মাওলানা মুতীউর রহমান ‘এসব হাদীস নয়’ গ্রন্থের ১৬৩ পৃষ্ঠায় এ হাদিস নিয়ে লিখেছেন-‘‘এটা লোকমুখে হাদীসে কুদসী হিসেবে যথেষ্ট প্রসিদ্ধ। অথচ হাদীস বিশেষজ্ঞগণ এ ব্যাপারে একমত যে, এটা একটা ভিত্তিহীন রেওয়ায়েত। রাসূল (ﷺ)-এর হাদিসের সঙ্গে এর সামান্যতম সম্পর্কও নেই।’’
উক্ত গ্রন্থের ১৬৪ পৃষ্ঠায় আরও লিখেছেন-“আল্লাহ তা‘আলা এই দুনিয়া ও সমগ্র জগৎ কেন সৃষ্টি করলেন তা জানার একমাত্র উপায় ওহী। ওহী শুধু কুরআন ও হাদীসেই সীমাবদ্ধ। যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআনের আয়াত বা সহীহ হাদিসের মাধ্যমে এ কথা প্রমাণিত না হবে যে, একমাত্র তাঁর খাতিরেই সবকিছু সৃষ্টি করা হয়েছে, ততক্ষণ এই আক্বীদা রাখার সুযোগ নেই।’’
অথচ উক্ত বইয়ে সে কোন মুহাদ্দিসের রায় ইবারত সহ উপস্থাপন করতে পারে নি।
অপরদিকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত ‘প্রচলিত জাল হাদীস’ ৫৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন,-‘‘এ বাক্যটি হাদীসে কুদ্সী হিসেবে অনেক মহলে প্রসিদ্ধ। অথচ হাদীস শাস্ত্রের বিজ্ঞ ইমামগণ বাক্যটিকে মাওজু এবং ভিত্তিহীন রেওয়ায়েত বলে অভিহিত করেছেন।’’
তথাকথিত আরেক লেখক ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ঈমান বিধ্বংসীকারী পুস্তক “হাদীসের নামে জালিয়াতি” এর ৩০৪ পৃষ্ঠায় এ হাদিস উল্লেখ করার পূর্বে লিখেছেন-‘‘এ ধরনের বানোয়াট কথাগুলোর একটি।’’
তিনি আরও একটু অগ্রসর হয়ে ৩০৫ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেন-‘‘মুহাদ্দিস একবাক্যে কথাটিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এ শব্দে এ বাক্য কোনো হাদীসের গ্রন্থে কোনো প্রকার সনদে বর্ণিত হয়নি।’’
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এই জালিয়াতীকারী ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তো বললেন এ হাদিসটির কোন সনদই নেই; কিন্তু অন্যতম শীষ্য ড. মুহাম্মদ মানজুরুর রহমান তার লিখিত ‘মাউযু’ হাদীস বা প্রচলিত জাল হাদীস’ গ্রন্থের ১০৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘হাদীসটির সনদ মিথ্যা, বানোয়াট, আপত্তিকর ও অত্যন্ত দুর্বল বলে সাব্যস্ত।’’
আরেক আহলে হাদিস ড. খ ম আব্দুর রাজ্জাক এর লিখা জালিয়াতী গ্রন্থ ‘প্রচলিত ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন’ এর ৫১ পৃষ্ঠায় এ হাদিস সম্পর্কে লিখেন-‘‘হাদীস বিশারদগণ উল্লেখিত হাদীসটিকে একবাক্যে এটিকে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।’’
আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসীরুদ্দীন আলবানী তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিদ-দ্বঈফাহ’ গ্রন্থে এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-
موضوع. كما قاله الصغاني في الأحاديث الموضوعة
-‘‘হাদিসটি জাল বা বানোয়াট, যেমনটি আল্লামা সাগানী তার মাওদ্বু হাদিসের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ, ১/৪৫০ পৃ. হা/২৮২)
এবার আমরা দেখবো বিভিন্ন এখতিলাফী সমাধান সংক্রান্ত হাদিসের কিতাবসমূহে এ হাদিস সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণ কী বলেছেন, আর বাস্তবতাই এ বিষয়টি প্রমাণিত কিনা।
ক. দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি আল্লামা আবুল হাসানাত আব্দুল হাই লাখনৌভী লিখেন-
لَكِن مَعْنَاهُ صَحِيح فقد روى الديلمي عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ مَرْفُوعًا: أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ، قَالَ اللَّهُ يَا مُحَمَّدُ! لَوْلاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ
-‘‘তবে এ হাদিসটির মমার্থ সহীহ বা বিশুদ্ধ। কেননা, ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার নিকট একদা হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আগমন করে বললেন, আপনার মহান রব বলেছেন, হে মুহাম্মদ! আমি যদি আপনাকে সৃজন না করতাম না বানাতাম জান্নাত, না জাহান্নাম। (লাখনৌভী, আছাররুস সুনান, ৪৪ পৃ.) বুঝা গেল ইতোপূর্বের একজন মৌলভীও এ হাদিসটির বিষয়ে মাওলানা লাখনৌভির এ অভিমত উল্লেখ করেননি, উল্লেখ না করার কারণ হলো তাদের কাজই রাসূল (ﷺ)-এর শান ও মানকে গোপন করা, আর তাদের গোপন করার পিছনে রয়েছে এক বিশাল কালো শক্তির মদদ।
খ. দশম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মওদ্বুআতুল কাবীর’ এ উক্ত হাদিস لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاك সম্পর্কে বলেন,
قَالَ الصَّغَانِيُّ إِنَّهُ مَوْضُوعٌ كَذَا فِي الْخُلَاصَةِ لَكِنَّ مَعْنَاهُ صَحِيحٌ فَقَدْ رَوَى أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّارَ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ عَسَاكِرَ لَوْلَاكَ مَاخلقت الدنيا-
-‘‘আল্লামা সাগানী বলেন, لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاك এই হাদিসটি শব্দগতভাবে مَوْضُوعٌ বা জাল (কিন্তু অর্থের দিক দিয়ে مَوْضُوعٌ নয়), আমি (মোল্লা আলী ক্বারী ) বলি, এর মর্মার্থ বা বিষয়বস্তু সঠিক। কেননা, ইমাম দায়লামী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার নিকট একদা হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) আগমন করে বললেন, আপনার মহান রব বলেছেন, হে মুহাম্মদ! আমি যদি আপনাকে সৃজন না করতাম না বানাতাম জান্নাত, না জাহান্নাম। ইমাম ইবনে আসাকির (رحمة الله) এর বর্ণনায় [হযরত সালমান ফারসী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত] এসেছে, আপনাকে সৃজন না করলে আমি দুনিয়া সৃষ্টি করতাম না।’’ ৬৪
৬৪. মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফুআ, ২৯৬ পৃ. হা/৩৮৫
গ. অনুরূপ আল্লামা আজলূনী আশ-শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন,
قال الصغانى موضوع ، واقول لكن معناه صَحِيحٌ
-‘‘ইমাম সাগানী (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি শব্দগতভাবে বানোয়াট, তবে আমি বলি উক্ত হাদিসের মর্মার্থ বা বিষয়বস্তু সহীহ বা বিশুদ্ধ (কারণ এ প্রসঙ্গে অনেক হাদিস রয়েছে)। ৬৫
৬৫. আল্লামা আজলূনী : কাশদুল খাফা : ২/১৪৮ পৃ. হা/২১২১
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
كما قال رسول الله ﷺ : أول ما خلق الله روحي وسائر الأرواح، إنما خلق ببركة روحه ونور وجوده كما روي لولاك لولاك لما خلقت الأفلاك فإنه صحيح
-‘‘এমনিভাবে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, সমস্ত রূহ সমূহের মধ্যে মহান আল্লাহ আমার রূহকে প্রথমে সৃজন করেছেন। আর সবকিছু আমার রূহ এবং নূরের বরকতের পরশে সৃষ্টি ও অস্তিত্ব লাভ করেছে। যেমন বর্ণিত আছে, মহান রব ইরশাদ করেছেন, হে পিয়ারা হাবীব! আপনাকে সৃজন না করলে আমি কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না। নিশ্চয়ই এ কথা বিশুদ্ধ.....।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/১৩ পৃ.)
আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) ‘মাদারেজুন নবুয়ত’ নামক সিরাত গ্রন্থের হাদিস হিসেবে, لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاك-‘আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না’ উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেন, অধিকাংশ মুহাদ্দিসগণ الْأَفْلَاك নিয়ে মন্তব্য করেছেন। রাসূল (ﷺ) এর একটি উপাধি হল সাহেব-ই-লাওলাক। الْأَفْلَاك শব্দটি فَلَكٌ এর বহুবচন। মূলতفلك শব্দের অর্থ হল মন্ডল। গ্রীক দার্শনিকদের মতে মন্ডল বারটি। বারি মন্ডল, বায়ু মন্ডল, অগ্নিমন্ডল, সাত আসমান সাতটি মন্ডল, আরশ মন্ডল, কুরসি মন্ডল। এ সব মন্ডলকে الْأَفْلَاك বলা হয়ে থাকে।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
(الأفلاك) أي انهدامها وتغيرها وانتقالها من أوضاعها بالكلية
-‘‘বস্তুর মূল উপাদান থেকে স্থানান্তরযোগ্য, পরিবর্তনশীল এবং ধ্বংসযোগ্যই হলো الْأَفْلَاك তথা মহাবিশ্ব।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ২/৫২২ পৃ.)
(الأفلاك) শব্দের ব্যাখ্যায় আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী লিখেন-
قال الشيخ الأكبر: إن الأفلاك إحدى عشر
-‘‘শাইখে আকবর মহিউদ্দিন ইবনে আরাবী (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয়ই الْأَفْلَاك (মহাবিশ্ব) এর সংখ্যা ১১ টি।’’ (আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী, আরফযু সাযী, ৪/৫৬ পৃ. হা/২৪৩০-এর আলোচনায়)
নিম্নের আমি কতিপয় হাদিসে পাক আমি উল্লেখ করবো যেখানে সরাসরি الْأَفْلَاك শব্দটি ব্যবহার না হয়ে বার মন্ডলের কথা বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এজন্য মুহাদ্দিস আল্লামা সাগানী তার খুলাসা গ্রন্থে الْأَفْلَاك শব্দটি বিশুদ্ধ নয় বলেছেন। আর একমাত্র আল্লামা সাগানীই এই শব্দটি মন্তব্য করেন, আর তার এ রায়কেই অনেকে তাদের গ্রন্থে নকল করেছেন।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইতোপূর্বে যে সমস্ত আলেমদের উদ্ধিৃতি দিয়েছে তাদের একজনও এ হাদিসটিকে শব্দগতভাবে প্রমাণিত না হলেও মমার্থ বিশুদ্ধ নয় বলেননি, আমি আশ্চর্যিত হয়ে যাই তখন যখন দেখি (মমার্থ বিশুদ্ধ বলেছে এমন মুহাদ্দিসদের) কিতাবের হাওয়ালা তাদের টীকায় দৃষ্টিগোচর হয়, এ সমস্ত ধোঁকাবাজ এ কিতাব পড়া সত্ত্বেও তারা এভাবেই সত্য গোপন করে যাচ্ছে অবিরত। তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য একটি-ই, কিভাবে রাসূল (ﷺ)-এর শান-মানকে ছোট করা যায়। মহান রব যেন আমাদেরকে এ সমস্ত ধোঁকাবাজদের থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করেন। আমিন
এবার আমি আলোচনা করবো এ হাদিসটির সমর্থনে হাদিসের কিতাবে সনদসহ বর্ণনা রয়েছে কীনা।
প্রথম হাদিস:
ইমাম হাকেম (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ عَمْرُو بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ مَنْصُورٍ الْعَدْلُ، ثنا أَبُو الْحَسَنِ مُحَمَّدُ بْنُ إِسْحَاقَ بْنِ إِبْرَاهِيمَ الْحَنْظَلِيُّ، ثنا أَبُو الْحَارِثِ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُسْلِمٍ الْفِهْرِيُّ، ثنا إِسْمَاعِيلُ بْنُ مَسْلَمَةَ، أَنْبَأَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ؓ ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : لَمَّا اقْتَرَفَ آدَمُ الْخَطِيئَةَ قَالَ: يَا رَبِّ أَسْأَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ لَمَا غَفَرْتَ لِي، فَقَالَ اللَّهُ: يَا آدَمُ، وَكَيْفَ عَرَفْتَ مُحَمَّدًا وَلَمْ أَخْلُقْهُ؟ قَالَ: يَا رَبِّ، لِأَنَّكَ لَمَّا خَلَقْتَنِي بِيَدِكَ وَنَفَخْتَ فِيَّ مِنْ رُوحِكَ رَفَعْتُ رَأْسِي فَرَأَيْتُ عَلَىَ قَوَائِمِ الْعَرْشِ مَكْتُوبًا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ فَعَلِمْتُ أَنَّكَ لَمْ تُضِفْ إِلَى اسْمِكَ إِلَّا أَحَبَّ الْخَلْقِ إِلَيْكَ، فَقَالَ اللَّهُ: صَدَقْتَ يَا آدَمُ، إِنَّهُ لَأُحِبُّ الْخَلْقِ إِلَيَّ ادْعُنِي بِحَقِّهِ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُكَ -
-‘‘হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, হযরত আদম (عليه السلام) যখন অপ্রত্যাশিতভাবে (ইজতেহাদি) ভুল করলেন তখন হযরত আদম (عليه السلام) আল্লাহর দরবারে আবেদন করলেন, হে পরওয়ারদিগার! হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) এর হকের উসিলায় আমাকে মার্জনা করুন। আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) কে কিভাবে চিনেছ? জবাবে আদম (عليه السلام) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! আপনি স্বীয় কুদরতি হাত দ্বারা আমাকে সৃষ্টি করে আমার দেহের অভ্যন্তরে যখন আত্মা প্রবেশ করিয়ে ছিলেন, তখন আমি মাথা তুলে আপনার আরশের পায়ায় লেখা দেখেছিলাম, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ আমি বুঝতে পারলাম, আপনি আপন নামের সাথে এমন একটি নাম মিলিয়ে রেখেছেন যেটি সমগ্র সৃষ্টি জগতে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন, হে আদম! তুমি সত্য বলেছো। নিশ্চয় ঐ নাম সমগ্র জাহানে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। যেহেতু তুমি সেই নাম নিয়েই আমার কাছে প্রার্থনা করেছ, সেহেতু আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। হে আদম! যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, আমি তোমাকেও সৃজন করতাম না।’’ ৬৬
৬৬. ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাকঃ ২/৬৭২ পৃ. হা/৪২২৮, ইমাম তাবরানীঃ মু’জামুল আওসাত : ৬/৩১৩ হাদিসঃ ৬৫০২, তাবরানীঃ মু’জামুস সগীর : ২/১৮২ হাদিসঃ ৯৯২, ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৫৩ : পৃ., ইমাম ইবনে আসাকিরঃ- তারিখে দামেস্ক : ৭/৪৩৭, আল্লামা ইবনে কাসীর, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১/১৮ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১২ হাদিসঃ ১২, ইমাম বুরহান উদ্দিন হালবীঃ সিরাতে হালবিয়্যাহ ১/৩৫৫ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানীঃ মাওয়াহেবে লাদুনীয়া, ১/৮২ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ তাফসীরে দুররে মানসুর, ১/১৪২ পৃ., ইমাম বায়হাকীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ ৫/৪৮৯ পৃ., ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মাদখালঃ ১/১৫৪ পৃ., ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানীঃ হিলইয়াতুল আউলিয়া, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : শাওয়াহিদুল হক্ব : পৃ নং: ১৩৭, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : আনোয়ার-ই-মুহাম্মদিয়া : পৃ নং: ৯-১০, আল্লামা শাহ আ: আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী : তাফসীর-ই-আযীযী : প্রথম খণ্ডঃ পৃ-১৮৩, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : আফযালুস্ সালাত : পৃ-১১৭, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান: ২/৩৭০ পৃ. সূরা মায়েদা: আয়াত নং-১৫, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/১১৫ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪ পৃ:, ইমাম জুরকানীঃ শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/১৭২ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৭৯৫ পৃ. এবং ৩১ পৃ., মাকতুবাতুত- তাওফিকহিয়্যাহ্, কায়রু, মিশর। আল্লামা শফী উকাড়বীঃ যিকরে হাসীন, ৩৭ পৃষ্ঠা, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী : নশরত্তীবঃ পৃষ্ঠা নং- ২৮
সনদ পর্যালোচনা:
✦ ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) এ হাদিসটি সংকলন করেন তিনি লিখেন-
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَهُوَ أَوَّلُ حَدِيثٍ ذَكَرْتُهُ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ فِي هَذَا الْكِتَابِ
-‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ।’’ (ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল মুস্তাদরাক, ২/৬৭২ পৃ. হা/৪২২৮)
❏ ইমাম হাকিম (رحمة الله) এর এ অভিমতকে বহু ইমামগণও গ্রহণ করেছেন, কেউ কোনো প্রতিবাদ করেননি। এর মধ্যে রয়েছেন ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله), শায়খ ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله), শাহ্ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله), কাস্তালানী (رحمة الله), জুরকানী (رحمة الله), ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله), ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله), ইবনে কাসীর (رحمة الله), বুরহানউদ্দীন হালাবী (رحمة الله), মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), এমনকি দেওবন্দের অন্যতম আলেম আশরাফ আলী থানবীরও। ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) এ বিষয়ে লিখেন-
رواه الحاكم فى صحيحه أن آدم- عليه السّلام- رأى اسم محمد- صلى الله عليه وسلم- مكتوبا على العرش، وأن الله تعالى قال لآدم لولا محمد ما خلقتك
-‘‘ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) সহীহ সূত্রে সংকলন করেন যে, নিশ্চয় হযরত আদম (عليه السلام) আরশের পায়ায় মুহাম্মদ (ﷺ)-এর নাম দেখতে পেয়েছিলেন এবং তখন মহান আল্লাহ হযরত আদম (عليه السلام) কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, হে আদম! যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, তাহলে আমি তোমাকেও সৃজন করতাম না।’’ (ইমাম কাস্তালানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/৪৭ পৃ.)
❏ ইমাম কাস্তালানী (رحمة الله) এ গ্রন্থের আরেক স্থানে স্পষ্ট লিখেছেন-
وصح أن رسول الله- صلى الله عليه وسلم- قال لما اقترف آدم الخطيئة قال: يا رب
-‘‘রাসূল (ﷺ) থেকে সহীহ সনদে এসেছে যে, তিনি বলেছেন, হযরত আদম (عليه السلام) যখন অপত্যাশিত ভাবে ভুল করলেন তখন তিনি বললেন হে আমার রব.......।’’(ইমাম কাস্তালানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ৩/৬০৫ পৃ.)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের মত আলেমগণ ইমাম কাস্তালানীর ৫০০ শত বছর পরে এসে উনাদের তাহকীকে ভুল ধরতে এসেছেন, উনারা শতশত বছর পূর্বে হাদিসের সনদ বুঝেননি। ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৩০৭ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘ইমাম বাইহাকী হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন।’’ এবার আমরা তার কথার বাস্তবতা দেখবো।
❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এটি সংকলন করেন লিখেন-
تَفَرَّدَ بِهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ مِنَ هَذَا الْوَجْهِ عَنْهُ، وَهُوَ ضَعِيفٌ، وَاللهُ أَعْلَمُ
-‘‘এ হাদিসটি একক ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ বিন আসলাম’ বর্ণনা করেছেন। সে দুর্বল হাদিস বর্ণনাকারী, মহান রবই এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত।’’ (দালায়েলুন নবুয়ত, ৫/৩৭৪ পৃ:)
দেখুন কতবড় মিথ্যাচার। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব-
✦ হাফিজুল হাদিস আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) স্বয়ং ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)-এর অভিমত এভাবে উল্লেখ করেছেন-
قَالَ الْبَيْهَقِيُّ تَفَرَّدَ بِهِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ وَهُوَ ضَعِيفٌ
-“ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বলেন, ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ আসলাম’ হতে এটি একক বর্ণনা, আর তিনি যঈফ।” (হাফিজ ইবনে কাছির: আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ২য় খণ্ড, ৬২৯ পৃ:)।
শুধু তাই নয় উক্ত রাবীকে সে জাহেল প্রমাণ করতে গিয়ে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার গ্রন্থের ৩০৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘আব্দুর রহমান ইবনু যাইদ ইবনু আসলাম (ওফাত. ১৮২ হি.) খুবই দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ছিলেন। মুহাদ্দিসগণ তাঁর বর্ণিত হাদিস গ্রহণ করেন নি। কারণ তিনি কোনো হাদীস ঠিকমত বলতে পারতেন না, সব উল্টোপাল্টা বর্ণনা করতেন।’’
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তার এ সামান্য বক্তব্যের মধ্যে কয়েকটি মিথ্যাচার রয়েছে। এক. রাবী আব্দুর রহমানকে কেউ অত্যন্ত দুর্বল কেউ বলেনি। যেমনটি ইতোপূর্বে বায়হাকী এবং ইবনে কাসিরের অভিমত দেখলাম। উদাহরণ স্বরূপ দেখুনঃ
✦ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-
وَفِيْهِم لِيْنٌ -
‘ সে কিছুটা নরম অর্থাৎ সামান্য দুর্বল প্রকৃতির।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৩৪৯ পৃ. ক্রমিক.৯৪) বুঝা গেল সামান্য দুর্বল রাবীকে জাহাঙ্গীর সাহেব ইচ্ছা করেই দুর্বলতা বাড়িয়ে দিলেন তার নিজের গুপ্ত ভাণ্ডার থেকে!
✦ দ্বিতীয়ত. তিনি বক্তব্যে বলেছেন যে, কোন মুহাদ্দিস তার হাদিস গ্রহণ করে নি, সে কতবড় জাহেল দেখুন, সুনানে ইবনে মাযাহ এবং সুনানে তিরমিযিতে তার হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
(সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/২৩৮, হা/৫১৯, হা/১১৮৮, হা/২৪৪৩, হা/২৭৬৬, হা/৩২১৮, হা/৩৩১৪, হা/৪০৬০, সুনানে তিরমিযি, হা/৪৬৫, হা/৪৬৬, হা/৬৩১, হা/৬৩২, হা/৭১৯, হা/৮৫২)
✦ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) তাঁর চেয়েও আরেকজন শক্তিশালী রাবীর সাথে তুলনা দিতে গিয়ে লিখেও ছিলেন-
وَهَذَا أَصَحُّ مِنْ حَدِيثِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ.
-‘‘এ হাদিসটি ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ বিন আসলাম’ এর বর্ণনা হতে অধিক বিশুদ্ধ।’’ (সুনানে তিরমিযি, ২/১৯ পৃ. হা/৬৩২)
বুঝা গেল, দুজনের হাদিসটই সহীহ, তবে আব্দুর রহমানের হাদিস তুলনামূলভাবে কম সহীহ।
তৃতীয়ত. জাহাঙ্গ্রীর সাহেব উক্ত রাবীর বিষয়ে দাবী করেছেন যে, হাদিস পড়ার তাঁর কোন ইলমী যোগ্যতা ছিল না,
❏ অথচ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তাঁর জীবনীতে লিখেন-
وَكَانَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ صَاحِبَ قُرْآنٍ وَتَفْسِيْرٍ، جَمَعَ تَفْسِيْراً فِي مُجَلَّدٍ، وَكِتَاباً فِي النَّاسِخِ وَالمَنْسُوْخِ.
-‘‘হযরত আব্দুর রহমান (رحمة الله) তিনি কুরআনের ক্বারী এবং মুফাস্সির ছিলেন, তিনি কয়েক খণ্ডে কুরআনের তাফসিরও লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তিনি ইসলামের গূরুত্বপূর্ণ বিষয় নাসেখ মানসুখ বিষয়ে কিতাব লিপিবদ্ধ করেছিলেন।’’(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৮/৩৪৯ পৃ. ক্রমিক.৯৪)
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বর্তমানে উক্ত গ্রন্থের লিখক বেঁচে থাকলে আমি অবশ্যই জিজ্ঞাসা করতেন একজন রাবীর নামে মিথ্যাচার করে তার কি লাভ!
❏ ইমাম নুরুদ্দিন হায়সামী (رحمة الله) বলেন,
عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، وَفِيهِ كَلَامٌ، وَقَدْ وَثَّقَهُ ابْنُ عَدِيٍّ.
-“রাবী ‘আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম’ সম্পর্কে অনেক কথা রয়েছে, তবে ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।” (ইমাম হায়সামী: মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/৪৪১০)।
❏ ইমাম মিযযী (رحمة الله) বলেন,
وَقَال أَبُو أَحْمَد بْن عدي: له أحاديث حسان. وهو ممن احتمله الناس، وصدقه بعضهم. وهو ممن يكتب حديثه.
-“ইমাম আবু আহমদ ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, তার অনেক হাদিস ‘হাসান’ রয়েছে। সে এমন ব্যক্তি যার রেওয়াত লোকেরা গ্রহণ করেছেন এবং অনেকে তাকে সত্যবাদী বলেছেন এবং সে ব্যক্তির হাদিস লিখেছেন।” (ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ৩৮২০)
✦ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন: وهو صاحب حَدِيثِ -“সে ছাহেবুল হাদিস অর্থাৎ মুহাদ্দিস ছিলেন।” (ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, ৪/৯০৪ পৃ. রাবী নং ২০১)
তবে আফসোসের বিষয় হল, কাঠ মিস্ত্রী নাসিরুদ্দিন আলবানী তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ’ এর (১ম খণ্ডের ৮৮ পৃষ্ঠায়) ২৫ নং হাদিসের আলোচনায় এ হাদিসকে এতজন ইমাম গ্রহণ করার পরও হাদিসটিকে জাল বলেছেন। আল্লাহ তার উপর লানত বর্ষণ করুন, যে একা সমস্ত ইমামদের বিরোদ্ধে গিয়ে নিজেকে বড় ইমাম বানাতে চেয়েছিল। আর প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর শান-মানের ব্যাপারে ইহা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হাদিস।
সর্বশেষ এ হাদিসের বিষয়ে আমার বক্তব্য হলো এ হাদিসের আরেকটি সূত্র রয়েছে।
❏ ইমাম আবু সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.) এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র হযরত মূসা (عليه السلام)-এর ঘটনার মাধ্যমে এভাবে উল্লেখ করেছেন-
وعن ابن عباس رضي الله عنهما....... قال موسى عليه السّلام: ومن محمد يا رب؟ قال: الذي كتبت اسمه على ساق العرش قبل أن أخلق السماوات والأرضين بألفي عام، محمد رسولي وحبيبي وخيرتي من خلقي. قال: يا رب فإن كان محمد أكرم عليك من جميع خلقك فهل في قوله: ولولا محمد ما خلقتك
-‘‘হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন.......তখন মহান মূসা (عليه السلام) বললেন, হে মহান রব! মুহাম্মদ কে? মহান রব বললেন, তার নাম আমি আরশের পায়ায় লিখেছি আদম (عليه السلام) সৃজন করার হাজার বছর পূর্বে, হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন আমার রাসূল, আমার হাবীব এবং আমার সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বোত্তম। হযরত মূসা (عليه السلام) বললেন, হে আমার রব! মুহাম্মদ (ﷺ) হলেন আপনার সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি। অতঃপর মহান আল্লাহ মূসা (عليه السلام) কে লক্ষ্য করে বলেন, যদি আমি তাকে না বানাতাম (হে মূসা!) আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।’’ (আবূ সা‘দ খরকুশী, শরফুল মোস্তফা, ১/১৬৬ পৃ.)
পর্যালোচনা:
প্রমাণিত হলো রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি কে করা না হলে মূসা (عليه السلام) কেও সৃষ্টি করা হতো না, অপর বর্ণনায় দেখলাম হযরত আদম (عليه السلام) কথা এসেছে। সুতরাং আদম (عليه السلام) না হলে হয়তো আমাদের কোন মানবের জাতির উৎপত্তিও হত না।
❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-
(ولو لاه ما خلقتك) ويقرب منه ما روي لو لاك لما خلقت الأفلاك
-‘‘(হে আদম! যদি আমি মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি না করতাম তোমাকেও সৃজন করতাম না) এটি এ হাদিসের অর্থের নিকটবর্তী, যেমন বর্ণিত আছে, হে হাবিব! আপনাকে সৃজন না করলে আমি বানাতাম না কোনো কিছু।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/৩৮২ পৃ.)
দ্বিতীয় হাদিস:
ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَمْشَاذَ الْعَدْلُ، إِمْلَاءً، ثنا هَارُونُ بْنُ الْعَبَّاسِ الْهَاشِمِيُّ، ثنا جَنْدَلُ بْنُ وَالِقٍ، ثنا عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ الْأَنْصَارِيُّ، ثنا سَعِيدُ بْنُ أَبِي عَرُوبَةَ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ وَلَقَدْ خَلَقْتُ الْعَرْشَ عَلَى الْمَاءِ فَاضْطَرَبَ فَكَتَبْتُ عَلَيْهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولٌ اللَّهِ فَسَكَنَ-
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام) এর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর ঈমান আন এবং তোমার উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর যুগ পাবে তাদেরকে ঈমান আনতে বলো। কারণ যদি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, তাহলে আমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম, না বেহেশত, না দোযখ সৃজন করতাম। আমি (আল্লাহ) যখন পানির উপর আরশ তৈরী করেছিলাম, তখন তা এদিক সেদিক কম্পন করতে লাগল। তখন আমি তার উপর কালেমা শরীফ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ লিখে দিলাম অতঃপর আরশ স্থির হয়ে গেল।’’ ৬৭
৬৭. ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাক, ২/৬৭১ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪২২৭, আল্লামা ইমাম তকিউদ্দিন সুবকী, শিফাউস সিকাম, ৪৫ পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী, আফজালুল র্কুরা, আল্লামা সিরাজুদ্দীন বলকীঃ ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া, ১/১৪০ পৃ., আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারীঃ মাওদ্বুআতুল কাবীর, ১০১ পৃ., ইমাম ইবনে সা’দঃ আত্-তবকাতুল কোবরা, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/১৪ পৃ. হাদিসঃ ২১, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামীঃ শরহে শামায়েলঃ ১/১৪২ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, ২/১১৪ পৃ., ইমাম যাহাবীঃ মিযানুল ইতিদাল : ৫/২৯৯ পৃ. রাবী: ৬৩৩৬, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানীঃ লিসানুল মিযানঃ ৪/৩৫৪ পৃ., ইমাম ইবনে হাইয়্যানঃ তবকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানীঃ ৩/২৮৭ পৃ., আবু সা‘দ ইবরাহিম নিশাপুরী, শরহে মুস্তফা: ১/১৬৫ পৃ., জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব : ১২/২২০ পৃ., ইবনে কাসীর, কাসাসুল আম্বিয়া, ১/২৯ পৃ. দারুল তা‘লিফ, কায়রু, মিশর, ইবনে কাসীর, সিরাতে নববিয়্যাহ: ১/৩২০ পৃ. দারুল মা‘রিফ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে কাসীর, মু‘জিজাতুন্নাবী: ১/৪৪১ পৃ. মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু, মিশর, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১২/৪০৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
হাদিসটির সনদ পর্যালোচনা:
✦ ইমাম হাকেম (رحمة الله) এ হাদিসটিকে সংকলন করে লিখেন-
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ
-‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ, যদিওবা ইমাম বুখারী (رحمة الله) ও মুসলিম (رحمة الله) সংকলন করেননি।’’ (ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ২/৬৭১ পৃষ্ঠা, হা/৪২২৭)
✦ ইমাম হাকিম (رحمة الله) এর এ সমাধানকে ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله), ইমাম সুবকী (رحمة الله), ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله), মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)সহ এক জামাআত মুহাদ্দিসগণ মেনে নিয়েছেন যে হাদিসটির সনদ সহীহ বলেছেন।
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৩০৮ পৃষ্ঠায় উক্ত সনদের অন্যতম রাবী ‘আমর ইবনু আউস আল-আনসারী’ সম্পর্কে লিখেন-‘‘এ লোকটি মূলত একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না।.........এটি ইবনু আব্বাসের নামে বানানো জাল হাদীস।’’ অথচ তিনি নির্ভরযোগ্য কোন আসমাউর রিজালের আলোকে উক্ত রাবীকে অজ্ঞাত পরিচায়ক প্রমাণ করতে পারেননি।
✦ অথচ ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) ও আল্লামা নূরুদ্দিন আলী ইবনে আহমদ ছামহুদী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে হাদিসটি সহীহ্ হওয়ার কথা এভাবে লিখেছেন-
وَأخرج الْحَاكِم وَصَححهُ -“ইমাম হাকেম (رحمة الله) হাদিসখানা সংকলন করেছেন, সহীহ্ বলে মত প্রকাশ করেছেন।” (ইমাম সুয়ূতি: খাসায়েসুল কোবরা, ১/২৯ পৃ:; আল্লামা সামহুদী: ওফাউল ওফা, ৪/২২৪ পৃ:)
✦ বিখ্যাত আসমাউর রিজালবিদ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) রাবী ‘আমর বিন আউস’ এর বিস্তারিত জীবনী আলোচনা করেছেন তিনি তাকে মাজহুল বলেননি। (মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ১০/১৩৩ পৃ. ক্রমিক.৪০৬৩)
পর্যালোচনা:
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টির পূর্বেই আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন। এ হাদিস থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল যে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা না হলে না আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করা হতো, না জান্নাত, না জাহান্নাম সৃষ্টি করা হতো।
তৃতীয় ও চতুর্থ হাদিস:
❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله)সহ একজামাত ইমামগণ সংকলন করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ مَرْفُوعًا أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّار
-“একদা আমার নিকট হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন, হে মুহাম্মদ ! আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি সৃজন করতাম না বেহেশত, আর না দোযখ।’’ ৬৮
৬৮.
ক. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭৫ পৃ.
খ. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফুআ: ১/২৯৫ পৃ. হা/৩৮৫
গ. আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, ৪/১৬০ পৃ.
ঘ. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৮৬ পৃ.
ঙ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪৩১ পৃ. হা/৩২০২৫
সনদ পর্যালোচনা:
এ হাদিসটির সনদ ‘হাসান’ পর্যায়ের।
❏ এ হাদিসটির সনদ স্বয়ং আহলে হাদিস আলবানী দায়লামী শরীফ থেকে এভাবে সংকলন করেন-
عبيد الله بن موسى القرشي حدثنا الفضيل بن جعفر بن سليمان عن عبد الصمد بن علي بن عبد الله ابن عباس عن أبيه عن ابن عباس به.
-‘‘উবাইদুল্লাহ বিন মূসা কুরশী তাকে হাদিস বর্ণনা করেছেন ফযাইল বিন জাফর বিন সুলাইমান তিনি হাদিস বর্ণনা করেছেন আব্দুস সামাদ বিন আলী বিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে তিনি তার পিতা আলী ইবনে আব্দুল্লাহ হতে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন।.....।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ ওয়াল মাওদ্বুআহ, ১/৪৫১ পৃ. হা/২৮২)
আলবানী এই সনদটিকে জোর করে উসূলে হাদিসের নিয়মকে উপেক্ষা করে যঈফ প্রমাণের অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন। এতে সর্বশেষে দাবী করেছেন যে,
✦ সনদের অন্যতম রাবী আব্দুস সামাদের হাদিসের বিষয়ে ইমাম উকাইলী (رحمة الله) বলেছেন-غير محفوظ ولا يعرف الا به. “তার হাদিস সংরক্ষিত নয়, তার এ সূত্র ছাড়া আর অন্য কোনো ভাবে তাকে চেনা যায় না।” ৬৯
৬৯. আলবানী, সিলসিলাতু আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ১/৪৫১ পৃ. হা/২৮২
যদি আলবানী বর্তমানে জীবিত থাকতো তাহলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করতাম যে, ইমাম উকায়লীর এই উক্তি কোথায় হতে নকল করেছেন!
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উকাইলীর শুধু غير محفوظ অভিমত উল্লেখ করেছেন; কিন্তু আলবানী দেখুন আরেকটু তার নামে সংযোজন করে দিলেন। আমি বর্তমান আহলে হাদিসদেরকে বলবো যে, আপনারা ইমাম উকাইলীর একক উক্তি ছাড়া আর কোন মুহাদ্দিসের অভিমত পেশ করুন যে, কেউ তাকে দুর্বল বলেছেন।
✦ ইমাম সাখাভী (رحمة الله) তার একটি সনদকে এক স্থানে শুধু গরীব বলেছেন, কোন দুর্বলতা আছে বলে উল্লেখ করেননি। ৭০
৭০. ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ১৪৪ পৃ. হা/১৫৪
✦ ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) তার জীবনী উল্লেখ করে কোন সমালোচনা করেননি। ৭১
৭১. ইমাম আবু হাতেম, জারহু ওয়া তা’আদীল, ৬/৫০ পৃ. ক্রমিক: ২৬৬
✦ আল্লামা ছালাহ উদ্দিন খালীল ছাফকী (ওফাত ৭৬৪ হি.) তার জীবনীতে উল্লেখ করেন- وكان كبير القدر معظمًا-‘‘তিনি ছিলেন বড় সম্মানিত, মর্যাদাবান ব্যক্তিদের একজন।’’ ৭২
৭২. ছাফকী, (ناكث الهميان) নাকসুল হামীয়ান, ১/১৭৬ পৃ.
✦ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন-
وما عبد الصمد بحجة ولعل الحفاظ
-‘‘আব্দুস সামাদ তিনি হুজ্জাত (চার লক্ষেরও বেশী হাদিসের হাফেয) পর্যায়ের রাবী নন, সম্ভবত তিনি হাফেজ (১ লক্ষ হাদিসের মুখস্তকারী) ছিলেন।’’ ৭৩
৭৩. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৫/১৮৭পৃ. ক্রমিক. ৪৭৮৭
সুবহানাল্লাহ! এটা রাবীর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে এটাই অনেক কিছু।
এ বিষয়ের দ্বিতীয় বর্ণনা :
❏ ইমাম দায়লামী (رحمة الله) আরেকটি সনদ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
يَقُول الله عز وَجل وَعِزَّتِي وَجَلَالِي لولاك مَا خلقت الْجنَّة ولولاك مَا خلقت الدُّنْيَا
-“আমার মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালা বলেন, আমার ইজ্জত ও জালালিয়াতের শপথ! যদি আপনি না হতেন তাহলে আমি না জান্নাত সৃজন করতাম না দুনিয়া।” ৭৪
৭৪. ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৫/২২৭ পৃ. হা/৮০৩১, মুসনাদিল ফিরদাউস, ২/২২ পৃ. হা/৮০৩১
এই হাদিসটির সনদ নিয়ে আলবানী থেকে শুরু করে কেহই কলম ধরার সাহস করেনি।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
যে হেডলাইন দিয়ে লেখাটা শুরু করেছেন [(لَوْلاكَ لَمَا خَلَقْتُ الأَفْلاكِ) ‘রাসূল (ﷺ) সৃষ্টি না হলে কিছুই সৃষ্টি হত না’] মুহাদ্দেসগণের সর্বসম্মত মত হচ্ছে - এটি কোন হদিসই নয় অর্থাৎ জালিয়তদের জাল কথা। আপনি লিখেছেন - অমুক অমুক মুহাদ্দিস, ইমাম/বলেছেন হাদিসটি জাল তবে এর মর্মার্থ জাল নয়। ব্যাপারটি এ রকম - মাথায় গুলি লেগে লোকটি মারা গেছে কিন্তু আশার কথা হচ্ছে একটুর জন্য তার চোখটি বেঁচে গেছে।
উত্তরমুছুনদ্বিতীয় হাদিস [মুহাম্মাদ ﷺ না হলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।] যা সর্বসম্মতভাবে জাল সেটাকে কতিপয় মুহাদ্দিস সহিহ বলেছেন।
বর্ণনাকারী আবুল হারিস একজন অত্যন্ত দুর্বল রাবী। এছাড়া আব্দুর রাহমান ইবনু যাইদ ইবনু আসলাম (১৮২ হি) খুবই দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী ছিলেন। মুহাদ্দিসগণ তাঁর বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেন নি। কারণ তিনি কোনো হাদীস ঠিকমত বলতে পারতেন না, সব উল্টোপাল্টা বর্ণনা করতেন। ইমাম হাকিম নিজেই তার ‘মাদখাল ইলাস সহীহ’ গ্রন্থে বলেছেন:
عبد الرحمن بن زيد بن أسلم روى عن أبيه أحاديث موضوعة لا يخفى على من تأملها من أهل الصنعة أن الحمل فيها عليه
‘‘আব্দুর রাহমান ইবনু যাইদ ইবনু আসলাম তার পিতার সূত্রে কিছু মাউযূ বা জাল হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীস শাস্ত্রে যাদের অভিজ্ঞতা আছে, তারা একটু চিন্তা করলেই বুঝবেন যে, এ সকল হাদীসের জালিয়াতির অভিযোগ আব্দুর রাহমানের উপরেই বর্তায়।’’[2]
এ হাদীসটি উমার (রা) থেকে অন্য কোন তাবিয়ী বলেন নি, আসলাম থেকেও তাঁর কোন ছাত্র তা বর্ণনা করেন নি। যাইদ ইবনু আসলাম প্রসিদ্ধ আলিম ছিলেন। তাঁর অনেক ছাত্র ছিল। তাঁর কোন ছাত্র এ হাদীসটি বর্ণনা করেন নি। শুধুমাত্র আব্দুর রহমান দাবী করেছেন যে তিনি এ হাদীসটি তাঁর পিতার কাছে শুনেছেন। তাঁর বর্ণিত সকল হাদীসের তুলনামূলক নিরীক্ষা করে ইমামগণ দেখেছেন তাঁর বর্ণিত অনেক হাদীসই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা পর্যায়ের। এজন্য ইমাম যাহাবী, ইবনু হাজার ও অন্যান্য মুহাদ্দিস হাদীসটিকে মাউযূ বলে চিহ্নিত করেছেন। ইমাম বাইহাকী হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন। কোনো কোনো মুহাদ্দিস বলেছেন যে, এ কথাটি মূলত ইহূদী-খৃস্টানদের মধ্যে প্রচলিত শেষ নবী বিষয়ক কথা; যা কোনো কোনো সাহাবী বলেছেন।
সুত্রঃ তাবারানী, আল-মুজামুল আউসাত ৬/৩১৩-৩১৪; আল-মু‘জামুস সাগীর ২/১৮২; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ২/৬৭২; ইবন কাসির, তারীখ ২/৩২৩; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/২৫৩; আলবানী, সিলসিলাতু যায়ীফাহ ১/৮৮-৯৯; খাল্লাল, আস-সুন্নাহ ১/২৩৭, আজলূনী, কাশফুল খাফা ১/৪৬, ২/২১৪, মোল্লা আলী কারী, আল-আসরার পৃ: ১৯৪, আল-মাসনূ‘য়, পৃ: ১১৬; দাইলামী, আল-ফিরদাউস ৫/২২৭।
এ মর্মে আরেকটি যয়ীফ হাদীস আব্দুল্লাহ ইবনু আববাসের কথা হিসাবে হাকিম সংকলন করেছেন। তিনি জানদাল ইবনু ওয়ালিক এর সূত্রে বলেন, তাকে আমর্ ইবনু আউস আনসারী নামক দ্বিতীয় শতকের এক ব্যক্তি বলেছেন, তাকে তাবি-তাবিয়ী সাঈদ ইবনু আবূ আরূবাহ (১৫৭ হি) বলেছেন, তাকে তাবিয়ী কাতাদা ইবনু দিআমাহ আস-সাদূসী (১১৫ হি) বলেছেন, তাকে তাবিয়ী সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (৯১হি) বলেছেন, তাকে ইবনু আববাস (রা) বলেছেন:
উত্তরমুছুনأَوْحَى اللهُ إِلَى عِيْسَى يَا عِيْسَى آَمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوْا بِهِ فَلَوْلاَ مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آَدَمَ وَلَوْلاَ مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلاَ النَّارَ وَلَقَدْ خَلَقْتُ الْعَرْشَ عَلَى الْمَاءِ فَاضْطَرَبَ فَكَتَبْتُ عَلَيْهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَسُوْلُ اللهِ فَسَكَنَ.
‘‘মহান আল্লাহ ঈসা (আঃ)-এর প্রতি ওহী প্রেরণ করে বলেন, তুমি মুহাম্মাদের উপরে ঈমান আনয়ন কর এবং তোমার উম্মাতের যারা তাঁকে পাবে তাদেরকে তাঁর প্রতি ঈমান আনয়নের নির্দেশ প্রদান কর। মুহাম্মাদ (ﷺ) না হলে আদমকে সৃষ্টি করতাম না। মুহাম্মাদ (ﷺ) না হলে জান্নাত ও জাহান্নামও সৃষ্টি করতাম না। আমি পানির উপরে আরশ সৃষ্টি করেছিলাম। তখন আরশ কাঁপতে শুরু করে। তখন আমি তার উপরে লিখলাম: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’; ফলে তা শান্ত হয়ে যায় - হাকিম, আল-মুসতাদরাক ২/৬৭১।।
ইমাম হাকিম হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন, হাদীসটির সনদ সহীহ। ইমাম যাহাবী প্রতিবাদ করে বলেন, ‘‘বরং হাদীসটি মাউযূ বলেই প্রতীয়মান হয়।’’ কারণ এর একমাত্র বর্ণনাকারী এ ‘আমর্ ইবনু আউস আল-আনসারী’ নামক ব্যক্তি। সে প্রসিদ্ধ কয়েকজন মুহাদ্দিসের নামে হাদীসটি বর্ণনা করেছে। অথচ তাঁদের অন্য কোনো ছাত্র এ হাদীসটি তাঁদের থেকে বর্ণনা করে নি। এ লোকটি মূলত একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি। তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। এ জানদাল ইবনু ওয়ালিক ছাড়া অন্য কোনো রাবী তার নাম বলেন নি বা তার কোনো পরিচয়ও জানা যায় না। এজন্য যাহাবী ও ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, এটি ইবনু আববাসের নামে বানানো জাল হাদীস - যাহাবী, মীযানুল ই’তিদাল ৫/২৯৯; ইবনু হাজার, লিসানুল মীযান ৪/৩৫৪।
এ অর্থে আরো জাল হাদীস মুহাদ্দিসগণ উল্লেখ করেছেন - যাহাবী, তারতীবু মাউদূ‘আত, পৃ ৭৭; ইবনু আর্রাক, তানযীহুশ শারীয়াহ ১/২৪৪-২৪৫, ৩২৫।
বিশ্লেষণে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
মুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন