কাযী মুহাম্মদ মুঈন উদ্দীন আশরাফী
যে কোন মতাদর্শের সফল প্রচার-প্রসার ও স্থায়ীত্বের লক্ষ্যে প্রয়োজন যুগোপযোগি পরিকল্পনা ও তার সফল বাস্তবায়ন। সময়ের গতি-প্রকৃতিকে যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করত: সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে না পারলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে এবং নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। আজকের মুসলিম বিশ্বের বহুমুখী সমস্যার পেছনে উপরোক্ত বিষয়ের অভাবই মনে হয় মূল কারণ। একইভাবে ইসলামের মূলধারা সুন্নী জামাতের পিছিয়ে থাকার কারণও অভিন্ন। এ বিষয়টির প্রতি নিকট অতীতে এ অধম বারংবার সুন্নী মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও খুব একটা সফল হয়েছি বলে মনে হয় না। তারপরও বিবেক তাড়িত হয়ে আবারও সেপথে পা বাড়াচ্ছি। পুন:রায় বৈশ্বিক আঙ্গিকে না হলেও নিজ দেশের বাস্তবতার আলোকে দু’চার কথা সুন্নী মুসলমানদের খেদমতে পেশ করে সাময়িক প্রশান্তি ও নির্ভার হতে সচেষ্ট হচ্ছি। আমার পর্যবেক্ষণে সুন্নী মুসলমানদের বাতিলপন্থীদের তুলনায় পিছিয়ে থাকার পেছনে উদাসীন্য ও নিজস্ব বলয় কেন্দ্রীক চিন্তা-চেতনাই মূল কারণ বলে মনে হচ্ছে।
কারণ, অসুন্নীদের তুলনায় সুন্নীদের অভাব কিসের আমি তা বুঝে উঠতে পারছি না। তাই আমার মনে হচ্ছে- সুন্নীয়তকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে আমাদেরকে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীর তুলনায় প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দিকে বেশী মনোযোগী হতে হবে। অন্যথায় কালের বিবর্তনে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী বাস্তবায়নও দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। এটাই অপ্রিয় সত্য এবং অতীত ইতিহাস। আমার উদ্দেশ্য আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী বাদ দেয়া নয়। কেননা, এটারও বিশেষ একটি প্রভাব রয়েছে সমাজে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারলে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীর সুফল অধিক ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীর সফল বাস্তবায়ন সহজতর হয়। অসুন্নীদের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালে এ সত্যটি দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠবে খুব সহজে। নিজেদের মনে প্রাণে বিশ্বাস করা মতাদর্শ বাস্তবায়নে এ দেশের বাতিল সম্প্রদায়গুলো প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে বেশ অগ্রসর এটা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। এতদসত্ত্বেও আমরা সুন্নী মুসলমানগণ প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও যথার্থ বাস্তবায়নের তুলনায় আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী গ্রহণে ও বাস্তবায়নে অনেক বেশী আগ্রহী- সে বাস্তবতাকেও মেনে নিতে হবে। ফলে সমাজে পশ্চাদগমন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে এবং নেতৃত্বহীন জনগোষ্ঠীর মত যার যা খুশী তাই করে চলেছে। এটি একটি তিক্ত বাস্তবতা।
আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী
সুন্নী অঙ্গনে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী বেশ সমৃদ্ধ। যথা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, জশনে জুলুছ, ফাতেহায়ে ইয়াযদাহুম, মে’রাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, ওরসে খাজা গরীব নাওয়ায রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, শবে বরাত, বদর দিবস, শবে কদর, আশুরা ও মাহফিলে শোহাদায়ে কারবালার পাশাপাশি হযরাতে আউলিয়া কেরামের ওরস শরীফ, ফাতেহা, ইছালে সাওয়াব মাহফিল ইত্যাদি। বলতে গেলে প্রতি চন্দ্র মাসে কোন না কোন উপলক্ষে সুন্নী অঙ্গনে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী অব্যাহত গতিতে অনুষ্ঠিত হয়। বড় বড় দরবার গুলোতে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী প্রতিনিয়ত দীর্ঘতর হতে চলেছে। প্রতি মাসেই একাধিক ওরস শরীফ, খোশ রোজ শরীফ ইত্যাদির আয়োজন অব্যাহত।
সুন্নী অঙ্গনে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী বেশ সমৃদ্ধ। যথা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, জশনে জুলুছ, ফাতেহায়ে ইয়াযদাহুম, মে’রাজুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, ওরসে খাজা গরীব নাওয়ায রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, শবে বরাত, বদর দিবস, শবে কদর, আশুরা ও মাহফিলে শোহাদায়ে কারবালার পাশাপাশি হযরাতে আউলিয়া কেরামের ওরস শরীফ, ফাতেহা, ইছালে সাওয়াব মাহফিল ইত্যাদি। বলতে গেলে প্রতি চন্দ্র মাসে কোন না কোন উপলক্ষে সুন্নী অঙ্গনে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী অব্যাহত গতিতে অনুষ্ঠিত হয়। বড় বড় দরবার গুলোতে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী প্রতিনিয়ত দীর্ঘতর হতে চলেছে। প্রতি মাসেই একাধিক ওরস শরীফ, খোশ রোজ শরীফ ইত্যাদির আয়োজন অব্যাহত।
অপরদিকে এ দেশের বাতিল ফেরকাগুলোর নিকট উপরোক্ত ্অনুষ্ঠানাদির অধিকাংশই বৈধ নয়। বরং জঘন্য বিদআত, অপচয় ও বর্জনযোগ্য। এতদসত্ত্বেও সত্য বললে, দেশব্যাপী অবস্থানগত দিক থেকে বাতিলপন্থীগণ অনেক শক্তিশালী তা মানতেই হবে। কিসের ভিত্তিতে তারা দেশ ব্যাপী শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে- তা খতিয়ে দেখলে দিবালোকের মত স্পষ্ট সত্যটি সামনে এসে ধরা দেবে। আর তা হলো- তাদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়ন। সুন্নীদের ঘাঁটি খ্যাত চট্টগ্রামের হিসেব নিলেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের কথা বাদ দিয়ে শুধু উত্তর চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের ওহাবী-সুন্নী প্রতিষ্ঠানের সঠিক অবস্থানের যাচাই করলে প্রত্যেকে আমার বক্তব্য মেনে নিতে বাধ্য হবে। কয়েক বৎসর পূর্বে ফটিকছড়িতে ভূজপুরে আওয়ামী লীগের একটি মিছিলে আক্রমণ ও হত্যার ঘটনার দু’দিন পর চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বকোণে- একটি তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যে, শুধুমাত্র ভুজপুর ইউনিয়নেই ছোট-বড় ১৭টি কওমী মাদ্রাসা বিদ্যমান। ওখানে উল্লেখ করার মত কোন সুন্নী প্রতিষ্ঠান আছে কিনা আমার জানা নেই। চট্টগ্রামের যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে সারা দেশের চিত্র কি হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ঐ সতেরটি প্রতিষ্ঠানে গড়ে একশজন ছাত্র হিসেব করলেও একটি ইউনিয়নে সতেরশ ছাত্র ওহাবী মতাদর্শে গড়ে উঠছে তা ধরে নিতে হয়। সে অনুপাতে কতজন ছাত্র সুন্নী মতাদর্শের শিক্ষা গ্রহণ করছে তার সঠিক হিসেব সুন্নীদের হাতেই নেই। সুতরাং অন্য কারো হাতে থাকার প্রশ্নই আসেনা। বাতিলপন্থীগণ উপরোল্লিখিত অনুষ্ঠানাদির অধিকাংশকে বিদআত ও নাজায়েয বললেও তাদের নিকট আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী একেবারে নেই তা নয়। বরং প্রতিষ্ঠান গড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে অতি স্বাভাবিক ভাবে তাদের আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীও বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। যেমন উপরোক্ত একটি ইউনিয়নে সতেরটি ওহাবী মাদ্রাসা, বৎসরে কমপক্ষে একটি ‘বার্ষিক মাহফিল’ হলে- সোজা হিসেবে সতেরটি ওহাবী মাহফিল হচ্ছে। সে অনুপাতে কি সুন্নীদের মাহফিল হবার সুযোগ আছে? কেউ এতটি শুধু মাহফিল করতে চাইলে স্থানীয় জনগণও বিরক্তি প্রকাশ করে বলবে- এতগুলো মাহফিলের প্রয়োজন কি। অপরদিকে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক মাহফিলের ক্ষেত্রে এটা বলার বা বিরক্তি প্রকাশের সুযোগ নেই। বরং প্রত্যেকেই এটা স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিয়ে সাধ্য মত সহযোগিতা করবে। একটি সমাজে অনেকগুলো বাড়ী থাকলেও প্রত্যেক বাড়ীতে মাহফিল হয়না। অনেক সময় সংগত কারণে কয়েক বাড়ী মিলে যৌথভাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানের বেলায় এটা কখনো হয়নি, হবেও না। কেউ একথা কখনো বলবে না যে, কয়েক মাদ্রাসা মিলে একটি মাহফিল করো। বরং জনগণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক পৃথক মাহফিলের আয়োজনকে মনে প্রাণে মেনে নিয়ে সহযোগিতা করবে। সাথে সাথে নানা কারণে অনুষ্ঠানিক কর্মসূচী বাধাগ্রস্ত হয়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন উপায় উপকরণের দিক থেকে তুলনামূলকভাবে কঠিন হলেও তাৎক্ষণিক বাধার মুখে পড়ে না। যেমন কোন সুন্নী এলাকায় ওহাবী বা মওদুদীপন্থীদের মাহফিল করতে গেলে স্থানীয় সুন্নীগণ এটাকে প্রতিহত করতে পারবে। তেমনিভাবে ওহাবী অধ্যুষিত এলাকায় সুন্নীরা মাহফিল করতে গেলে কঠোর বাধার মুখোমুখি হবে। কিন্তু, কোন প্রতিষ্ঠান গড়তে গেলে তাৎক্ষণিক বাধার মুখে পড়তে হয় না। কারণ, সে ক্ষেত্রে শিক্ষাদানের বিষয়টিই গুরুত্ব পায়। বাহ্যিকভাবে ‘দ্বীনি শিক্ষার’ গুরুত্বটি প্রতিষ্ঠান গড়াকে সহজ করে তোলে। কারণ, এর লাভ-ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে সামনে আসে না। যা মাহফিলের ক্ষেত্রে আসে। অনুরূপভাবে সাহায্য সহযোগিতার বেলায় একই অবস্থা বিদ্যমান। অনেক সুন্নীই- যারা ওহাবী মতবাদ বা যে কোন বাতিল মতবাদ এর অন্তর্নিহিত ভয়াবহতা সম্পর্কে অনবহিত তারা ও ‘‘গরীবের সন্তানরা দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করবে’’ ভেবে ভিন্ন আক্বীদার প্রতিষ্ঠানে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু, মাহফিলের বেলায় তাৎক্ষণিক পরিচয়ের ফলে সেটা করে না। মাহফিলের জন্য চাঁদা চাইতে গেলে মানুষ জানতে চায়- বক্তা কারা। যখন ভিন্ন আক্বীদার কারো নাম শুনে তখন স্বাভাবিক কারণে অনিহা প্রকাশ করে, অনেক সময় চাঁদা দেয় না, আবার কখনো বিরোধিতা করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের বেলায় এসব বাধা খুব কমই আসে। এটাই বাস্তবতা। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুব সহজে এলাকায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার- করা যায়। অপর দিকে অনুষ্ঠানের প্রভাব খুব সাময়িক। একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে তা সহজে উৎখাত করা যায় না। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আদর্শ প্রচারের সুফল বেশ দীর্ঘস্থায়ী। এসব বিষয় বাস্তবতার নিরিখেই প্রমাণিত। অতএব, আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীর চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নে আমরা মনযোগী হলে স্বাভাবিকভাবে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীর উর্বর ক্ষেত্র সহজভাবে তৈরী হবে। এ সত্যটি গভীরভাবে অনুধাবনের আকুল আবেদন রইল সচেতন সুন্নীদের খেদমতে।
প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা ও বাস্তব চিত্র
প্রতিষ্ঠান বলতে আমি আদর্শিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বুঝাতে চেয়েছি। অতএব, মাদ্রাসা, হেফজখানা, ইয়াতিমখানা, ইসলামিক কিন্ডার গার্টেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, দরসে নেযামী মাদ্রাসা, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী, কেরাত প্রশিক্ষণ একাডেমী, ভাষা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান, প্রকাশনী ইত্যাদি। প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনার তুলনায় সুন্নী মুসলমানগণ যে, আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীর বেশী আগ্রহী- তা বুঝতে কারো পক্ষে সমস্যা হবার কথা নয়। অদ্যাবধি সুন্নীয়ত চর্চা যতটুকু বিদ্যমান, তার অধিকাংশ আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীর সুফল। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নে সুন্নীরা যে অনেক পিছিয়ে, তা খতিয়ে দেখতে সুন্নীদের ঘাঁটি খ্যাত চট্টগ্রামের বাইরে যেতে হবে না। প্রতিটি উপজেলার মাদ্রাসার সংখ্যা হিসেব করলেই বিষয়টি সহজে প্রত্যেকের নিকট দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রের বাস্তবচিত্র আমাদের জন্য খুবই হতাশা ব্যঞ্জক। অতঃপর হতাশা ব্যঞ্জক তালিকায়ও যা আছে, তারও অধিকাংশ যদি অর্থবহ প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে হতো, তাতেও কিছুটা আশার আলো দেখার সুযোগ হত। অতঃপর বেসরকারী মাদ্রাসার পাঠ্যসূচীর বর্তমানে যে বেহাল অবস্থা, এটাই আমাদেরকে সবচেয়ে বেশী বিচলিত আতংকিত করছে। জুনিয়র শ্রেণিগুলোর পাঠ্যসূচীর যে অবস্থা, তাতে দক্ষ আলেম তৈরীর পথ যে, খুব দ্রুত বন্ধ হতে চলেছে, তাতে সন্দেহের কোন সুযোগ নেই। অবশ্য সিনিয়র শ্রেণিগুলোয় পাঠ্যসূচী আমার দৃষ্টিতে আমাদের সময়ের চেয়ে অনেক ভাল। কিন্তু, জুনিয়র শ্রেণিগুলোতে ছাত্ররা ক্বোরআন-সুন্নাহ্ নির্ভুলভাবে বুঝার জন্য পূর্বশর্ত স্বরূপ বিষয়াবলীতে কাঁচা থাকার ফলে সিনিয়র ক্লাসে গিয়ে দ্বীনি শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো বুঝতে পারে না বিধায় ছাত্ররা কিতাব নির্ভর লেখা-পড়ার স্থলে ‘গাইড’ নির্ভর হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ফলে কর্ম জীবনে গিয়ে তারা সমাজে দক্ষ-অভিজ্ঞ আলেম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। এ অবস্থায়ও সীমিত সংখ্যক মেধাবী ছাত্র যারা আছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় মুখী হয়ে মাদ্রাসায় দ্বীনি খেদমতে মনোযোগী হয় না। ফলে সুন্নী মাদ্রাসায় প্রতিনিয়ত দক্ষ শিক্ষকের অভাব প্রকটতর হতে চলেছে। বর্তমানে কর্মরত মুহাদ্দিসগণকে বাদ দিলে নতুন করে হাদীস পড়ানোর মত ‘মুহাদ্দিস’ তৈরী হচ্ছে না। তার জ্বলন্ত প্রমাণ আমাদের হাতের কাছে। বাহার সিগ্যানাল আল্ আমিন বারীয়া কামিল (এম এ) মাদ্রাসায় সাম্প্রতিক ‘কামিল হাদিস’ এর অনুমতি লাভ করেছে। কামিল ক্লাসে হাদীস পড়াতে সক্ষম মুহাদ্দিস খুঁজছেন বর্ধিত সুযোগ সুবিধা দিয়ে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ দেশের অনেক জায়গায় খোঁজ নিয়েছেন। বলা হয়েছে- ভিন্ন আক্বীদার মুহাদ্দিস নিতে সম্মত হলে যতজন লাগে দেয়া যাবে। কিন্তু এটাতো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা-আদর্শ ভিত্তিক একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে সুন্নীয়ত এর প্রচার-প্রসারে যুগোপযোগী অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে ইনশাআল্লাহ্। এখান থেকেই পুরো অঙ্গনের অবস্থা সহজে অনুমেয়।
প্রতিষ্ঠান বলতে আমি আদর্শিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বুঝাতে চেয়েছি। অতএব, মাদ্রাসা, হেফজখানা, ইয়াতিমখানা, ইসলামিক কিন্ডার গার্টেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, দরসে নেযামী মাদ্রাসা, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী, কেরাত প্রশিক্ষণ একাডেমী, ভাষা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান, প্রকাশনী ইত্যাদি। প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনার তুলনায় সুন্নী মুসলমানগণ যে, আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীর বেশী আগ্রহী- তা বুঝতে কারো পক্ষে সমস্যা হবার কথা নয়। অদ্যাবধি সুন্নীয়ত চর্চা যতটুকু বিদ্যমান, তার অধিকাংশ আনুষ্ঠানিক কর্মসূচীর সুফল। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়নে সুন্নীরা যে অনেক পিছিয়ে, তা খতিয়ে দেখতে সুন্নীদের ঘাঁটি খ্যাত চট্টগ্রামের বাইরে যেতে হবে না। প্রতিটি উপজেলার মাদ্রাসার সংখ্যা হিসেব করলেই বিষয়টি সহজে প্রত্যেকের নিকট দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এ ক্ষেত্রের বাস্তবচিত্র আমাদের জন্য খুবই হতাশা ব্যঞ্জক। অতঃপর হতাশা ব্যঞ্জক তালিকায়ও যা আছে, তারও অধিকাংশ যদি অর্থবহ প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে হতো, তাতেও কিছুটা আশার আলো দেখার সুযোগ হত। অতঃপর বেসরকারী মাদ্রাসার পাঠ্যসূচীর বর্তমানে যে বেহাল অবস্থা, এটাই আমাদেরকে সবচেয়ে বেশী বিচলিত আতংকিত করছে। জুনিয়র শ্রেণিগুলোর পাঠ্যসূচীর যে অবস্থা, তাতে দক্ষ আলেম তৈরীর পথ যে, খুব দ্রুত বন্ধ হতে চলেছে, তাতে সন্দেহের কোন সুযোগ নেই। অবশ্য সিনিয়র শ্রেণিগুলোয় পাঠ্যসূচী আমার দৃষ্টিতে আমাদের সময়ের চেয়ে অনেক ভাল। কিন্তু, জুনিয়র শ্রেণিগুলোতে ছাত্ররা ক্বোরআন-সুন্নাহ্ নির্ভুলভাবে বুঝার জন্য পূর্বশর্ত স্বরূপ বিষয়াবলীতে কাঁচা থাকার ফলে সিনিয়র ক্লাসে গিয়ে দ্বীনি শিক্ষার মৌলিক বিষয়গুলো বুঝতে পারে না বিধায় ছাত্ররা কিতাব নির্ভর লেখা-পড়ার স্থলে ‘গাইড’ নির্ভর হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ফলে কর্ম জীবনে গিয়ে তারা সমাজে দক্ষ-অভিজ্ঞ আলেম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে না। এ অবস্থায়ও সীমিত সংখ্যক মেধাবী ছাত্র যারা আছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় মুখী হয়ে মাদ্রাসায় দ্বীনি খেদমতে মনোযোগী হয় না। ফলে সুন্নী মাদ্রাসায় প্রতিনিয়ত দক্ষ শিক্ষকের অভাব প্রকটতর হতে চলেছে। বর্তমানে কর্মরত মুহাদ্দিসগণকে বাদ দিলে নতুন করে হাদীস পড়ানোর মত ‘মুহাদ্দিস’ তৈরী হচ্ছে না। তার জ্বলন্ত প্রমাণ আমাদের হাতের কাছে। বাহার সিগ্যানাল আল্ আমিন বারীয়া কামিল (এম এ) মাদ্রাসায় সাম্প্রতিক ‘কামিল হাদিস’ এর অনুমতি লাভ করেছে। কামিল ক্লাসে হাদীস পড়াতে সক্ষম মুহাদ্দিস খুঁজছেন বর্ধিত সুযোগ সুবিধা দিয়ে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ দেশের অনেক জায়গায় খোঁজ নিয়েছেন। বলা হয়েছে- ভিন্ন আক্বীদার মুহাদ্দিস নিতে সম্মত হলে যতজন লাগে দেয়া যাবে। কিন্তু এটাতো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা-আদর্শ ভিত্তিক একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে সুন্নীয়ত এর প্রচার-প্রসারে যুগোপযোগী অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে ইনশাআল্লাহ্। এখান থেকেই পুরো অঙ্গনের অবস্থা সহজে অনুমেয়।
এমন অনেক মাদ্রাসা আছে- যেখানে বিশাল-বিশাল ভবন দাঁড়িয়ে আছে। অবকাঠামোগত অবস্থা দৃষ্টে মনে হবে-এখানে লেখা-পড়ার অবস্থা বেশ সন্তুষজনক হবে। অনেক সংখ্যক ছাত্রের উপস্থিত নিশ্চিত। কিন্তু বাস্তবরূপ ভিন্ন। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে আমাদের ধর্মপ্রাণ দানশীল ব্যক্তিগণ যথেষ্ট পরিমাণে সহযোগিতা দিচ্ছেন নানা খাতে। ঐ সম্মানিত দাতাগণের নিকট সবিনয় নিবেদন থাকবে- কোন কতৃপক্ষ আপনাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করলে- অনুগ্রহ করে সাহায্য প্রার্থীদের অগোচরে আপনাদের ব্যক্তি পাঠিয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানের পাঠদান পরিস্থিতি, ক্লাসে উপস্থিতি ছাত্র সংখ্যা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করুন। অতঃপর যদি আপনাদের বিবেচনায় যে বিষয়ে সাহায্য চেয়েছেন তার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়, শ্রেণী কক্ষের অভাব, ছাত্রসংখ্যা অধিক, অথচ শ্রেণি কক্ষ ছোট। ছাত্র সংখ্যা অনুপাতে প্রশস্থ শ্রেণী কক্ষের প্রয়োজন, টুল-টেবিলের প্রয়োজন ইত্যাদি সত্য প্রমাণিত হলে- অবশ্যই আপনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চাহিদা পুরনে সাহায্যের হাত প্রসারিত করুন। আপনার বিশাল অনুদান ভবিষ্যতে দক্ষ আলেম তৈরীতে নিঃসন্দেহে অবদান রাখবে। আর যদি বাস্তবচিত্র ভিন্ন প্রমাণিত হয়। বিশাল এলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠান, একাধিক ভবন। কিন্তু, ক্লাস চলাকালীন ছাত্রসংখ্যা খুব নগন্য। পাঠদানের পরিবেশও তেমন উৎসাহ ব্যঞ্জক নয়। তখন আপনি সেখানে অনুদান না দিয়ে প্রয়োজন রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান খোঁজে বের করে এগিয়ে যান। আপনার দান-অনুদান যথেষ্ট কাজে আসবে। কিন্তু, দাতা এভাবে খুঁজ-খবর নিয়ে দান করেন কিনা জানি না। আসলে দানের সুফল পেতে হলে- এভাবে অনুসন্ধান পূর্বক দান করা উচিত। তাহলে দান-অনুদান অর্থবহ হবে। অন্যথায় ‘বাহবা’ ছাড়া কিছু আশা করা যায় না। উপরোক্ত চরিত্রের প্রতিষ্ঠানগুলো অগোচরে এক ধরনের ব্যবসায়িক কর্ম-কাণ্ডে লিপ্ত। সত্যিকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে অর্থবহ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অসম্ভব কিছু নয়। এক্ষেত্রে উৎসাহ্ ব্যঞ্জক পরিবর্তন শুধুমাত্র সচেতন দাতাগণই পারবে। ব্যবসায়িক ও নামমাত্র প্রতিষ্ঠানে অগ্রহী ব্যক্তিগণ যখন দাতাপক্ষের সচেতনতার ফলে বিশাল অংকের অনুদান লাভে সফল হবে না,তখন হয়ত এ পথ পরিহার করবে অথবা অর্থবহ প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রতি মনোনিবেশ করবে। যেটাই হোক সার্বিক বিবেচনায় ভালই হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আড়ালে নিজের আখের গোছানো, প্রতিষ্ঠানের টাকা দিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ জীবন ধারণ এর চেয়ে তাদের এ ক্ষেত্র থেকে সরে যাওয়া মিল্লাত-মাযহাবের স্বার্থে অনেক উত্তম। অথবা অর্থবহ প্রতিষ্ঠান করে মিল্লাত-মাযহাবের প্রচার-প্রসারে অবদানে সচেষ্ট হওয়া। আশা করি আমার বক্তব্য দাতাগণ একটিবার হলেও চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন। যতি সত্য বলে থাকি আমাকে দু’আ করবেন। অসত্য বলে থাকলে- আমাকে সত্যটা বুঝিয়ে দিতে আশা করি কার্পণ্য করবেন না।
আদর্শ প্রচারে অনুষ্ঠানের তুলনায় প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনেক দীর্ঘস্থায়ী
একটি মাহফিলের প্রচার একটি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক অনেকগুণ কম। এতে আশা করি কেউ দ্বিমতও করবে না। আর একটি প্রতিষ্ঠান যে, একটি এলাকার আদর্শিক পরিবর্তন আনতে সফল ভাবে সক্ষম সে ব্যাপারে ও আশা করি দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই। আমার জানা মতে এমন অনেক ওহাবী আক্বীদা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আছে, যার দেওয়ালের বাইরে ওহাবী আক্বীদার কোন অনুসারী নেই, বা ছিল না। ওরা সুন্নী এলাকার কাছাকাছি স্থানেই প্রতিষ্ঠান গড়ায় তৎপর। কারণ, তারা জানে- তাদের ভ্রান্ত ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদা বিশ্বাস অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচার করলেও তেমন লাভ করা যাবে না। যা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক সহজে সম্ভব হবে। আর প্রতিষ্ঠান গড়তে পারলে তো বৎসরে একটি অনুষ্ঠানের নিশ্চিত ক্ষেত্রই তৈরী হবে। অতএব, শুধু মাত্র অনুষ্ঠানে আগ্রহী হলে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে কিনা কোন নিশ্চিয়তা নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ছোট হোক বড়, গড়ে উঠলেই স্বাভাবিকভাবেই অনুষ্ঠান স্থায়ীভাবে চালু হবে। যে এলাকায় কোন দিন ছোট্ট পরিসরে মাহফিল করার সাহস করেনি, সেখানে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে বৎসরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় একাধিক অনুষ্ঠান অনায়াসে আয়োজন করা সম্ভব হবে। সুন্নী এলাকায় ওহাবীরা প্রতিষ্ঠান গড়লে প্রথম দিকে সুন্নীদের অসন্তুষ্টির কারণ হয়, এমন কোন বক্তব্য ভুলক্রমেও রাখবে না। বরং পরিকল্পিতভাবে দুরূদ শরীফের ফযিলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য বর্ণনা করবে। তখন অচেতন সুন্নীরা বলবে- আমাদের আলেমরা শুধু শুধু এদের বিরোধিতা করে। এরা তো দেখছি দুরূদ শরীফ বিরোধী নয়। আস্তে আস্তে এ অচেতন শ্রেণিটি তাদের খপ্পরে পড়ে ওহাবী হয়ে যায়। এখানে দেখতে হবে এরা দুরূদ শরীফের ফযিলত বয়ান করলেও কিন্তু সেভাবে পড়ছে না।
একটি মাহফিলের প্রচার একটি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক অনেকগুণ কম। এতে আশা করি কেউ দ্বিমতও করবে না। আর একটি প্রতিষ্ঠান যে, একটি এলাকার আদর্শিক পরিবর্তন আনতে সফল ভাবে সক্ষম সে ব্যাপারে ও আশা করি দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই। আমার জানা মতে এমন অনেক ওহাবী আক্বীদা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আছে, যার দেওয়ালের বাইরে ওহাবী আক্বীদার কোন অনুসারী নেই, বা ছিল না। ওরা সুন্নী এলাকার কাছাকাছি স্থানেই প্রতিষ্ঠান গড়ায় তৎপর। কারণ, তারা জানে- তাদের ভ্রান্ত ঈমান বিধ্বংসী আক্বীদা বিশ্বাস অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচার করলেও তেমন লাভ করা যাবে না। যা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক সহজে সম্ভব হবে। আর প্রতিষ্ঠান গড়তে পারলে তো বৎসরে একটি অনুষ্ঠানের নিশ্চিত ক্ষেত্রই তৈরী হবে। অতএব, শুধু মাত্র অনুষ্ঠানে আগ্রহী হলে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে কিনা কোন নিশ্চিয়তা নেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠান ছোট হোক বড়, গড়ে উঠলেই স্বাভাবিকভাবেই অনুষ্ঠান স্থায়ীভাবে চালু হবে। যে এলাকায় কোন দিন ছোট্ট পরিসরে মাহফিল করার সাহস করেনি, সেখানে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে বৎসরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় একাধিক অনুষ্ঠান অনায়াসে আয়োজন করা সম্ভব হবে। সুন্নী এলাকায় ওহাবীরা প্রতিষ্ঠান গড়লে প্রথম দিকে সুন্নীদের অসন্তুষ্টির কারণ হয়, এমন কোন বক্তব্য ভুলক্রমেও রাখবে না। বরং পরিকল্পিতভাবে দুরূদ শরীফের ফযিলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য বর্ণনা করবে। তখন অচেতন সুন্নীরা বলবে- আমাদের আলেমরা শুধু শুধু এদের বিরোধিতা করে। এরা তো দেখছি দুরূদ শরীফ বিরোধী নয়। আস্তে আস্তে এ অচেতন শ্রেণিটি তাদের খপ্পরে পড়ে ওহাবী হয়ে যায়। এখানে দেখতে হবে এরা দুরূদ শরীফের ফযিলত বয়ান করলেও কিন্তু সেভাবে পড়ছে না।
সুতরাং এটা ধোকাবাজি মাত্র। আর এলাকায় প্রভাবশালী সুন্নীদেরকে পক্ষে নেয়ার কৌশল হিসেব বারবার তাঁদেরকে দাওয়াত করবে। না গেলেও দাওয়াত দান বন্ধ করবে না। এক পর্যায়ে বলবে- আপনি শুধু আসবেন-সামান্য ডাল-ভাত খাবেন আর চলে আসবেন। এক সময় লজ্জায় পড়ে ঐ ব্যক্তিও ঐ প্রতিষ্ঠানের মাহফিলে যোগ দেন। সামাজিকতা রক্ষার দায়ে হলেও কিছুক্ষণ মাহফিলে বসেন। আর তাদের কৌশলি বক্তব্যে ধীরে ধীরে মোহিত হয়ে ওহাবী হয়ে না গেলেও তাদের প্রতি ঘৃণার মাত্রা কমতে থাকে। আরেক সময় নিজের সম্মান মর্যাদা রক্ষার্থে কিছু দান অনুদানও দিয়ে বসেন। এভাবে প্রতিষ্ঠান এর মাধ্যমে অনেক এলাকা নিখুঁত ওহাবীতে পরিণত হয়েছে। এভাবেই দেশব্যাপী ওহাবী সম্প্রদায় নিজেদের শক্ত অবস্থায় গড়ে তুলেছে। যা কখনো অনুষ্ঠান দিয়ে কোন ভাবেই সম্ভব নয়। বর্তমানে সুন্নী অঙ্গনে সংখ্যার দিক থেকে ‘মাহফিলের’ তুলনায় ‘ওরস’ অনুষ্ঠান অধিক বলে মনে হচ্ছে। সর্বজন স্বীকৃত পীর-আউলিয়ার পাশাপাশি এখন যে কারো ‘ওরস’ হচ্ছে। অথচ আমাদের এমন অনেক অলি-বুযুর্গ রয়েছে, যাঁদের ইসলাম প্রচারে অসামান্য অবদান রয়েছে। কিন্তু অধ্যাবধি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ- তাঁর একটি ‘জীবনী গ্রন্থ’ তাঁর ভক্ত-অনুরক্তদের হাতে তুলে দিতে পারেনি। আবার এমন অনেকের বিশাল আঙ্গিকে মা-বাবারও ওরস হচ্ছে, যার মধ্যে জীবনী রচনার মত উপাদানই নেই। কারণ, তিনি ঐ পর্যায়ের কেউ নন। শুধু মাত্র তিনি একটি দরবারে বেশ আসা-যাওয়া করতেন। এলাকার মানুষ তাঁকে কৌতুহল বশত। ‘অমুক ফকির’ বলে ডাকত। অতএব, মৃত্যুর পর লোকজন তাঁর মাযার নির্মাণ করে ওরস শুরু করে দিয়েছে।
এ চরম হতাশা ব্যঞ্জক পরিস্থিতিতে আমি সচেতন সুন্নী মুসলমানদের খেদমতে সবিনয় আবেদন রাখছি অনুষ্ঠান এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সত্যিকার অর্থে আলেম তৈরীর মহান লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান গড়ায় মনযোগী হতে। আবার সবাইকে স্মরণ করে দিতে চাই- কুতুবুল আউলিয়া হযরত আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি-এর অমূল্য বাণী- ‘কাম করো দ্বীন কো বাঁচাও, সাচ্চা আলেম তৈয়ার করো।’ সাচ্চা আলেম তৈরী করতে হলে অর্থবহ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই।
এ চরম হতাশা ব্যঞ্জক পরিস্থিতিতে আমি সচেতন সুন্নী মুসলমানদের খেদমতে সবিনয় আবেদন রাখছি অনুষ্ঠান এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সত্যিকার অর্থে আলেম তৈরীর মহান লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান গড়ায় মনযোগী হতে। আবার সবাইকে স্মরণ করে দিতে চাই- কুতুবুল আউলিয়া হযরত আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি-এর অমূল্য বাণী- ‘কাম করো দ্বীন কো বাঁচাও, সাচ্চা আলেম তৈয়ার করো।’ সাচ্চা আলেম তৈরী করতে হলে অর্থবহ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, শায়খুল হাদীস- সোবহানিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন