‘‘শরীয়ত ও প্রচলিত কুসংস্কার’’ যা এক ঈমান বিধ্বংসী বই যার ১৯৩ পৃষ্ঠায় দলীলবিহীন ভাবে পিতা-মাতা অথবা পীর বুযুর্গের হাতে পায়ে চুমু দেয়া শিরকের আহবায়ক বলে উলেখ করেছেন উক্ত মুফতী ইব্রাহিম খাঁন (হাটহাজারীর মেখল মাদ্রাসার মুহতামীম)। কোনো একটি দলীলও তিনি পেশ করেননি যে, কদমবুচি নাজায়েয, হারাম বা মাকরূহ। অপরদিকে আরেকটি বিভ্রান্তিকর পুস্তক বিদ’আত ৩/২১৯ পৃষ্ঠায় ড: আহমদ আলী লিখেন-“এ রীতি একদিকে বিধিবদ্ধ ও সুপ্রচলিত সুন্নতের পরিপন্থী, অপরদিকে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ।” নাঊযুবিল্লাহ! শুধু তাই নয় আরো লিখেছেন এটি নাকি ছোট শিরক। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ!
❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) এ বিষয়ক একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন যে-
بَابُ تَقْبِيلِ الرَّجُلِ
-‘‘পরিচ্ছেদ: কোনো সম্মানিত ব্যক্তির পায়ে চুমু দেয়া প্রসঙ্গ।’’
(ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, ৩৩৯ পৃ.)
তাহলে কী ইমাম বুখারী (رحمة الله) সংস্কৃতি বুঝেন নি! সব এই ডক্টরেট ডিগ্রি ধারী সাহেবগণ বুঝে গেলেন!
হাদিস নং-১:
❏ ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عِيسَى بْنُ الطَّبَّاعِ، حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْأَعْنَقُ، حَدَّثَتْنِي أُمُّ أَبَانَ بِنْتُ الْوَازِعِ بْنِ زَارِعٍ، عَنْ جِدِّهَا، زَارِعٍ وَكَانَ فِي وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ عَنْ زَارِعٍ وَكَانَ فِي وَفْدِ عَبْدِ الْقَيْسِ قَالَ: لَمَّا قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ فَجَعَلْنَا نَتَبَادَرُ مِنْ رَوَاحِلِنَا، فَنُقَبِّلُ يَدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرِجْلَهُ
-‘‘হযরত যারে‘ঈন (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, যিনি আবদুল কায়েসের প্রতিনিধিভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, যখন আমরা মদীনা মনোওয়ারায় আসলাম তখন আমরা নিজ নিজ বাহন থেকে তাড়াতাড়ি অবতরণ করতে লাগলাম। অতঃপর আমরা হুযূর (ﷺ) এর পবিত্র হাত ও পা মুবারকে চুমু দিয়েছিলাম।’’ ১১০
➥{ইমাম বুখারী : তারীখুল কাবীর : ৪/৪৪৭ পৃ. : হা/১৪৯৩, ইমাম বুখারী : আদাবুল মুফরাদাত : ২৩৮ পৃ: হা/৯৭৫, ইমাম ইবনে আবি শায়বা : আল মুসান্নাফ : ৮/৫৬২ পৃ., ইমাম আবু দাউদ : আস সুনান : ৪/৩৫৭ পৃ. : কিতাবুল আদাব : হা/৫২২৫, ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ৫/২৭৫ পৃ. : হা/৫৩১৩, ইমাম তাবরানী : মুজামুল আওসাত : ১/১৩৩ পৃ. : হা/৪১৮, ইমাম বায়হাকী : আস সুনানে কোবরা : ৭/১০২ পৃ. : হা/১৩৩৬৫, ইমাম বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ১১/২৯৪ পৃ., হা/৮৫৬০, ইমাম শায়বানী : আহাদিসুল মাসানী : ৩/৩০৪ পৃ. : হা/১৬৮৪, ইবনে হাজার আসকালানী : তালখীসুল হুবাইর : ৪/৯৩ পৃ. : হা/১৮৩০, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী : আদ-দিরায়্যাত ফি তাখরীজ আহাদিসুল হিদায়াত : ২/২৩২ পৃ. হাদিস: ৬৯১, ইমাম খতিব তিবরিযী : মিশকাত: ৩/১৩২৮পৃ. হা/৪৬৮৮ (মুসাফা ও মু‘আনাকা অধ্যায়), ইমাম মিয্যী : তাহজীবুল কামাল : ৭/২৬৬ পৃ. রাবী: ১৯৪৬, ইমাম যায়লাঈ : নাসীমুর রিয়াদ্ব : ২/২৩২.পৃ., ইমাম আবি আছেম, আস্-সুন্নাহ, হা/১৯০, ইমাম শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : আশিআতুল লুমআত : ৩/৫০৮ পৃ. : হা/৪৬৮৮, মোবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজী : ৭/৫৬২ পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী : ফতহুল বারী : ৮/৮৫ পৃ., ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুওয়াত : ৫/৩২৭ পৃ.}
সনদ পর্যালোচনা:
ড. আহমদ আলী সাহেব তার বিদআত ৩য় খণ্ডের ২২১ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটিকে দুর্বল বলে প্রমাণ করার অনেক অপচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু তিনি কোন গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ উলেখ করেননি, যার দ্বারা বুঝতে পারা যায় কি কারণে এটি যঈফ। অপরদিকে আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীও হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। ১১১
➥{আলবানী: সহিহুল আবু দাউদ, ৪/৩৫৭পৃ.হাদিস, ৫২২৫}
❏ এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেছেন-
أَوْرَدَ فِيهِ أَحَادِيثَ كَثِيرَةً وَآثَارًا فَمِنْ جَيِّدِهَا حَدِيثُ الزَّارِعِ الْعَبْدِيِّ
-‘‘(হাতে এবং পায়ে কদমবুসির করার) বিষয়ে অনেক হাদিস এবং আছার বর্ণিত হয়েছে, এর মধ্যে হযরত জারে‘ঈন আবদী (رضي الله عنه) হতে ‘শক্তিশালী’ সনদে বর্ণিত আছে....।’’
(রওদ্বাতুল মোহাদ্দেছীন, হা/২৪৮০; ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ১১তম খণ্ড, ৫৭ পৃ: ৬২৬৫ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়)
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) যেখানে সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলেছেন সেখানে অন্য কোনো নিম মৌলভীর কথা শুনার আমাদের সময় নেই।
হাদিস নং-২
❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ إِدْرِيسَ وَغُنْدَرٌ وَأَبُو أُسَامَةَ، عَنْ شُعْبَةَ، عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ ؓ، أَنَّ قَوْمًا مِنَ الْيَهُودِ قَبَّلُوا يَدَ النَّبِيِّ ﷺ وَرِجْلَيْهِ
-‘‘হযরত সাফওয়ান বিন আস্সালাম (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় ইয়াহুদীদের একটি জামাত (দল) রাসূল (ﷺ) এর হাত ও পা মোবারকে চুমু খেয়েছেন।’’ ১১২
➥{ইমাম ইবনে মাজাহ : আস্-সুনান : ২/১২২১পৃ. : হা/৩৭০৫, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ১/৩২ পৃ. হা/৫৮, ইমাম তিরমিযী : আস্-সুনান, ৫/৭২ পৃ. হা/২৭৩৩, ইমাম নাসায়ী : আস-সুনান : ৭/১১১ পৃ. হা/৪০৭৮, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল-মুসনাদ : ৪/২৩৯ পৃ., আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ১/১২৭ পৃ. হাদিস:৩, আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৫/২৯২ পৃ. হাদিস:২৬২০৭, যায়লাঈ, নাসিবুর রায়্যাহ, ৪/২৫৮পৃ. তিনি তিরমিযির হাসান, সহীহ বলা মতকে মেনে নিয়েছেন, ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল-মুস্তাদরাক : কিতাবুল ঈমান : হা/২০, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, আল-দেরায়া ফি তাখরীজে হেদায়া, ২/২৩২ পৃ., শায়খ মাহমুদ মুহাম্মদ খলিল, আল-মুসনাদিল জামে, ৭/৫০৪ পৃ., আলবানী, দ্বঈফু সুনানে ইবনে মাজাহ, হা/৩৭০৫, তিনি বলেন, সনদটি দ্বঈফ।}
আহলে হাদিসদের আপত্তি ও নিষ্পত্তি:
❏ উক্ত হাদিসের সনদে ‘আবদুল্লাহ বিন সালমাহ আল-মারাদী আল-কূফী’ রাবীর কারনে আহলে হাদিস আলবানী হাদিসটিকে দ্বঈফ বলেছেন। আমি প্রথমে বলবো, ইমাম তিরমিযি, হাকিম নিশাপুরী, ইমাম যায়লাঈ সহ অনেকে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। অপরদিকে উক্ত রাবী সম্পর্কে ইমাম ইবনে আদি বলেন- وقال ابن عدي: أرجو أنه لا بأس به. -‘‘আমি আশা রাখি, তাঁর হাদিস গ্রহণ করতে কোন অসুবিধা নেই।’’ ১১৩
➥{ক. যাহাবী: মিযানুল ই‘তিদাল, ২/৪৩১ পৃ. ক্রমিক. ৪৩৬০ এবং তারিখুল ইসলাম, ২/৮৪০ পৃ. ক্রমিক.৬০, ইবনে আদি, আল-কামিল, ৫/২৭৯পৃ. ক্রমিক.৯৮৯}
❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
قال العجلي، ويعقوب بن شيبة: ثقة.
-‘‘ইমাম ইজলী ও ইয়াকুব বিন শায়বাহ বলেন তিনি (ثقة) সিকাহ বা বিশ্বস্ত ছিলেন।’’ ১১৪
➥{ .১১৪. ক. যাহাবী: মিযানুল ই‘তিদাল, ২/৪৩১ পৃ. ক্রমিক. ৪৩৬০ এবং তারিখুল ইসলাম, ২/৮৪০ পৃ. ক্রমিক.৬০, ইবনে আদি, আল-কামিল, ৫/২৭৯ পৃ. ক্রমিক.৯৮৯}
❏ ইমাম মিয্যী বলেন- وقال ابن حبان في الثقات -‘‘ইমাম ইবনে হিব্বান তাঁর ‘কিতাবুস-সিকাহ’ গ্রন্থে তাকে সিকাহ রাবির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করেছেন।’ ১১৫
➥{ইমাম মিয্যী, তাহযীবুল কামাল, ১৫/৫১ পৃ. ক্রমিক.৩৩১৩, মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৭/৩৮৭ পৃ. ক্রমিক.২৯৭০}
তবে হ্যাঁ, নাসাঈসহ আরও কয়েকজন তাকে দ্বঈফ বলেছেন। তাই উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) যে হাদিসটি ‘হাসান, সহীহ বলেছেন তার এ তাহকীক বাস্তব সম্মত।
মুহাদ্দিসদের বক্তব্য:
❏ এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম তিরমিজি (رحمة الله) বলেন: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ -“এই হাদিস হাসান-সহীহ্।”
(তিরমিজি শরীফ, হা/২৭৩৩)
❏ এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন:
رَوَاهُ أَصْحَابُ السُّنَنِ بِإِسْنَادٍ قَوِيٍّ.
-“আসহাবে সুনান এই হাদিস শক্তিশালী সনদে বর্ণনা করেছেন।”
(ইমাম আসকালানী: তালখিছুল হাবির, ৪র্থ খণ্ড, ১৭৩ পৃ:)।
❏ এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ‘রওজাতুল মোহাদ্দেসীন’ কিতাবে আছে,
إسناده صحيح قال الإمام النووى فى الرياض ১ / ২৮৮ رواه الترمذى وغيره بأسانيد صحيحة.
-“এই হাদিসের সনদ সহীহ্। ইমাম নববী (رحمة الله) তদীয় ‘রিয়াদ্ব’ গ্রন্থে বলেন: ইমাম তিরমিজি ও অন্যান্যরা সহীহ্ সনদে ইহা বর্ণনা করেছেন।”
❏ এই হাদিসের সনদ সম্পর্কে আল্লামা সিরাজুদ্দিন আবু হাফ্ছ উমর ইবনে আলী ইবনে আহমদ আল মিছরী (رحمة الله) [ওফাত ৮০৪ হিজরী] বলেন:
رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَالنَّسَائِيّ وَابْن مَاجَه بأسانيد صَحِيحَة.
-“ইমাম তিরমিজি (رحمة الله), নাসাঈ (رحمة الله) ও ইবনে মাজাহ (رحمة الله) স্ব স্ব ছহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।”
(আল্লামা ইবনে মুলাক্কিন: বাদরুল মুনীর, ৯ম খণ্ড, ৪৮ পৃ:)।
হাদিস নং-৩
❏ এ বিষয়ে ইমাম বুখারী (رحمة الله) তদীয় কিতাবে একটি রেওয়াত উল্লেখ করেছেন,
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ قَالَ: حَدَّثَنَا مَطَرُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْأَعْنَقُ قَالَ: حَدَّثَتْنِي امْرَأَةٌ مِنْ صَبَاحِ عَبْدِ الْقَيْسِ يُقَالُ لَهَا: أُمُّ أَبَانَ ابْنَةُ الْوَازِعِ، عَنْ جَدِّهَا، أَنَّ جَدَّهَا الْزَّارِعَ بْنَ عَامِرٍ قَالَ: قَدِمْنَا فَقِيلَ: ذَاكَ رَسُولُ اللَّهِ، فَأَخَذْنَا بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ نُقَبِّلُهَا
-“হযরত ওয়াজে ইবনে আমের (رضي الله عنه) বলেন, আমরা দয়াল নবীজির কাছে আগমন করলাম, কেউ একজন বললেন: এই যে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)!! অত:পর আমরা নবী পাকের মোবারক হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে চুমু খেলাম।”
(ইমাম বুখারী: আল-আদাবুল মুফরাদ, ৩৩৯ পৃ. হাদিস নং ৯৭৫)
সনদ পর্যালোচনা:
এই হাদিসের সনদে أم أبان ‘উম্মু আবান’ নামক একজন রাবী রয়েছে, যাকে লা-মাজহাবীরা ‘মাজহুল’ বা অপরিচিত রাবী বলতে চান। এজন্য আহলে হাদিস আলবানী ‘আদাবুল মুফরাদের’ তাহকীকে একে যঈফ বলেছেন। আলবানীর জীবনে কত সিকাহ রাবীকে যে মাজহুল বলেছেন তা মহান রবই ভাল জানেন।
❏ হাফিজুল হাদিস ইমাম সামছুদ্দিন যাহাবী (رحمة الله) তাঁর সম্পর্কে বলেন:
أم أبان بنت الوازع بن زارع. عن جدها أنه قبل يدى النبي صلى الله عليه وسلم ورجليه.
-“উম্মে আবান হল ‘অজাইন ইবনে জিরাইন (رضي الله عنه)’ এর কন্যা। সে তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন: লোকেরা আল্লাহর নবী (ﷺ) এর হাঁত ও পা মোবারকে চুম্বন করেছেন।”
(ইমাম যাহাবী: মিযানুল ই‘তিদাল, ৪/৪৮৬ পৃ. রাবী নং ৯৯২৯)।
❏ এই রাবী সম্পর্কে শারিহে বুখারী হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন-
أم أبان بنت الوازع ابن الزارع مقبولة
-“উম্মু আবান হল ‘অজাইন ইবনে জিরাইন (رضي الله عنه) এর কন্যা, আর সে মকবুলা বা গ্রহণযোগ্য রাবী।”
(ইবনে হাজার আসকালানী: তাক্বরীবুত তাহজিব, রাবী নং ৮৭০০)।
❏ স্বয়ং ইমাম বুখারী (رحمة الله) তাঁর ‘আল আদাবুল মুফরাদ’ কিতাবে এই হাদিসের সনদে তার নাম উল্লেখ করেছেন এভাবে:
امْرَأَةٌ مِنْ صَبَاحِ عَبْدِ الْقَيْسِ يُقَالُ لَهَا: أُمُّ أَبَانَ ابْنَةُ الْوَازِعِ، عَنْ جَدِّهَا،
-“আব্দুল কায়েছ গোত্রের একজন মহিলা যাকে ‘উম্মু আবান’ বলা হয় আর তিনি ‘অজাইন (رضي الله عنه)’ এর কন্যা।”
(ইমাম বুখারী: আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৯৭৫ এর সনদ লক্ষ্য করুন)।
আফসোসের বিষয় হল, আলবানীর তাহকীককৃত গ্রন্থে হাদিসটি সনদবিহীন উল্লেখ করে বলা হয়েছে ‘উম্মে আবান’ একজন অপরিচিত রাবী। অথচ ‘আদাবুল মুফরাদে’ সনদ সহ এই হাদিসটি সমালোচনা বিহীন উল্লেখ আছে যার একটি মূল কপি আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। যারা এরূপ ছলচাতুরী করছেন, আল্লাহ যেন তাদের হেদায়েত করেন। অতএব, হাদিসটি আপত্তিহীন ভাবে সহীহ্ প্রমাণিত। তাই আবারো সহীহ্ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কদমবুছীর পক্ষে ছিলেন। কারণ সাহাবায়ে কিরাম প্রিয় নবীজির কদমবুসী করেছেন এবং নবী পাক (ﷺ) কদমবুসী গ্রহণ করেছেন। সুতরাং কদমবুসী করা রাসূলে পাক (ﷺ) কর্তৃক অনুমোদিত সুন্নাত।
হাদিস নং-৪:
❏ অনেক মুহাদ্দিস সংকলন করেন-
حَدِيثُ ابْنِ عُمَرَ فِي قِصَّةٍ قَالَ: فَدَنَوْنَا مِنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَبَّلْنَا يَدَهُ وَرِجْلَهُ رَوَاهُ أَبُو دَاوُد.
-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর রেওয়াতের মধ্যে লম্বা কাহিনীর পরে উল্লেখ আছে, তিনি বলেন: অত:পর তাঁরা রাসূলে পাক (ﷺ) এর নিকটবর্তী হলেন এবং প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর হস্ত ও পদচুম্বন করলেন। ইমাম আবু দাউদ (رحمة الله) এই হাদিস বর্ণনা করেছেন।”
(আল্লামা ইবনুল মুলাক্কিন: বাদরুল মুনীর, ৯ম খণ্ড, ৪৮ পৃ:; ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: তালখিসুল হুবাইর, ৪র্থ খণ্ড, ২৪৬ পৃ:)।
আবারো ছহীহ্ হাদিস দ্বারা প্রমাণ হল, স্বয়ং দ্বীনের নবী রাসূলে পাক (ﷺ) কদমবুছীর পক্ষে ছিলেন। কারণ লোকেরা নবী পাক (ﷺ) এর কদমবুছী করেছেন আর প্রিয় নবীজি (ﷺ) তাদেরকে বাধা দেননি বরং কদমবুছী গ্রহণ করেছেন। এতেই প্রমাণ হয়, ইহা রাসূল (ﷺ) এর অনুমোদিত সুন্নাত।
হাদিস নং-৫
❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْمُبَارَكِ قَالَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ حَبِيبٍ قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ قَالَ: حَدَّثَنَا عَمْرٌو، عَنْ ذَكْوَانَ، عَنْ صُهَيْبٍ قَالَ: رَأَيْتُ عَلِيًّا يُقَبِّلُ يَدَ الْعَبَّاسِ وَرِجْلَيْهِ
-“হযরত ছুহাইব (রহ.) বলেন, নিশ্চয় আমি হযরত আলী (رضي الله عنه) কে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর হস্ত ও পদ চুম্বন করতে দেখেছি।”
(ইমাম বুখারী: আদাবুল মুফরাদ, হা/৯৭৬; ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ২৬তম খণ্ড, ৩৭৬ পৃ:; ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, ১৩তম খণ্ড, ২৪০ পৃ:; ইমাম যাহাবী: তারিখে ইসলামী, ২য় খণ্ড, ২০২ পৃ:; ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৩য় খণ্ড, ৪০০ পৃ:; মোবারকপুরী: তুহফাতুল আহওয়াজী, ৭ম খণ্ড, ৪৩৭ পৃ:; ইমাম মুত্তাকী হিন্দী: কানযুল উম্মাল, হা/৩৭৩৩০; ইমাম সুয়ূতী: জামেউল আহাদিস, হা/৩৩৪১২)।
সনদ পর্যালোচনা:
এই হাদিসের সনদে صُهَيْب ‘হযরত ছুহাইব (رضي الله عنه)’ সম্পর্কে লা-মাজহাবীরা সমালোচনা করে, অথচ তিনি নবীজির চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর গোলাম ও একজন বিশিষ্ট সাহাবী ছিলেন। আর সাহাবীদের সমালোচনা করাই ওহাবীদের চিরাচরিত স্বভাব।
❏ হযরত ছুহাইব (رضي الله عنه) সম্পর্কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) ও আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন:
ذكره ابنُ حِبَّان فِي كتاب الثقات
-“ইমাম ইবনে হিব্বান (رحمة الله) তাকে বিশ্বস্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছেন।”
(ইমাম আসকালানী: তাহজিবুত তাহজিব, রাবী নং ৭৭০, ইমাম যাহাবী: সিয়ারু আলামী নুবালা, ৩য় খণ্ড, ৪০০ পৃ:)।
❏ এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) ‘সিয়ারু আলামীন আন-নুবালা’ গ্রন্থে বলেন: إِسْنَادُهُ حَسَنٌ -“এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’।”
অতএব, হাসান-সহীহ্ পর্যায়ের হাদিস দ্বারা আবারো প্রমাণিত হল, হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (رضي الله عنه) প্রিয় নবীজির চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) এর হস্ত ও পদচুম্বন করেছেন। পাশাপাশি আরো দুইটি বিষয় প্রমাণিত হল; একটি-পিতার মত সম্মানী ব্যক্তির অথবা কোন বুযুর্গ ব্যক্তির কদমবুসী করা সুন্নাতে সাহাবা, আর অপরটি হল- কদমবুসী শুধু নবী করিম (ﷺ) এর জন্য খাস নয়, বরং অন্যান্য বুযুর্গ ব্যক্তির বেলায়ও জায়েয।
হাদিস নং-৬:
❏ এ সম্পর্কে আরেকটি রেওয়াত লক্ষ্য করুন,
عن زيد بن ثابت قال: دخل سعد بن عبادة على رسول الله صلى الله عليه وسلم ومعه ابنه فسلم، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ههنا ههنا وأجلسه عن يمينه، وقال: مرحبا بالأنصار! وأقام ابنه بين يدي رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اجلس، فجلس فقال: ادن، فدنا فقبل يدي رسول الله صلى الله عليه وسلم ورجله،
-“হযরত জায়েদ ইবনে ছাবেত (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: হযরত সা’দ ইবনে উবাদা (رضي الله عنه) ও তাঁর সন্তান সহ রাসূল (ﷺ) এর কাছে গেলেন ও সালাম পেশ করলেন। রাসূল (ﷺ) বললেন: এখানে ডানদিকে বসুন এবং আরো বললেন: আনছারদেরকে স্বাগতম! অত:পর তাঁর সন্তান রাসূল (ﷺ) এর সামনে দাঁড়ালেন ফলে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বললেন: তুমি বস! ফলে সে বসল ও দয়াল নবীজির অনুমতিক্রমে কাছে গেল এবং রাসূল (ﷺ) এর হস্ত ও পদচুম্বন করল।”
(ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হা/৩৭৯৩৫; ইমাম সুয়ূতি, জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ৩৭৮৩৪; তারিখে ইবনে আছাকির)।
হাদিস নং-৭
❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ صَفْوَانَ بْنِ عَسَّالٍ، أَنَّ يَهُودِيَّيْنِ قَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: اذْهَبْ بِنَا إِلَى هَذَا النَّبِيِّ نَسْأَلُهُ، فَقَالَ: لاَ تَقُلْ لَهُ نَبِيٌّ فَإِنَّهُ إِنْ سَمِعَهَا تَقُولُ نَبِيٌّ كَانَتْ لَهُ أَرْبَعَةُ أَعْيُنٍ، فَأَتَيَا النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلاَهُ عَنْ قَوْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ [وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ] فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لاَ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًا، وَلاَ تَزْنُوا، وَلاَ تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلاَّ بِالحَقِّ، وَلاَ تَسْرِقُوا، وَلاَ تَسْحَرُوا، وَلاَ تَمْشُوا بِبَرِيءٍ إِلَى سُلْطَانٍ فَيَقْتُلَهُ، وَلاَ تَأْكُلُوا الرِّبَا، وَلاَ تَقْذِفُوا مُحْصَنَةً، وَلاَ تَفِرُّوا مِنَ الزَّحْفِ،، شَكَّ شُعْبَةُ، وَعَلَيْكُمْ اليَهُودَ خَاصَّةً أَلاَّ تَعْتَدُوا فِي السَّبْتِ فَقَبَّلاَ يَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ وَقَالاَ: نَشْهَدُ أَنَّكَ نَبِيٌّ.
هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
-“হযরত সাফওয়ান ইবনে আস্সাল (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় দুইজন ইহুদী তারা একে অপরকে বলল: আমরা এই নবী পাক (ﷺ) এর কাছে যাবো ও কিছু জিজ্ঞাসা করবো। অত:পর জিজ্ঞাসিত লোকটি বললো, আমি নবী (ﷺ) কে কিছুই বলবো না, অত:পর তারা নবী পাক (ﷺ) এর কাছে আসলো।..... তোমাদের ইহুদীরা শনিবারে মাছ শিকার করবে না। অত:পর তারা রাসূল (ﷺ) হস্ত ও পদচুম্বন করলেন এবং বললেন: আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনি আল্লাহর নবী। এই হাদিস হাসান-সহীহ্।” ১১৬
➥{তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ৩১৪৪; মুসনাদে আবু দাউদ ত্বয়ালুছী, হাদিস নং ১২৬০; মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ১৮০৯২; ইমাম বায়হাক্বী: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ১৬৬৭৩; তাহাবী: শরহে মাআনিল আছার, ৩য় খণ্ড, ২১৫ পৃ:; নাসাঈ শরীফ, হাদিস নং ৪০৭৮; ইমাম নাসাঈ: সুনানে কুবরা, হাদিস নং ৩৫৪১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭০৫; ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ৭৩৯৬; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, ২৬২০৭; মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নং ২০; ইমাম বায়হাক্বী: দালায়েলেুন নবুয়াত, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ২৬৯ পৃ:; হাফিজ ইবনে কাছির: মুজিজাতুন্নবী, ১ম খণ্ড, ২১৯ পৃ:; ইমতাউল আসমা, ১৪তম খণ্ড, ৮২ পৃ:; ইমাম ইবনে ছালেহী: সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৩য় খণ্ড, ৪০৩ পৃ:; ছিরাতে হলভিয়া, ২য় খণ্ড, ১৫১ পৃ:}
ইমাম তিরমিজি (رحمة الله), ইমাম হাকেম নিশাপুরী, (رحمة الله), ইমাম ছিয়তী (رحمة الله) প্রমূখ হাদিসটিকে صَحِيحٌ ‘সহীহ্’ বলেছেন। সুতরাং সহীহ্ হাদিস দ্বারা আবারো প্রমাণ হল, রাসূল পাক (ﷺ) কদমবুসী গ্রহণ করেছেন। আর স্বয়ং দ্বীনের নবী রাসূলে পাক (ﷺ) যা গ্রহণ করেছেন তার বিরুদ্ধে কথা বলা মূলত রাসূল (ﷺ) এর বিরুদ্ধে কথা বলারই নামান্তর।
হাদিস নং-৮
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ، قَالَ: ثنا أَحْمَدُ بْنُ مُفَضَّلٍ، قَالَ: ثنا أَسْبَاطٌ، عَنِ السُّدِّيِّ: قَالَ: غَضِبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا مِنَ الْأَيَّامِ فَقَامَ خَطِيبًا، فَقَالَ: سَلُونِي فَإِنَّكُمْ لَا تَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ إِلَّا أَنَبَّأْتُكُمْ بِهِ، فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ مِنْ بَنِي سَهْمٍ يُقَالُ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ حُذَافَةَ، وَكَانَ يُطْعَنُ فِيهِ، قَالَ: فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَنْ أَبِي؟ قَالَ: أَبُوكَ فُلَانٌ، فَدَعَاهُ لِأَبِيهِ، فَقَامَ إِلَيْهِ عُمَرُ فَقَبَّلَ رِجْلَهُ وَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، رَضِينَا بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِكَ نَبِيًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِالْقُرْآنِ إِمَامًا، فَاعْفُ عَنَّا عَفَا اللَّهُ عَنْكَ
-“হযরত সূদ্দী (رحمة الله) বলন: আল্লাহর রাসূল (ﷺ) একদিন রাগান্বিত অবস্থায় খুতবায় দাঁড়িয়ে বললেন, আমাকে জিজ্ঞাসা কর, তোমরা যা যা প্রশ্ন করবে আমি সব কিছুই বলে দিব। অত:পর কুরাইশদের বনী ছাহম গোত্রের একজন লোক যাকে ‘আব্দুল্লাহ ইবনে হুজাইফা’ বলা হয়, তিনি দাঁড়ালেন এবং বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা কে? দয়াল নবীজি (ﷺ) বললেন: তোমার পিতা ‘অমুক’ অত:পর সে তার পিতাকে ডাকলেন।
অত:পর হযরত উমর (رضي الله عنه) (ভয়ে) প্রিয় নবীজির প্রতি দাঁড়ালেন এবং প্রিয় নবীজি (ﷺ) এর কদম মোবারকে চুম্বন করলেন এবং বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আল্লাহকে রব হিসেবে, আপনাকে নবী হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে, কোরআনকে ইমাম হিসেবে পেয়ে খুশি। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন, আল্লাহর তরফ থেকে আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।” ১১৭
➥{ইমাম তবারী, তাফছিরে তাবারী শরীফ, ৭ম খণ্ড, ৮৯ পৃ: হাদিস নং ১২৮০১; তাফছিরে ইবনে আবী হাতেম, হাদিস নং ৬৮৮২; তাফছিরে দুররুল মানসুর, ৩য় খণ্ড, ২০৫ পৃ:; তাফসিরে ইবনে কাছির, ৩য় খণ্ড, ২০৫ পৃ: সূরা মায়েদার ১০১ নং আয়াতের তাফছিরে; ইমাম আইনী: উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী, ২৫তম খণ্ড, ৩৪ পৃ:; ইমাম কাস্তাল্লানী: এরশাদুস সারী শরহে বুখারী, ১০ম খণ্ড, ৩১১ পৃ:; ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী: ফাতহুল বারী, ১৩তম খণ্ড, ২৭০ পৃ: ৭২৯২ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়}
হাদিসটি মুরসাল صَحِيحٌ সহীহ্। সিক্বাহ রাবীর মুরসাল রেওয়ায়েত হুজ্জাত বা দলিল হিসেবে স্বীকৃত। এ বিষয়ে কিতাবের শুরুতে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। সুতরাং জানা গেল, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (رضي الله عنه) হযরত রাসূলে পাক (ﷺ) এর কদমবুসী করেছেন।
হাদিস নং-৯:
❏ ইমাম বাজ্জার (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
حَدَّثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ عَبد اللَّهِ بْنِ الْجُنَيْدِ، ومُحَمَّد بن يزيد، قَالاَ: حَدَّثنَا عَبد العزيز بن الخطاب، قَال: حَدَّثنا حبان بن علي، قَال: حَدَّثنا صَالِحُ بْنُ حَيَّانَ، عَنْ عَبد اللَّهِ بْنِ بُرَيدة، عَنْ بُرَيْدَةَ سَأَلَ أَعْرَابِيٌّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آيَةً فَقَالَ لَهُ: قُلْ لِتِلْكَ الشَّجَرَةِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُوكِ قَالَ: فَمَالَتِ الشَّجَرَةُ عَنْ يَمِينِهَا وَشِمَالِهَا وَبَيْنَ يَدَيْهَا وَخَلْفَهَا فَتَقَطَّعَتْ عُرُوقُهَا ثُمَّ جَاءَتْ تَخُدُّ الْأَرْضَ تَجُرُّ عُرُوقَهَا مُغْبَرَّةً حَتَّى وَقَفَتْ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ:السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ.. فَقَالَ الْأَعْرَابِيُّ ائْذَنْ لِي أَسْجُدْ لَكَ.. قَالَ: لَوْ أَمَرْتُ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا.. قَالَ فَأْذَنْ لِي أَنْ أُقَبِّلَ يَدَيْكَ وَرِجْلَيْكَ.. فأذن له.
-“হযরত বুরাইদা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, একদা এক আরাবী লোক রাসূলে পাক (ﷺ) এর কাছে একটি নিদর্শন চাইলেন। দয়াল নবীজি (ﷺ) বললেন: ঐ গাছটিকে বল, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাকে ডেকেছেন। অত:পর সে তাই করলো এবং ঐ গাছটি ডানে-বামে সামনে-পিছনে ঝুঁকে পরলেন ও শিকর ভেঙ্গে উড়ে এসে নবী করিম (ﷺ) এর সামনে দাঁড়ালেন। অত:পর গাছটি বলতে লাগল: আস-সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ!...
তখন আরাবী লোকটি বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন যেন আপনাকে সেজদা করি। প্রিয় নবীজি (ﷺ) বললেন: যদি আল্লাহ ব্যতীত কাউকে সেজদা করার অনুমতি থাকত তবে প্রত্যেক স্ত্রীকে তার স্বামীর প্রতি সেজদা করার অনুমতি দিতাম। আরাবী লোকটি বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে আপনাকে কদমবুছী করার অনুমতি দিন। অত:পর প্রিয় নবীজি (ﷺ) তাকে অনুমতি দিলেন।” ১১৮
➥{ইমাম কাজী আয়্যায: শিফা শরীফ, ১ম খণ্ড, ৫৭৪ পৃ:; মুসনাদে বায্যার, হা/৪৪৫০; মাদারেজুন নবুয়াত; ইমাম মোল্লা আলী: শরহে শিফা, ১ম খণ্ড, ৬১৯ পৃ.; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৩২৬}
❏ ইমাম হাকেম (رحمة الله) হাদিসটিকে صَحِيحٌ ‘সহীহ্’ বলেছেন। এর সনদটি হচ্ছে:
حَدَّثنا إِبْرَاهِيمُ بْنُ عَبد اللَّهِ بْنِ الْجُنَيْدِ، ومُحَمَّد بن يزيد، قَالاَ: حَدَّثنَا عَبد العزيز بن الخطاب، قَال: حَدَّثنا حبان بن علي، قَال: حَدَّثنا صَالِحُ بْنُ حَيَّانَ، عَنْ عَبد اللَّهِ بْنِ بُرَيدة، عَن أَبيهِ، رَضِي اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيه وَسَلَّمৃ
অতএব, উল্লেখিত হাদিস গুলো দ্বারা প্রমাণ হয়, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) কদমবুসীর পক্ষে ছিলেন। তাই যারা কদমবুছীর পক্ষে তারা মূলত রাসূলে পাক (ﷺ) ও সাহাবায়ে কিরামের পক্ষে এবং যারা কদমবুসীর বিপক্ষে তারা মূলত রাসূলে পাক (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের বিপক্ষে এবং চরম পথভ্রষ্ট।
হাদিস নং-১০
❏ অপরদিকে উক্ত হাদিসটি আরো অনেক মুহাদ্দিস হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেছেন।’’ ১১৯
➥{ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : কিতাবুল ফিতান : হা/৪০২৮, ইমাম আবু ইয়ালা : আল-মুসনাদ : হা/৩৬৮৫, ইমাম আবু শায়বাহ : আল-মুসান্নাফ : হা/৩২৩৯০}
উল্লেখ্য যে, কদমবুসীর বিষয়ে মোট ৭ জন সাহাবী ও একজন তাবেঈর বর্ণিত হাদিস পাওয়া যায় এবং এর অধিকাংশই সহীহ্ রেওয়ায়েত। সুতরাং কদমবুসীর বিষয়টি ‘মশহুর’ পর্যায়ের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আফসোসের বিষয় হল, ‘মাশহুর’ পর্যায়ের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরেও বাতিলপন্থীর এ এই আমলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে (নাউজুবিল্লাহ)। আল্লাহ পাক এ সমস্ত ধোঁকাবাজদের থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন। আমিন.
━━━━━━━━━━━━━━━━
🌍 তথ্যসূত্রঃ [শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র এপ্স]
ডাউনলোড লিংকঃ bit.ly/Sohidullah
অথবা, এপ্সটি পেতে প্লে স্টোরে সার্চ করুন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন