তাবলীগ অর্থ প্রচার করা বা দাওয়াত দেওয়া। কিসের দাওয়াত? দ্বীনের দাওয়াত অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ। এখন প্রশ্ন হতে পারে তাবলীগ কি সবাই করতে পারবে? এর উত্তর কুরআন শরীফেই আছে। তাবলীগ সকলের জন্য নয়। যেমন আল্লাহ রাব্বল আলামীন কোরআন শরীফে সুরা আলে ইমরানের ১০৪ নং আয়াতে বলেন,
ولتكن منكم أمة يدعون إلى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر واوليك
اهم المفلحون
অর্থাৎ “তােমাদের মধ্যে একদল এমন হওয়া উচিৎ যারা কল্যাণ বা ইসলামের দিকে লােকদেরকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের নির্দেশ দিবে এবং মন্দ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই হচ্ছে কামিয়াব বা সফলকাম।”
(সুরা আলে ইমরান-১০৪)।
উপরােক্ত আয়াতে তােমাদের মধ্যে একদল লােক এই কয়টি শব্দ দ্বারা ইহাই পরিস্কার ভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, দাওয়াত বা তাবলীগ করার নির্দেশ সমস্ত মুসলমানদের উপর নয় বরং মুসলামনদের মধ্যে একদল অর্থাৎ আলেম সম্প্রদায়ের উপর ফরজ করা হয়েছে। এই আয়াতে নির্দেশিত তাবলীগ ইসলামের প্রথম যুগ হতে অদ্যাবধি ওলামায়ে
কেরামগণ ও ওলি আল্লাহগণ এবং হাক্কানী পীর মাশায়েখগণ করে আসছেন।
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে বায়জাভী’তে বলা হয়েছে, " আয়াতে Sha
(মিনকুম) এর ‘মিন' শব্দটি কতক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কেননা সৎ কাজের নির্দেশ দান করা ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা কিছু সংখ্যক লােকের উপর ফরজ। যাকে ফরজে কেফায় বলে। কারণ এ কাজ সম্পাদনের জন্য যে শর্তাবলী রয়েছে, যেমন- শরিয়তের বিধি-নিষেধ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হওয়া, এলমে মারেফত সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, আহকাম বা বিধি-নিষেধের তাৎপর্য এবং এগুলি প্রয়ােগ ও প্রতিষ্ঠা বা বাস্তবায়ন পদ্ধতি সম্বন্ধে অবগত হওয়া ইত্যাদি। অথচ এ সমস্ত শর্ত সকলের মধ্যে পাওয়া যায় না।”
" আল্লামা আবু আবদিয়াহ মুহাম্মদ বিন আহমদ আনসারী (রহ.) তদ্বীয় কুরতুবী
শরীফ' এর জুজে বাবে ১৬২ পৃষ্ঠায় উপরােক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-
“আয়াতে উল্লেখিত (মিনকুম) এর ‘মিন' শব্দটি তাবঈজ’ বা কতক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, এর মমার্থ হলাে-নিশ্চয়ই উল্লেখিত বিষয়সমূহ (কল্যাণের দিকে আহবান, সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ) উলামায়ে কেরামের উপর ওয়াজিব, কেননা প্রত্যেক লােক আলেম নহে। কারণ নেক কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ ফরজে কেফায়া।
তাহলে বুঝতে পারলাম যে, তাবলীগ ফরজে কেফায়া। যেমন- জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক লােক আদায় করলে সকলের আদায় হয়ে যায়।
তেমনিভাবে তাবলীগও ফরজে কেফায়া। কিছু সংখ্যক লােক তথা ওলামায়ে কেরামগণ
ও ওলি আল্লাহগণ এবং হাক্কানী পীর মাশায়েখগণ আদায় করলে সকলের আদায় হবে যাবে।।
তাফসীরে জালালাইন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, “উক্ত আয়াতের “মিন" শব্দটি দ্বারা কিছু সংখ্যক লােককে বুঝানাে হয়েছে, কেননা তাবলীগে দ্বীন সম্পাদন করা ফরজে কেফায়া অর্থাৎ কিছু সংখ্যক লােকের উপর ফরজ। এ নির্দেশ সকল উম্মতের প্রতি নয়। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি এ কাজের যােগ্য নয়। যেমন-জাহিল বা মূর্খ ব্যক্তি।”
উপরােল্লেখিত তাফসীর হতে আমরা বুঝতে পারলাম যে, যারা সকাজের নির্দেশ দান ও অসৎ কাজের নিষেধ করার যােগ্য, কেবলমাত্র তারাই তাবলীগের দ্বায়িত্ব সম্পন্ন
করবেন। যারা কোরআন সুন্নাহর ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। ঈমানী ও আমলী মাসয়ালা সম্পর্কে অবহিত নয়, তাদের জন্য তাবলীগ করা হারাম। তবে যারা হাক্কানী উলামায়ে কেরামের সােহবতে থেকে ঈমানী ও আমলী যে সমস্ত মাসয়ালা সঠিকভাবে শিখতে সক্ষম হয়েছেন, শুধুমাত্র এ সমস্ত মাসয়ালা অন্যের নিকট প্রচার করতে পারবে।
অনেকে বলতে পারেন, এত লক্ষ লক্ষ মানুষ তাবলীগ করছে, নামাজ পড়ছে, সুন্নতী লেবাস পড়ছে তারা কি ভ্রান্ত? জবাবে বলতে চাই কাদিয়ানীরাও নামাজ পড়ে, কালিমা পড়ে, সুন্নতী লেবাস পড়ে, তাই বলে কি তারা সঠিক? কাদিয়ানীদের শুরু গােলাম আহমদ কাদিয়ানী সরাসরি অর্থাৎ প্রত্যক্ষভাবে নবী দাবী করেছে তাই কাদিয়ানী বা তার অনুসারী ভ্রান্ত যদিও কালিমা-নামাজ পড়ে। তেমনিভাবে ইলিয়াছ মেওয়াতীও পরােক্ষভাবে নবী দাবী করছে বিধায় ইলিয়াছ মেওয়াতী এবং তার অনুসারী তাবলীগ জামাতীগণও ভ্রান্ত যদিও তারা কালিমা-নামাজ পড়ে। কেননা ইলিয়াছ মেওয়াতী স্বপ্নে এই তাবলীগ পেয়েছেন এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রণিত ৫ উসুল বাদ দিয়ে ৬ উসুল আবিষ্কার করেছেন। তার ৫০নং মালফুজাত খুব মনােযােগের সহিত পাঠ করলেই আসল উদ্দেশ্য বেরিয়ে আসবে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্বপ্ন ওহীরূপে গণ্য হয়, কিন্তু অন্য কোন ব্যক্তির স্বপ্ন ওহী হিসেবে গণ্য হবে না। কিন্তু ইলিয়াছ মেওয়াতী তার স্বপ্নকে নবুওয়াতের অংশ বানাতে চায় (মালফুজাত নং ৫০)।
বােঝার ইচ্ছা থাকলে অল্প কথায় সমাধান হয়ে যায়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন