‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ৬১৯ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখেছেন, -‘‘তবে এ দিনে নির্ধারিত সংখ্যক দরুদ পাঠের বিষয়ে কোনো সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়নি।’’ অথচ সহীহ সূত্রে পাওয়া যায় রাসূল (ﷺ) কমপক্ষে নির্দিষ্ট একটি দুরূদকে জুম‘আর দিনে জুম‘আর পর ৮০ বার পড়ার আদেশ করেছেন। যেমন বর্ণিত আছে :
حَدِيث أبي هُرَيْرَة مَرْفُوعا من صلى عَليّ يَوْم الْجُمُعَة ثَمَانِينَ مرّة غفر الله لَهُ ذنُوب ثَمَانِينَ سنة قيل يَا رَسُول الله كَيفَ الصَّلَاة عَلَيْك قَالَ تَقول اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَنَبِيِّكَ وَرَسُوْلِكَ النَّبِي الْأُمِّي وتعقد وَاحِدَة -
-‘‘বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান : যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন আমার প্রতি ৮০ বার দুরূদ শরীফ পড়বে তাহলে আল্লাহ্ তা‘য়ালা তার ৮০ বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। সাহাবায়ে কিরামগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার প্রতি সে দুরূদ শরীফ আমরা কিভাবে পড়বো? রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
اللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَنَبِيِّكَ وَرَسُوْلِكَ النَّبِي الْأُمِّي
“আল্লাহুম্মা সালি আ‘লা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া নাব্যিয়িকা ওয়া রাসূলিকা আন্-নাবিয়্যি উম্মি’ এভাবে পড়বে।’’ ১০৮
➥{দারাকুতনী : আস সুনান : ২/১৫৪ পৃ:, আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১৭৯ পৃ., খতিবে বাগদাদী : তারীখে বাগদাদ : ১৩/৪৮৯, তিনি হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে, ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৪৫ পৃ. হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে, ইমাম সাখাভী : আল কাশেফ : ১/১৬৭ পৃ. ইবনে ইরাকী, তানযিহুল শারীয়াতুল কোবরা, ২/৩৩১ পৃ. হা/৪৫, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, তিনি বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’, ইবনুল জাওযী, আল-ইলালুল মুতনাহিয়্যাত ফি আহাদিসুল ওয়াহিয়্যাত, ১/৪৬৮ পৃ. হা/৭৯৬, ইরাকী, তাখরীযে ইহইয়াউল উলূম, ১/২২০ পৃ. তিনি বলেন, ইমাম ইবনে নু‘মান হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন ও ১/৪৪৫ পৃ. হা/৫১১, তিনি বলেন, ইমাম ইবনে কাত্তান হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেচেন, আজলূনী, কাশফুল খাফা, ১/১৮৯ পৃ. হা/৫০১, তিনি বলেন ‘ইমাম ইরাকি হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন, আবু ত্বালেব মক্কী, কুউয়াতুল কুলুব, ১/১২১ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, গায্যালী, ইহইয়াউল উলূমুদ্দীন, ১/১৮৬ পৃ., দারুল মা‘রিফ বয়রুত, লেবানন, শায়খ খলিল (ওফাত. ৮৬৯ হি.), বাশারাতুল মাহবুব বি তাকফীরুল যুনুব, ১/৩৯ পৃ. আবদুর রহমান সাফুরী, নুযহাতুল মাযালিস, ১/১৩৮ পৃ. মাতবায়ে কাস্তালিয়া, কায়রু, মিশর।}
❏ অপরদিকে ইমাম মুহাদ্দিস আবু মুহসিন সৈয়দ ইউসূফ বিন আব্দুল্লাহ হুসাইনী (رحمة الله) এর ছোট সংক্ষিপ্ত চমৎকার গ্রন্থ كتاب الاربعون حديثا ‘কিতাবুল আরবাঈনু হাদিস’ এর ১০৩ তম হাদিস হিসেবে উলেখ করে বলেন :
رواه ابن شاهين و الضياء المقدسى و الدارقطنى فى سننه و قال حديث حسن
-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله), ইমাম যিয়া মাকদেসী (رحمة الله) এবং ইমাম দারাকুতনী (رحمة الله) তার ‘আস-সুনান’ গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেন এবং তারপর বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’। ১০৯
➥{আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ৪/১৮৭ পৃ}
এবার আমরা এ সূত্র ছাড়াও আরো কোনো সূত্র রয়েছে কীনা তা অনুসন্ধান করে দেখবো।
❏ ইমাম খতিবে বাগদাদী তার তারীখে বাগদাদ সংকলন করেন-
أَخْبَرَنَا أَبُو طَالِبٍ عُمَرُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْفَقِيهُ، قَالَ: حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْمُقْرِئُ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ الْمَطِيرِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ دَاوُدَ بْنِ سُلَيْمَانَ الضَّرِيرُ، قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ صُهَيْبٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كُنْتُ وَاقِفًا بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: مَنْ صَلَّى عَلَيَّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ ثَمَانِينَ مَرَّةً غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ذُنُوبَ ثَمَانِينَ عَامًا، فَقِيلَ لَهُ: كَيْفَ الصَّلاةُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: تَقُولُ: اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَنَبِيِّكَ وَرَسُولِكَ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ، وَتَعْقِدُ وَاحِدَةً
-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (ﷺ)-এর সামনে বসা ছিলেন, অতঃপর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুম‘আর দিনে ৮০ বার আমার প্রতি দরুদ পড়বে মহান রব তার ৮০ বছরের গুনাহ মার্জনা করে দিবেন। সাহাবায়ে কিরামগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আপনার প্রতি সে দুরূদ শরীফ আমরা কিভাবে পড়বো? রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান,
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَنَبِيِّكَ وَرَسُولِكَ النَّبِيِّ الأُمِّيِّ
-“আল্লাহুম্মা সালি আ‘লা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া নাব্যিয়িকা ওয়া রাসূলিকা আন্-নাবিয়্যি উম্মি’ এটি এক বসায় পড়বে।’’
(ইমাম খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ১৫/৬৩৬ পৃ. ক্রমিক.৭২৭৮)
সনদ পর্যালোচনা:
❏ এ হাদিসের সমস্ত রাবী সিকাহ, শুধু ওহ্হাব ইবনে দাউদ’ ছাড়া। খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) তার জীবনীতে হাদিসটি নকল করেছেন, তার বিষয়ে বলেছেন- ولم يكن ثقة. -‘‘তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত রাবী নন।’’
(ইমাম খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ১৫/৬৩৬ পৃ. ক্রমিক.৭২৭৮, ইবনে জাওযী, দ্বুআফা ওয়াল মাতরুকিন, ৩/১৮৮ পৃ. ক্রমিক. ৩৬৮০)
তবে খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো মুহাদ্দিস তাকে দুর্বল বলেননি।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উক্ত হাদিসটি একাধিক সনদে বর্ণিত হওয়ায় এবং সনদে কোন মিথ্যাবাদী বা অতি দুর্বল কোনো রাবী না থাকায় নিঃসন্দেহে এটির সনদের মান কমপক্ষে ‘হাসান লিগাইরিহী’, অপরদিকে ইমাম দারাকুতনীর সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের যা মুহাদ্দিসগণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন