্বোপরি আমরা বলতে পারি যে, উক্ত হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের, কখনই জাল হতে পারে না। অপরদিকে উপরের আরেক সনদ দ্বারা এই হাদিস শাহেদ প্রমাণিত হওয়ায় এই হাদিস গ্রহণযোগ্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই আমাদের দেশের কাট মোল্লা যারা এই হাদিসকে জাল বলেন, বুঝতে হবে যে, তারা আসমাউর রিজাল কখনই পড়েইনি।


পর্যালোচনা:


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, আমরা যে দুনিয়ায় বসবাস করছি সে দুনিয়াও সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর পিয়ারা হাবীবের উসিলায়।


দ্বিতীয় সূত্র:


❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله) এ শব্দে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

يَقُول الله عز وَجل وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لولاك مَا خلقت الْجنَّة ولولاك مَا خلقت الدُّنْيَا

-‘‘মহান আল্লাহ বলেন, আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ! হে আমার পিয় হাবীব! যদি আমি আপনাকে সৃষ্টি করতাম না বানাতাম জান্নাত, না বানাতাম দুনিয়া।’’ (ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৫/২২৭ পৃ. হা/৮০৩১, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)


পর্যালোচনা:


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল যে, আমরা যে দুনিয়ায় বসবাস করছি সে দুনিয়া এবং যে জান্নাতের আশায় ইবাদতের মগ্ন থাকি সে জান্নাতও সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর পিয়ারা হাবীবের উসিলায়। রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি যাদের প্রেম নেই এ কথা তাদের কানে বিষের চেয়েও ভয়ংকর লাগবে এটাই স্বাভাবিক।



সপ্তম হাদিস


❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله)সহ একজামাত ইমামগণ সংকলন করেন-

ويرى أنه لما خلق الله تعالى آدم، ألهمه أن قال: يا رب، لم كنيتني أبا محمد، قال الله تعالى: يا آدم ارفع رأسك، فرفع رأسه فرأى نور محمد في سرادق العرش فقال: يا رب، ما هذا النور؟ قال: هذا نور نبي من ذريتك اسمه في السماء أحمد، وفي الأرض محمد، لولاه ما خلقتك ولا خلقت سماء ولا أرضًا.

-‘‘হযরত আদম (عليه السلام) আল্লাহ্ পাকের দরবারে আবেদন করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ‘আবূ মুহাম্মদ’ উপনামে কেন ভূষিত করেছেন? আল্লাহর পক্ষ হতে হুকুম আসলো,  হে হযরত আদম (عليه السلام)! তোমার মাথা তুলে দেখ। আদম (عليه السلام) মাথা উঠিয়েই দেখতে পেলেন তাঁর চোখের সামনে আরশের পর্দায় নূরে মুহাম্মদী ভেসে ওঠল। হযরত আদম (عليه السلام) আরজ করলেন,  হে আমার প্রতিপালক! এই নূর মোবারক কার? জবাবে আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, এই নূর হলো ঐ নবীর যিনি তোমার বংশধরে নবী হিসেবে আগমন করবে, আসমানে যার নাম হবে আহমদ, আর যমীনে মুহাম্মদ। যদি তিনি না হতেন, তাহলে আমি না তোমাকে সৃষ্টি করতাম, না আসমানকে, আর না যমীন কে।’’ ৯১

৯১. ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৩৩ পৃ., আল্লামা জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১/৭৮ পৃ., আল্লামা শফী উকাড়ভী, যিকর ই হাসীন, ৩১ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, ৩/৩৫২ পৃ.


পর্যালোচনা:


❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) লিখেন-

ويشهد لهذا، ما رواه الحاكم في صحيحه أن آدم عليه الصلاة والسلام رأى اسم محمد مكتوبًا على العرش

-‘‘এ হাদিসটির শাহেদ পাওয়া যায় যা ইমাম হাকেম (رحمة الله) সহীহ সূত্রে সংকলন করেছেন, নিশ্চয়ই হযরত আদম (عليه السلام) আরশের পায়ায় হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নাম মোবারক লিপিবদ্ধ দেখতে পেয়েছিলেন।’’(ইমাম কাস্তালানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৪৭ পৃ.)


❏ ইমাম জুরকানী (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-

أي: يقويه، ما رواه الحاكم في صحيحه المستدرك عن عمر رفعه

-‘‘এ হাদিসকে আরও শক্তিশালী করেছে ইমাম হাকেম (رحمة الله) এর আল-মুস্তাদরাকের সহীহ সূত্রের হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা (যা আমি ইতোপূর্বে প্রথম হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছি)।’’ (ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৮৬ পৃ.) বুঝা গেল এ হাদিসটি শাওয়াহেদ থাকায় শক্তিশালী বলে প্রমাণিত।


অষ্টম হাদিস



❏ ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-

وذكر صاحب كتاب شفاء الصدور في مختصره عن علي بن أبي طالب ؓ عن النبي ﷺ عن الله عز وجل أنه قال: يا محمد وعزتي وجلالي لولاك ما خلقت أرضي ولا سمائي، ولا رفعت هذه الخضراء، ولا بسطت هذه الغبراء . وفي رواية عنه ولا خلقت سماء ولا أرضا ولا طولا ولا عرضا

-‘শিফাউস সুদূর কিতাবের লিখক তার ‘মুখতাসার’ কিতাবে হযরত আলী ইবনে আবী তালেব (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি নবি করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ, যদি আমি আপনাকে সৃজন না করতাম, না সৃজন করতাম এ যমিন, না আসমান। আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি উঁচু করতাম না উর্ধ্বের ঐ নীল বর্ণের ছাদ এবং নিম্নের এ ধূসর বর্ণের পৃথিবী। উক্ত সাহাবী থেকে অপর এক বর্ণনায় এসেছে, আপনাকে সৃজন না করলে করতাম না এ আকাশ, না যমীন, না উঁচু এবং নিচু।’’ ৯২

৯২.

ক. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালবিয়াঃ ১/৩১৭ পৃ.

গ. আল্লামা ইবনে হাজর হায়সামী : আল-ওসায়েল, ১/১১৫ পৃ.

ঘ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৫ পৃ:

ঙ. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭৫ পৃ.




নবম হাদিস:


❏ আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-

وعن علي ؓ قلت يا رسول الله مم خلقت قال لما أوحى إلى ربي ما أوحى قلت يا رب خلقتني قال وعزتي وجلالي لولاك ما خلقت أرضا ولا سماء

-‘‘হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি নবীকে সম্বোধন করে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আপনাকে কি জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে? প্রিয় নবী (ﷺ) তাঁর জবাবে ইরশাদ করলেন, আল্লাহ্ পাক আমার কাছে যখন ওহী প্রেরণ করছিলেন তখন আমি আরজ করেছিলাম, ইয়া রাব্বুল আলামীন! আপনি আমাকে কি জন্য সৃষ্টি করেছেন? তখন মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, আমার ইজ্জত ও জালালীয়াতের শপথ! আপনাকে যদি সৃষ্টি না করতাম, তাহলে আমি না সৃষ্টি করতাম জমিন, না আসমান।’’ ৯৩

৯৩.

ক. আল্লামা আব্দুর রহমান ছাফুরী শাফেয়ী : নুযহাতুল মাযালিস : ২য় খণ্ড ৭৪ পৃ.

খ. আল্লামা ইমাম মারযুক : শরহে কাসীদায়ে বুরদা : পৃ নং : ৭১




দশম হাদিস:


❏ আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) একটি হাদিস সংকলন করেন-

(أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ) رواه الديلمي عن ابن عمر.

-‘‘(একদা আমার নিকট হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন, হে মুহাম্মদ! আপনাকে যদি আমি সৃষ্টি না করতাম বানাতাম না বেহেশত, আর  না দোযখ।) এ হাদিসটি ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’ (আল্লামা আজলূনী, কাশফুল খাফা, ১/৫৪ পৃ. হা/৯১)


উপরের আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, শব্দগতভাবে হাদিসটি প্রমাণিত না হলেও মমার্থ বিশুদ্ধতার পক্ষে অনেক সূত্রে হাদিসে পাক বর্ণিত থাকায়, এ বিষয়ক হাদিসকে মুতাওয়াতির বলা যায়। এ ধরনের হাদিসে পাককে অস্বীকার করা কুফুরীর ন্যায়।




বিভিন্ন মুহাদ্দিস, মুফাস্সিরদের মমার্থ বর্ণনা:


এখন আমি উপরের দশটি হাদিসের মমার্থ হাদিস (لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ) ‘আপনাকে সৃজন না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না’ মমার্থ বর্ণনার স্বপক্ষে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস, ফুকাহা, মুফাসসিরগণের বক্তব্য এবং এটিকে তাদের গ্রন্থে মমার্থ হাদিস হিসেবে উল্লেখ করেছেন কিনা তার তথ্য সূত্র উল্লেখ করবো।


১. ইমাম শরফুদ্দীন বুছুরী (رحمة الله) এর লিখিত ‘কাসীদায়ে বুরদায়’ লিখেছিলেন, 

لولاه لم تخرج الدنيا من العدم

-‘‘যদি তিনি [রাসূল (ﷺ)] না হতেন দুনিয়া নাস্তির অন্ধকার হতে অস্তির আলোতে আসতো না।’’


উক্ত কাসিদার ব্যাখ্যায় আল্লামা ইমাম খরপূতী (رحمة الله) ‘শরহে কাসীদায়ে বুরদা’ নামক গ্রন্থের ৭১-৭২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,

فى هذا البيت تلميح الى ما نقل فى الحديث القدسى لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ  والمراد من الافلاك جميع المكنونات اطلاقا لاسم الجزء على الكل واشارة على ما وقع له صلى الله ﷺ فى ليلة الاسراء فانه عليه السلام لما سجد لله تعالى فى سدرة المنتهى قال الله تعالى له عليه الصلوة و السلام انا و انت و ما سوى ذلك خلقته لاجلك-

-‘‘এই চরণে ইঙ্গিত হল এ হাদিস-ই-কুদসীর প্রতি যা হল لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ আর الْأَفْلَاكَ এর মমার্থ হল আল্লাহর সমগ্র জগৎ। কেননা অংশ দ্বারা সমষ্টিকে বুঝানো হয়েছে। এতে শবে-ই-মি‘রাজে সংঘটিত ঘটনার প্রতিও ইঙ্গিত বর্তমান। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সিদরাতুল মুনতাহার নিকট আল্লাহর দরবারে সিজদায় পতিত হলেন, তখন আল্লাহ্ তাকে বললেন, এখানে আমি ও আপনি, এ ছাড়া যা কিছু আছে, সমুদয়কে আমি সৃষ্টি করেছি আপনারই নিমেত্তে।’’৯৪

৯৪.আল্লামা খরপূতি: শরহে কাসীদায়ে বুরদা, ৭১ পৃ.


২. আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘মাদারেজুন নবুয়ত’ সিরাত গ্রন্থে ১ম খণ্ডে উল্লেখ করেন,

مخلوق كا ظهور روح مظهر محمد كے واسط سے هے اگر روح محمدى نه هوتى خدا تعالى كو كوئى نه جانتا كيونكه كسى كا وجود هى نه هوتا- مدرج النبوة: جلد الاول

-“সৃষ্টি জগতের বিকাশ হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর পবিত্র রূহ মুবারকের ওসীলায় হয়েছে। যদি রূহে মুহাম্মদী (ﷺ) না হতেন তবে আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে কেউ জানত না। কেননা তিনি না হলে সৃষ্টির মধ্যে কারো অস্তিত্বও হত না।


৩. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর শ্রদ্ধেয় বাবা ও উস্তাদ আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘আনফাসে রহিমিয়্যা’তে উল্লেখ করেন, 

از عرش تا بفرش وملائكة علوى و جنس سفلى همہ ناشى ازاں حقيقته محمديہ صلى الله عليہ وسلم  است وقول رسول مقبول اول ما خلق نورى وخلق الله من نورى وقول الله تعالى لو لاك لما خلقت الافلاك وقوله لولاك لما اظهرت الربوبيتى-

-‘‘আরশ থেকে ফরশ পর্যন্ত উর্ধ্ব জগতের সকল নূরানী ফেরেশতা,  নিম্নজগতের সকল সৃষ্টি হাকিকতে মুহাম্মাদিয়্যা থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। নবী করীম (ﷺ)  বাণী,  সর্ব প্রথম আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমার নূর থেকেই সকল বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তা‘য়ালা প্রিয় মাহবুব (ﷺ)  কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন,  (হে মাহবুব)! আপনি না হলে আমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না এবং আপনি না হলে আমি আমার প্রভুত্ব প্রকাশ করতাম না।’’ ৯৫

৯৫. আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী : আনফাসে রহিমিয়্যাহ-১৪০ পৃ.


অতএব এতবড় একজন সম্মানিত মুহাদ্দিস উক্ত হাদিসটিকে হাদিসে কুদ্সী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করলেন। আল্লামা শাহ আব্দুর রহিম মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এর উপরে খ্যাতনামা মুহাদ্দিস ভারতীয় উপমহাদেশে আর হবে কী না সন্দেহ আছে। শাহ আব্দুর রহিম (رحمة الله) এর চেয়ে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, মাওলানা মুতীউর রহমান, মাওলানা জাকারিয়া হাসনাবাদী এবং মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সবাই কি বড় মুহাদ্দিস! হাদিস বিশারদ!  বাহ্! বাহ!


৪. ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله) তাঁর বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ ‘কাসীদায়ে নুমানে’ একটি কাসীদা বর্ণনা করেন এভাবে-

انت الذى لولاك ما خلق امرء●  كلا و لا خلق الورى لولاك-

-‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)! আপনি না হলে কোন ব্যক্তিই সৃষ্টি হতো না কখনই এবং আপনি না হলে কোন মালূককে সৃষ্টি করা হতো না।’’ (কাসীদায়ে নু‘মান) দেখুন ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) একজন তাবেয়ী ও হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা, তিনি নিজে নবীর রওযা মোবারকের সামনে এই কাসীদাটি সহ কাসীদায়ে নুমানের সবগুলো কাসীদা শুনিয়েছিলেন রাসূল (ﷺ) কে। আর তিনি ১৮ জন সাহাবীর দর্শন লাভ করেছেন। লক্ষ্য করুন ইমাম আযমের মত ইমামের আক্বীদা হল কি, আর তথাকথিত নামধারী আলেমদের আক্বিদা কি। তাহলে কি তারা ইমামে আযমের চেয়ে বড় ইমাম সেজে গেলেন?


৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

كما قال تعالى: لولاك لما خلقت الافلاك

-‘‘যেমন মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন, হে হাবিব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছু সৃষ্টি করতাম না।’’৯৬

৯৬. মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা: ২/১২৭পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।


৬. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ ইমাম ফার্সী (رحمة الله) তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘মাতালিউল মুর্সারাত ফি শরহে দালায়েলুল খায়রাতে’র ২৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেন-

كذالك هو صلى الله عليه و سلم روح الاكوان و حياتها وسر وجودها ولولاه لم يكن لها نور ولا دلالة لذهبت و تلاشت ولم يكن لها وجود-

-‘‘এরূপে নূরে খোদা (ﷺ) সকল রূহ এর জীবনী শক্তি ও সকল অস্তিত্বের নিগুঢ় তত্ত্ব। তিনি যদি না হতেন বা না থাকতেন সকল সৃষ্টিই অস্তিত্বহীন হয়ে যেত। ’’


৭. বিখ্যাত মুফাসসির, মুহাদ্দিস এবং ফকীহ, সূফী আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল বয়ানে লিখেন, 

وقال حكاية عن الله (لولاك لما خلقت الكون)

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালার বাণী, আপনাকে সৃষ্টি না করলে কুল কায়েনাত সৃষ্টি করতাম না।’’ ৯৭

৯৭. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৩/২৫৫ পৃ, সূরা আরাফ, আয়াত নং-১৫৬


৮. বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, 

كما روى لولاك لما خلقت الافلاك فانه صحيح-

-‘‘যেমন বর্ণিত আছে আল্লাহর বাণী, রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি হত না,  কথাটি অবশ্যই বিশুদ্ধ।’’ ৯৮

৯৮. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/১৩ পৃ, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, তারা কিছু লেখক মোল্লা আলী ক্বারী (রহ.) এর নামে মিথ্যা অপবাদ রটানোর চেষ্টা করেছেন। মোল্লা আলী ক্বারী নাকি জাল বলেছেন। তাই তাঁদের উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা দেখার জন্য অনুরোধ রইলো।


৯. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী (رحمة الله) তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন, 

قوله تعالى : ولولاه لم  تخلق الافلاك و لا الاملاق

-‘‘মহান ‘‘আল্লাহ্ বলেন, হে প্রিয় হাবীব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কোন কিছুই করতাম না। এমনকি কোন রাজ্য সৃষ্টি করতাম না।’’ ৯৯

৯৯. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার, ৩/৩৬৩ পৃ.


১০. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে ‘রুহুল বায়ানে’ সূরা সফ এর ৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এক পর্যায়ে লিখেন,

القوله تعالى: لولاك لما خلقت الافلاك

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন,  হে হাবীব আপনাকে সৃষ্টি না করা হলো কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’ ১০০

১০০. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : রুহুল বায়ান, :১০/৮৮০ পৃ.


১১. কুতুবে রব্বানী, ইমাম শেখ মুজাদ্দেদ আলফে সানী আহমদ ফারুক সেরহন্দী (رحمة الله) ৪৪ নং মাকতুবাতে বলেন, 

ولولاه صلى الله عليه و سلم لما خلق الله سبحانه الخلق و لما اظهر الربوبية و كان و ادم بين الماء و الطين -

-‘‘যদি হুযূর (ﷺ) কে সৃষ্টি না করা হতো তাহলো আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা কোন সৃষ্টিকেই সৃষ্টি করতেন না এবং তাঁর রবুবিয়্যাত প্রকাশ হতো না,  আর রাসূল (ﷺ) তখনও ছিলেন যখন আদম (عليه السلام) মাটি ও পানির মাঝখানে ছিলেন।’’ ১০১

১০১. আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/২০৮ পৃ.


১২. আল্লামা শরীফ সৈয়দ আহমদ বিন আব্দুল গণী বিন উমর দামেস্কী (رحمة الله) বলেন, 

كما قال تعالى فى الحديث القدسى لولاك ما خلقت الافلاك

-‘‘যেমন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হাদিসে কুদসীতে বলেন, হে হাবীব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃজন করতাম না।’’ ১০২

১০২. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৯৮ পৃ.


১৩. ইমাম আরিফ বিল্লাহ সায়্যেদ শরীফ আব্দুল্লাহ মীরগীনানী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ الاسئلة النفيسة এর ৩২ তম প্রশ্নের জবাবে  বলেন, 

كما صرح بذلك الحديث فى الخطاب الحضرة لادم عليه السلام، ولولاه ما خلقتك ولا خلقت سماء ولا ارضا...الخ

-‘‘হযরত আদম (عليه السلام) এর খিতাব তথা ভূষণের হাদিস দ্বারা এই কথা স্পষ্ট হয়েছে যে,  আল্লাহর বাণী হে আদম! মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি না করা হলে তোমাকে সৃষ্টি করতাম না, তিনি না হলে না সৃজন করতাম আসমান না যমিন।’’ ১০৩

১০৩. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১১৪, পৃ.       


১৪. আল্লামা ইমাম আরিফ বিল্লাহ শায়েখ আলী দুদাহ বুসূনবী (رحمة الله) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থكتاب خلاصة الاثر  এর ১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেন-

ان اصل الكون نبينا محمد صلى الله عليه و سلم لقوله تعالى فى الخبر القدسى: لولاك لما خلقت الافلاك، فهو اولى ان يكون اصلا-

-‘‘নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) সকল সৃষ্টির মূল হওয়া আল্লাহ্ তা‘য়ালার এই হাদিসে কুদসীই যথেষ্ট যেমন বর্ণিত আছে, হে হাবীব (ﷺ)! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃজন করতাম না। আর এটিই রাসূল (ﷺ)! এর সকল সৃষ্টির মূল হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’ ১০৪

১০৪. আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১৯৮ পৃ.


১৫. ইমাম শায়খ আব্দুল করিম জলিলী (رحمة الله) (ওফাত ৮০৫ হি.) তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ رسالته المسماة مدارج الوصول এ লিখেন,

وقد ورد عنه صلى الله عليه وسلم انه قال : ان الله تبارك و تعالى قال له فى ليله المعراج لولاك لما خلقت الافلاك-

-‘‘যেমন বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘য়ালা মিরাজের রজনীতে আমাকে বলেন, হে হাবীব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি কোনো কিছুই সৃজন করতাম না।’’ ১০৫

১০৫. আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন ইসমাঈল নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৪/২৫৮ পৃ.


১৬. আল্লামা মুহাম্মদ জামালিদ্দীন বিন মুহাম্মদ সাঈদ বিন কাসেম আল হালাক আলকাসেমী (رحمة الله) তাঁর উসূলে হাদিসের কিতাবقواعد التحديث من فنون مصلح الحديث  গ্রন্থের (যা দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত হতে প্রকাশিত) ১/১৫৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

كحديث:لولاك ما خلقت الافلاك

-‘‘যেমন হাদিসে কুদসীতে রয়েছে-হে হাবিব!  (ﷺ) আপনাকে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’


১৭. ইমাম আবুল কাসেম আব্দুর রহমান বিন সুহাইলি (رحمة الله) (ওফাত. ৫৮১ হি.) তার কিতাব الروض الانق فى السيرة النبوية এর ১/১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

ان الله قال لمحمد لولاك ما خلقت الافلاك

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর হাবিব (ﷺ) কে লক্ষ্য করে বলেন, আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’


১৮. আল্লামা মাহদী আল ফাসী (رحمة الله) (ওফাত. ১২২৪ হিজরী.) বলেন,

لولاك ما خلقت الكون

-‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালা তাঁর হাবিব (ﷺ) কে সৃষ্টি না করলে কোন জগতই সৃষ্টি করতেন না।’’ (মাতালিউল মার্সারাত)


১৯. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন,

ورد بلسان القدس ( لولاك لما خلقت الافلاك)

-“মহান আল্লাহর কুদরতের জবানের কথা, হে মাহবুব! আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’ (তাফসীরে রূহুল বায়ান,১/২৭ পৃ. সূরা বাক্বারা,আয়াত ১)


✦ তিনি তাফসীরের অন্য স্থানে বর্ণনা করেন এভাবে-

ان الله العظيم هو فضل الله عليك ورحمته كما انك فضل الله ورحمته على العالمين ولهذا قال (لولاك لما خلقت الافلاك) 

-“দয়াময় ‘আল্লাহ্ তাঁর হাবিব সর্ম্পকে বলেন হে হাবিব! আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না। (তাফসিরে রূহুল বায়ান,  ২/২৮৩ পৃ. সূরা নিসা,  আয়াত নং-১১৩ ও ব্যাখ্যা)


✦ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে আরও উল্লেখ করেন-

ان اصل الكون كان النبي عليه السلام لقوله لولاك لما خلقت الكون

-“নিশ্চয় রাসূল হলেন সমস্ত সৃষ্টি জগতের মুল এজন্যই মহান ‘‘আল্লাহ্ হাদিসে কুদসীতে বলেন,  হে হাবিব! আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’ (তাফসীরে রূহুল বায়ান, ৫/১৯৯ পৃ. সূরা বনি ইসরাইল আয়াত-৮৫)


✦ অন্যত্র তিনি বর্ণনা করেন-

كما قال عليه السلام (انا من الله والمؤمنون من فيض نورى) فهو الغاية الجليلة من ترتيب مبادى الكائنات كما قال تعالى (لولاك لما خلقت الافلاك)

-‘‘রাসূল  বলেন, আমি আল্লাহ্ হতে আর মু‘মিনগণ আমার নূরের ফয়জ থেকে সৃষ্টি .....মহান আল্লাহ্ তাঁর হাবিব সর্ম্পেকে বলেন, হে হাবিব! আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে কিছুই সৃষ্টি করতাম না।’’ (তাফেিসর রূহুল বায়ান, ৫/৫২৯ পৃ., সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ২১)


উক্ত তাফসীরে আরও উল্লেখ করেন,

قوله تعالى فى الحديث القدسي خطابا للنبى عليه السلام (لولاك لما خلقت الافلاك)

-‘‘মহান আল্লাহ্ হাদিসে কুদসীতে তার রাসূল (ﷺ) কে খেতাব করে বলেন,  হে হাবিব! আপনাকে সৃজন না করা হলে কিছুই সৃজন করতাম না। (তাফেিসর রূহুল বায়ান,  ৬/১৫৪ পৃ. সূরা নুর আয়াত-৩৫)


উক্ত তাফসীর কারক তার তাফসীরে অন্য স্থানে উল্লেখ করেন,

ذكر النبي عليه السلام والله تعالى خاطبه بقوله :لولاك يا محمد ما خلقت الكائنات

-“মহান আল্লাহ্ তাঁর রাসূল (ﷺ)‘র দিকে খেতাব করে বলেন, হে হাবিব ! আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে আমি কুল কায়েনাত সৃষ্টি করতাম না।’’ (তাফেিসর রূহুল বায়ান,  ৬/১৯২ পৃ. সূরা ফুরকান আয়াত, ৮)


২০. দেওবন্দীদের বড় মুহাদ্দিস মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী ছাহেব তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আশ শিহাবুছ ছাকিব’ কিতাবে ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

غرضيكہ حقيقت محمد صلى الله عليہ وسلم التحية واسطہ جملہ كمالات عالم عالميان ہے يہ هی معنى لولاك لما خلقت الافلاك اور اول ما خلق الله نورى اور انا نبى الانبياء كے ہیں -

-‘‘মোট কথা হলো সমস্ত কায়েনাত বা আলম হাকীকতে মুহাম্মদী (নূরে মুহাম্মদী) থেকে সৃষ্ট। এর অর্থ এই, যে আল্লাহর কথা যদি আপনাকে না সৃজন করতাম তাহলে আসমান যমীন কোন কিছুই সৃজন করতাম না। রাসূলের বাণী, সর্ব প্রথম আল্লাহ্ আমার নূর মোবারক সৃষ্টি করেছেন এবং আরও বলেছেন, আমি নবীদেরও নবী।’’ তাই দেওবন্দীদেরকে বলছি নিজেদের মুরব্বীদের কথাটা একটু চিন্তা করুন তিনি উক্ত রেওয়ায়েতকে হাদিসে কুদসী বলেছেন।


২১. মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী তার “প্রচলিত জাল হাদীস” গ্রন্থে উক্ত হাদিসটিকে মিথ্যুকদের বানানো কথা বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ তার উস্তাদ ও মুরব্বীব মাওলানা আহমদ শফী তার “সুন্নাত বিদআতের সঠিক পরিচয়” নামক গ্রন্থের ১৬৪ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটিকে তাগিদ দিয়ে বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ বলেই গ্রহণ করেছেন। তিনি লিখেন-‘‘ওহাবীগণ নবী (ﷺ) এর শানে নিতান্ত গোস্তাখি ও বেয়াদবী মূলক শব্দ ব্যবহার করেন এবং নিজেকে স্বয়ং ঐ সত্ত্বার [রাসূল (ﷺ)] এর সমকক্ষ ধারণা করেন। অথচ তিনি না হলে সমগ্র সৃষ্টি জগত অস্তিত্ব লাভ করত না।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! আহমদ শফীর উক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয় তিনি নিজে সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়েই এই কথা দৃঢ়ভাবে লিখেছেন। মহান রব তা‘য়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবের শান-মান অস্বীকারকারীদের খপ্পর থেকে আমাদেরকে হিফাজত করুন, আমিন।

━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন